আব্বাসীয় শাসনব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য লিখ
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো আব্বাসীয় শাসনব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য লিখ জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের আব্বাসীয় শাসনব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য লিখ ।
আব্বাসীয় শাসনব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য লিখ |
আব্বাসীয় শাসনব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য লিখ
উত্তর : ভূমিকা : আব্বাসীয় খেলাফতের মাধ্যমে ইসলামের ইতিহাসে এক নবযুগের সূচনা হয়। সুদীর্ঘ পাঁচ শত বছরের শাসনকালে তাদের প্রণীত শাসনব্যবস্থা যুগ যুগ ধরে বিশ্ব ইতিহাসকে সমৃদ্ধ করেছে। মূলত তাদের শাসনব্যবস্থাকে ইসলামি শাসনব্যবস্থা বলা হয়।
এ যুগে পূর্ববর্তী উমাইয়াদের শাসনব্যবস্থার ব্যাপক সম্প্রসারণ ঘটে। উমাইয়া যুগ ছিল প্রধানত যুদ্ধ-বিগ্রহ রাজ্য বিস্তারের যুগ। আব্বাসীয় যুগ ছিল মুসলিম মননশীলতা শাসনতান্ত্রিক বিকাশের যুগ। ফলে স্বভাবতঃই তারা শাসনব্যবস্থাকে সুদৃঢ় করেছিলেন।
আব্বাসীয় শাসনব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য : নিয়ে আব্বাসীয় শাস ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য আলোচনা করা হলো :
১.খলিফা : আব্বাসীয় শাসনামলে খলিফা ছিলেন প্রশাসনব্যবস্থার প্রাণকেন্দ্র। তিনিই ছিলেন রাষ্ট্রের প্রধান কর্তাও সকল ক্ষমতার উৎস। রাষ্ট্রীয় শাসনকার্যের যাবতীয় সিদ্ধান্ত তিনিই নিতেন।
রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে তার কার্যাবলি ধর্মীয় ও রাজনৈতিক দুই ভাগে বিভক্ত ছিল। এছাড়াও রাজনৈতিক ক্ষমতাও ছিল সামরিক ও বেসামরিক শ্রেণিতে বিভক্ত।
২.ছাভিজির : আব্বাসীয় শাসনের দ্বিতীয় ক্ষমতাধর ব্যক্তি ছিল উজির । তিনি রাষ্ট্র পরিচালনার প্রধান সাহায্যকারী হিসেবে ভূমিকা রাখতেন ।
খলিফাকে পরামর্শ ও খলিফার আদেশ পালন করাই ছিল উজিরের প্রধান কাজ। উজির নিয়োগ দেওয়া হতো সত্যবাদী ও মুসলিম জাতি থেকে। কোনো বিধর্মীকে উজির নিয়োগ দেওয়া হতো না ।
৩. সর্বজনীন মুসলিম সাম্রাজ্য : আব্বাসীয়গণ উমাইয়াদের আরব আধিপত্যবাদের বেড়াজাল ছিন্ন করে জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে একটি সর্বজনীন মুসলিম সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন।
৪. ধর্মভিত্তিক শাসনব্যবস্থা : আব্বাসীয় শাসনের অন্যতম | বৈশিষ্ট্য ছিল ধর্মভিত্তিক শাসনব্যবস্থা। ধর্মীয় আইন-কানুন রাষ্ট্রের প্রত্যেক বিভাগে মেনে চলা হতো।
৫. রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা : আব্বাসীয় শাসনব্যবস্থার অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো রাজতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা। উমাইয়াদের মতো আব্বাসীয়গণও রাজতন্ত্রের বিশ্বাসী ছিল। তারা উত্তরাধিকার সূত্রে ক্ষমতায় আরোহণে বিশ্বাস করতেন।
৬. সামানীয় প্রভাব : আব্বাসীয় যুগে সামানীয় প্রভাব ব্যাপকভাবে প্রকাশ পায়। সামানীয় শাসনের আদলে এ যুগে উজির জল্লাদ ও রাজকীয় জ্যোতিষীদের নিয়োগ দেওয়া হতো।
৭. বায়তুল মাল লুটপাট : উমাইয়া বংশের মতো আব্বাসীয়রাও রাষ্ট্রীয় কোষাগার বায়তুলমালকে নিজেদের সম্পদ মনে করতেন এবং ভোগবিলাসে মগ্ন থাকতেন ।
৮. প্রশাসনিক দপ্তর : আব্বাসীয় শাসনামলে প্রশাসনিক অনেকগুলো দপ্তর ছিল। সেগুলো নিম্নরূপ :
(ক) দেওয়ান আল জুনদ (সামরিক বিভাগ)
(খ) দেওয়ান আল খারাজ (রাজস্ব বিভাগ)
(গ) দেওয়ান আল বারিদ (ডাক বিভাগ)
(ঘ) দেওয়ান আল রামায়েল (পত্র প্রেরণ বিভাগ)
(ঙ) দেওয়ান আল আজিম্মা (হিসাব নিরীক্ষা বিভাগ)
(চ) দেওয়ান আল খাতাম (রেজিস্ট্রেশন বিভাগ)
(ছ) দেওয়ান আল কাজা (বিচার বিভাগ)
(জ) দেওয়ান আল শুরতা (পুলিশ বিভাগ)
১০. অমুসলিমদের বিচার : আব্বাসীয় শাসনে অমুসলিমদের বিচারকার্য করার জন্য অমুসলিম বিচারক নিয়োগ দেওয়া হতো। তবে ফৌজদারী অপরাধের ক্ষেত্রে মুসলিম ও অমুসলিম সকলে একই আইনের আওতাধীন ছিল।
১১. সাক্ষী : আব্বাসীয় শাসনামলে সাক্ষীদের অত্যন্ত গুরুত্ব দেওয়া হতো। সেই সময় সৎ ন্যায় নিষ্ঠা বণিক মুসলমানদের সাক্ষী গ্রহণ করতেন। তবে সেই সময় সরকার সাক্ষীকে শহিদ বলা হতো ।
আব্বাসীয় আমলে ইসলামি আইনানুসারে বিভিন্ন অপরাধের শাস্তি দেওয়া হতো। যেমন- শরীয়তবিরোধী অপরাধের শাস্তি । মানবতাবিরোধী শাস্তি এবং রাষ্ট্রদ্রোহী অপরাধের শাস্তি ।
১২. শিয়া সুন্নি দ্বন্দ্ব : আব্বাসীয় খিলাফতের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো শিয়া সুন্নি দ্বন্দ্ব। খলিফা শিয়া বিদ্বেষী হওয়াতে শিয়াদের উপর অত্যাচার চালানো হতো।
১৩. রাজধানী পরিবর্তন : ইরাকবাসীগণ আব্বাসীয় সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠাকালে অকুণ্ঠভাবে সমর্থন করেছিল বলে তারা ক্ষমতাসীন হবার পর পরই কেন্দ্রীয় রাজধানী সিরিয়ার দামেস্ক হতে ইরাকের বাগদাদে স্থানান্তর করে। যার ফলে সিরিয়ার উন্নতির ধারা পশ্চিম হতে পূর্বাভিমুক হয়ে যায় ৷
১৪. জ্ঞানবিজ্ঞানের চরম উৎকর্ষতা সাধন : আব্বাসীয় বংশের শাসনামলে মুসলমানদের শিক্ষা-সংস্কৃতি ও জ্ঞানবিজ্ঞানে প্রভূত উন্নতি সাধিত হয়েছিল। মূলত এই যুগই ছিল জ্ঞানবিজ্ঞানের যুগ । এ প্রসঙ্গে ঐতিহাসিকদের মত হলো The age of conquest had passed that of civilization had commerced.
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, উমাইয়া শাসন রাজ্যবিস্তারের যুগ হলেও পরবর্তীতে আব্বাসীয় শাসন জ্ঞানবিজ্ঞানের চরম উৎকর্ষতা সাধিত হয়েছিল।
এই যুগেই কুরআন, হাদিস, ফিকহ ও নবি রাসূলের জীবনীসহ বিজ্ঞানের প্রভূত কল্যাণ সাধিত হয়েছে। সর্বোপরি জ্ঞানবিজ্ঞানের উৎকর্ষতার জন্য একে স্বর্ণযুগও বলা হয় ।
আর্টিকেলের শেষকথাঃ আব্বাসীয় যুগের প্রকৃত বৈশিষ্ট্যগুলো আলোচনা কর
আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম আব্বাসীয় যুগের প্রকৃত বৈশিষ্ট্যগুলো আলোচনা কর। যদি তোমাদের আজকের এই পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো।