একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে নারী ও রাজনীতি পাঠের গুরুত্ব বর্ণনা কর
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে নারী ও রাজনীতি পাঠের গুরুত্ব বর্ণনা কর জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে নারী ও রাজনীতি পাঠের গুরুত্ব বর্ণনা কর।
একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে নারী ও রাজনীতি পাঠের গুরুত্ব বর্ণনা কর |
একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে নারী ও রাজনীতি পাঠের গুরুত্ব বর্ণনা কর
উত্তর : ভূমিকা : নারী ও রাজনীতি এবং নারীর ক্ষমতায়ন একে অপরের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এ দুটো বিষয় বিশ্বে খুবই আলোচিত ইস্যু। বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে নারী ও রাজনীতি অধ্যয়নের গুরুত্ব অনস্বীকার্য।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার যুদ্ধে নারীর অবদান ও উৎসর্গ ইতিহাসের পাতায় চিরদিন স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। কিন্তু আমাদের এ নারী সমাজ রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক সাংস্কৃতিক ও প্রশাসনিকসহ জাতীয় জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই পিছিয়ে রয়েছে।
এমনকি দেশের দুই প্রধান রাজনৈতিক দল অর্থন ক্ষমতাসীন হলেও বিরোধী দলে উভয়েই প্রধান নারী হওয়া সত্ত্বেও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে এদেশের নারীর অবস্থান খুবই দুর্বল।
→ নারী ও রাজনীতি পাঠের গুরুত্ব : সামাজিক কুসংস্কার, ধর্মীয় বিধি নিষেধ, সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ ও সর্বোপরি পুরুষতান্বিত সমাজের নেতিবাচক সামাজিকীকরণের কারণে ও দৃষ্টিভঙ্গির কারণে বাংলাদেশে নারী রাজনীতিতে এখনও পিছিয়ে। নারীর রাজনীতিতে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে যে বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে তা নিম্নরূপ
১. নারী শিক্ষার প্রসার : নারীদের রাজনৈতিক অংশগ্রহণ বৃদ্ধির জন্য নারী শিক্ষার প্রসার অত্যাবশ্যক। কেননা নারীদের শিক্ষিত করে ভুলতে পারলে তাদের আপন সত্তার বিকাশ ঘটবে এবং নিজেদের সম্পর্কে সচেতন হবে।
২. দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন : বাংলাদেশে নারীর ক্ষমতায়ন ও রাজনীতিতে নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার জন্য সমাজের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন ঘটাতে হবে। ধর্মীয় গোঁড়ামি ও কুসংস্কার এর কারণে নারীর ক্ষমতায়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
৩. নারীর অর্থনৈতিক উন্নতি : নারীর রাজনৈতিক অংশগ্রহণ ও অধিকার নিশ্চিত করার জন্য প্রথমেই নারীর অর্থনৈতিক স্বাবলম্বিতা অর্জনের বিষয়টি সবিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। সেজন্য নারীদের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে আরো সক্রিয় করার পাশাপশি তাদের সম্পদের মালিকানার বিষয়ে ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণ হবে। সংসারে অর্জিত আরে পুরুষের পাশাপাশি নারীরও অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।
৪. তৃণমূল পর্যায়ে অংশগ্রহণের সুযোগ সৃষ্টি : রাজনৈতিক অংশগ্রহণের বিষয়টি অনেক ব্যাপক। নির্বাচনে অংশগ্রহণকেই রাজনৈতিক অংশগ্রহণ বলে ধরে নেয়া যায় না। তাই রাজনীতির সকল ক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ ব্যাপকতর করতে হবে। তৃণমূল পর্যায়ে নারীদের অর্থবহ অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে না পারলে জাতীয় পর্যায়ে তাদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা তুলে আনা যাবে না।
৫. নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা রোধ : আতঙ্ক আর ভীতি নারীর রাজনীতিতে অংশগ্রহণের পথে একটি অন্যতম বাধা। সেজন নারীর বিরুদ্ধে পরিচালিত সকল প্রকার সহিংসতা রোধ করে নিরাপদ রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের সুযোগ করে দিতে হবে।
নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে নারীর নির্বিঘ্নে জীবনধারণ ও চলাফেরার নিশ্চয়তা বিধান করতে হবে। তাহলে নারীরা রাজনীতিতে সক্রিয় ভূমিকা পালনকে নিরাপদ মনে করতে পারবে।
৬. জেন্ডার বৈষম্য দূর করা : জেন্ডার বৈষম্য নারীদের অনগ্রসরতার আর একটি অন্যতম কারণ। নারী সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে প্রতিনিয়ত জেন্ডার বৈষম্যের শিকার হচ্ছে, পরিবার হতে শুরু করে রাষ্ট্র পর্যন্ত সকল স্তরে নারীরা বৈষম্যের শিকার, সমাজের পুরুষতান্ত্রিক মনমানসিকতা, ধর্মীয় গোঁড়ামি ইত্যাদি কারণে নারী লিঙ্গ বৈষম্যের শিকার হচ্ছে প্রতিদিন।
৭. সামাজিকীকরণ : নারীর রাজনীতি বা অন্য কোন সামাজিক ও জাতীয় ক্ষেত্রেও অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে সামাজিকীকরণের একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।
কেননা সামাজিকীকরণের মাধ্যমে যে বিশ্বাস, অভ্যাস ও মূল্যবোধের সৃষ্টি হয় সেটি নারীকে তার পরবর্তী জীবনে চলার পথে বিশেষভাবে প্রভাবিত করে। বাংলাদেশের নারীদের সামাজিকীকরণে নেতিবাচক প্রক্রিয়া বিরাজমান। এটি দূর করতে হবে।
৮. সামাজিক কুসংস্কার দূর করা : আমাদের সমাজ কুসংস্কারে ভরা। নানা অজুহাতে এখানে মেয়েদের অন্তঃপুরবাসিনী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। মেয়েরা কেবল ঘরেই থাকবে; বাইরে গেলে, রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করলে ঐ বেমানান হবে।
সমাজের এ চিরাচরিত অন্ধ ও বদ্ধমূল ধারণা অনেক উদ্যমী মেয়ের উদ্যমকে ও স্তিমিত করে দেয়। রাজনৈতি অধিকার ও দায়বদ্ধতা সম্পর্কে উদাসীন করে রাখে।
৯. সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা : সামাজিক নিরাপত্তা নারীর রাজনীতিতে অংশগ্রহণ অনেকটা নিশ্চিত করে। সামাজি নিরাপত্তা ব্যতীত নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন সম্ভব নয়।
১০. পারিবারিক পর্যায়ে ভূমিকা নির্ধারণ : নারীকে পারিবারিক পর্যায় থেকেই রাজনৈতিক শিক্ষা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণে সক্ষম করে। তুলতে হবে। সে জন্য তাদেরকে পারিবারিক ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনের সুযোগ দিতে হবে।
১১. সিভিল সমাজের ভূমিকা : নারীদের রাজনৈতিকভাবে সচেতন করে তোলা এবং তাদের রাজনৈতিক অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে এগিয়ে নেওয়ার জন্য আমাদের সুশীল সমাজকে এগিয়ে আসতে হবে। নির্যাতিত নারী সমাজের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের সাহস যোগাতে হবে ।
১২. নারীর সচেতনতা বৃদ্ধি : বাংলাদেশ বিশ্ব মানচিত্রে আয়তনে ক্ষুদ্র ও উন্নয়নশীল একটি দেশ। দারিদ্র্য, সামাজিক কুসংস্কার এদেশে পরস্পর সহাবস্থান করে। ফলে নারী উন্নয়ন ব্যাপকভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এদেশের নারীরা তাদের অধিকার ও কর্তব্য সম্পর্কে পুরোপুরি সচেতন নয়।
নারী ও রাজনীতি নারীদের অনগ্রসরতার কারণগুলো চিহ্নিত করে নারীদের সচেতন করে তোলে । কারণে বাংলাদেশের নারীদের উন্নয়নে নারী ও রাজনীতি অধ্যয়ন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
১৩. নারীর ক্ষমতায়ন : বাংলাদেশের নারীরা পুরুষের তুলনায় এখনো অনগ্রসর। কেবল সংসদে সংরক্ষিত আসনই নারীর ক্ষমতায়নের দৃষ্টান্ত হতে পারে না । পুরোপুরি নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করতে হলে পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রে নারীর ভূমিকা আরো বাড়াতে হবে। নারীর ক্ষমতায়ন ত্বরান্বিত করা ও নারী ক্ষমতায়নের পথে বাধা দূর করার লক্ষ্যে বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে নারী অধ্যয়ন খুবই জরুরি।
১৪. মাতৃস্বাস্থ্য সুরক্ষা : প্রবাদ আছে, সুস্থ মা দিতে পারেন সুস্থ সন্তান। কিন্তু আমাদের দেশের অধিকাংশ নারী বাচ্চা প্রসবকালীন সময় বা মাতৃজনিত জটিলতায় মারা যান। আবার কোনো কোনো মা মাতৃজনিত মারাত্মক রোগ বহন করে চলেছেন সারাজীবন।
যার প্রভাব পড়ছে শিশুর উপর। শিশুদের স্বাভাবিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। শুধু তাই নয় এর প্রভাব পড়ছে পুরো পরিবারের উপর । বাংলাদেশে নারীদের এ অবস্থা হতে উত্তরণের জন্যে নারী ও রাজনীতি অধ্যয়নের কোনো বিকল্প নেই।
উপসংহার : সর্বোপরি নারীদের রাজনৈতিক অধিকার আদায়, অর্থনৈতিক স্বাবলম্বিতা অর্জন এবং মানুষ হিসেবে যথাযথ মর্যাদা লাভের জন্য প্রথমত নারীদেরই এগিয়ে আসতে হবে। বেগম রোকেয়া, নবাব ফয়জুন্নেসা আর প্রীতিলতার উত্তরসূরিদের সংগ্রামী ঝাণ্ডা উড়িয়ে এগিয়ে আসতে হবে।
আর্টিকেলের শেষকথাঃ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে নারী ও রাজনীতি পাঠের গুরুত্ব বর্ণনা কর
আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে নারী ও রাজনীতি পাঠের গুরুত্ব বর্ণনা কর। যদি তোমাদের আজকের এই পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো।