বুয়াইয়া আমিরাতকে কনফেডারেশন বা কনফেডারেসি করা যায় কি
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো বুয়াইয়া আমিরাতকে কনফেডারেশন বা কনফেডারেসি করা যায় কি জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের বুয়াইয়া আমিরদের কনফেডারেশন বা কনফেডারেসি কী ছিল।
বুয়াইয়া আমিরাতকে কনফেডারেশন বা কনফেডারেসি করা যায় কি |
বুয়াইয়া আমিরাতকে কনফেডারেশন বা কনফেডারেসি করা যায় কি
উত্তর : ভূমিকা : খ্রিস্টীয় দশম শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে আব্বাসীয় শাসনামলে বুয়াইয়াদের উত্থান হয় এবং একাদশ | শতাব্দী পর্যন্ত খিলাফত পরিচালনা করে। এ সময় আব্বাসীয়দের সর্বাপেক্ষা দুর্ভাগ্যজনক অধ্যায়ের সূচনা হয়।
বুয়াইয়াগণ আব্বাসীয় খলিফাদের তাদের হাতের ক্রীড়নড়কে পরিণত করেন। মূলত খলিফাদের উত্থান-পতন তারা অনায়াসে করতে পারতেন। আর বুয়াইয়াগণ এর শাসনামলে তাদের সাম্রাজ্য সংহতি ও বিস্তৃতি এর লক্ষ্য একটি শক্তিশালী শাসনব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয়।
মূলত একটি আন্তর্জাতিক চুক্তির মাধ্যমে কেন্দ্রীয় সরকারের অন্তর্ভুক্ত করে বিভিন্ন রাজ্যগুলো পরিচালনা করার মাধ্যমকে কনফেডারেশন বলা হয় ৷নিম্নে কনফেডারেশনের বিস্তারিত তুলে ধরা হলো :-
১. কনফেডারেশন কনফেডারেসি : কনফেডারেশন শব্দের অর্থ হলো সংঘ, মৈত্রী, সমিতি, সমবায়। বুয়াইয়া শাক আবু সুজার বিশাল রাষ্ট্রকে সুন্দরভাবে পরিচালনা জন্য ও পত্রের ক্ষমতা বিধানের যে শাসনব্যবস্থার প্রবর্তন করেছেন তাকে কনফেডারেশন কনফেডারেসি বলা হয়।
অন্যভাবে বলতে পারি শাসনব্যবস্থা নিজ হস্তে হস্তগত করা রাজ্যের সংহতি বিধান, সুবিশাল সাম্রাজ্যকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য মূলত যে ব্যবস্থা করা হয় তাকে আমরা কনফেডারেশন বা কনফেডারেসি বলে থাকি। বুয়াইয়া শাসকদের আমলে এই কনফেডারেসি ব্যবস্থার পুনঃপ্রবর্তন হয়েছিল।
২. নতুন সাম্রাজ্য গঠন : বুয়াইয়াদের নতুন সাম্রাজ্য গড়ার স্বপ্ন দেখা শুরু হয় মূলত জিয়ারী সরকার প্রধান মারাদাভিজ নিহত হলে। আর এই স্বপ্ন বাস্তবায়নের মূল হাতিয়ার ছিল আবু সুজার তিন পুত্র আহমদ, আলী ও হাসান। তারা ইতিমধ্যে কয়েকশ লোক নিয়ে গড়ে তুলে সুশৃঙ্খল সেনাবাহিনী।
জাবালে ও রায় অঞ্চলে হাসান দ্রুত কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেন এবং এভাবে দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে থাকে বুয়াইয়া পরিবারের নেতৃত্বে পারস্যের বিপুল এলাকা জুড়ে গড়ে উঠে নয়া পারস্যে সাম্রাজ্য এবং তার রাজধানী হয় সিরাজ নগরীতে।
৩. বাগদাদ দখল : বুয়াইয়া শাসকগণ তাদের সাম্রাজ্য সৃদৃঢ়, শক্তিশালী করার প্রথম দিকে সুযোগ পেলেও বুয়াইয়ারা এ বাগদাদ দখল করলে জন্য আদৌ অস্থির হয় নি অথবা বাগদাদের তথাকথিত আমির উমারা পদটির প্রতি কোনো মোহ ছিল না। তাই তারা বাগদাদ সম্পর্কে অপেক্ষা করে এবং কৌশল অবলম্বন করেন।
বুয়াইয়া শাসকদের কনফেডারেসি পরিচালনার ক্ষেত্রে বাগদাদ দখল একটি অন্যতম ঘটনা বলে অভিহিত হয়ে থাকে। ৯৪৫ খ্রিস্টাব্দে আহমদ বুয়াইয়া বাগদাদ আক্রমণের প্রস্তুতি গ্রহণ করেন এবং তা বাস্তবে পরিণত করে বাগদাদ দখল করেন।
৪. যৌথ নেতৃত্বের ধারণা : আব্বাসীয় শাসনামলে আবু সুজার তিন পুত্র তার বীর বিক্রম সাহসী পুরুষ ছিলেন। তিন পুত্র আহমদ, হাসান এবং আলী তাদের প্রবল সংগ্রামের মধ্যদিয়ে ভ্রাতৃত্বের যৌথ ধারণা পোষণ করেন।
পারস্য তাদের বিজিত অঞ্চলকে তিনভাগে ভাগ করে শাসন পরিচালনা করেন, এ তিন ভ্রাতাকে এক এক অঞ্চলের প্রধান কমকর্তা নিযুক্ত করা হয় ।
৫. ঐতিহ্যবাহী সালতানাত প্রথার প্রবর্তন : বুয়াইয়ারা বাগদাদে যুগ যুগ ধরে গড়ে উঠা খেলাফতের সাথে জাহানাদারি বা সালতানাতের প্রবর্তন করেন।
তাদের ধারণা ছিল খলিফা হবেন মুসলিম সম্প্রদায়ের আধ্যত্মিক নেতা, সুলতান হবেন রাজনৈতিক প্রধান। এরূপ সালতানাত বা জাহানদারি ধারণা মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে তেমন গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করেনি ।
৬. জুমার খুৎবার সুলতানের নাম পাঠের নীতি : বুয়াইয়া শাসনামলে সুলতানদের নামের সাথে জুমার নামাজের খুতবার সাথে তাদের নাম পাঠ ব্যবস্থা করেন। এর মাধ্যমে তাদের সম্মান, প্রতিপত্তি বৃদ্ধি পেতে থাকে। তখনই সার্বভৌমত্বের প্রতীকে তার নাম অঙ্কিত করার নীতি প্রতিষ্ঠিত হয়।
৭. খলিফার পদ সংরক্ষণ : আব্বাসীয় শাসনামলে ক্ষুদ্র, রাজবংশ বুয়াইয়া খলিফাগণ বাগদাদের উপর বুয়াইয়াদের প্রাধান্য বিস্তার ইতিহাসে এক চমকপ্রদ ঘটনা। বুয়াইয়ারা কৌশলগত কারণে খলিফার পদটি অপসারণ না করে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করেন।
যার ফলশ্রুতিতে আব্বাসীয় খলিফাকে সর্বপ্রকার প্রশাসনিক কাজ থেকে অব্যহতি দেওয়া হয় এবং অর্থনৈতিক ক্ষমতা থেকে বঞ্চিত করে খলিফাকে দৈনিক ৫,০০০ স্বর্ণমুদ্রার প্রদান করার ব্যবস্থা করা হয়। এভাবে খলিফার পদটি সংরক্ষণ এর ব্যবস্থা করা হয়।
৮. শিয়া সুন্নিদের ঐক্য গঠন : বুয়াইয়ারা শিয়া ও সুন্নিদের সাথে সমতা রেখে চলতেন। সুন্নিদের অনুভূতির প্রতি শ্রদ্ধার জন্য তাদের স্বীকৃত আমিরুল মুমিনকে সীমিত অর্থে খিলাফতের পদে আসীন করা হয় এবং শিয়া মতাবলম্বীদের সন্তুষ্টি অর্জনের চেষ্টা করা হতো।
৯. প্রধানমন্ত্রী/উজির নিয়োগ প্রথা চালু : বুয়াইয়া শাসকগণ যখন বাগদাদে প্রবেশ করেছিলেন, তখন তারা একটি বিশৃঙ্খল প্রশাসনিক ব্যবস্থা পেয়েছিলেন। আব্বাসীয়রা যদিও তাদের স্বর্ণযুগ পারস্যের অনুকরণে উজির পদের প্রবর্তন করেন তবে অনেক সময় পরিলক্ষিত হতো আব্বাসীয় শাসক উজির ব্যতীত চলতো।
১০. ধর্মীয় স্বাধীনতা : বুয়াইয়া শাসনামলে তাদের কনফেডারেসির অন্যতম বৈশিষ্ট্য ছিল সকলের জন্য ধর্মীয় স্বাধীনতা প্রদান করা ।
১১. বুয়াইয়াদের বিভিন্ন অভিযান : বুয়াইয়া শাসনামলে তারা বিভিন্ন অভিযান পরিচালনা করেন। পূর্ব আফ্রিকার জনতারা ওমান দখল করলে বুয়াইয়া প্রথমে ৯৬৫ খ্রিস্টাব্দে এবং পরে আরো দু'বার অভিযান পরিচালনা করে তা পুনরুদ্ধার করেন, পারস্যের অভিযান ও কাতার অঞ্চলে অভিযান পরিচালনা করে | ইসলামের ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন ।
১২. স্থাপত্যশিল্পের পৃষ্ঠপোষকতা : বুয়াইয়া শাসনামলে স্থাপত্যশিল্পে এক প্রভূত উন্নতি লাভ করেছিল। যদিও বুয়াইয়া শাসক আজাদ- উদ-দৌলা সিরাজ তার রাজদরবার প্রতিষ্ঠা করেছিলেন তথাপি, তিনি বাগদাদ নগরীতে অসংখ্য হমরাজি নির্মাণ করে তার সৌন্দর্য বহুগুণে বর্ধিত করেন।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, বুয়াইয়া শাসককর্তৃক যে কনফেডারেসি অর্জিত হয়েছিল তা মূলত কনফেডারেশন ছিল।
কেননা সাম্রাজ্য আঞ্চলিক নিরাপত্তা বিধান, স্বায়ত্তশাসননীতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে সাম্রাজ্যের সংহতি ও সমৃদ্ধির রক্ষার নীতি দৃঢ়ভাবে অনুসরণ করেন।
ইসলামের ইতিহাসে বুয়াইয়া শাসকদের দ্বারা গঠিত কনফেডারেশন সত্যই তা ইতিহাসের পাতায় বিরল হয়ে আছে।
আর্টিকেলের শেষকথাঃ বুয়াইয়া আমিরাতকে কনফেডারেশন বা কনফেডারেসি করা যায় কি
আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম বুয়াইয়া আমিরদের কনফেডারেশন বা কনফেডারেসি কী ছিল। যদি তোমাদের আজকের এই পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো।