আব্বাসীয় শাসনামলে সেনাবাহিনীর বিবরণ দাও
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো আব্বাসীয় শাসনামলে সেনাবাহিনীর বিবরণ দাও জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের আব্বাসীয় শাসনামলে সেনাবাহিনীর বিবরণ দাও ।
আব্বাসীয় শাসনামলে সেনাবাহিনীর বিবরণ দাও |
আব্বাসীয় শাসনামলে সেনাবাহিনীর বিবরণ দাও
উত্তর : ভূমিকা : আব্বাসীয় সাম্রাজ্য আটলান্টিক থেকে সিন্ধু নদ এবং কাসপিয়ান সাগর থেকে নীলনদ পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। এ বিশাল অঞ্চলে জাতি, ধর্ম, বর্ণ, গোষ্ঠী, ভাষাভাষী ও ধর্মীয় সম্প্রদায় বাস করতো।
এ জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকলকে নিয়ন্ত্রণ করা এবং সাম্রাজ্যের বিশৃঙ্খলা দূরীকরণে সেনা ও পুলিশ বাহিনীর ব্যবস্থা করেন। তবে আব্বাসীয় শাসনামলে মুসলিম সাম্রাজ্যের তেমন বিস্তার না ঘটলেও তারা সামরিক বাহিনীর সংগঠন ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা উন্নয়ন সাধন করতে সক্ষম হন ।
→ আব্বাসীয় শাসনামলের সামরিক বাহিনী : খলিফা আব্বাসীয় শাসনামলে সামরিক ব্যাপারে সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী ছিলেন। তিনিই সামরিক বিভাগ সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে পরিচালনা করতেন। নিম্নে আব্বাসীয় শাসনামলের সামরিক বাহিনীর বর্ণনা করা হলো-
১. সৈন্যবাহিনীর গঠন : আব্বাসীয় শাসনামলে শাসনকার্য পরিচালনায় উল্লেখযোগ্য অবধান রাখেন। সকলকে সমানভাবে বেতন দেয়ার ফলে বহু লোকের মনে ইসলামের প্রতি আকর্ষণ সৃষ্টি হয়। ফলে খলিফাদের সৈন্য ও সৈন্যদল সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকে।
সিরিয়া, মিশর, আফ্রিকা, ইরান, পারস্য, ট্রান্সআফ্রিয়ানার বহু নওমুসলিম আব্বাসীয়দের অধীনে সামরিক বিভাগে যোগদান করা গৌরবজনক মনে করে সামরিক বাহিনীতে যোগ দেন ।
২. সৈন্যের শ্রেণিবিভাগ : আব্বাসীয় শাসনামলে খলিফার দেহরক্ষী বাহিনী ছিল এবং অপরাপর বাহিনী ছিল দুই প্রকার । যথা-
(ক) নিয়মিত বাহিনী ও
(খ) অনিয়মিত বাহিনী বা মতাতাউইয়া খলিফাদের নিয়মিত সৈন্যের মধ্যে আবার কিছু ভাগ ছিল। যথা : পদাতিক, অশ্বারোহী তিরন্দাজ, অগ্নিশিখা নিক্ষেপণকারী খন্দক প্রস্তুতকারী, খন্দক প্রস্তুতকারক ও শ্রমিক। এদের প্রত্যেক শ্রেণি ভিন্ন ভিন্ন অস্ত্র ব্যবহার করতো।
৩. জাতীয় সৈন্যবাহিনী গঠন : আব্বাসীয় খলিফা মনসুর কর্তৃপক্ষের সামরিক সংগঠনের খুব যত্নশীল ছিলেন। তিনি তিন ধরনের সৈন্যবাহিনী গঠন করেন। যথা—
(ক) হিমারীয়;
(খ) মুদারীয় ও
(গ) খোরাসানীয় ।
খলিফা মুতাসিম আরো দুটি বাহিনী গঠন করেন। যথা-
(ক) তুর্কিদের দ্বারা গঠিত বাহিনী ও
(খ) আফ্রিকার দ্বারা গঠিত বাহিনী।
৪. সৈন্য সংখ্যা : আব্বাসীয় খেলাফতের শেষ দিকে সৈন্যসংখ্যা ক্রমেই বৃদ্ধি পেতে লাগল। আব্বাসীয় যুগে সৈন্য সংখ্যা ছিল দেড় লক্ষের অধিক। গ্রিক সম্রাট নাইসিফারাসের বিরুদ্ধে খলিফা হারুন-অর-রশিদ স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী নিয়ে অগ্রসর হন।
আমিন মামুনের গৃহযুদ্ধের সময় মামুনের সৈন্যসংখ্যা ছিল ১২,৫০০। খলিফা মুতাসিমের রাজত্বকালে বাইজান্টাইন সৈন্য সংখ্যা ১,৬০,০০০ অশ্বারোহী ও পদাতিক বাহিনী। বিশেষ করে মুতাসিমের সময় সৈন্যসংখ্যা ছিল ২,৫০,০০০ সৈন্য ।
৫. সহযোগী বাহিনী : আব্বাসীয় শাসনামলে সেনাবাহিনীর সহযোগী হিসেবে বেসামরিক লোকদের সমন্বয়ে সহযোগী বাহিনী গঠন করা হয়। তাদের মধ্যে চিকিৎসক দোভাষী, বেতন বণ্টনকারী শ্রেণি বিশেষ উল্লেখযোগ্য। এ বাহিনী নিয়মিত বাহিনীকে বিভিন্ন সহযোগিতা করতো।
৬. সেনা ইউনিট গঠন : সেনাবাহিনীকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য আব্বাসীয় আমলে সেনা ইউনিট গঠন করা হয়েছিল। এ সময় দশজন সেনার অধিনায়ককে আরিফ, একশ সেনার অধিনায়ককে নায়েক, একহাজার সেনার অধিনায়ককে বলা হতো কায়েস এবং দশ হাজার সেনার অধিনায়ককে বলা হতো আমির।
৭. সৈন্যদের বেতন : আব্বাসীয় খলিফা আসসাফার রাজত্বকালে | দৈনিক খাদ্যসামগ্রী, ভাতা ও যুদ্ধের ময়দানে প্রাপ্ত সম্পদ ছাড়া পদাতিক বাহিনীর সৈন্যদের বেতন ২৬০ দিরহাম বার্ষিক।
খলিফা হারুন অর রশিদের শেষভাগে পদাতিক সৈন্যের বেতন কমে মাসিক ৬১ দিরহামে দাঁড়ায় এবং খলিফা মামুনের সময় তা ২৩ দিরহামে এসে দাঁড়ায় । আব্বাসীয় সৈন্যগণ ৪০ দিরহাম পেতেন।
৮. সৈন্যদের অস্ত্রশস্ত্র : আব্বাসীয় যুগে সেনাবাহিনী নানা ধরনের অস্ত্রশস্ত্র ব্যবহার করতো। পদাতিক সৈন্যগণ বর্শা, তীর, ধনুক, বলম ও তরবারি প্রভৃতি ব্যবহার করতো। অশ্বারোহী | সৈন্যগণ বর্শা, তীর, ধনুক এবং লম্বা চওড়া সোজা তরবারি এবং ঢাল ব্যবহার করতো।
তীরন্দাজ বাহিনী তীর ধনুক চালানোতে পারদর্শী ছিলেন। অগ্নিশিখা নিক্ষেপণকারী বাহিনী অগ্নিসংযোগ করতেন এবং যুদ্ধে তরবারী ব্যবহার করতেন। তাছাড়া সেনাবাহিনীতে সাধারণ চিকিৎসক ও অস্ত্র চিকিৎসক থাকতো ।
৯. উন্নত পরিবহণ ব্যবস্থা : আব্বাসীয় শাসনামলে সেনাবাহিনীর উন্নয়নের মূলে ছিল পরিবহণ ব্যবস্থা। উট, ঘোড়া, খচ্চর, ষাড় ও নৌকা সেনাবিাহিনীর সরঞ্জাম ও রসদ পরিবহণের জন্য ব্যবহার করা হতো। মূলত আব্বাসীয় খেলাফতের স্থায়িত্ব নির্ভর করতো উন্নত পরিবহণ ও সেনাবাহিনীর ওপর ।
১০. সৈন্যদের নৈতিক অবস্থা : আব্বাসীয় শাসনামলে সৈন্যবাহিনীর নৈতিক অবস্থা ছিল খুব উন্নত। কোনো অনৈতিক কর্মকাণ্ড প্রমাণিত হলে তাকে কঠোর হস্তে শাস্তি দেওয়া তো। প্রত্যেক সেনাদলের একজন কাজী থাকত। তারা যুদ্ধক্ষেত্রে প্রাপ্তদ্রব্যের দায়িত্বে নিযুক্ত থাকেন এবং ইসলামের বিধানুযায়ী তা বণ্টন করতেন।
১১. সেনাবাহিনীতে পদনির্ধারণ : আব্বাসীয় শাসনামলে সেনাবাহিনীতে সর্বাধিনায়ক ছিলেন খলিফাগণ। সামরিক বাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের নিয়োগ, পদোন্নতি ও পদচ্যুতির দায়িত্ব খলিফার। এর পরে সর্বোচ্চ ক্ষমতা ও পদের অধিকারী ছিলেন উজির। এ দুজনের পর ক্ষমতাবান ছিলেন সেনাবাহিনীর প্রধান। সেনাবাহিনীর নিরাপত্তা ব্যবস্থাসহ সকল দায়িত্ব খলিফা নিজের ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায়, আব্বাসীয়দের এ বিশাল সাম্রাজ্যের মধ্যে শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রেখে সুষ্ঠুভাবে শাসনকার্য পরিচালনা করার জন্য সেনাবাহিনী গঠন ছিল আবশ্যক। আব্বাসীয় সেনাবাহিনীর নিকট আধুনিক সেনাবাহিনী অনেকটাই দায়ী। আব্বাসীয়দের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসের পিছনে সেনাবাহিনীই কাজ করেছে।
আর্টিকেলের শেষকথাঃ আব্বাসীয় আমলে সামরিক বাহিনীর বর্ণনা দাও
আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম আব্বাসীয় আমলে সামরিক বাহিনীর বর্ণনা দাও। যদি তোমাদের আজকের এই পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো।