আজাদ উদ দৌলার বাগদাদ শাসন নীতি কি ছিল
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো আজাদ উদ দৌলার বাগদাদ শাসন নীতি কি ছিল জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের আজাদ উদ দৌলার বাগদাদ শাসন নীতি কি ছিল।
আজাদ উদ দৌলার বাগদাদ শাসন নীতি কি ছিল |
আজাদ উদ দৌলার বাগদাদ শাসন নীতি কি ছিল
উত্তর : ভূমিকা : বাগদাদে বুয়াইয়া শাসনের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠাতা আজাদ-উদ-দৌলা বুয়াইয়া শাসকদের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছেন । বাগদাদে আগমন করার পর একেবারে ভেঙে পড়া প্রশাসন ব্যবস্থাকে সচল করে বাগদাদের শাসন কার্য পরিচালনায় নিজস্ব ধ্যান ধারণার শাসননীতি ও পদ্ধতি প্রয়োগ করেন তা অত্যন্ত ফলপ্রসূ হয়েছিল।
আব্বাসীয় খলিফা আল মুসতাকফির দুর্বলতা, সরলতা ও অক্ষমতার সুযোগে আজাদ-উদ-দৌলা বাগদাদের সর্বময় কর্তা হয়ে উঠেন। মূলত আব্বাসীয়দের ভুল ছিল একক কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার জন্য বুয়াইয়াদের সহযোগিতায় তুর্কি বাহিনীকে উৎখাত করেন কিন্তু তিনি একক কর্তৃত্ব, আধিপত্য ও নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে পারেননি। এভাবেই আজাদ-উদ-দৌলা ব্যাপক ক্ষমতাধর শাসক হয়ে উঠেছিলেন।
→ মুইজ উদ্দৌলার বাগদাদ শাসননীতি ও পদ্ধতি : বুয়াইয়া সাম্রাজ্য পরিচালনায় মুইজ-উদ-দৌলা নিজস্ব শাসননীতি ও পদ্ধতি গ্রহণ করেন। নিম্নে বিস্তারিত তুলে ধরা হলো :
১. প্রাথমিক সমস্যার সমাধান : কেন্দ্রীয় সরকারের সামরিক বাহিনী নিয়ে মুইজ-উদ-দৌলাকে সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। এরূপ সমস্যা বিভিন্ন এলাকায় থাকলেও বাগদাদের সমস্যাটি ছিল অনেক জটিল।
মুইজ তাদের দুর্বলতা সম্পর্কে সচেতন ছিলেন। তাদের স্বজাতি গোষ্ঠী দাইলামীদের মধ্যে এতো বেশি জনবল ছিল না যে, তা নিয়ে স্বয়ংসম্পূর্ণ সেনাবাহিনী গঠিত হতে পারে।
তদুপরি দাইলামিরা ভালো পদাতিক বাহিনী হলেও ভালো ঘোড়া সওয়ার ছিল না অথচ দক্ষিণ পশ্চিম সমতল ভূমিতে শক্তিশালী ঘোড়া সওয়ার বাহিনী প্রয়োজন ছিল সর্বাধিক। এসব সমস্যার কথা বিবেচনায় রেখে মুইজ আব্বাসীয় বাহিনীকে বুয়াইয়া বাহিনীতে অধিকরণ নীতি অনুসরণ করেন।
২. ইকতা ব্যবস্থা প্রবর্তন : আব্বাসীয় পরিবার ও তাদের স্বজনদের সকল ভূ-সম্পত্তি বুয়াইয়া সরকার অধিগ্রহণ করেন। তারা নতুন ধরনের ইকতা ব্যবস্থা প্রবর্তন করেন।
সেনাবাহিনীর বেতন বা প্রান্তিক সুবিধাদি হিসেবে ভূমি মঞ্জুরি প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। গোটা ব্যবস্থা অনেকাংশে সাময়িক হলেও বুয়াইয়াদের পতন অবধি এ ব্যবস্থায় বিদ্যমান ছিল ।
৩. উজির নিয়োগের নিয়ম চালু : আব্বাসীয়রা যদিও তাদের স্বর্ণযুগের পারস্যর অনুকরণে উজির পদের প্রবর্তন করে তবুও আব্বাসীয়দের অনেক খলিফাই উজির ব্যতীত চলতো। আর এ কারণে এ পদের গুরুত্ব কখনো বৃদ্ধি পায়নি।
অথচ বুয়াইয়া শাসনে উজির ছিল কেন্দ্রবিন্দু যেহেতু রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব বুয়াইয়া আমির বা মালিক সুলতানের হাতে হস্তান্তরিত। কাজেই খলিফার উজির নিয়োগ ক্ষমতা স্বাভাবিক রহিত হয়। বুয়াইয়া মুইজ উজির নিয়োগের নিয়ম চালু করেন।
৪. মুইজের পররাষ্ট্রনীতি : বুয়াইয়া শাসক মুইজ প্রথম থেকে শান্তিপূর্ণ বৈদেশিক নীতি গ্রহণ করেন। বাইজান্টাইন অথবা মিশরের সাথে যেকোনো রকম সংঘর্ষ এড়ানোর জন্য তার এ পররাষ্ট্রনীতির মূল বিষয় ছিল।
অর্থনৈতিক দিক থেকে বসরা ছিল বাগদাদের ধমনীতুল্য। বারিদরা কারামাতিদেরকে বিতাড়িত করে নিজেরাই এ সময় প্রাধান্য বিস্তার করে এবং কেন্দ্রীয় সরকার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। বারিদদের বিতাড়িত করে বসরা দখল করে বাগদাদের অন্তর্ভুক্ত করেন ।
৫. সামানীদের নিকট থেকে রায় দখল : সামানীদের নিকট থেকে রায় দখল করে উত্তর-পূর্ব বাণিজ্য পথের উপর বুয়াইয়া প্রাধান্য ছিল মুইজের উল্লেখযোগ্য সাফল্য।
এভাবে তার শাসনামলে আরব সাম্রাজ্যর গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য পথের উপর বাগদাদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে পুনরায় আরব সামাজ্য অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি করা ।
৬. কারামাতিদের সাথে মুইজের সম্পর্ক : বসরায় স্বীয় অবস্থান সুদৃঢ় করার পর মুইজ কারামাতিদের সাথে সম্পর্ক প্রতিষ্ঠায় মনোনিবেশ করেন। কারামাতিরা শান্তি প্রতিষ্ঠায় আগ্রহী হয়ে উঠে বস্তুত মুইজ কারামাতিদের সাথে শান্তি প্রতিষ্ঠায় এতোই সফল হন যে,
তারা বিগত ত্রিশ বছর ধরে কাবা শরীফের পবিত্র কৃষ্ণ পাথরটি অপহরণ করে রেখেছিল। কিন্তু লেখা ইচ্ছায় প্রত্যর্পণ করেন ।
৭. দাইলামী বাহিনী প্রতিষ্ঠা : নতুন বুয়াইয়া শাসককে বাগদাদে দৃঢ়ভাবে থাকতে হলে অসংখ্য দাইলামী সৈন্যের উপস্থিতি প্রয়োজন ছিল। অবশিষ্ট ইরাকী অঞ্চলে তার শাসনের বিস্তৃতি ঘটাতে পুরনো সেনাবাহিনী ব্যবহারই ছিল যুক্তি সংগত।
এসব বিবেচনায় দাইলামীদের সংখ্যা বেশি হওয়ায় তাদের | দাইলামী বাহিনীর সাথে সম্পৃক্ত করা সম্ভব ছিল না। এদেরকে | নিজস্ব নেতৃত্বের স্বতন্ত্রভাবে সংগঠিত করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। তাদের বেতন দেওয়ার জন্য বুয়াইয়া ইকতা ব্যবস্থা সমগ্র ইরাকে আবাদি ভূমিতে বিস্তৃতি করা হয়।
৮. শিয়াদের পৃষ্ঠপোষকতা : মুইজ শিয়াদের প্রতি উদার পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। সম্ভাব্য শিয়া প্রাধান্য ধ্বংস করার উদ্দেশ্য খলিফা মুস্তাকফি মুইজের বাগদাদ প্রবেশকালে একজন শিয়াকে কারারুদ্ধ করেন। মুইজের নির্দেশে তাকে মুক্ত করা হয়।
শিয়া সম্প্রদায়ের সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য মুইজ তাদের পছন্দই এক ব্যক্তি আবুল হোসাইন আহমদ বিন আলীকে নকীব পদে নিয়োগ করেন। তাদের দাবি অনুসারে বাগদাদে বসবাসরত শিয়া সমাজের জন্য কারবালার হত্যাকাণ্ডের স্মরণে ১০ মহরম শোক দিবস পালন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় ।
আর এখান থেকে বোঝা যায় আজাদ-উদ-দৌলা শিয়াদের ব্যাপক পৃষ্ঠপোষকতা করতেন। পরবর্তীকালে শিয়াদের ব্যাপক সুযোগ-সুবিধা প্রদান করা হতো। বসরায় কারামাতিদেরকে তাদের নিজস্ব শুল্ক অফিস | প্রতিষ্ঠার অনুমতি দেওয়া হয়। কারামাতিদেরকে দক্ষিণ ইরাকে জমি মঞ্জুরি প্রদান করা হয়। কুফা ও বাগদাদে তাদের উপস্থিতি সহজে সহ্য করা হয়।
৯. হামদানী সমস্যার সমাধান : বুয়াইয়া সুলতান মুইজ দৌলা হামদানী সমস্যার সম্মুখীন হয়েছিলেন উত্তর-পশ্চিম সীমান্তে। হামদানীরা মূলত ছিল খারিজী তবে তারা শিয়া ধর্মমতে দীক্ষা গ্রহণ করে। বাইজান্টাইনদের সাথে তাদের স্বার্থ জড়িত ছিল।
বুয়াইয়া বাগদাদের ক্ষমতাসীন হওয়ার প্রায় চার বছর পূর্বে থেকে হামদানীরা মোসুল ও জাজিরায় তাদের অবস্থান সুদৃঢ় করে এবং বাগদাদের রাজনীতি প্রবেশ করে। তারা আমিরুল উমারা পদ অর্জন করেন
বাগদাদের কেন্দ্রীয় সরকারের শোচনীয় অবস্থা অনুধাবন করে মোসুলেই তাদের অবস্থান সুদৃঢ় করেন। এলাকাটি বাগদাদের গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল বিধায় এর উপর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা ছিল অনিবার্য ।
১০. সুলতান ও শাহানশাহ উপাধি গ্রহণ : বুয়াইয়া সুলতান ইসলামের ইতিহাসে একজন ব্যক্তি যিনি সুলতান ও শাহানশাহ উপাধিতে ভূষিত হয়েছিলেন। কার্যত আব্বাসীয়দের থেকে সুলতান উপাধি গ্রহণ করার পর শাহানশাহ উপাধি গ্রহণ করেন । ওরই মধ্যে দিয়ে মুইজ পৃথিবীর ইতিহাসে চমক সৃষ্টিকারী ব্যক্তি হিসেবে অবিভূত হয়েছেন ।
১১. খলিফাদের সার্বভৌমত্বে আঘাত : বাগদাদে বুয়াইয়াদের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠার জন্য মুইজ-আজাদ প্রমুখ বুয়াইয়া আমির খুৎবাতে তাদের নাম পাঠের ব্যবস্থা করে খলিফার সার্বভৌমত্বে আঘাত হানেন। মুইজ মুদ্রাতেও খলিফার নামের পাশে তার নামাঙ্কনের নির্দেশ দেন। এছাড়া তারা খলিফাকে খিলাত, তরবারি, মুকুট, রাষ্ট্রীয় পতাকা প্রভৃতি প্রদান করতে বাধ্য করেন।
উপসংহার : পরিশেষে বলতে পারি যে, বুয়াইয়া সুলতান আজাদ-উদ-দৌলার বাগদাদ শাসননীতি ছিল পৃথিবীর ইতিহাসে এক চমকপ্রদ ঘটনা। বুয়াইয়াদের ইতিহাসে আজাদ-উদ-দৌলার শাসনাকাল বিশেষ স্থান দখল করে আছে।
নিষ্ঠুর এবং বিশ্বাসঘাতক হলেও বুয়াইয়া বংশের প্রতিষ্ঠাতা আজাদ-উদ-দৌলা বিদ্যানুরাগী ছিলেন এবং শিল্প সাহিত্যর পৃষ্ঠপোষকতা করেন। তার উদার পৃষ্ঠপোষকতার ফলে এ সময় মুসলমানগণ জ্ঞানবিজ্ঞান ও শিক্ষা সংস্কৃতির বিভিন্ন শাখায় নতুন অগ্রগতির দ্বার উন্মোচন করেন।
মূলত পরবর্তী বুয়াইয়া আমির ও পণ্ডিতগণ জ্ঞানবিজ্ঞানে যে অসামান্য অবদান রেখে যান তার ভিত্তি তিনিই তৈরি করে যান।
আর্টিকেলের শেষকথাঃ আজাদ উদ দৌলার বাগদাদ শাসন নীতি কি ছিল
আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম আজাদ উদ দৌলার বাগদাদ শাসন নীতি কি ছিল। যদি তোমাদের আজকের এই পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো।