আব্বাসীয় শাসনামলে ভূগোল শাস্ত্রে মুসলমানদের অবদান আলোচনা কর
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো আব্বাসীয় শাসনামলে ভূগোল শাস্ত্রে মুসলমানদের অবদান আলোচনা কর জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের আব্বাসীয় শাসনামলে ভূগোল শাস্ত্রে মুসলমানদের অবদান আলোচনা কর।
আব্বাসীয় শাসনামলে ভূগোল শাস্ত্রে মুসলমানদের অবদান আলোচনা কর |
আব্বাসীয় শাসনামলে ভূগোল শাস্ত্রে মুসলমানদের অবদান আলোচনা কর
উত্তর : ভূমিকা : আব্বাসীয় আমলে খলিফাগণ ছিলেন জ্ঞানবিজ্ঞানের পৃষ্ঠপোষক। তাদের সহায়তায় জ্ঞানবিজ্ঞানের প্রতিটি শাখাতেই উন্নতি সাধিত হয়েছিল। তারই অংশ হিসেবে ভূগোল শাস্ত্রে মুসলমানগণ যে উন্নতি লাভ করেছিল পৃথিবীর ইতিহাসে তা খুবই গুরুত্বের দাবিদার।
ইউরোপের বিজ্ঞানীগণ বন পৃথিবীকে জোরের সাথে সমতল বলে প্রকাশ করেছিলেন মুসলমানগণ তখন এটাকে গোলাকার বলে ঘোষণা করেন এবং তাদের গবেষণার ফলে ভৌগোলিক সীমারেখা, আয়তন, চন্দ্রগ্রহণ, আহ্নিক গতি, বার্ষিক গতি সম্পর্কে অনেক নতুন নতুন তথ্য আবিষ্কার হয়।
→ ভূগোলশাস্ত্রে মুসলমানদের অবদান : ভূগোলশাস্ত্রে মুসলমানদের অবদান যথেষ্ট। মূলত হজ্জ যাত্রা, নৌবাণিজ্য এবং বিভিন্ন প্রয়োজনেই মুসলমানরা ভুগোল চর্চায় আত্মনিয়োগ করেন। নিম্নে ভূগোল চর্চার ক্ষেত্রে মুসলমানদের অবদান আলোচনা করা হলো-
১. আল-খারেযমী : মুসলমানদের মধ্যে একজন বিখ্যাত ভূগোলবিদ ছিলেন আল খারিযমী। তিনি একটি মানচিত্র অঙ্কন করেন যেখানে পৃথিবীকে সাতটি ভূ-খণ্ডে ভাগ করেন। তার গ্রন্থেই আরবিতে ভূ-বিজ্ঞানের বুনিয়াদ প্রতিষ্ঠা করেন। তাঁর “কিতাব সুরাতুল আরদ” নবম শতকের প্রথমার্ধে রচিত। অধ্যাপক মিলবক্স বলেন, “ইউরোপিয়গণ তার বিজ্ঞান চর্চার প্রথমদিকে এর সমতুল্য কোনো গ্রন্থ রচনা করতে পারেনি।”
২. ইবনে সিনা : ভূগোলশাস্ত্রে বিশেষ অবদান রাখেন বিশ্ববিখ্যাত পর্যটক ইবনে হাওকাল। তিনি মুসলিম বিশ্বের বহুদেশ পরিভ্রমণ করেন। তিনি আল ইস্তাথ রীর বিশেষ অনুরোধে এ গ্রন্থের আলোচনা ও মানচিত্র সংশোধন করেন। সংশোধিত এ কিতাবের নাম দেওয়া হয় “আল মাসলিক ও য়াল মাসালিক”।
৩. ইবনে খুরদাদিবিহ : ইবনে খুরদাদিবিহ ছিলেন একজন। অন্যতম মুসলিম ভূগোলবিদ। তার বিখ্যাত “কিতাবুল মাসালিক ওয়াল মাসালিক” গ্রন্থে আরবের প্রধান বাণিজ্য পথ এবং চীন, জাপান, কোরিয়া প্রভৃতি দূরবর্তী দেশের বর্ণনা করা হয়েছে। পরবর্তী কালের বহু ভূগোলবিদ এ গ্রন্থকে তাদের রচনার মূল উৎস হিসেবে ব্যবহার করেন।
৪. আল ইয়াকুবী : আল ইয়াকুবী একজন খ্যাতিমান মুসলিম ভূগোলবিদ ছিলেন। তিনি ভারত ও পাশ্চাত্য ভ্রমণ করেন। তার অন্যতম গ্রন্থ “কিতাবুল বুলদান" ভৌগোলিক বিবরণ সংবলিত একটি বিখ্যাত গ্রন্থ। ইয়াকুব মূলত পরিসংখ্যান ও স্থানের বিবরণের প্রতি বিশেষ ভাবে আগ্রহী ছিলেন। তাকে ভূগোলশাস্ত্রের জনক বলা হয় ।
৫. হামাদানী ও ইবনে রুশতাহ : আল হামাদানী ও ইবনে রুশতাহ ভূগোলবিদ হিসেবে খ্যাতি লাভ করেন। আল হামাদানীর প্রসিদ্ধ ভূগোল গ্রন্থ “কিতাবুল বুলদান” যা থেকে ইয়াকুব ও মাসুদী প্রায়ই উদ্ধৃত দেন। অন্যদিকে ইবনে রুশতাহের অন্যতম গ্রন্থ “আল আলাক আল নাফিসাহ”।
৬. আল মাসুদী : ঐতিহাসিক মাসুদী বিশিষ্ট ভূগোলবিদও ছিলেন। তিনি তাঁর গ্রন্থ “মারুফ আয যাহার” গ্রন্থে ভূগোল সম্পর্কে ধারণা দিয়েছেন। তার বর্ণনা মতে, এখন যা স্থলভাগ এক সময় তা জলভাগ ছিল এবং এখন যা জলভাগ এক সময় তা স্থলভাগ ছিল।
৭. ইবনে খালদুন : মধ্যযুগীয় মুসলিম ভূগোলবিদদের অন্যতম | ছিলেন ইবনে খালদুন। তার অনন্য গ্রন্থ “কিতাবুল ইয়াতর”-এর | ইসলামি জগৎ সম্পর্কিত অনেক মূল্যবান ও বস্তুনিষ্ট তথ্য বর্ণনা রয়েছে। দেশ সম্পর্কে সুন্দরভাবে ভূগোলশাস্ত্রে অবদানের জন্য তাকে আধুনিক মানবিক ভূগোলের অগ্রদূত বলা হয় ৷
৮. আল ইস্তাখরির অবদান : হিজরি চতুর্থ শতাব্দির মধ্য ভাগে | আল ইস্তাখরী ইবনে হাওকাল এবং ইবনে মাকদিনীর আবির্ভাবের পূর্ব পর্যন্ত তেমন বিখ্যাত ভূগোলবিদ হিসেবে পরিচয় পাওয়া যায় না। দশম শতাব্দীর মধ্য ভাগে আল ইস্তাখরী তার গ্রন্থে প্রত্যেক দেশের রঙিন মানচিত্র সংবলিত “মাসালিক আল-মাসালিক” রচনা করেন। সামানীয় রাজদরবারের আবু জাবেদ আল বলখীর গ্রন্থের রচনা পদ্ধতির ওপর ভিত্তি করে এ গ্রন্থ রচিত হয়েছিল।
৯. আল মাকদিসী : আল মাকদিসী মুসলমানদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ ভূগোলবিদ ছিলেন। তিনি এ জন্য বিখ্যাত পর্যটকও ছিলেন। তিনি তার লেখার মাধ্যমে নিজেকে জীবন ও পেশার সূক্ষ্ম পর্যবেক্ষক হিসেবে ব্যক্ত করেন। তিনি মুসলিম জাহানকে চৌদ্দটি ভাগে ভাগ করেন এবং প্রত্যেক জেলার জন্য আলাদা মানচিত্র তৈরি করেন । ৯৮৫ খ্রিস্টাব্দে তার বিশ বছরের এমন অভিজ্ঞতা “আহমান উত তাকাসিম” “ফি মারিয়াতুল আকলিম” গ্রন্থে লিপিবদ্ধ করেন ।
১০. ইয়াফুত হামাভী : আব্বাসীয় খেলাফতের শেষ ভাগে মুসলিম প্রাচ্যের সর্বশ্রেষ্ঠ ভূগোলবিদ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছিল। ইয়াফুত বিন আব্দুলাহ আল-হামাভী। তার প্রধান দুটি গ্রন্থ: “সুজাম-উল-বুলদান” এবং মুজাম-উল-উদাবা”।
১২২৮ খ্রিস্টাব্দে তিনি তার “মুজাম-উল-বুলদান” গ্রন্থে প্রথম আলেপ্পোতে প্রকাশ করেন। এ গ্রন্থে জায়গার নামগুলো বর্ণমালা ক্রমানুসারে সজ্জিত। এটাকে ভূগোল, ইতিহাস এবং অনেক বৈজ্ঞানিক তথ্য সংবলিত এক বিশ্বকোষ হিসেবে গ্রহণ করা যেতে পারে।
১১. আল বেরুনী : ভূগোলশাস্ত্রে যেসব মুসলমান অতুলনীয় অবদান রেখেছেন তাদের মধ্যে আল বেরুনী অন্যতম। পৃথিবীর গোলাকার মানচিত্র তিনিই প্রথম আবিষ্কার করেন। এজন্য তাকে মানচিত্রের প্রথম নির্মাতা বলা হয়।
১২. আল ইদ্রিসী : পাশ্চাত্যের সুপরিচিত ভূগোলবিদ ছিলেন। আল ইদ্রিসী। রাজ্য দ্বিতীয় রাজার দ্বিতীয় যে একজন মুসলমান পণ্ডিতের ওপর জ্ঞান জগতের বিবরণ লেখার দায়িত্ব অর্পণ করেন। এটাই তখনকার মুসলমানদের জ্ঞানের শ্রেষ্ঠত্বে প্রমাণ করে।
তিনি “যে গোলক” তৈরি করেন এবং একটি গোলকে জ্ঞাত জগতের অবস্থান নির্দেশ করেন। এটির মাধ্যমে তিনি মানচিত্র প্রস্তুতকারীদের মধ্যে বিশিষ্ট স্থান দখল করে রেখেছেন।
১৩. ইবনে বতুতা : ভূগোলশাস্ত্রের যেসব মুসলমানর অবদান রেখেছেন তাদের মধ্যে ইবনে বতুতা হলেন অন্যতম। তিনি মধ্যযুগের বিশ্ববিখ্যাত পরিব্রাयক ছিলেন। ইবনে বতুতা ভ্রমণ অভিজ্ঞতার আলোকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বস্তুনিষ্ঠ আলোচনা “রিহালা” নামক গ্রন্থে লিপিবদ্ধ করেন। এ গ্রন্থ অনন্য অবদান হিসেবে বিশেষভাবে সমাদৃত ।
১৪. অন্যান্য : অন্য আরো অনেক ভূগোলবিদ ছিল যারা ভূগোলশাস্ত্রে অবদান রেখেছেন। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো—কাল কার্যাবলি আল দামিস্কি আয মুহরী ও ইবনে সুবাইর প্রমুখ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায়, ভূগোলশাস্ত্রে মসলমানদের অবদান ও সফলতা অনেক। বিশেষ করে আব্বাসীয় সম্রাটগণের পৃষ্ঠপোষকতায় মুসলমানরা জ্ঞানচর্চায় মনোনিবেশ করেন। তাছাড়া মুসলমান ভূগোলবিদের গ্রন্থ থেকে ভূগোল সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্যের আলোকেই পরবর্তীতে ভূগোলের বিভিন্ন গ্রন্থ রচিত হয়।
আর্টিকেলের শেষকথাঃ আব্বাসীয় শাসনামলে ভূগোল শাস্ত্রে মুসলমানদের অবদান আলোচনা কর
আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম আব্বাসীয় শাসনামলে ভূগোল শাস্ত্রে মুসলমানদের অবদান আলোচনা কর। যদি তোমাদের আজকের এই পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো।