বুয়াইদের পরিচয় দাও। আব্বাসীয় খলিফাদের সাথে তাদের সম্পর্ক নিরূপণ কর
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো বুয়াইদের পরিচয় দাও। আব্বাসীয় খলিফাদের সাথে তাদের সম্পর্ক নিরূপণ কর জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের বুয়াইদের পরিচয় দাও। আব্বাসীয় খলিফাদের সাথে তাদের সম্পর্ক নিরূপণ কর ।
বুয়াইদের পরিচয় দাও। আব্বাসীয় খলিফাদের সাথে তাদের সম্পর্ক নিরূপণ কর |
বুয়াইদের পরিচয় দাও। আব্বাসীয় খলিফাদের সাথে তাদের সম্পর্ক নিরূপণ কর
উত্তর : ভূমিকা : আব্বাসীয় শাসনামলে মুসলিম সাম্রাজ্য অনেকগুলো ক্ষুদ্র রাজবংশ গড়ে উঠেছিল। যাদের অবদান ছিল অনেক। দশম শতাব্দীতে উত্থান আব্বাসীয় খিলাফতে বুয়াইয়াদের ইতিহাস ছিল তাৎপর্যমণ্ডিত এবং বহুল আলোচিত।
বুয়াইয়াদের উত্থানের মধ্যে দিয়ে তাদের সাথে আব্বাসীয়দের সম্পর্কের অবনতি ঘটে। আর সম্পর্ক অবনতি ঘটার মূল কারণ ছিল আব্বাসীয় খলিফাদের হাতের ক্রীড়নকে পরিণত করা। এর ফলে আব্বাসীয়দের সাথে বুয়াইয়াদের সম্পর্কের অবনতি ঘটে এবং পরবর্তীতে তা আরো বেগবান হয়।
→ বুয়াইয়াদের পরিচয় : বুয়াইয়াগণ মধ্যে এশিয়ার একটি উপজাতি। তারা কাম্পিয়ান সাগরের দক্ষিণ উপকূলে পারস্যের তাবারিস্তান ও গীলানের মধ্যবর্তী ভূ-ভাগে দাইলাম নামক স্থানে বসবাস করতেন। দশম শতাব্দীর প্রথম দিকে এ বংশের আবু সুজা বোখারার সামানীয় রাজবংশের অধীনে চাকরি গ্রহণ করেন।
প্রাচীন সামানী রাজবংশের উত্তরাধিকারিত্ব দাবি করে আবু সুজা বুয়াইয়া উপধি ধারণ করে তার ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে থাকেন। আহমদ, আলী এবং হাসান নামে আবু সুজার তিনজন পুত্র ছিলেন। তারা ৯৩৪-৯৩৬ সালের, মধ্য দক্ষিণ দিকে অভিযান চালিয়ে সিরাজ, ইস্পাহান, খুজিস্তান কিরমান, আহওয়াজ প্রভৃতি স্থান সামানীয়দের নিকট হতে দখল করে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র গঠন করেন।
অধিকৃত অঞ্চলে রাজধানী প্রতিষ্ঠিত হয় সিরাজের এ সময় বাগদাদের খলিফা মুসতাকফি তুর্কিদের নাগপাশ হতে মুক্ত হতে বুয়াইয়াদের আমন্ত্রণ জানালে খলিফার ডাকে সাড়া দিয়ে আবু সুজা বুয়াইয়াদের কনিষ্ঠপুত্র আহমদ বাগদাদে প্রবেশ করেন। ফলে তুর্কিরা ভয়ে পালিয়ে যান। খলিফা তাকে ত্রাণকর্তা রূপে গ্রহণ করেন।
এভাবে বাগদাদে এসে ৯৪৫ সালে আহমদ যে বংশ প্রতিষ্ঠা করেন তা তার বাবা আৰু সুজা বুয়াইয়া নামানুসারে বুয়াইয়া বংশ নামে পরিচিত হয়।। আব্বাসীয় খলিফাদের সাথে বুয়াইয়াদের সম্পর্ক : ১৯৪৫ সালে বুয়াইয়া রাজবংশ প্রতিষ্ঠা হলে আব্বাসীয়দের সাথে তাদের সম্পর্কের অবনতি ঘটতে থাকে । নিম্নে সম্পর্কের বিস্তারিত তুলে ধরা হলো-
১. মুইজ দৌলার সাথে সম্পর্ক : মুইজ দৌলা ছিলেন বুয়াইয়া শাসকদের মধ্যে প্রথম। ৯৪৫ সালে মুইজ দৌলা বাগদাদে প্রবেশ করেন। তার নাম ছিল আহমদ। তার আগমনের সাথে সাথে তুর্কী বাহিনী ভয়ে পলায়ন করে।
তখন খলিফা আহমদকে মুইজ দৌলা উপাধিতে ভূষিত করেন এবং আমিরুল উমারা পদে নিযুক্ত করেন। যা খলিফা আল মুসতাকফির জন্য হুমকিস্বরূপ ছিল। খলিফা মুসতাকফির দুর্বলতার সুযোগ খিলাফতের সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী হন।
এরপর খুৎবায় খলিফার নামের সাথে নিজের নাম পাঠের ব্যবস্থা করেন এবং মুদ্রায় নিজ নাম অঙ্কিত করেন। তখন খলিফা তা থেকে মুক্তির প্রচেষ্টা চালালে তার চক্ষু উত্তোলন করা হয় এবং সিংহাসনচ্যুত করা হয়। এভাবে তিনি প্রকৃত ক্ষমতা নিজ হস্তগত করে সুন্নি প্রাধান্য সৃষ্টি করে শিয়া প্রভুত্ব প্রতিষ্ঠা করেন ।
২. ইজাদ দৌলার সাথে সম্পর্ক : মুইজ দৌলার ক্ষমতার অবসানের পর ইজাজ দৌলার ক্ষমতায় আরোহণ করেন। তিনি ছিলেন বিচিত্রধর্মী চরিত্রের অধিকারী। বুয়াইয়া আমিরদের বা আব্বাসীয়দের সম্পর্কের অবনতি ঘটলেও ইজাজ দৌলার সাথে কোনো সম্পর্কের টানাপোড়েন হয়নি, খলিফা আল মুতির সাথে তার সম্পর্ক ভাল ছিল।
৩. আজাদ-উদ-দৌলার আত্মসম্পর্ক : বুয়াইয়া আমিরদের মধ্যে আজাদ-উদ-দৌলা ছিলেন সর্বশ্রেষ্ঠ। আজাদ-উদ-দৌলা ক্ষমতা গ্রহণ করলে আব্বাসীয় খলিফা আল মুতি বিল্লাহ হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েন।
এমতাবস্থায় আমির আজাদ-উদ-দৌলার নির্দেশ পুত্র আবু বকর আব্দুল করিমের আমলে তিনি সিংহাসন ত্যাগ করেন এবং আত-তাই বিল্লাহ ভূষিত করে আব্দুল করিমকে সিংহাসনে বসানো হয় ।
আজাদ-উদ-দৌলা বিচক্ষণ শাসক ছিলেন যার ফলে আব্বাসীয়দের সাথে বুয়াইয়াদের সম্পর্ক সুদৃঢ় করলো এবং আব্বাসীয় বন্ধন মজবুত করার জন্য নিজ কন্যাক খলিফার সাথে বিবাহ দেন এবং তিনি খলিফার এক কন্যাক বিবাহ করেন ।
৪. সামস উদ দৌলার সাথে সম্পর্ক : ৯৮৩ সালে আজাদ- উদ-দৌলার মৃত্যুর পর সামস দৌলা ক্ষমতা আরোহণ করেন। আব্বাসীয় খলিফাদের সাথে সম্পর্ক ঠিক রেখে সামস দৌলা ক্ষমতা পরিচালনা করেন।
৫. শরাফ উদ দৌলার সাথে সম্পর্ক : বুয়াইয়া সুলতান শরাফ উদ দৌলা বিদ্যান এবং পণ্ডিত ব্যক্তি ছিলেন। তার শাসনামলে শিক্ষা ও সংস্কৃতি ব্যাপক সম্প্রসারণ সাধিত হয়। জ্ঞানবিজ্ঞানের অবদান আব্বাসীয়দের শাসনামল এক চরমউৎকর্ষ লাভ করে। শরাফ উদ দৌলার সাথে আব্বাসীয়দের সম্পর্ক সুদৃঢ় ছিল।
৬. নসর দৌলা : ৮৯৮ সালে শরাফ উদ দৌলার মৃত্যুর পর তার আবু নসর বাহা উদ দৌলা উপাধি লাভ করে ক্ষমতায় আরোহণ করেন। বাহাউদদৌলা ধর্মভীরু শাসক ছিলেন। নসর দৌলা ছিলেন মুতাজিলা মতবাদের একেবারে বিরুদ্ধবাদী ছিলেন।
১,০০০ পুস্তক সম্বলিত একটি পাঠাগার নির্মাণ করেছিলেন। আব্বাসীয়দের সাথে প্রাথমিক অবস্থায় সম্পর্কের অবনতি ঘটলেও পরবর্তী সময়ে তা সমাধান হয় ।
৭. বাহা-উদ-দৌলা : বুয়াইয়া সুলতান বাহা-উদ-দৌলা ছিলেন একরোখা- একগুয়ে লোক। বাহা-উদ-দৌলা সাথে খলিফার সম্পর্কের অবনতি ঘটায় ৯৯৮ সালে বাহা-উদ-দৌলা খলিফাকে মনোনীত করেন। আর পরবর্তীকালে খলিফা মনোনয়ন এর উপর ভিত্তি করে সম্পর্কের চরম অবনতি ঘটে।
৮. পরবর্তী বুয়াইয়াগণ : বাহাউদদৌলার পর থেকে বুয়াইয়াদের পতন শুরু হয়। এ সময় সুলতান উদৌলাহ ইমাম উদ্দিন এবং মালিক আর রহিম আমিরুল উমারা পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন।
পরবর্তী বুয়াইয়াগণের সাথে আব্বাসীয় খলিফাদের সম্পর্ক তেমন কোনো ইতিহাস জানা যায় না। তবে তাদের সাথে সম্পর্ক অনেকাংশে ভাল ছিল বলে জানা যায় ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, ইসলামের খিলাফত ব্যবস্থা হজরত আবু বকর ওমর, ওসমান, আলী (রা.) যেভাবে পরিচালনা করছিলেন। ঠিক তেমনি ইসলামি খিলাফত ব্যবস্থা পরিচালনার কথা ছিল। কিন্তু আব্বাসীয়রা সেভাবে খিলাফত | ব্যবস্থা পরিচালনা করতে পারেন নি।
আর বুয়াইয়াদর সাথে আব্বাসীয়দের সম্পর্ক ভালো ছিল না। মূলত খলিফাদের অযোগ্যতা, অকর্মণ্যতার সম্পর্ক বুয়াইয়ারা জোর দখল করে ক্ষমতায় আসেন এবং আব্বাসীয়দের উপর নিজ কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করে শাসনব্যবস্থা পরিচালনা করেন ।
আর্টিকেলের শেষকথাঃ আব্বাসীয় খলিফাদের সাথে বুয়াইয়া আমিরদের সম্পর্ক কেমন ছিল
আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম আব্বাসীয় খলিফাদের সাথে বুয়াইয়া আমিরদের সম্পর্ক কেমন ছিল। যদি তোমাদের আজকের এই পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো।