বাৰ্মাকি পরিবারের উত্থান ও পতনের ইতিহাস আলোচনা কর
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো বাৰ্মাকি পরিবারের উত্থান ও পতনের ইতিহাস আলোচনা কর জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের বাৰ্মাকিগণ কে ছিলেন? তাদের উত্থান ও পতনের বিবরণ দাও ।
বাৰ্মাকি পরিবারের উত্থান ও পতনের ইতিহাস আলোচনা কর |
বাৰ্মাকি পরিবারের উত্থান ও পতনের ইতিহাস আলোচনা কর
- অথবা, বাৰ্মাকিগণ কে ছিলেন? তাদের উত্থান ও পতনের বিবরণ দাও ।
- অথবা, বার্মাকি উজির পরিবারের উত্থান ও পতনের ঘটনাবলি আলোচনা কর।
- অথবা, বাৰ্মাকি উজির পরিবার সম্পর্কে ধারণা দাও।
উত্তর : ভূমিকা : আব্বাসীয় যুগ আরব সভ্যতা তথা পৃথিবীর ইতিহাসে এক গৌরবোজ্জ্বল যুগ হিসেবে পরিচিত। এ যুগে আব্বাসীয় খিলাফতে পারসিক উজির পরিবারের উত্থান ও পতন একটি তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা। আব্বাসীয় খলিফাদের সাথে বার্মাকিদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল।
আব্বাসীয় আন্দোলন ও খিলাফত প্রতিষ্ঠায় বার্মাকিদের অবদান অনস্বীকার্য। তাদের বুদ্ধিমত্তা, বিশ্বস্ততা ও সেবা দ্বারা আব্বাসীয় রাজত্বকে এক উন্নতির শিখরে পৌঁছে দিয়েছিল। হারুন অর-রশিদের রাজত্বের গৌরব ও প্রসিদ্ধির মূলে ছিল বার্মাকি বংশের অক্লান্ত পরিশ্রম এবং অপূর্ব কর্মকুশলতা।
এ সম্পর্কে আমির আলী বলেন, “তাদের প্রচেষ্টার ফলে জনসাধারণ সমৃদ্ধশালী ও সুখী ছিল। সাম্রাজ্য ঐশ্বর্যমণ্ডিত ও শক্তিশালী হয়ে উঠেছিল জাতীয় সম্পদ বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়েছিল এবং সর্বত্র সভ্য জীবনের শিল্পকলার অনুশীলন হতো।” এতদসত্ত্বেও বার্মাকি পরিবারের পরিণতি হয়েছিল মর্মান্তিক।
হারুনের রাজত্বকালেই তাদের পতন ঘটে। তাদের উত্থান যেমন বিস্ময়কর। তাদের পতনও ছিল আকস্মিক, মর্মান্তিক ও নাটকীয়। তবে বার্মাকি পরিবারের পতন নিয়ে ঐতিহাসিকদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে।
→ বার্মাকিদের পরিচয় : খালিদ বিন বার্মাকি ছিলেন বার্মাকি বংশের প্রতিষ্ঠাতা। তিনি একজন পারসিক ছিলেন। তার পিতা ছিলেন বলখের বৌদ্ধ বিহারের প্রধান পুরোহিত বা বার্মাক। এ বার্মাক নাম থেকেই বার্মাকি বংশের নামকরণ করা হয়।
৭০৫ খ্রিস্টাব্দে উমাইয়া খলিফা প্রথম ওয়ালিদের রাজত্বকালে সেনাপতি কুতায়বা বিন মুসলিম কর্তৃক মধ্য এশিয়া জয়ের সময় খালিদের মাতাকে যুদ্ধবন্দিনী করে দামেস্কে আনা হয়। যুদ্ধবন্দি অবস্থায় তিনি সন্তানসম্ভবা ছিলেন। দামেস্কে আসার পর কুতায়বার ভ্রাতা আব্দুল্লাহর রক্ষণাবেক্ষণে ছিলেন।
সে সময় তিনি খালিদ নামে এক পুত্র সন্তানের জন্ম দেন। শৈশব থেকেই খালিদ বুদ্ধিমান ও চতুর ছিল। বয়ঃপ্রাপ্ত হয়ে তিনি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। তার প্রতিষ্ঠিত বংশই ইসলাম তথা বিশ্বের ইতিহাসে বার্মাকি নামে পরিচিত।
→ বার্মাকিদের উত্থান : নিম্নে বার্মাকি বংশের উত্থান সম্পরে আলোচনা করা হলো :
১. বার্মাকি বংশের প্রতিষ্ঠাতা খালিদ বার্মাক : আব্বাসীয় বংশ প্রতিষ্ঠায় খালিদ বার্মাক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। এর প্রতিদানস্বরূপ খলিফা আবুল আব্বাস আস সাফফাহ তাকে রাজ বিভাগের প্রধান হিসেবে নিযুক্ত করেন পরবর্তীতে আব্বাসীয়গণ কর্তৃক উজির পদ সৃষ্টি হলে আবুল আব্বাস আস সাফফাহ তাকে সর্বপ্রথম উজির পদে নিয়োগ করেন।
তারও পরে খলিফা আল মনসুর তাকে মেসোপটেমিয়ার শাসনকর্তা হিসেবে নিযুক্ত করেন। এমন কি বাগদাদ নগরী নির্মাণ ও দেখাশুনা করার ভার তার উপর অর্পণ করেন। খলিফা মনসুর তাকে মসুলের শাসনকর্তা নিয়োগ করেন ৭৬৫ খ্রিস্টাব্দে। কারণ, তিনি সেখানে বিদ্রোহ দমনে সক্ষম হয়েছিলেন।
মনসুরের মৃত্যু পর্যন্ত খলিফা উক্ত পদে বহাল রাখেন। খলিফা আল মাহদীর সময় খালিদ বিন বার্মাকি রাজকুমার হারুনের সাথে রোমান সাম্রাজ্ঞী আইরিনকে দমন করেন। খালিদ বৃদ্ধ বয়সে মাহদীর উপদেষ্টা নিযুক্ত হন। এ সময় খালিদ তার রণকৌশল ও কর্মদক্ষতা দ্বারা বিশেষ খ্যাতি অর্জন করেন।
এই আব্বাসীয় আমলেই বার্মাকি বংশের সূত্রপাত ঘটতে থাকে। এই বাৰ্মাকি বংশের প্রতিষ্ঠায় যিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন এবং যার হাত ধরে এই বংশের বিকাশ ঘটতে থাকে তিনি হলেন খালিদ বিন বাৰ্মাকি।
২. ইয়াহইয়া বিন খালিদ : খালিদ বিন বার্মাকির পুত্র ছিলেন। ইয়াহহিয়া বিন খালিদ। তিনিও পিতার মতো বুদ্ধিমান ও জ্ঞানী ছিলেন। খলিফা আল মনসুর তাকে ৭৬৫ খ্রিস্টাব্দে আর্মেনিয়ার শাসনকর্তা নিযুক্ত করেন।
পরবর্তীকালে খলিফা মাহদী তার পুত্র হারুনের জন্য ইয়াহইয়াকে গৃহশিক্ষক নিযুক্ত করেন। হারুন ইয়াহহিয়াকে খুব শ্রদ্ধা করতো। খলিফা হাদি উত্তরাধিকার স্বত্ত্ব হতে হারুনের নাম বাদ দিতে চাইলে ইয়াহইয়া তার প্রতিবাদ করেন। এতে হাদি তাকে কারারুদ্ধ করে। খলিফা হয়েই হারুন ইয়াহইয়াকে কারামুক্ত করেন এবং তাকে উজির পদে নিযুক্ত করেন ।
এমন কি তার হাতে সাম্রাজ্যের ভার ছেড়ে দেন। খলিফা হারুনের মাতা খায়জুরানের পৃষ্ঠপোষকতায় ইয়াহইয়া অনেক প্রভাব-প্রতিপত্তি অর্জন করেছিল। এভাবে তিনি আব্বাসীয় আমলে বাৰ্মাকি বংশকে সুদৃঢ় করেন ।
৩. ফজল : ইয়াহহিয়ার চার পুত্রের মধ্যে ফজল চরম প্রভাব- প্রতিপত্তি লাভ করেন। শৈশব থেকেই ফজল হারুনের খেলার সাথী ছিলেন এবং ফজল তাকে ভাই বলে সম্বোধন করতেন। হারুনও তাকে খুব ভালোবাসতেন। ফজল পিতার ন্যায় দক্ষ রাজনীতিবিদ ছিলেন।
খোরাসানের বিদ্রোহ দমনে সক্ষম হয়েছিলেন বলে খলিফা হারুন তাকে প্রথমে খোরাসানের | শাসনকর্তা নিযুক্ত করেন। পরবর্তীকালে তাকে মিশরের শাসনকর্তা নিযুক্ত করেন। তার শাসনকালে সাম্রাজ্যে শান্তি বিরাজমান ছিল। তিনি তাকে উজির পদে নিযুক্ত করেন। তার সময়েও বার্মাকি বংশের প্রভাব বৃদ্ধি পেয়েছিল।
৪. জাফর : বার্মাকি বংশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ও প্রভাবশালী ব্যক্তি ছিলেন জাফর। তিনিও হারুনের অন্তরঙ্গ বন্ধু ছিলেন। তিনি বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন প্রদেশের শাসনকর্তা নিযুক্ত ছিলেন। পরবর্তীকালে তিনি উজির পদে নিযুক্ত হন।
তাছাড়া সিরিয়ার শাসনকর্তা হিসেবে হিমারীয় ও মুদারীয়দের দীর্ঘদিনের কলহের নিষ্পত্তি তার একটি অবিস্মরণীয় অবদান। তিনি জ্ঞানবিজ্ঞান, শিক্ষা, সংস্কৃতি ও জনকল্যাণমূলক কার্য দ্বারা ব্যাপক খ্যাতি অর্জন করেন।
৫. মুসা ও মুহম্মদ : ইয়াহহিয়ার পুত্রদ্বয় মুসা ও মুহাম্মাদ বার্মাকি বংশের অন্যতম প্রধান দুই ব্যক্তিত্ব। খলিফা হারুন-অর- রশীদ মুসা ও মুহাম্মাদকে রাজ্যের বিভিন্ন প্রদেশে দায়িত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত করেন। তারা আব্বাসীয় সাম্রাজ্যের সংহতি ও সমৃদ্ধি বৃদ্ধিতে যথেষ্ট সহায়তা করেন।
তারা কলা ও সাহিত্যের পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। তাদের উৎসাহ ও প্রচেষ্টায় সাম্রাজ্যে মসজিদ, মাদ্রাসা, খাল, রাস্তাঘাট প্রভৃতি জনকল্যাণকর প্রতিষ্ঠান। গড়ে উঠে। এভাবে ১৭ বছর তারা বার্মাকি বংশের গৌরব ধরে রাখেন আব্বাসীয়দের সহায়তার মাধ্যমে।
→ পতনের ঘটনা : খলিফা হারুন অর রশিদের রাজত্বকালে প্রথম ১৭ বছর বার্মাকিরা তাদের কর্মপ্রচেষ্টা, দক্ষতা ও বিশ্বস্ততা দ্বারা আব্বাসীয় সাম্রাজ্যের মর্যাদা বহুগুণে বৃদ্ধি করেছিলেন। কিন্তু তা সত্ত্বেও বার্মাকিদের পরিণতি হয়েছিল মর্মান্তিক।
হারুন হঠাৎ এক রাতে জাফরকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার নির্দেশ প্রদান করেন এবং তার পিতা ইয়াহহিয়া ও অপর তিন ভ্রাতাকে বন্দি করেন। জাফরকে মৃত্যুদণ্ড দেয় হলো এবং তার পিতা ইয়াহহিয়া ও ভ্রাতা ফজল কারাগারেই প্রাণ ত্যাগ করেন।
পরবর্তীকালে অবশ্য তার ভ্রাতা মুসা ও মুহাম্মাদ কারাগার হতে মুক্তি লাভ করেছিল। এভাবে বার্মাকি বংশের পতন ঘটে।→ বার্মাকিদের পতন : ঐতিহাসিকগণ বার্মাকিদের পতনের পেছনে বিভিন্ন কারণ নির্দেশ করেছেন। নিম্নে বার্মাকিদের পতনের কারণসমূহ আলোচনা করা হলো :
১. আব্বাসার সাথে জাফরের গোপন বিবাহ : অনেক ঐতিহাসিকের মতে, হারুনের ভগ্নী আব্বাসার সাথে প্রধানমন্ত্রী জাফরের গোপন বিবাহই বার্মাকি বংশের পতনের অন্যতম প্রধান কারণ ছিল। কথিত আছে, খলিফা হারুন তার বোন আব্বাসাকে জাফরের সাথে মাঝে মাঝে নৈশভোজে যোগদানের জন্য আহ্বান করতেন।
কিন্তু প্রজাসাধারণের মধ্যে বাজে গল্প রটানো হয়। এর ফলে আব্বাসা তার সাথে নামে মাত্র বিবাহ দেন। কিন্তু হারুন উভয়ের মধ্যে ঘনিষ্ঠভাবে মেলামেশা, বিশেষ করে তার অসাক্ষাতে দেখাশুনা করা নিষিদ্ধ করে দেন। কিন্তু কিছুদিন পর আব্বাসা এক সন্তান জন্মগ্রহণ করেন। খলিফার নিকট এ সংবাদ গোপন রেখে নবজাতক শিশুটিকে রাক্কা হতে মক্কায় পাঠিয়ে দেওয়া হয় ।
খলিফা। হজ্ব উপলক্ষে মক্কায় গমন করলে এ কথা জানতে পারে। এ কারণে জাফরের প্রতি তার মনে তীব্র ঘৃণার উদ্রেক হয়। ফলে খলিফা জল্লাদকে নির্দেশ প্রদান করেন জাফরকে হত্যা করার। তার খণ্ডিত দেহ বাগদাদের সেতুর প্রবেশ পথে ঝুলিয়ে রাখতে বলা হয় । এভাবে বার্মাকি বংশের পতন ঘটতে থাকে ।
২. বার্মাকিদের অগাধ সম্পত্তি ও প্রভাব-প্রতিপত্তি : আব্বাসীয় যুগে বার্মাকিরা অগাধ সম্পত্তি ও অতিরিক্ত প্রভাব-প্রতিপত্তি লাভ করেছিলেন। এ সম্পর্কে ইবনে খালদুন বলেন, “বার্মাকিদের পতনের প্রকৃত কারণ হলো তাদের অগাধ সম্পত্তি অসীম ক্ষমতা ও প্রভাব-প্রতিপত্তি।
” বার্মাকিরা প্রচুর ক্ষমতা হস্তগত করেন। এমন কি রাষ্ট্রীয় তহবিল তাদের নিয়ন্ত্রণে ছিল। খলিফা হারুন তাদের নিকট অর্থ প্রার্থনা করেন। কিন্তু মাঝে মাঝে হারুন সামান্য পরিমাণ অর্থও পেতেন না। রাষ্ট্রের সকল সামরিক ও বেসামরিক সকল উচ্চ পদ তাদের বংশের লোক দ্বারা স্থলাভিষিক্ত ছিল।
রাষ্ট্রের সকল জনগণ তাদের উপর নির্ভরশীল ছিল। সাম্রাজ্যের প্রত্যেক প্রদেশ, গ্রাম ও শহরে তারা প্রচুর পরিমাণ দান সামগ্রী বিতরণ করতেন। ফলে খলিফা এ প্রভাব-প্রতিপত্তির জন্য বার্মাকিদের ধ্বংস করে দেন।
৩. রাজ্যের আমির ও উচ্চপদস্থ কর্মচারীদের শত্রুতা : বার্মাকিদের অগাধ সম্পত্তি, চরম প্রভাব-প্রতিপত্তি আড়ম্বরপূর্ণ জীবনযাত্রা ও অতিরিক্ত জনপ্রিয়তা শুধু খলিফা হারুনকেই নয়, রাজ্যের আমির ও উচ্চপদস্থ কর্মচারীদের মধ্যেও প্রবল অসন্তোষ, ঈর্ষা ও প্রতিহিংসার উদ্রেক করে।
ইবনে খালদুন এ সম্পর্কে বলেন, “বার্মাকিদের এমন কয়েকজন মিত্র ছিলেন যারা জ্বলন্ত ঈর্ষার বসে আত্মীয়তার বন্ধন পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছিলেন, তারা নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য বার্মাকিদের বিরুদ্ধে খলিফার মন বিষাক্ত করে তোলেন।” হারুনের গৃহাধ্যক্ষ ফজল বিন রাবী বার্মাকি বিরোধী আন্দোলনের নেতৃত্ব গ্রহণ করেন।
আব্বাসীয় খিলাফতের উজির হবার আশায় তিনি বার্মাকিদের বিরুদ্ধে খলিফার নিকট রাষ্ট্র বিরোধী কার্যকলাপের অভিযাগ আনেন। ফলে খলিফা তাদের উচ্ছেদের পরিকল্পনা করেন ।
৪. বার্মাকিদের আব্বাসীয় স্বার্থবিরোধী কার্যকলাপ : বার্মাকিরা চরম প্রভাব-প্রতিপত্তি অর্জন করলে তারা আব্বাসীয় স্বার্থ বিরোধী কার্যক্রম শুরু করে দেয়। খলিফা হারুন তাদের এ রাষ্ট্র বিরোধী কার্যক্রম লক্ষ্য করলেন। প্রকৃতপক্ষে খলিফার উজির হিসেবে ইয়াহহিয়ার নিয়োগ হারুনের জন্য কৃতজ্ঞতা ও মঙ্গলের জন্য হয়নি।
খলিফার মতে খায়জুরান ছিলেন বার্মাকি পরিবারের পৃষ্ঠপোষক এবং তারই প্রভাবে ইয়াহহিয়া উজির পদে নিযুক্ত হন। তাছাড়া বার্মাকিরা আলী বংশের প্রতি খুব সহনশীল ছিলেন। এ সন্দেহ নিশ্চিত হয় যখন জাফরের কাছ হতে ইয়াহহিয়া বিন আব্দুল্লাহ নামে আলী বংশের একজন অপরাধী মুক্তি পায়।
এ কারণেই খলিফা মনে করেন যে, জাফর আলীপন্থিদের সহযোগিতা করছে আব্বাসীয় বংশ ধ্বংস করার জন্য। তাই তারা ধ্বংস করার পূর্বেই খলিফা তাদের ধ্বংস করে দেন।
৫. আব্বাসীয়দের স্বেচ্ছাচারী ও স্বৈরাচারী চরিত্র : আব্বাসীয় স্বৈরচারী ও স্বেচ্ছাচারী শাসন বার্মাকি বংশের পতনের অন্যতম কারণ ছিল। খলিফা হারুন নিজেও স্বেচ্ছাচারী শাসক ছিলেন। তাই বার্মাকিদের অত্যধিক প্রভাব-প্রতিপত্তি এবং অসীম ক্ষমতা খলিফার ক্রোধের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
সেজন্য তিনি বার্মাকিদের বরদাস্ত করতে চাইলেন না। এ সম্পর্কে ঐতিহাসিক ইবনে খালদুন বলেন,“যখন বার্মাকিরা সমস্ত কর্তৃত্ব অধিকার করে নিয়েছিল এবং জাতীয় রাজস্বের সম্পূর্ণ ক্ষমতা তাদের হাতে, তখন তারাই সাম্রাজ্যের প্রকৃত শাসন কর্তা।
” এক্ষেত্রে হারুনের পক্ষে তাদের সহ্য করা অসম্ভব হয়ে উঠল। হারুন মনে করলেন যে, বার্মাকিগণ কর্তৃক আব্বাসীয় বংশ ধ্বংসের পূর্বেই বার্মাকিদের সমূলে উৎখাত করতে হবে। বার্মাকিরাই আব্বাসীয়দের স্বৈরচারী শাসন গড়ে তুলতে সাহায্য করেছিল। এভাবে খলিফা তাদের সমূলে উৎখাত করে।
৬. বার্মাকিদের শিয়া সম্প্রদায়ের পৃষ্ঠপোষকতা : পারসিক পরিবারের সদস্য ছিলেন শিয়া সম্প্রদায়। কিন্তু আব্বাসীয় খলিফা হারুন-অর-রশীদ ছিলেন সুন্নি মতাবলম্বী। তাই তিনি শিয়া সম্প্রদায়ের বিদ্রোহ দমনে তৎপর হলেন। কিন্তু বার্মাকি পরিবার শিয়া মতাবলম্বী হওয়ায় তারা আব্বাসীয়দের বিপক্ষে শিয়াদের পৃষ্ঠপোষকতা করতেন। খলিফা এতে ক্রোধান্বিত হন। খলিফা তাদের ধ্বংস করার মনোনিবেশ করেন।
৭. সুন্নি মতবাদে আঘাত : বার্মাকিরা ছিলেন শিয়া মতবাদে বিশ্বাসী। শিয়া মতাবলম্বী বার্মাকিরা সে সমস্ত কার্যাবলি পরিচালনা করছিলেন তাতে আব্বাসীয়দের ধর্মীয় মতবাদে প্রচুর আঘাত হানে। সুন্নি মতবাদের ধারক ও বাহক খলিফা হারুন অর রশীদ শিয়াপন্থিদের কার্যাবলি পছন্দ না করে তাদেরকে ধ্বংস করে দেন।
উপসংহার : উপরিউক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায় যে, বার্মাকি বংশের উত্থান যেমন বিস্ময়কর, তেমনি তাদের পতন রহস্যকর ও নাটকীয়। বার্মাকিরা অত্যন্ত বিশ্বাস্ততা ও সততার সাথে সেবাকর্মে আব্বাসীয় সাম্রাজ্যকে গৌরবোজ্জ্বল ও সম্পদে পরিপূর্ণ করে তোলে।
জনকল্যাণমূলক কাজ ারা সাম্রাজ্যের জনগণের মনে অধিষ্ঠিত হয়েছিলেন বার্মাকিগণ। রাজ্যের সকল লোক তাদের দিকে তাকিয়ে থাকত, সকল মাথা তাদের সম্মুখে নত হতো। তাদের দানশীলতা সাম্রাজ্যের সকল দিকে বর্ধিত হতো। এভাবে তারা অপরিসীম ক্ষমতার অধিকারী হয়ে ওঠে, তাদের সুখ্যাতি চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়ে।
তাদের প্রশংসা সকল যুগে শোনা যেত এবং তারা তাদের প্রভু তাপেক্ষা বেশি জনপ্রিয় ছিল। তাই খলিফা হারুন বার্মাকিদের অপ্রতিরোধ্য ক্ষমতা বৃদ্ধিতে ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে উঠেন এবং বার্মাফিদের ধ্বংস করে দেন। এভাবে তাদের ধ্বংসের মধ্য দিয়ে আব্বাসীয় খিলাফত সন্দেহাতীতভাবে নিষ্কণ্টক হয়। তবে পৃথিবীর ইতিহাসে বার্মাকিদের পতন চির বিস্ময়কর।
আর্টিকেলের শেষকথাঃ বার্মাকি উজির পরিবারের উত্থান ও পতনের ঘটনাবলি আলোচনা কর
আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম বাৰ্মাকি উজির পরিবার সম্পর্কে ধারণা দাও। যদি তোমাদের আজকের এই পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো।