বাইজান্টাইনদের বিরুদ্ধে খলিফা হারুন অর রশিদের যুদ্ধসমূহ আলোচনা কর
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো বাইজান্টাইনদের বিরুদ্ধে খলিফা হারুন অর রশিদের যুদ্ধসমূহ আলোচনা কর জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের খলিফা হারুন-অর-রশিদের সাথে বাইজান্টাইনদের সম্পর্ক কেমন ছিল ।
বাইজান্টাইনদের বিরুদ্ধে খলিফা হারুন অর রশিদের যুদ্ধসমূহ আলোচনা কর |
বাইজান্টাইনদের বিরুদ্ধে খলিফা হারুন অর রশিদের যুদ্ধসমূহ আলোচনা কর
উত্তর : ভূমিকা : খলিফা হারন-অর-রশিদের রাজত্বকালে বাইজান্টাইনদের সাথে সংঘর্ষ একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা। সিংহাসন আরোহণের পূর্বেই তিনি বাইজান্টাইনদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন।
ক্ষমতা গ্রহণের পর তিনি বাইজান্টাইনদের কঠোর হস্তে দমনের পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। এ জন্য তিনি বিশাল সেনাবাহিনী গঠন করেন।
তিনি. অভ্যন্তরীণ শান্তি-শৃঙ্খলার ব্যাপারে যেমন সচেতন ছিলেন, তেমনি সীমান্ত অঞ্চলে যেন শত্রু আক্রমণ করতে না পারে সে বিষয়ে সচেতন ছিলেন।
আর এইসীমান্ত অঞ্চল রক্ষা করতে গিয়েই বাইজান্টাইনদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হন। তিনি স্বয়ং যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। বাইজান্টাইনদের | বিরুদ্ধে বার বার যুদ্ধে জয়লাভের মাধ্যমে তার কৃতিত্বের পরিচয় পাওয়া যায়।
কিন্তু বাইজান্টাইন সম্রাটকে বার বার ক্ষমা প্রদান করায় রোমানদের সম্পূর্ণ বসে আনা সম্ভব হয়নি। ফলে পরবর্তীতে ধর্মীয় যুদ্ধের সূত্রপাত হয়।
এজন্য ঐতিহাসিক ম্যুর বলেন, “রোমান সম্রাটকে পুনঃপুন ক্ষমা প্রদর্শন করে খলিফা যেমন অদূরদর্শিতার পরিচয় দিয়েছেন, তেমনি রোমানদের বিরুদ্ধে বার বার জয়লাভে তার রণনৈপুণ্যের পরিচয় পাওয়া যায় ।”
→ হারুনের পরিচয় : খলিফা হারুন-অর-রশীদ ছিলেন আব্বাসীয় বংশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ শাসক। তার পিতার নাম ছিল মাহদী। তার মাতার নাম খায়জুরান। ভ্রাতা ছিলেন আল-হাদী । ভ্রাতা আল হাদীর মৃত্যুর পর তিনি আব্বাসীয় খিলফাতে অধিষ্ঠিত হন ।
সিংহাসন আরোহণ : ভ্রাতা আল হাদীর মৃত্যুর পর হারুন-অর-রশীদ ৭৮৬ খ্রিস্টাব্দে ২৫ বছর বয়সে বাগদাদের সিংহাসনে আরোহণ করেন ।
→ বাইজান্টাইদের সাথে যুদ্ধ : খলিফা হারুন-অর-রশিদের সাথে বাইজান্টাইনদের যে যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল তা নিম্নে আলোচনা করা হলো-
১. ক্ষমতা গ্রহণের পূর্বে হারুনের সাথে বাইজান্টাইনদের সম্পর্ক : হারুন-অর-রশীদ ক্ষমতা গ্রহণের পূর্বে আব্বাসীয় খলিফার সাথে বাইজান্টাইনদের বৈরী সম্পর্ক ছিল। তিনি ক্ষমতা গ্রহণের পূর্বেই বাইজান্টাইনদের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হন।
খলিফা মাহদীর রাজত্বকালে বাইজান্টাইন সম্রাট প্রথম কনস্টানটাইন মুসলিম রাজ্যে আক্রমণ করেন। ফলে মাহদী বাইজান্টাইনদের বিরুদ্ধে পবিত্র যুদ্ধ ঘোষণা করেন।
খলিফা তার তরুণ পুত্র ও ভবিষ্যৎ উত্তরাধিকারী হারুনকে এবং সেনাপতি খালিদা-বিন-বাৰ্মাকিকে বাইজান্টাইনদের বিরুদ্ধে প্রেরণ করেন।
ফলে বাইজান্টাইন ও হারুনের সাথে সংঘর্ষ হয়। বাইজান্টাইন সেনাবাহিনী তাদের হাতে পরাজিত হয়। ফলে সম্রাজ্ঞী আইরিন কর প্রদানের শর্তে আব্বাসীয় খলিফাদের সাথে সন্ধি স্থাপন করেন।
২. হারুন ক্ষমতা গ্রহণের পর সাইপ্রাস ও ক্রীট পুনরাধিকার : বাইজান্টাইনদের বিরুদ্ধে কৃতিত্বপূর্ণ জয়ের জন্য খলিফা মাহদী পুত্র হারুনকে রশীদ উপাধি প্রদান করেন।
খলিফা হারুন-অর- রশীদ সিংহাসন আরোহণ করলে রোমান সম্রাজ্ঞী আইরিন পূর্বোক্ত সন্ধি অগ্রাহ্য করেন। আব্বাসীয় সাম্রাজ্যে বাইজান্টাইন বাহিনী হানা দেয় ৭৯১ খ্রিস্টাব্দে।
কিন্তু মুসলিম বাহিনী সাফল্যের সাথে তাদের প্রতিহত করেন এবং সাইপ্রাস ও ক্রীট দ্বীপ পুনরাধিকার করে। সম্রাজ্ঞী আইরিন অবস্থা বেগতিক দেখে কর প্রদানের শর্তে চার বছরের (৭৯৭-৮০১) খ্রি. শান্তিচুক্তি সম্পাদন করেন।
৩. নাইসিফোরাসের ক্ষমতা দখল : সম্রাজ্ঞী আইরিন ক্ষমতাচ্যুত হন ৮০২ খ্রিস্টাব্দে এবং সরকারি কোষাধ্যক্ষ রাজ ক্ষমতা দখল করেন নাইসিফোরাস। তিনি উদ্ধত ও বদমেজাজী স্বভাবের লোক ছিলেন। তিনি আব্বাসীয়দের সাথে সম্পদিত চুক্তি অগ্রাহ্য করেন।
এমনকি তৎকালীন খলিফা হারুনের কাছে চিঠি লিখে ইতিমধ্যে দেওয়া সমস্ত অধীনতার নিদর্শনস্বরূপ প্রদত্ত কর ফেরত চান।
নাইসিফোরাসের এমন ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণের জন্য খলিফা অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হন এবং নাইসিফোরাসের কাছে ঘৃণা ভরে প্রতিবাদ স্বরূপ তিনিও একটি পত্র প্রেরণ করেন।
৪. নাইসিফোরাসের চিঠি : আব্বাসীয় খিলাফতকে ধ্বংসের জন্য হারুন-অর-রশীদকে নিম্নোক্ত ভাষায় নাইসিফোরাস এরূপ পত্র প্রেরণ করেছিলেন- “রোমান সম্রাট নাইসিফোরাসের নিকট হতে আরবগণের রাজা হারুনের নিকট।
আমার পূর্ববর্তী সম্রাজ্ঞী আপনাকে অহেতুক প্রভূত মর্যাদা দান করেছে এবং অনেক ঐশ্বর্য আপনার নিকট প্রেরণ করেছে।
এটা তার রমণীসুলভ দুর্বলতা ও নির্বুদ্ধিতার জন্যই ঘটেছে। এখন আপনি আমার পত্র পাওয়া মাত্র তার নিকট হতে গৃহীত অর্থের দ্বিগুণ প্রত্যর্পণ করুন। অন্যথায় তরবারিই আপনার ও আমার মধ্যে মীমাংসা করবে।”
৫. খলিফা হারুনের চিঠির জবাব : রোমান সম্রাটের এমন ধৃষ্টতাপূর্ণ পত্র পেয়ে খলিফা হারুন-অর-রশীদ অত্যন্ত ক্রুদ্ধ হয়ে জবাবে বলেন- “আমিরুল মুমেনীন হারুনের নিকট হতে রোমানদের কুকুর নাইসিফোরাসের নিকট- হে কাফের পুত্র, আমি তোমার পত্র পাঠ করিয়াছি। উত্তর চক্ষে দেখবে কর্ণে শুনবে না।”
৬. নাইসিফোরাসের বিরুদ্ধে অভিযান : খলিফা হারুন নাইসিফোরাসের পত্র পাওয়ার সাথে সাথে তাকে সরুচিত শিক্ষা প্রদানের জন্য বিশাল সেনাবাহিনী গঠন করেন। পত্রের প্রত্যুত্তর প্রেরণ করার সাথে সাথে খলিফা নিজেও বাইজান্টাইন সম্রাটের উদ্দেশ্যে কনস্টান্টিনোপলের দিকে অগ্রসর হন। শেষে হেরাক্লিরায় নগরীতে খলিফা তাকে আক্রমণ করেন।
নাইসিফোরাস যুদ্ধে পরাজিত হয়ে সন্ধি স্থাপনে বাধ্য হয়। এর খলিফা তার উপর পূর্ব অপেক্ষা বেশি কর ধার্য করলেন।
এমন কি তার পরিবারের সকল সদস্যের উপর অধিক কর ধার্য করলেন। নাইসিফোরাস এ বর্ধিত কর প্রদানে স্বীকার করলে খলিফা মক্কায় ফিরে আসেন। খলিফা মক্কায় প্রত্যাবর্তনের সাথে সাথে রোমান সম্রাট আবার বিদ্রোহ শুরু করেন।
৭. নাইসিফোরাসের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় অভিযান : রোমান সম্রাট নাইসিফোরাস দ্বিতীয় বারের মতো প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করলে খলিফা পুনরায় অভিযান প্রেরণ করেন। খলিফা বহু সৈন্য নিয়ে তার রাজ্যে আক্রমণ করেন।
ঐহিতাসিক গীবনের মতে, “বিশ্বাসঘাতক রোমান রাজা তিন স্থানে গুরতর আঘাতপ্রাপ্ত হলে তার প্রায় ৪০,০০০ প্রজা যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পালিয়ে যায়।
নাইসিফোরাস পুনরায় শান্তি প্রার্থনা করেন এবং খলিফা এবারও তাকে ক্ষমা করে দেন। এ সম্পর্কে ঐতিহাসিক ম্যুর বলেন, “যতবার হারুন অন্যত্র ব্যাপৃত থাকতেন ততবার নাইসিফোরাস সন্ধি ভঙ্গ করতেন এবং পরাজিত হতেন। হতেন। খলিফা হারুন দ্বিতীয়বারের নাইসিফোরাসকে পরাজিত করে কৃতিত্বের পরিচয় দেন।”
৮. নাইসিফোরাসের বিরুদ্ধে তৃতীয় অভিযান : রোমান সম্রাট নাইসিফোরাস তৃতীয় বারের মতো মুসলিম সাম্রাজের সীমান্তে আক্রমণ করেন এবং সেখানে ধ্বংসাত্মক কার্য চালাতে থাকেন। খলিফা তখন ট্রান্স অক্সিয়ানায় বিদ্রোহ দমনে ব্যস্ত ছিলেন। হারুন রোমান সম্রাটের অন্যায় আক্রমণ আর বরদাস্ত করতে পারলেন না।
বিশ্বাসঘাতক নাইসিফোরাসকে সমুচিত শিক্ষা দেওয়ার জন্য হারুন ১,৩৫,০০০ সৈন্যসহ বাইজান্টাইন সম্রাটের বিরুদ্ধে অভিযান প্রেরণ করেন।
এবার নাইসিফোরাস এই মর্মে সন্ধি করেন যে, বর্ধিত হারে কর প্রদান ছাড়াও রাজা ও রাজ পরিবারের প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য অতিরিক্ত কর দেওয়া হবে। ফলে এবারও খলিফা তাকে ক্ষমা করে দেন। কিন্তু পরবর্তীতে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়েছিল।
৯. গ্রিকদের আক্রমণ : পরবর্তীতে গ্রিক সাম্রাজ্যে পুনরায় বিদ্রোহ দেখা দেয়। ৮০৮ খ্রি. গ্রিকগণ আবার প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ করে মুসলিম রাজ্যে আক্রমণ করে। কিন্তু খলিফার মৃত্যুর পূর্বে গ্রিকদের সম্পূর্ণ বসে আনা সম্ভাব হয়নি।
গ্রিকগণ বার বার প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ করে । মুসলিম রাজ্যর পরিণতি সম্পর্কে ঐতিহাসিক ম্যুর বলেন, “এসব যুদ্ধ বিগ্রহের অপ্রিয় পরিণতি হলো ধর্মীয় ঘৃণাকে প্রজ্জ্বলিত করা।” এভাবে বারবার ক্ষমা প্রদর্শন মুসলিম সাম্রাজ্যের জন্য ভালো ফল বয়ে আনেনি।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, খলিফা হারুন-অর- রশিদের বাইজান্টাইন সাম্রাজ্যে আক্রমণ একটি তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা । তার বৈদেশিক নীতির মূল বৈশিষ্ট্য ছিল যুদ্ধ নয়, শান্তি প্রতিষ্ঠা ও মৈত্রী সম্পর্ক স্থাপন। তাইতো বাইজান্টাইদের সাথে ভালো সম্পর্ক রাখার জন্য বাইজান্টাইন সম্রাট বারবার যুদ্ধে পরাজিত হয়।
আর এজন্যই মুসলিম সাম্রাজ্য গ্রিকগণ কর্তৃক বারবার আক্রমণের শিকার হয়। এ সম্পর্কে ঐতিহাসিক ম্যুর বলেন-“গ্রিক সম্রাটকে পুনঃপুন ক্ষমা প্রদর্শন করে খলিফা যেমন অদূরদর্শিকতার পরিচয় দিয়েছেন, তেমনি গ্রিকদের বিরুদ্ধে বারবার জয়লাভ তার রণনৈপুণ্য, সমর কুশলতার পরিচয় বহন করে।" এজন্য তিনি পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ শাসকদের মধ্যে অন্যতম ।
আর্টিকেলের শেষকথাঃ খলিফা হারুন বাইজান্টাইনদের বিরুদ্ধে নীতি গ্রহণ করেছিলেন তা পর্যালোচনা কর
আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম খলিফা হারুন বাইজান্টাইনদের বিরুদ্ধে নীতি গ্রহণ করেছিলেন তা পর্যালোচনা কর। যদি তোমাদের আজকের এই পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো।