আজাদ উদ দৌলার প্রশাসনিক পরিবর্তনসমূহ কি ছিল? আলোচনা কর
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো আজাদ উদ দৌলার প্রশাসনিক পরিবর্তনসমূহ কি ছিল? আলোচনা কর জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের আজাদ উদ দৌলার প্রশাসনিক পরিবর্তনসমূহ কি ছিল? আলোচনা কর।
আজাদ উদ দৌলার প্রশাসনিক পরিবর্তনসমূহ কি ছিল? আলোচনা কর |
আজাদ উদ দৌলার প্রশাসনিক পরিবর্তনসমূহ কি ছিল? আলোচনা কর
উত্তর : ভূমিকা : আব্বাসীয় শাসনামলে বুয়াইয়া সুলতানগণের মধ্যে অন্যতম ভূমিকার অধিকারী ছিলেন আজাদ-উদ-দৌলা আজাদ-উদ-দৌলাকে বুয়াইয়া সুলতানদের শ্রেষ্ঠ সুলতান বলে অভিহিত করা হয়।
কেননা তার আমলে ৯৬৭ ৯৮৩ খ্রি. বুয়াইয়া শক্তি সর্বোচ্চ শিখরে উপনীত হয়েছিল। আজাদ-উদ- দৌলার কেবলমাত্র শ্রেষ্ঠ বুয়াইয়া আমির ছিলেন না, তিনি সেই সমকালের বিখ্যাত শাসকও ছিলেন।
আর তাই পি.কে. হিট্টি বলেছেন রোকেনের পুত্র আজাদদৌলা সময়ে বুয়াইয়া শক্তি সর্বোচ্চ শিখরে উপনীত হয়। আব্বাসীয় শাসনামলে আজাদ-উদ- দৌলা যে প্রশাসনিক কার্যক্রমের পরিবর্তন সূচনা করেছিলেন সত্যই তা প্রশংসার দাবিদার।
→ প্রশাসনিক সংস্কার/পরিবর্তনসমূহ : নিম্নে বুয়াইয়া আমির আজাদ-উদ-দৌলার প্রশাসনিক সংস্কারসমূহ আলোচনা করা হলো :
১. বিশৃঙ্খলা বিদ্রোহ দমন : বুয়াইয়া সুলতান আজাদ-উদ- দৌলার মৃত্যুর পর প্রাচীন মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ওমান বেদখল হয়ে যায়। যার ফলশ্রুতিতে নিজেরা বিদ্রোহ করলে, ৯৭২ সালে আজাদ-উদ-দৌলা ও এ বিদ্রোহ করে বিশেষ ভূমিকা পালন করেন এবং সাম্রাজ্যের বিশৃঙ্খলা দমন করতে সন্তুষ্ট হন।
২. প্রাচীন নগরী বাগদাদ দখল : আব্বাসীয় সাম্রাজ্যের কেন্দ্র বিন্দু ছিল বাগদাদ নগরী। আর এই বাগদাদ নগরই ছিল হিংসাত্মক ও ষড়যন্ত্রের মূল স্থান। বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী হাম্বলী ও শিয়া সম্প্রদায়কে দমিয়ে রাখার মতো প্রশাসনিক ক্ষমতা বাগদাদে ছিল না।
অন্যদিকে, আজাদ-উদ-দৌলার সৈন্যের মাঝে ব্যাপক বিশৃঙ্খল অবস্থা বিরাজ করছিল। বুয়াইয়া আমির আজাদ-উদ-দৌলা বহিঃশত্রুর আক্রমণ হতে রক্ষা করার জন্য এবং সকল ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত করার জন্য বাগদাদ দখল করেন এবং বাগদাদ দখলের মধ্যে দিয়ে সেখানে প্রশাসনিক ব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা হয় ।
৩. রাজ্য সম্প্রসারণ : বুয়াইয়া সুলতান আজাদ-উদ-দৌলার শাসনামলে বুয়াইয়াদের রাজ্য সর্বাধিক সম্প্রসারিত হয়েছিল। এ রাজ্য মূলত কাস্পিয়ান থেকে দক্ষিণে পারস্য উপসাগর পশ্চিমে সিরিয়া থেকে পূর্বে মহামারু পর্যন্ত বিস্তৃতি ছিল।
ইসলামের খলিফা ওমর ছিল রাজ্য সম্প্রসারণের অগ্রপথিক তারপর খলিফা হারুন- অর-রশিদ এবং তৃতীয় ব্যক্তি ছিলেন আজাদ-উদ-দৌলা বুয়াহী ।
৪. বিভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের বিশেষ সুযোগ প্রদান : আজাদ উদ দৌলা ছিলেন একজন ধর্মভীরু সুলতান। নিজ ধর্মের সাথে অন্য ধর্মের প্রতি তিনি সহানুভূতিশীল ছিলেন।
খ্রিস্টান, পৌত্তলিকদের বিশেষ সুবিধা প্রদান করতেন। দাইলামি ও তুর্কী জাতির মধ্যে সমঝোতা সৃষ্টিতে ব্যাপক ভূমিকা পালন করেছিলেন।
৫. চারিত্রিক বা সামাজিক পরিবর্তন : বুয়াইয়া আমির আজাদ-উদ-দৌলা রাজ্যের মানসিক ও বহুজাতিক চরিত্রটি বুঝতে পেরে কিছু পরিবর্তন সাধন করেছিলেন। প্রাচীন আমল সুন্নি ও শিয়া মতাবলম্বীদের মাঝে যে দ্বন্দ্ব ছিল তা নিরসনের জন্য উদার এবং নিরপেক্ষ পদক্ষেপ গ্রহণ করেন।
সুশৃঙ্খল ব্যবস্থা পরিচালনার জন্য সকল সম্প্রদায়ের রাস্তা অথবা মসজিদের পাশে ধর্মপ্রচারণা নিষিদ্ধ করেন। কোনো সাহাবীর নাম আল্লাহর কামনা না করার নির্দেশ প্রদান করেন। সেজন্য শিক্ষা মতাবলম্বীরা আলী (রা.)-কে নিয়ে আল্লাহর নিকট কামনা করতো।
৬. স্বাগতম ও বাজনা বাজানোর অনুমতি : বুয়াইয়া সুলতান ইরাকের মোসুল নগরী দখলের পর বাগদাদ আগমনের সময় তা ব্যাপকভাবে অভ্যর্থনা দেওয়ার জন্য অসংখ্য বিজিত তোরণ নির্মাণ করা হয় এবং এর সাথে বাজন বাজানোর অনুমতি চাওয়া হয়। খলিফা স্বয়ং তাকে স্বাগতম জানায় এবং বাজনা বাজানোর অনুমতি প্রদান করে ।
৭. ধর্মীয় সহনশীলতা নীতি : সুন্নির সম্প্রদায়ের স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন লাভের জন্য এবং আব্বাসীয় খলিফার নিকট থেকে সাম্রাজ্য অধিকার প্রাপ্তির বিষয়টি ঘটা করে উল্লেখ করে খলিফার দরবারে তা সংঘটিত করার ব্যবস্থা করেছিলেন।
৮. খলিফার সাথে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপন : বুয়াইয়া রাজপুত্র আব্বাসীয় সাম্রাজ্য ক্ষমতায় বসানোর জন্য আজাদদৌলার খলিফা আত ভাইয়ের সাথে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপন করেছিল। তিনি কন্যার সাথে খলিফা আত-ভাইয়ের বিবাহ দেন এবং নিজেও খলিফার এক কন্যাকে বিবাহ করেন ।
৯. সম্প্রসারণ নীতি গ্রহণ : বুয়াইয়া সুলতান আজাদ-উদ- দৌলার অন্যতম একটি কীর্তি ছিল সম্প্রসারণ নীতি। তিনি সামরিক কর্মচারীর বেতন এর পথ সীমিত করেন এবং পূর্ববর্তী শাসকদের বেতন ব্যবস্থার পরিবর্তন করেন। এর সাথে অযথা সৈনিকদের বেতন ভাতা বৃদ্ধি করা সমীচীন মনে করতেন না।
১০. শুল্ক ব্যবস্থার পরিবর্তন : বুয়াইয়া আজাদ-উদ-দৌলার সাম্রাজ্যের প্রজাসাধারণের উপর সঠিকভাবে কর আরোপ করেছিলেন। বিশেষ করে শহরবাসী জনসাধারণের উপর বিশেষ করে শহরে প্রবেশ পথের কর উত্তোলনের জন্য কর্মচারী নিয়োগ করা হয়।
দৈনন্দিন ব্যবহার্য পণ্য, চাল, ডাল, গম, বাসন-কোষণ এর উপরও কর আরোপ করেছিলেন। খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ এলাকা, পশুর উপর, সরকারি বাজার রক্ষণের উপর কর আরোপ করা হয়েছিল। কিন্তু বুয়াইয়া আমিরদের কোনো কর আরোপের নিয়মতান্ত্রিক ব্যবস্থা ছিল না।
১১. জনহিতকর কার্যাবলি : আজাদ-উদ-দৌলা স্বার্থপর এবং লোভী হলেও প্রজারঞ্জক শাসক ছিলেন। তিনি বহু মসজিদ, স্কুল, কলেজ হাসপাতাল, রাস্তাঘাট নির্মাণ এবং খাল খনন করেন। তিনি ইরাকের সেচ ব্যবস্থার সংস্কার সাধন করেন।
সিরাজ নগরীর নিকটবর্তী নদীগর্ভকে গভীর করে নৌকা চলাচলের উপযোগী করে তোলেন। এ ছাড়া কর তাইগ্রিস নদী তীরে বাঁধ নির্মাণ করে জনসাধারণকে বন্যার হাত থেকে রক্ষা করেন।
১২. শিক্ষা ও সাহিত্যের অবদান : সুলতান আজাদ-উদ- দৌলা নীতিজ্ঞান শূন্য হলেও বিদ্যোৎসাহী নরপতি ছিলেন। তিনি নিজ একজন সুশিক্ষিত এবং জ্ঞানী ব্যক্তি ছিলেন। গণিতশাস্ত্র তার যথেষ্ট পাণ্ডিত্য ছিল। তার উদার পৃষ্ঠপাষকতায় বহু খ্যাতনামা কবি, সাহিত্যিক বিজ্ঞানী জ্ঞানচর্চার সুযোগ লাভ করেন।
আজাদ- উদ-দৌলার শাসনামল ঐতিহাসিক মাসুদী, দার্শনিক আবু নসর, আল ফারাবী কবি মুতানব্বী, কিতাবুল আগানীর রচয়িতা আবুল ফারাজ ইস্পাহানী প্রমুখ মনীষীগণ আব্বাসীয় সভ্যতার উন্মেষ এর ক্ষেত্রে ব্যাপক ভূমিকা পালন করে ।
১৩. সৌন্দর্য বৃদ্ধি : আব্বাসীয় শাসনামলে বুয়াইয়াদের আমলে বাগদাদ নগরীর ব্যাপক উন্নতি সাধিত হয়েছিল। ইসলামের চতুর্থ খলিফা হজরত আলীর কবর-এর সৌন্দর্য বৃদ্ধি করা হয় এবং তার কবরের নিকট একটি স্মৃতি স্তম্ভ নির্মাণ করা হয়। বাগদাদ নগরীর সম্প্রসারণের জন্য রাস্তাঘাট সরাইখানা অনেক কিছু নির্মাণ করা হয়েছিল।
১৪. খুত্বায় নিজের নাম উচ্চারণের ব্যবস্থা : বুয়াইয়া আমির খুৎত্বায় নিজের নাম পাঠের ব্যবস্থা করেন এবং খলিফার সার্বভৌমত্বে আঘাত হানে। খলিফার নামের সাথে আজাদ-উদ-দৌলার নামের পাঠের ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে আব্বাসীয় খিলাফতের সার্বভৌমত্বের আঘাত করা হয়েছিল বলে অনেক ঐতিহাসিক মনে করেন ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, শিক্ষা মতাবলম্বী বুয়াইয়া আমিরগণ বাগদাদের দুর্বল খলিফাদের রক্ষা করতে এলে যে চরম স্বেচ্ছাচারী ভূমিকা গ্রহণ করেন তারণ তুলনা ইতিহাসে বিরল। আজাদ-উদ-দৌলা শাসক হিসেবে পদলোপ গ্রহণ করেছিলেন,
তার প্রশাসনিক সংস্কারে তা ব্যাপক ভূমিকা পালন করে। কর ব্যবস্থার পরিবর্তন, শিক্ষা বিস্তার জ্ঞানী- গুণীদের পৃষ্ঠপোষকতা দান করে ইতিহাসের পাতায় চিরস্মরণীয় একজন ব্যক্তি হিসেবে খ্যাতিভুক্ত হয়েছেন।
আর্টিকেলের শেষকথাঃ আজাদ উদ দৌলার প্রশাসনিক পরিবর্তনসমূহ কি ছিল? আলোচনা কর
আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম আজাদ উদ দৌলার প্রশাসনিক পরিবর্তনসমূহ কি ছিল? আলোচনা কর। যদি তোমাদের আজকের এই পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো।