আমিন মামুনের মধ্যে সংঘটিত গৃহযুদ্ধকে আরব-পারসিক দ্বন্দ্ব বলা হয় কেন
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো আমিন মামুনের মধ্যে সংঘটিত গৃহযুদ্ধকে আরব-পারসিক দ্বন্দ্ব বলা হয় কেন? আলোচনা কর জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের আমিন মামুনের মধ্যে সংঘটিত গৃহযুদ্ধকে আরব-পারসিক দ্বন্দ্ব বলা হয় কেন? আলোচনা কর ।
আমিন মামুনের মধ্যে সংঘটিত গৃহযুদ্ধকে আরব-পারসিক দ্বন্দ্ব বলা হয় কেন? আলোচনা কর |
আমিন মামুনের মধ্যে সংঘটিত গৃহযুদ্ধকে আরব-পারসিক দ্বন্দ্ব বলা হয় কেন? আলোচনা কর
উত্তর : ভূমিকা : ইসলমের ইতিহাসে খলিফা হারুন-অর-রশীদের মৃত্যুর পর তার দুই পুত্র আল আমিন ও আল মামুনের মধ্যে সংঘটিত গৃহযুদ্ধ আব্বাসীয় খিলাফতে একটি কলঙ্কিত অধ্যায় । খলিফা মৃত্যুর পর তার নির্দেশ মতোই আল আমিন বাগদাদের সিংহাসনে আরোহণ করেন এবং আল মামুন খোরাসানের শাসকহলেন।
মামুন তার কনিষ্ঠ ভ্রাতা আমিনের আনুগত্য গ্রহণ করলেন। কিন্তু আমিন উজির ফজল বিন রাবীর কুমন্ত্রণায় পিতার দেওয়া অঙ্গীকার অমান্য করে মামুনের বিরুদ্ধে অবস্থান করেন। যার ফলে উভয়ের মধ্যে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। তবে এ দ্বন্দ্বের পরিসমাপ্তি ঘটে ৮১৩ খ্রিস্টাব্দে। আল আমিনের হত্যা এবং . মামুনের খিলাফত লাভের মধ্য দিয়ে।
→ উত্তরাধিকারী মনোনয়ন : হারুনের বংশধরদের মধ্যে উত্তরাধিকারের প্রশ্ন নিয়ে ভবিষ্যতে যাতে কোন রকম গণ্ডগোল না হয় এমনভাবে তিনি উত্তরাধিকারী মনোনীত করতে চাইলেন। তিনি তার পুত্রদের মধ্যে চার জনকে পর পর উত্তরাধিকারী মনোনীত করলেন।
তিনি দ্বিতীয় পুত্র আল আমিনকে প্রথম উত্তরাধিকারী মনোনীত করে বাগদাদের সিংহাসনে বসান। এরপর পারসিক ক্রীতদাসীর গর্ভজাত সন্তান প্রথম পুত্র আব্দুল্লাহ আল মামুনকে তিনি দ্বিতীয় উত্তরাধিকারী মনোনীত করলেন।
পুত্র আল মুতামিনকে তৃতীয় এবং আবু ইসহাক মুহাম্মদ মুতাসিমকে চতুর্থ উত্তরাধিকারী মনোনীত করেন। এভাবে তিনি সাম্রাজ্যের অংশবিশেষ ভাগ করে নির্দিষ্ট অঞ্চলে পুত্রদের শাসনভার অর্পণ করে সম্ভাব্য গৃহযুদ্ধের সুপ্তবীজ বপন করে যান।
→ আমিন ও মামুনের মধ্যে সংঘটিত গৃহযুদ্ধ আরব-পারসিক দ্বন্দ্ব কি না : খলিফা আল আমিন ও মানুষের মধ্যে সংঘটিত যুদ্ধের ঘটনার মাধ্যমেই সামান্য প্রমাণ পাওয়া যায় যে, এই গৃহ যুদ্ধটি আরব পারসিক দ্বন্দ্ব। তার পরেও আমরা কিঞ্চিৎ প্রমাণ করার প্রয়াস পাব যে এটি আরব-পারসিক দ্বন্দ্ব হিসেবে বিরোচিত করা যায় কিনা। নিম্নে তা আলোচনা করা হলো :
১. মাতার দিক থেকে : আল- আমিনের মাতা ছিলেন যুবাইদা । যিনি খাটি আরবীয় এবং হাশেমী গোত্রের। ফলে আল আমিনের ধমনীতে খাঁটি আরব রক্ত প্রবাহিত হয়েছিল। অপরদিকে, মামুনের মাতা সারাজিল ছিলেন পারসিক মহিলা।
মামুনের ধমনীতে পারসিক রক্ত প্রবাহিত হওয়ায় তিনি পারস্যবাসীদের সমর্থন ও সহযোগিতা লাভে সমর্থ হন। আরব ও অনারব রক্তের প্রবাহ আরব ও পারসিকদের মধ্যে জাতিগত প্রভেদ সৃষ্টি করেছিল।
২. শিক্ষা লাভের দিক থেকে : আল-আমিন তার মাতা যুবাইদা ও মাতুল ইসার তত্ত্বাবধানে শিক্ষা লাভ করেন। অপরদিকে, মামুন পারসিক উজির ফজল বিন ইয়াহহিয়ার নিকট থেকে শিক্ষা লাভ করেন। উভয় ভ্রাতা ভালো পরিবেশে শিক্ষা লাভ করলেও মামুন সকল বিষয়ে ব্যুৎপত্তি অর্জন করেন।
এ সম্পর্কে আমির আলী বলেন, “মামুনের গ্রহণেচ্ছুক মন সে শিক্ষাকে আয়ত্ত করে মর্মে স্থান দিয়েছিল অন্যদিকে আমিনের চঞ্চল ও আমোদ প্রিয় চরিত্র বাহ্যিক চাকচিক্য ব্যতীত কোন প্রকৃত জ্ঞান অর্জন করতে পারেনি।
ফলে উভয়ের মধ্যে শিক্ষাগত পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। আমিন ছিলেন আরবীয় সভ্যতার ধারক। অন্যদিকে মামুন ছিলেন পারসিক সভ্যতার ধারক যা তাদেরকে দুদিকে পৃথক করেছিল।
৩. চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের দিক থেকে : আমিন ও মামুনের মধ্যে যে চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য পাওয়া যায় তা দুটি অঞ্চলকে ইঙ্গিত করে। তাদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের দিকে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায় যে, এ চরিত্রের মধ্যেই তাদের গৃহযুদ্ধের সুপ্ত বীজ লুক্কায়িত ছিল।
অধ্যাপক মুসা আনসারী বলেন, “আমিন ও মামুনের মধ্যকার এ দ্বন্দ্বটি ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট বিবেচনা না | করে তাদের দু ভাইয়ের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের উপর গুরুত্ব আরোপ করলে একটি জটিল ঐতিহাসিক ঘটনার সরলীকরণ করা হয় মাত্র।'
৪. সাহায্য ও সহযোগিতার দিক থেকে : আমিন ও মামুনের মধ্যে যখন গৃহযুদ্ধ শুরু হতে যাচ্ছিল তখনই আরবরা আল আমিনকে সাহায্য, সহযোগিতা ও সমর্থন করেছিল। অপরদিকে, এ সময় পারসিকরা মামুনকে সাহায্য করার জন্য তাদের সহযোগিতার হাত সম্প্রসারিত করেছিল। তার প্রধান কারণ ছিল তারা মামুনকে তাদের "Son of his sister" মনে করতো ।
৫. পরামর্শদাতার দিক হতে : মামুনের পরামর্শদাতা ফজল | বিন সাহল ছিলেন পারসিক। তাই তিনি মামুনকে সমর্থন করেন। অপরদিকে, আমিনের পরামর্শদাতা ছিলেন আরবীয়। এরা আমিনের সমর্থক ছিলেন। এ সমর্থনের কারণে আরব-পারসিক দ্বন্দ্ব আরও সুদৃঢ় হয়েছিল।
৬. আরব ও পারসিকদের মধ্যে ভিন্ন ধর্মীয় মতবাদ : আরবরা ছিলেন সুন্নিপন্থি। আর পারসিকরা ছিলেন শিয়া পন্থি। এ ধর্মীয় ভাবধারায় উদ্বুদ্ধ হয়ে সুন্নিদের উপর শিয়াদের প্রভুত্ব বিস্তার লাভকে কেন্দ্র করে আরব পারসিক দ্বন্দ্বের অন্যতম কারণ।
৭. আরব ও পারসিক জনগোষ্ঠীর স্বার্থ : আমিন ও মামুনের মধ্যে সংঘটিত যুদ্ধের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট দুপক্ষের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। না; এর মধ্যে আরব ও পারসিক বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর স্বার্থও নিহিত। ছিল। ফলে আরব ও পারসিক জনগণ এ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে।
পরস্পরের বিরুদ্ধে অবস্থান করে। তাই বলা যায়, এ যুদ্ধের পশ্চাতে ছিল দু'টি ভিন্ন স্বার্থ, দু'টি ভিন্ন অঞ্চল এবং সংশ্লিষ্ট সেনাবাহিনীর সংক্রিয় পৃথক অংশগ্রহণ। ফলে এ যুদ্ধ দুটি জাতিসত্তার মধ্যকার দ্বন্দ্বে পরিণত হয়।'
৮. সমর্থক শ্রেণির দিক থেকে : আল আমিনকে সমর্থন দিয়েছিলেন বাগদাদের অভিজাত শ্রেণি ও তাদের সমর্থক গোষ্ঠী। অপরদিকে, মামুনকে সমর্থন করেছিল বার্মাকি গঠিত আব্বাসীয় বাহিনী ও তাদের সমর্থক পূর্বাঞ্চলের লোকেরা।
পূর্ব থেকেই বার্মাকি ও আরবের অভিজাত শ্রেণির মধ্যে দ্বন্দ্ব ছিল। তাই পূর্বাঞ্চলের জনগণ দুটি উদ্দেশ্যে মামুনকে সমর্থন করে। একটি হলো অর্জিত স্বার্থ রক্ষা, অপরটি হলো আব্বাসীয় সাম্রাজ্যের সাধারণ স্বার্থ রক্ষা ।
৯. ঐতিহাসিক দিক থেকে : P. K. Hitti বলেছেন, “এ ভ্রাতৃদ্বন্দ্ব পরিশেষে নবদীক্ষিত মুসলমানদের বিশেষ করে জাতীয়তাবোধ ও কৃষ্টিসম্পন্ন পারস্যবাসীদের সাথে আব্বাসীয় মুসলমানদের সংঘাত অনিবার্য করে তেলে।
” আবার, ঐতিহাসিক নিকলসন বলেন যে, “হারুনের মৃত্যুর কিছুকাল পরেই প্রাধান্য প্রতিষ্ঠার দ্বন্দ্ব শুরু হয়। তা ছিল মূলত আরবদের বিরুদ্ধে পারসিকদের এবং মামুনের বিজয়ের মধ্য দিয়ে বার্মাকিদের ধ্বংসের প্রতিশোধ গ্রহণ করা হয়।”
১০. ঐতিহাসিক মানদণ্ডে আরব-পারসিক দ্বন্দ্ব কি না: নিকোলাস বলেন, হারুনের ইন্তিকালের কিছু পরেই প্রাধান্য প্রতিষ্ঠার দ্বন্দ্ব শুরু হয়- তা ছিল মূলত আরবদের বিরুদ্ধে পারসিকদের এবং মামুনের বিজয়ের মাধ্যমেই বার্মিকদের প্রতিশোধ গ্রহণ ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, আমিন ও মামুনের মধ্যে সংঘটিত গৃহযুদ্ধ মূলত আরব-পারসিক দ্বন্দ্ব ছিল। দুই ভ্রাতার ধমনীতে ভিন্ন রক্তের স্রোত প্রবাহিত হয়েছিল। তাদের সমর্থক গোষ্ঠীর মধ্যেও নৃতাত্ত্বিক বৈষম্য বিদ্যমান ছিল।
দুটি পৃথক অঞ্চল, দুটি ভিন্ন স্বার্থ এবং ধর্মীয় মতবাদে বিভাজন আরব-পারসিক দ্বন্দ্বকে ত্বরান্বিত করেছিল। যার ফলে আরব ও পারসিক দ্বন্দ্ব দুটি প্রতিদ্বন্দ্বী শিবিরে পরিণত হয়। যার সমাপ্তি ঘটে পারসিকদের বিজয়ের মধ্য দিয়ে।
আর্টিকেলের শেষকথাঃ আমিন ও মামুনের দ্বন্দ্বকে আরব-পারসিক দ্বন্দ্ব বলা যায় কি? যুক্তি দাও
আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম আমিন ও মামুনের দ্বন্দ্বকে আরব-পারসিক দ্বন্দ্ব বলা যায় কি? যুক্তি দাও। যদি তোমাদের আজকের এই পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো।