আব্বাসীয় শাসনামলের সমাজ ব্যবস্থার প্রকৃতি মূল্যায়ন কর
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো আব্বাসীয় শাসনামলের সমাজ ব্যবস্থার প্রকৃতি মূল্যায়ন কর জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের আব্বাসীয় শাসনামলের সমাজ ব্যবস্থার প্রকৃতি মূল্যায়ন কর।
আব্বাসীয় শাসনামলের সমাজ ব্যবস্থার প্রকৃতি মূল্যায়ন কর |
আব্বাসীয় শাসনামলের সমাজ ব্যবস্থার প্রকৃতি মূল্যায়ন কর
উত্তর : আব্বাসীয় খিলাফত ইসলামের ইতিহাসে এক যুগান্তকারী অধ্যায়ের সূচনা করে। উমাইয়া বংশের ধ্বংসস্তূপের ওপর ৭৫০ খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত হয় আব্বাসীয় বংশ।
খলিফা হজরত মুয়াবিয়া (রা.) কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত উমাইয়া খলিফাগণ যে শাসনব্যবস্থা শুরু করেন আব্বাসীয় আমলে তা পরিপূর্ণ হয়। আব্বাসীয় বংশের উত্থানের সাথে সাথে শুধু শাসকবংশেই পরিবর্তন ঘটেনি। এর ফলে সমাজব্যবস্থারও ব্যাপক পরিবর্তন আসে।
→ আব্বাসীয় শাসনামলের সামাজিক অবস্থা : গোত্রপ্রধা ছিল প্রাচীন আরবের সমাজব্যবস্থার একটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য । বৈদেশিক চাপে পড়ে আব্বাসীয় আমলে এই প্রথা অনেকাংশে কমে যায়। এ সময় অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো :
১. মিশ্র জাতির উদ্ভব : আব্বাসীয় শাসনামলে আরবগণ নিজসত্তা হারিয়ে মিশ্র জাতিতে পরিণত হয়। এ সময় আরব প্রভাবের অবসান ঘটে। আব্বাসীয় খলিফাদের আল মাহদী আস সাফফা এবং আল আমিন ব্যতীত কেউই আরব রক্তের আভিজাত্যের গর্ব করতে পরেনি।
এছাড়াও আরব মুসলিমগণ অন্যান্য সম্প্রদায়ের সাথে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপন করে বংশের গৌরব হারিয়ে ফেলে। ফলে এ আরবগণ মিশ্র জাতিতে পরিণত হয়।
২. আরব-অনারব সম্পর্ক : আব্বাসীয় যুগে আরবদের আভিজাত্যের অবসান ঘটে। কারণ আরবদের সাথে অনারবদের বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপনে আরবরা নিজের স্বতন্ত্রতা হারিয়ে ফেলে।
৩. শিষ্টাচার : আব্বাসীয় আমলে সামাজিক শ্রেণিবিন্যাসের পাশাপাশি শিষ্টাচারও বিদ্যমান ছিল। নবম-দশম শতকে জনৈক লেখক “কিতাবু-উল মুওয়াশসা” গ্রন্থ রচনা করে গ্রন্থে একজন সংস্কৃতিবান লোকের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে আলোচনা করেছেন।
তিনি তার এ গ্রন্থে নম্র ব্যবহার, পৌরুষ, শিষ্টাচার, অল্প কথা বলা, সৎ সঙ্গ, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতাসহ অনেক গুণের বর্ণনা করেছেন।
৪. নারীর মর্যাদা : আব্বাসীয় শাসনামলে নারীর অবস্থা ছিল অনেক উপরে। এসময় তারা পূর্ণ স্বাতন্ত্র্য ও স্বাধীনতা ভোগ করতো। প্রয়োজনে তারা পুরুষের মতো স্বাধীনভাবে চলাচল করতে পারতো।
এসময় বহু নারী রাজকার্যে, সাহিত্যেক্ষেত্রে ও সংগীত চর্চায় কৃতিত্বের দ্বারা ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন। এ সময় নারীরা যুদ্ধ ক্ষেত্রেও অংশগ্রহণ করতে পারত।
৫. পোশাক-পরিচ্ছদ : আব্বাসীয় যুগের নারীরা তাদের মর্যাদা অনুযায়ী পোশাক-পরিচ্ছদ পরতেন। বাজন্ধ ও মল ছিল নারীর সাধারণ পোশাক।
এ সমাজের পুরুষরা মুজা, টুপি, শার্ট, পাজামা, ফতুয়া, বাইরাবরণযুক্ত জ্যাকেট পরিধান করতেন। ধর্মশাস্ত্রে পণ্ডিত ব্যক্তিগণ কালোবর্ণের পাগড়ি ও ঢিলাজামা পরিধান করতেন।
৬. দাসপ্রথা : আব্বাসীয় শাসনামলে সমাজে দাসপ্রথা প্রচলিত ছিল। এ সময় দাসের প্রতি ভালো ব্যবহার করা হতো। আব্বাসীয়দের দরবারে গ্রিক, বার্বার, আর্মেনীয়, স্লাভ, নিগ্রো, তুর্কি দাস ছিল।
আব্বাসীয় সমাজে ক্রমশ দাস-দাসীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকে। আল মুকতাদিরের রাজদরবারে ১১,০০০ গ্রিক ও সুদানি দাসের অবস্থান ছিল।
৭. স্নানাগার : আব্বাসীয় শাসনামলে শুধু প্রয়োজনেই নয়, গোসল করা, আমোদ-প্রমোদ ও বিলাসিতা বস্তুতে পরিণত হয় স্নানাগারসমূহ।
ফলে সমগ্র আরব দেশে সাধারণের ব্যবস্থারযোগ্য স্নানাগার নির্মাণ করা হয়। পুরুষ ও মহিলাদের জন্য আলাদা স্নানাগার নির্মাণ করা হয়েছিল। প্রতিটি স্নানাগারে গরম ও ঠান্ডা পানির ব্যবস্থা ছিল।
৮. মদ্যপান : তৎকালীন সমাজের সর্বস্তরে প্রচলিত ছিল মদ্যপান। এ প্রথা পারস্য রাজ দরবারে উৎপত্তি হয়ে মুসলিম খলিফাদের দরবারের মাধ্যমে সমাজের সর্বস্তরে বিস্তার লাভ করে।
অনেকে ধর্মীয় বিধি পালনের নিমিত্তে আদর রস ও বাদাম প্রভৃতি “নসিব” পান করতো। মদ্যপানের সময় দরবারের নর্তকীদের নৃত্য পরিবেশন করা হতো।
৯. খেলাধুলা : আব্বাসীয় সমাজে খেলাধুলা প্রচলিত ছিল। ঘরোয়া খেলাধুলার মধ্যে দাবা ও পাশা খেলা ছিল প্রধান। খলিফা হারুন আর রশিদ প্রথম দাবা খেলাকে উৎসাহিত করেন। খলিফাদের ঘোড়া দৌড় দেখতে ভালোবাসতেন।
১০. বিলাসিতা : আমোদ-প্রমোদ ও বিলাস-ব্যসনে আব্বাসীয় সমাজ যথেষ্ট সুনাম অর্জন করে। খলিফা হারুন আর রশিদের সময় বাগদাদের খ্যাতি চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়ে।
হারুন আর রশিদের স্ত্রী জুবায়দা স্বর্ণ ও রৌপ্য নির্মিত তৈজসপত্রে খাবার খেতেন এবং রত্নখচিত জুতা ব্যবহার করে মৌলিক দ্রব্যের প্রচলন করেন ।
১১. খাদ্য সামগ্রী : আব্বাসীয় শাসনামলে ভাতের চেয়ে | রুটি ছিল অধিক ও সুস্বাদু খাদ্য। সমাজে মাদকতাহীন, মিষ্টি, | সুগন্ধি শরবতের প্রচলন ছিল।
তৎকালীন সমাজে খাদ্যসামগ্রী বহন করার জন্য বারকোশ ছিল। সম্ভ্রান্ত পরিবারে বারকোশ এবং টেবিলের মূল্যবান পদার্থের আবরণ থাকতো।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, আব্বাসীয় শাসনামলে সামাজিক ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের বৈশিষ্ট্য লক্ষ করা যায় । এ সময় পূর্ব আরব কৌলিন্যের বিলোপ ঘটে এবং তারা এক মিশ্র জাতিতে পরিণত হয় ।
তাছাড়া সমাজের গঠন প্রভৃতির প্রতি দৃষ্টিপাত করলে দেখা যায় যে, তখন সমাজের সর্বোচ্চ স্তরে ছিলেন খলিফা, তার পরিবার বর্গ, ক্রীতদাস প্রথা, বিভিন্ন লোক এবং সর্বনিম্ন ছিল দাসদাসী ।
আর্টিকেলের শেষকথাঃ আব্বাসীয় আমলে সমাজ ব্যবস্থা কিরূপ ছিল? আলোচনা কর
আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম আব্বাসীয় আমলে সমাজ ব্যবস্থা কিরূপ ছিল? আলোচনা কর । যদি তোমাদের আজকের এই পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো।