বুয়াইয়াদের সর্বশ্রেষ্ঠ শাসক হিসেবে আজাদ উদ দৌলার কৃতিত্ব মূল্যায়ন কর
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো বুয়াইয়াদের সর্বশ্রেষ্ঠ শাসক হিসেবে আজাদ উদ দৌলার কৃতিত্ব মূল্যায়ন কর জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের বুয়াইয়াদের সর্বশ্রেষ্ঠ শাসক হিসেবে আজাদ উদ দৌলার কৃতিত্ব মূল্যায়ন কর।
বুয়াইয়াদের সর্বশ্রেষ্ঠ শাসক হিসেবে আজাদ উদ দৌলার কৃতিত্ব মূল্যায়ন কর |
বুয়াইয়াদের সর্বশ্রেষ্ঠ শাসক হিসেবে আজাদ উদ দৌলার কৃতিত্ব মূল্যায়ন কর
উত্তর : ভূমিকা : আব্বাসীয় শাসনামলে সাম্রাজ্য অনেক ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাজবংশ গড়ে উঠে। এর মধ্যে অন্যতম হলো বুয়াইয়া রাজবংশ। আর বুয়াইয়া রাজবংশের শ্রেষ্ঠ সুলতান বলা হয়ে থাকে আজাদ-উদ-দৌলা।
দশম শতাব্দীর মাঝামাঝি সময় থেকে একাদশ শতাব্দীর মাঝামাঝি পর্যন্ত (৯৪৫-১০৫৫) এক শতাব্দী অধিককাল শিয়া বুয়াইদ বংশ বাগদাদের আব্বাসীয় খলিফাদের আমির উল উমারা পদে শাসনকার্য পরিচালনা করেন।
স্বীয় অধ্যবসায় কর্মদক্ষতা, ও বিচক্ষণায় তিনি কেক শ্রেষ্ঠ বুয়াইয়া আমির ছিলেন না সেই সময়কালে বিখ্যাত শাসকও ছিলেন।
→ বুয়াইয়াদের সর্বশ্রেষ্ঠ শাসক হিসেবে আজাদ-উদ-দৌলার কৃতিত্ব : বুয়াইয়া বংশের নয় আমির উল উমারার মধ্যে আজাদ- উদ-দৌলা সর্বশ্রেষ্ঠ ছিলেন। তার আমলে (৯৬৭-৯৮৩ খ্রি.) বুয়াইয়া শক্তি সর্বোচ্চ শিখরে উপনীত হয়।
তাই পি.কে হিট্রি যথার্থই বলেছেন, মুইজ-উদ-দৌলা পুত্র আজাদ-উদ-দৌলার সময় বুয়াইয়া শক্তি সর্বোচ্চ শিখরে উপনীত হয়। আজাদ-উদ-দৌলা কেবল শ্রেষ্ঠ বুয়াইয়া আমির ছিলেন। সেই কালের বিখ্যাত শাসকও ছিলেন। [Ref. History of the Arabs P-471)
নিয়ে বুয়াইয়া শ্রেষ্ঠ সুলতান আজাদ-উদ-দৌলার কৃতিত্ব বিস্তারিত আলোচনা করা হলো :
১. সুলতান শাহান শাহ উপাধি গ্রহণ : আজাদ-উদ-দৌলা একজন উচ্চাভিলাসী ছিলেন। তার পূর্ববর্তী আমিরগণ শুধু সুলতান উপাধি গ্রহণ করেছিল কিন্তু আজাদ-উদ-দৌলা শাহান শাহ ও সুলতান উভয়ই উপাধি গ্রহণ করেন।
২. সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা : আজাদ-উদ-দৌলা শুধু বংশে প্রতিষ্ঠা করেই ক্ষান্ত হননি। তিনি একটি সাম্রাজ্যও প্রতিষ্ঠার কৃতিত্ব অর্জন করেন। বুয়াইয়া আমির কর্তৃক স্থাপিত ইরাক ও পারস্যের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাজ্যগুলোকে তিনি সংঘবদ্ধ করে খলিফা হারুনের সাম্রাজ্যের ন্যায় একটি বিস্তৃতি সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন।
৩. উচ্চাভিলাষী মনোভাব : আজাদ-উদ-দৌলা সবসময় বাগদাদ জয়ের সুযোগের অপেক্ষায় থাকতেন। উমানের বিদ্রোহী কারামাভিয়াদের দমন করার জন্য বখতিয়ার যখন আজাদ-উদ- দৌলার সাহায্য চান তখন তিনি এ সুযোগ বাগদাদ দখলের প্রচেষ্টা চালান।
কিন্তু তার পিতার মধ্যস্থতায় তার পক্ষে বাগদাদ দখল করা সম্ভব হয়নি। এ থেকে তার উচ্চাভিলাষী মনোভাবের পরিচয় পাওয়া যায়।
৪. খলিফার সাথে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপন : বুয়াইয়া রাজপুত্রকে আব্বাসীয় সিংহাসনে বসানোর জন্য আজাদ-উদ-দৌলা খলিফা আততায়ীর সাথে বৈবাহিক কূটনীতিক সম্পর্ক স্থাপন করেন।
তিনি নিজ কন্যার সাথে খলিফার আততায়ীর বিবাহ দেন এবং তিনি নিজেও খলিফার এক কন্যাকে বিবাহ করেন।
৫. বিদ্রোহী হামানীয়দের দমন : হামানীয়রা আজাদ-উদ- দৌলার সময় দিয়ার বকর, দিয়ার রাবিয়া ও দিয়ার মুদার-এ তিনটি অঞ্চলের শাসন কায়েম করেছিল। তিনি বিদ্রোহী হামানীয়দের দমন করে তিনটি অঞ্চল আবার তার রাজ্যভুক্ত করেন।
৬. আস্থাহীনতা : শাসনের এক পর্যায়ে আজাদ-উদ-দৌলা মানুষের প্রতি কিছুটা আস্থাহীন হয়ে পড়েন। এমকি নিজের ছেলের প্রতিও তিনি ছিলেন সন্দিহান। তাই দেখা যায়, তার বড় ছেলে আবুল ফারাবিস উপাধি সরফুদ্দৌলাকে কিরমানের শাসক হিসেবে নিযুক্ত করলেও সে নামে মাত্র শাসক ছিল।
সে বিদ্রোহ করতে পারে এ সন্দেহে মূল দায়িত্ব দিয়ে রাখেন সেনা প্রধান সারগরিকে। আজাদ-উদ-দৌলার সর্বদা মানুষের অনাস্থা ছিল ।
৭. কিরমান দখলও রাজ্যবিস্তার : আজাদ-উদ-দৌলা যখন ক্ষমতায় তখন কিরমান ছিল উত্তর-পশ্চিম ও দক্ষিণ-পূর্ব এ দু'ভাগে বিভক্ত। 'উত্তর পশ্চিমে ইলিয়াস বংশ এবং দক্ষিণ-পূর্বে কুফস এবং বিলুস এ দুটি গোষ্ঠী শাসন করে। আজাদ কিরমান দখলের জন্য অভিযান চালান এবং ৯৭২ খ্রিস্টাব্দে কিরমান তাঁর দখলে আসে।
৮. ধর্মনিরপেক্ষ শাসন প্রতিষ্ঠা : মধ্যযুগের শাসক হয়েও আজাদ-উদ-দৌলা একজন ধর্মনিরপেক্ষ শাসক ছিলেন। তাঁর খ্রিস্টান উজির নসর ইবনে হারুন খলিফার অনুমতিক্রমে রাজ্যে অনেক গির্জা ও মঠ নির্মাণ করেন।
৯. খেলাফত ও আমিরাত একত্রীকরণ : বুয়াইয়া বংশধর যেন পরবর্তী খেলাফতের আসনে বসতে পারে সেজন্য তিনি খেলাফত ও আমিরাতকে একত্রীকরণ করার পরিকল্পনা করেন এবং সে উদ্দেশ্য নিজের মেয়েকে খলিফা আত-তাইয়ের সাথে বিয়ে দেন। এ জন্যই পরবর্তীতে বুয়াইয়া বংশধররা ক্ষমতায় আসে ।
১০. আজাদ-উদ-দৌলা কর্তৃক রাজতন্ত্রের সূচনা : ৯৫২ সালে শাহান শাহ উপাধি গ্রহণ করে আজাদ-উদ-দৌলা তা অফিসিয়ালি কার্যকর করেন ৯৮০ খ্রিস্টাব্দে এবং এর বুয়াইয়া কনফেডারেসি ভেঙে বুয়াইয়া রাজতন্ত্র কায়েম করেন।
১১. মুদ্রা এবং খুতবায় খলিফার নাম অন্তর্ভুক্তকরণ : বুয়াইয়া শাসক আজাদ-উদ-দৌলার শাসনামলে মুদ্রা ও খুতবায় নিজের নাম অন্তর্ভুক্ত করেন। সেখানে শুধুমাত্র কেবল খলিফার নামই লেখা থাকতো। এটি ছিল আব্বাসীয় খিলাফতের হুমকি স্বরূপ ।
১২. আজাদ-উদ-দৌলার শাসননীতি : আজাদ-উদ-দৌলার শাসননীতির মূল বিষয় ছিল রাজ্য বিস্তার। পূর্বে বুয়াইয়াদের অধিকৃত হয়নি এমন অঞ্চলেও তিনি দখল করতে যান।
তাছাড়া তার নীতি ছিল বাবা চাচার মতো বড় বড় উপাধি গ্রহণ করতে হবে যা পূর্বে দেখা গেছে। এছাড়া বড় বড় রাজ্যের সাথে সম্পর্ক স্থাপনও তাঁর নীতি ছিল। তার রাজ্য বিস্তারের এ নীতি বাগদাদ দখলের পূর্বেই ছিল ।
১৩. স্থাপিত্য শিল্পে পৃষ্ঠপোষকতা : সুলতান আজাদ-উদ-দৌলা স্থাপত্যশিল্পের একনিষ্ঠ পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। বিখ্যাত ঐতিহাসিক মিসকাওয়ার বলেন যে, যদিও আজাদ-উদ-দৌলাহ সিরাজে তার রাজদরবার প্রতিষ্ঠা করেছিলেন তথাপি তিনি বাগদাদ নগরীতে অসংখ্য ইমরাজি নির্মাণ করেন তার সৌন্দর্য বহুগুণে বর্ধিত করেন।
১৪. শিক্ষা-সাহিত্যর পৃষ্ঠপোষকতা : সুলতান আজাদ-উদ- দৌলাহকে যেসব কারণে শ্রেষ্ঠ সুলতান বলা হয় তার মধ্যে অন্যতম একটি হলো শিক্ষা-সাহিত্য ব্যাপক পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান করার জন্য। সুলতান নীতিজ্ঞানশূন্য হলেও বিদ্যোৎসাহী ছিলেন।
তিনি নিজে একজন সুশিক্ষিত ও জ্ঞানী ছিলেন। গণিত শাস্ত্রে তার যথেষ্ট পাণ্ডিত্য ছিল। তার উদার পৃষ্ঠপোষকতায় বহু প্রখ্যাত কবি, সাহিত্যিক ও বিজ্ঞানী জ্ঞানচর্চার সুযোগ লাভ করেন ।
উপসংহার : পরিশেষে বলতে পারি যে, বুয়াইয়া শ্ৰেষ্ঠ শাসক আজাদ-উদ-দৌলার অবদান সত্যই চিরস্মরণীয়। কেননা আব্বাসীয় সাম্রাজ্য যখন ধ্বংসের সম্মুখীন হন ঠিক সে মুহূর্তে আজাদ-উদ- দৌলা ক্ষমতা দখল করে ইসলামের ইতিহাসে বুয়াইয়াদের শ্রেষ্ঠ শাসক হওয়ার কৃতিত্ব অর্জন করেন। আজাদ-উদ-দৌলাকে ধর্মনিরপেক্ষ শাসক হিসেবেও ইতিহাসে স্থান দেওয়া হয়েছে।
আর্টিকেলের শেষকথাঃ বুয়াইয়াদের সর্বশ্রেষ্ঠ শাসক হিসেবে আজাদ উদ দৌলার কৃতিত্ব মূল্যায়ন কর
আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম বুয়াইয়াদের সর্বশ্রেষ্ঠ শাসক হিসেবে আজাদ উদ দৌলার কৃতিত্ব মূল্যায়ন কর। যদি তোমাদের আজকের এই পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো।