আব্বাসীয় শাসনামলে গণিত শাস্ত্রের অবদান আলোচনা কর
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো আব্বাসীয় শাসনামলে গণিত শাস্ত্রের অবদান আলোচনা কর জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের আব্বাসীয় শাসনামলে গণিত শাস্ত্রের অবদান আলোচনা কর।
আব্বাসীয় শাসনামলে গণিত শাস্ত্রের অবদান আলোচনা কর |
আব্বাসীয় শাসনামলে গণিত শাস্ত্রের অবদান আলোচনা কর
উত্তর : ভূমিকা : আব্বাসীয় শাসনামল ছিল মুসলমানদের জন্য জ্ঞানবিজ্ঞানের স্বর্ণযুগ। এ যুগে মুসলিম খলিফাগণের পৃষ্ঠপোষকতায় মুসলিম পণ্ডিতগণ তাদের মেধার কল্যাণমুখী স্বাক্ষর রাখতে সক্ষম হয়েছিল।
খলিফাদের দরবারে কবি, সাহিত্যিক, বৈজ্ঞানিক, দার্শনিক, চিকিৎসাবিদ এবং গণিতবিদগণের মিলন মেলায় পরিণত হয়েছিল । এখানে জ্ঞানবিজ্ঞানের সব শাখায় চর্চা করা হতো। রচনা করা হতো জ্ঞানবিজ্ঞানের গ্রন্থ এবং অন্যান্য ভাষার বই। আরবি ভাষায় অনুবাদ করা হতো।
→ গণিতশাস্ত্রে আব্বাসীয় মুসলমান : গণিতশাস্ত্রে মুসলমানদের অসামান্য কৃতিত্বের দাবিদার। অধ্যাপক আরনল্ড এর মতে প্রকৃতপক্ষে মুসলমানগণই সমতলক্ষেত্র গোলাকার। ত্রিকোণমীতির প্রতিষ্ঠাতা। বীজগণিত, পরিসংখ্যান প্রভৃতি ফলিত বিজ্ঞানের শাখায়গুলোও মুসলমানদেরই আবিষ্কারের ফল। নিম্নে গণিতশাস্ত্রের মুসলমানদের অবদান সম্পর্কে আলোচনা করা হলো :
১. আল-খাওয়ারিজমী : সর্বশ্রেষ্ঠ গণিতবিদ ছিলেন আল খাওয়ারিজমী । তিনি প্রাচীন অঙ্ক ও বীজগণিতের সূত্রগুলোকেও সমন্বিত করেন। “হিসাব আল জাবার ওয়াল মুকাবিলা" বীজগণিতের ওপর একটি গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ। বার শতকে এটি ল্যাটিন ভাষায় অনুদিত হয়। এ গ্রন্থের নাম থেকে জেবরা নামের উৎপত্তি। জর্জ মারসনের মতে, আল খাওয়ারিজমী ছিলেন আরব জাতির শ্রেষ্ঠ বৈজ্ঞানিকদের অন্যতম এবং তার সময়ের শ্রেষ্ঠ বৈজ্ঞানিক।
২. আল-বেরুনী : গণিতশাস্ত্রের ক্ষেত্রে ইসলামের ইতিহাসে এক মৌলিক প্রতিভার অধিকারী ছিলেন আল-বেরুনী। তিনি ছিলেন শ্রেষ্ঠ গণিতবিদ। ভূগোল সংশ্লিষ্ট গণিত জ্যোতির্বিজ্ঞানের আলোচনার ক্ষেত্রে তিনি ভূপৃষ্ঠের বিপরীত দিক, পৃথিবীর দিক পৃথিবীর আকার এর পতি ধারায় বিভিন্ন স্থানের অক্ষাংশ ও দ্রাঘিমার আলোচনা করেন ৷
৩. মুহাম্মদ বিন ঈসা : আধুনিক বীজগণিতের আবিষ্কারক | ছিলেন মুহাম্মদ বিন ঈসা। ত্রিকোণমিতি, জ্যামিতি, সমীকরণ সম্পর্কে তার অনেক গ্রন্থ রয়েছে। এসব গ্রন্থ থেকে ত্রিকোণমিতি, জ্যামিতি, সমীকরণ সম্পর্কে সম্যক ধারণা লাভ করা যায়। তিনি মূলত | বীজগণিতের আবিষ্কারক হিসেবে খ্যাত ও স্মরণীয় হয়ে আছেন ।
৪. ওমর খৈয়াম : ওমর খৈয়াম এগারো শতকের শ্রেষ্ঠ গণিতবিদ ছিলেন। আরবি গণিত শাস্ত্রে তিনি বিশেষভাবে উন্নতি করেন। তিনি ঘন সমীকরণ ও অন্যান্য উন্নত শ্রেণির সমীকরণের পদ্ধতিগত বিশ্লেষণ ও সেগুলোর সংজ্ঞা অনুযায়ী শ্রেণিভুক্তি করার মাধ্যমে বীজগণিতে যথেষ্ট সমৃদ্ধি সাধন করেন। এগারো শতকের গণিতশাস্ত্রে অসাধারণ অবদান রেখে তিনি উল্লেখযোগ্য স্থান দখল করে আছেন।
৫. নাসিরুদ্দিন তসী : গণিতশাস্ত্রের যেসব মুসলমানের অতুলনীয় অবদান রয়েছে তাদের মধ্যে নাসিরুদ্দিন তুসী অন্যতম। তিনি ত্রিকোণমিতি ও জ্যোতির্বিজ্ঞান সম্পর্কিত মূল্যবান গ্রন্থ রচনা করেন। তিনি ত্রিকোণমিতিকে জ্যোতির্বিজ্ঞান থেকে আলাদা করে সমতল এবং গোলাকবৎ ত্রিকোণমিতি সংক্রান্ত আলোচনা করেন।
৬. আল-বাত্তানী : একজন মুসলিম গণিতশাস্ত্রবিদ ছিলেন আল বাত্তানী । মধ্যে যুগে ও পরবর্তী মনীষীদের কাছ থেকে তিনি মুসলিম গণিতবিদ হিসাবে ভূয়সী প্রশংসা লাভ করেন। তিনি ত্রিকোণমিতির প্রথম প্রণালীগুলোকে অত্যন্ত জনপ্রিয় করে তোলেন।
এছাড়াও গণিতশাস্ত্রে মৌলিকতার জন্য বাহাউদ্দীন আদীরল, আবুল, ওয়াহিদ, আল ফারাবী, জ্যামিতির ওপর ত্রিকোণমিতি সম্পর্কে তৈয়ব, গণিতশাস্ত্রবিদ হিসেবে আল কিন্দি, জ্যামিতির সূত্র আবিষ্কারক হিসেবে সাবিত ইবনে করয়াহ বিশেষভাবে উল্লেখ্য ।
৭. মুহাম্মদ ইবনে জাবির : মুহাম্মদ বিন জাবির ছিলেন একজন খ্যাতিমান মুসলিম গণিতশাস্ত্রবিদ। তিনি ব্যাপক চিন্তা গবেষণার মাধ্যমে গণিতশাস্ত্রকে বেশ সমৃদ্ধ করে তোলেন। আরবদের সর্বপ্রথম ত্রিকোণমিতির অনুপাত প্রকাশ করেন। তার নামানুসারে এলজেবরার নামকরণ করেন।
৮. আবুল কাসিম : মুসলিম মনীষীদের মধ্যে আবুল কাসেম এক গুরুত্বপূর্ণ নাম । তিনি ছিলেন মধ্যযুগের খ্যাতিমান গণিতবিদ। আবুল কাসিম জগদ্বিখ্যাত আল বেরুনীর সমসাময়িক ছিলেন। তিনি বিশেষ করে জ্যামিতি, সংখ্যাশাস্ত্র ও জ্যোতিবিজ্ঞানের ওপর প্রচুর গ্রন্থ রচনা করেন।
৯. আল-ফারাজী : গণিতশাস্ত্রে যারা বিশেষ কৃতিত্বের দাবিদার তাদের মধ্যে আব্বাসীয় শাসনামলের আবু বকর মুহাম্মদ আল ফারাজী অন্যতম। এগারো শতকে তার আত্মপ্রকাশ ঘটে। গণিত শাস্ত্রবিষয়ক গ্রন্থ “আল-শফি ফিলহিসাব” তার অমর রচনা। গ্রন্থে আল ফারাজী সংখ্যাগুলোকে শব্দের মাধ্যমে লিপিবদ্ধ করেন।
১০. আহমদুন নাসাভী : আহমদুন নাসাভী ছিলেন আল- ফারাজীর সমসাময়িক মুসলিম গণিতবিদ। তিনি তার এ গ্রন্থে ভগ্নাংশ, বর্গ ও ঘনমূল সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেন। এতে তিনি ভারতীয় সংখ্যার ব্যবহার করেন। নাসাভী অনেক জটিল ও কঠিন বিষয়ের সমাধান করেন ।
১১. আল-মারবাকুশীর অবদান : ১২২৯ খ্রিস্টাব্দে মরক্কোর আল-হাসান, আল-মারবাকুশী ব্যবহারিক জ্যোতির্বিদ্যা সম্বন্ধে এক একটি গবেষণামূলক পুস্তক রচনা করেন। তিনি তাতে অর্থডিগ্রির সাইন, ভারসড সাইন, আয়ক সাইন, আয়ক কোটেনজেন্ট প্রভৃতি তালিকা দিয়েছেন ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, আরবীয় মুসলিম গণিতবিদরা পাশ্চাত্যের গণনা শিক্ষাদান করেন। এ জন্য আরবি প্রতীক এখনো পৃথিবীর সকল জাতি ব্যবহার করেন। গণনা পদ্ধতি ছাড়াও মুসলমানগণ জীবনের সর্বক্ষেত্রে দশমিক পদ্ধতির প্রবর্তন করেন। তারাই মূলত গণিত শাস্ত্রকে পূর্ণাঙ্গরূপে ও অন্যান্য দেশে বহন করে নিয়ে গিয়েছিল।
আর্টিকেলের শেষকথাঃ আব্বাসীয় শাসনামলে গণিতশাস্ত্রে মুসলমানদের অবদান সম্পর্কে যা জান লেখ
আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম আব্বাসীয় শাসনামলে গণিতশাস্ত্রে মুসলমানদের অবদান সম্পর্কে যা জান লেখ। যদি তোমাদের আজকের এই পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো।