বুয়াইয়া রাজবংশ প্রতিষ্ঠার প্রেক্ষাপট আলোচনা কর
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো বুয়াইয়া রাজবংশ প্রতিষ্ঠার প্রেক্ষাপট আলোচনা কর জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের বুয়াইয়ারা কিভাবে বাগদাদে রাজবংশ প্রতিষ্ঠা করেন? বিস্তারিত লিখ।
বুয়াইয়া রাজবংশ প্রতিষ্ঠার প্রেক্ষাপট আলোচনা কর |
বুয়াইয়া রাজবংশ প্রতিষ্ঠার প্রেক্ষাপট আলোচনা কর
উত্তর : ভূমিকা : আব্বাসীয় খলিফাদের শাসন ও খিলাফতের প্রকৃত গৌরব প্রতিপত্তি ও মর্যাদা খলিফা ওয়াসিকের শাসনকাল পর্যন্ত বিদ্যমান ছিল। তার পরবর্তী উত্তরাধিকারীগণ কেবলমাত্র আব্বাসীয় মসনদে সমাসীন ছিলেন। কার্যত তাদের কোনো ক্ষমতা ছিল না।
আল ওয়াসিকের মৃত্যুর পর তুর্কি প্রভুত্বের যুগ শুরু হয় এবং পরবর্তী এক শতাব্দীকাল পর্যন্ত তা অব্যাহত থাকে। তুর্কি আমিরদের নিরঙ্কুশ প্রভুত্বের অবসান ঘটাতে খলিফা মুসতাকফি বুয়াইয়াদেরকে রাজধানী ডেকে আনেন।
আব্বাসীয় শাসনামলে যেসব রাজবংশ জন্মলাভ করেছে তাদের মধ্যে বুয়াইয়া ছিল অন্যতম। আর তারাই আব্বাসীয় শাসনামলে প্রথম স্বাধীনভাবে রাজ্য পরিচালনা করেছিল।
→ বুয়াইয়া রাজবংশ প্রতিষ্ঠা : নিম্নে বুয়াইয়াদের রাজবংশ প্রতিষ্ঠার প্রেক্ষাপট তুলে ধরা হলো :
১. ধর্মগ্রহণ : আব্বাসীয় শাসনামলে এক নতুন রাজবংশের উত্থান হয় তার নাম হলো বুয়াইয়া রাজবংশ। বুয়াইয়াদের আদি পিতারা খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী ছিলেন। নিজ মাতৃ ও পিতৃভূমি ছেড়ে যখন ত্যাগ করে তাবারিস্তানে আসেন তখন উন্নত সংস্কৃতিতে মিশে যায় এবং শিয়া ইসলাম গ্রহণ করেন।
সামাজিক কর্মকাণ্ড নতুন মাত্রা যোগ করা হয় মূলত ইসলামের ধর্ম গ্রহণের মাধ্যমে। পরবর্তীতে বুয়াইয়া শাসকদের পৃষ্ঠপোষকতার শিয়া মতালম্বীদের প্রভুত্ব উন্নতি সাধন করা হয় এবং ঐতিহাসিকগণ মনে করেন বুয়াইয়ারা ইসলাম ধর্ম গ্রহন না করলে তাদের ইতিহাস লিপিবদ্ধ করা হতো না।
২. বুয়াইয়াদের বাগদাদে আসার আহ্বান : রাজধানী সিরাজ থেকে বুয়াইয়াগণ আব্বাসীয় সাম্রাজ্যের উপর সবেগে ধাবিত হয়ে ইরাকের আলওয়াসিত দখল করেন।
এ সময় তুর্কী বাহিনীর ঔদ্ধত্য ও দৌরাত্ম্য অতিষ্ঠ হয়ে বাগদাদে দুর্বল আব্বাসীয় খলিফা আল মুসতাকাফি (৯৪৪-৯৪৬) আবু সুজা বুয়াইয়ার কনিষ্ঠ পুত্র আহমদকে স্বেচ্ছায় রাজধানীতে আহ্বান করেন ।
৩. সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা : বুয়াইয়া আমিরগণ কর্তৃক স্থাপিত ইরাক ও পারস্যের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাজ্যগুলোর মত একটি সংঘবদ্ধ রাজ্য গঠন করা হয় এবং খলিফা হারুনের সাম্রাজ্য এর মত একটি বিস্তৃতি সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করা হয়। বুয়াইয়া সুলতানগণ সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেই ক্ষান্ত হননি তারা সাম্রাজ্যর সংহতি বিধানে সদা সর্বদা প্রচেষ্টায় ছিলেন।
৪. প্রাথমিক কার্যাবলি : বুয়াইয়া সুলতানদের প্রাথমিক কার্যাবলি ছিল অনেক। যখন ইতিহাস খ্যাত দাইলামি গোষ্ঠী জিয়ারী বংশ প্রতিষ্ঠা করে তাবারিস্তানে তখন বুয়াইয়া পরিবারের ভূমিকা ছিল অপরিসীম।
এ বংশের ভূমি প্রাধান্য দিন দিন বাড়তে থাকে। জিয়ারী প্রধান ছিলেন মারদাভিজ। যিনি বুয়াইয়া সুলতান আবু সুজার জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা আলীকে তার গুণে মুগ্ধ হয়ে কাবাজের গভর্নর নিয়োগ করেন।
৫. রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা : আবু সুজার তিন পুত্র তদীয় পিতার মৃত্যুর পর আহমদ, আলী ও হাসান দক্ষিণ দিকে অভিযান চালিয়ে ৯৩৪-৯৩৬ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে সিরাজ ইস্পাহান, খুজিস্তান, কিরমান ও আহওয়াজ প্রভৃতি স্থানে শাসানীয়দের নিকট থেকে দখল করে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেন।
বুয়াইয়াদের রাজধানী স্থাপন করা হয় সিরাজ নগরীতে। আর রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বুয়াইয়া শাসকগণ তাদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হন।
৬. বুয়াইয়া বংশ প্রতিষ্ঠা : আহমদ খলিফার আহ্বানে সাড়া দিয়ে ৯৪৫ খ্রিস্টাব্দের নভেম্বর মাসে বাগদাদ এ প্রবেশ করলে তুর্কী আমির উল উমারা আবু জাফর এবং তুর্কি বাহিনী পালিয়ে যায়।
এর মধ্যে দিয়েই মূলত আহমদ বাগদাদে রাজবংশ প্রতিষ্ঠা করেন তা তার পিতার নামানুসারে বুয়াইয়া রাজবংশ নামকরণ করা হয়। খলিফা সন্তুষ্ট হয়ে আহমদকে তার আমির উল উমারা নিযুক্ত করেন এবং মুইজ উদ-দৌলা উপাধিতে ভূষিত করা হয়।
৭. অর্থনৈতিক স্বাবলম্বী : বুয়াইয়া সুলতানগণ বাগদাদ নগরীতে নিজেদের সুপ্রতিষ্ঠিত করতে সর্বপ্রথম নিজেদেরকে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করে তুলেন। কারণ তারা মনে করেছিল অর্থের সঠিক যোগান ব্যতীত একটি রাজবংশ সঠিকভাবে কখনোই প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হবে না।
কিন্তু তিনি আলীর প্রতি সন্দেহের চোখে দেখে ক্ষমতাচ্যুত করলে আলী বিদ্রোহ করেন এবং দক্ষিণ দিকে যাত্রা করে বাগদাদের খলিফার বাইরের ছাউনী উড়িয়ে দিয়ে ফারস দখল করেন।
৮. রাজ্য বিজয় : ইসলামের ইতিহাসের পাতা থেকে জানতে পারা যায় যে, প্রত্যেক শাসক কম বেশি রাজ্য জয়ের মনোনিবেশ করতেন। তারই ধারাবাহিকতায় বুয়াইয়ারা সামানিদের কাছ থেকে তারাবিস্থান ও জাবলী দখল করেন।
হাসান অতি দ্রুততার সাথে রায় এবং জাবলে নিজ কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেন। অপর দিকে কনিষ্ঠভ্রাতা আহমদ ৯৩৫-৩৬ খ্রিস্টাব্দের মাঝে আওয়াজ ও কিরমান দখল করেন ।
৯. বিশাল সৈন্যবাহিনী গঠন : আব্বাসীয় শাসনামলে বুয়াইয়া সুলতানগণ তাদের নিজ ক্ষমতা প্রতিষ্ঠিত করার জন্য এক শক্তিশালী সৈন্য বাহিনী গঠন করেন। আবু সুজার তিন পুত্র অত্যন্ত বুদ্ধিমত্তার মাঝে তাদের রাজনৈতিক কার্যাবলি পরিচালনা করতে থাকেন।
আর তাদের সৈন্যবাহিনীর সদস্য সম্পর্কে ঐতিহাসিকগণ মনে করে কয়েকশত লোক-এর একটি সুশৃঙ্খল বাহিনী ছিল। এই সৈন্যবাহিনীর মাধ্যমে তারা অনেক সাফল্যজনক প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করেন। বুয়াইয়া সুলতানরা দক্ষিণ সমতল ভূমি নিজের বলে তথা ইরান ভূমিকে নিজের মনে করতেন।
১০. খিলাফতকে পতন থেকে রক্ষা : বুয়াইয়া সুলতানরা যখন বাগদাদে নগরীর ক্ষমতায় আসীন হন তারা আব্বাসীয় সাম্রাজ্যকে আসন্ন বিপদ থেকে রক্ষা করেন।
আব্বাসীয়দের দুর্বল শাসননীতি, পরবর্তী খলিফাদের অযোগ্যতা, অকর্মণ্যতার ফলে তারা ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে উপনীত হন। আর এ সময় তারা আব্বাসীয়দের পতনের হাত থেকে রক্ষা করে ইতিহাসের পাতায় চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন ।
১১. ক্ষমতা কুক্ষিগতকরণ : আব্বাসীয়দের পতনের সময় তাদের সকল ক্ষমতা দিন দিন হ্রাস পেতে থাকে। এ সময় আব্বাসীয়দের ক্ষমতা থেকে বঞ্চিত করা হয়।
বুয়াইয়া সুলতানগণ তাদের ক্ষমতা বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে আব্বাসীয়দের প্রশাসনিক রাজনৈতিক সহ গুরুত্বপূর্ণ পদ থেকে অপসারিত করা হয় এবং খলিফাদের নামে মাত্র শাসক হিসেবে রাজ্যের প্রধান হিসেবে রাখা হয় ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, বুয়াইয়াদের শাসন ইতিহাস আব্বাসীয় খলিফাদের অক্ষম ও অযোগ্য শাসনের নিষ্ফল ইতিহাস। খেলাফতের এক সংকটজনক মুহূর্তে বুয়াইয়াদের আবির্ভাব ঘটে। সে সময় তারা খিলাফতের অধঃগতিকে দমন করতে পারলেও অন্তপক্ষে এক শতাব্দীকাল ঠেকিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে তাদের প্রভুত্ব কায়েম করেছিল।
কোনো কোনো ঐতিহাসিকগণ বুয়াইয়াদের চরিত্রের উপর ভিত্তি করে নিষ্ঠুর এবং বিশ্বাসলংঘনকারী বলে অভিহিত করলেও বুয়াইয়া শাসকগণ জ্ঞানবিজ্ঞান বিকাশে এবং ইসলামের খিলাফত ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে তারা নিজের কৃতিত্ব বিচারে চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন ।
আর্টিকেলের শেষকথাঃ বুয়াইয়া রাজবংশ প্রতিষ্ঠার প্রেক্ষাপট আলোচনা কর
আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম বুয়াইয়া রাজবংশ প্রতিষ্ঠার প্রেক্ষাপট আলোচনা কর । যদি তোমাদের আজকের এই পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো।