আব্বাসীয় শাসনামলে বুয়াইয়া কিভাবে প্রশাসন পরিচালনা করতেন আলোচনা কর
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো আব্বাসীয় শাসনামলে বুয়াইয়া কিভাবে প্রশাসন পরিচালনা করতেন আলোচনা কর জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের আব্বাসীয় শাসনামলে বুয়াইয়া কিভাবে প্রশাসন পরিচালনা করতেন বর্ণনা কর।
আব্বাসীয় শাসনামলে বুয়াইয়া কিভাবে প্রশাসন পরিচালনা করতেন আলোচনা কর |
আব্বাসীয় শাসনামলে বুয়াইয়া কিভাবে প্রশাসন পরিচালনা করতেন আলোচনা কর
উত্তর : ভূমিকা : বিশ্ব মুসলিম ইতিহাসে আব্বাসীয় শাসনামল ছিল জ্ঞানবিজ্ঞান শিক্ষা সংস্কৃতির এক অপূর্ব নিদর্শন প্রশাসন ব্যবস্থা পরিচালনায় তারা ছিল সিদ্ধহস্ত। আর তাদেরই আমলে উদ্ভাবিত একটি উপজাতি হলো বুয়াইয়া।
বুয়াইয়া ক্ষুদ্র রাজবংশের বৈশিষ্ট্য ছিল ভিন্ন এবং অধিক গুরুত্বপূর্ণ। কেননা তারাই প্রথম উপজাতি রাজবংশ আব্বাসীয় শাসনামলে স্বাধীন রাজ্য শাসন করে নবযুগের সূচনা করে।
সামাজিক ও অর্থনৈতিক এবং সংস্কৃতিক ক্ষেত্রে তাদের অবদান ছিল অনেক বেশি। কিন্তু প্রশাসনিক ক্ষেত্রেও তাদের অবদান চিরস্মরণীয়।
→ বুয়াইয়াদের প্রশাসনিক ব্যবস্থা : বুয়াইয়াদের প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিম্নে আলোচনা করা হলো :
১. নতুন প্রশাসনিক ব্যবস্থা : বুয়াইয়ারা বাগদাদে প্রবেশ করে পেয়েছিল সম্পূর্ণ ভেঙে পড়া প্রশাসনিক ব্যবস্থা। এজন্য বিকল্প হিসেবে ফারসি থেকে আমলা বাহিনী সংগ্রহ করা হয়। এসব আমলারাই বাদে নতুন প্রশাসন ব্যবস্থা চালু করে ।
২. খলিফারে খতের ক্রীড়নকে পরিণত করেন : বুয়াইয়াদের শাসনামলে আব্বাসীয় খলিফাকে খেলনার পুতুল করার পর তাড়া নিজ মেধা এবং কর্মশক্তি দিয়ে নিজেদের রাজ্য প্রতিষ্ঠা করে। তারা অবশ্য খলিফা পদটি উচ্ছেদ না করে কৌশলগত কারণে বজায় রাখে।
খলিফাকে সর্বপ্রকার দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি প্রদান করা হয়। অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে খলিফাকে বঞ্চিত করা হয় এবং দৈনিক ৫০০০ মুদ্রা একজন বৃত্তিধারী ব্যক্তির মর্যাদায় পরিণত করে তাকে হাতের পুতুল করে শাসনব্যবস্থা বুয়াইয়ারা পরিচালনা করে।
৩. নতুন স্বৈরতন্ত্র কায়েম : আব্বাসীয় স্বর্ণযুগে খলিফা রাজকীয় স্বৈরতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত ছিল। সে সময় থেকে শুরু মুতাওয়াক্কিল এর সময় দীর্ঘদিন ধরে খলিফার অন্তর্দ্বন্দ্ব অন্তরালে ছিল। তাছাড়া সামরিক বেসামরিক আমলাদের যৌথ স্বৈরতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় পরীক্ষাও চালাতে থাকে ।
৪. সকল ক্ষমতার অধিকারী : বুয়াইয়া শাসকগণ সকল ক্ষমতার অধিকারী হয়েছিলেন। খলিফা কেবল সুন্নি মুসলিম সম্প্রদায়ের ধর্মীয় জীবন তদারকির কাজ করতেন। মূলত বাগদাদের সকল রাজনৈতিক | ও প্রশাসনিক ক্ষেত্রে দায়িত্ব পালন করতো বুয়াইয়ারা ।
৫. পূর্ববর্তী শাসনব্যবস্থা বিলোপ : বুয়াইয়ারা প্রথমে ক্ষমতা দখল করে আস্তে আস্তে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে যে, দখলকৃত বাগদাদ | তথা ইরাকে শাসিত হবে বুয়াইয়া সাম্রাজ্যের কাঠামোর মাধ্যমে।
বুয়াইয়া শাসনব্যবস্থার মূল প্রস্তাবনা গ্রহণ করে খুঁটিনাটি বিষয়গুলো কিভাবে বাগদাদের বিদ্যমান পরিস্থিতি প্রয়োগ করা যায় সেটাও ছিল মুইজের এক নম্বর সমস্যা।
৬. সার্বভৌমত্বের প্রতীক : আব্বাসীয় খলিফা আল মুস্তাকফীকে পদচ্যুত করে আলমুতীকে ৯৪৬ সালে খেলাফতের আমলে সমাসীন করেন। শুক্রবার জুমার নামাজের খুৎবায় খলিফার নামের সাথে আজাদ-উদ-দৌলার নাম পাঠের ব্যবস্থা করেন।
তখন থেকেই মূলত সার্বভৌমত্বের প্রতীকে খলিফার নামের সাথে বুয়াইয়া আমিরদের নাম অঙ্কিত করার নীতি চালু হয় ।
৭. সামরিক বাহিনীর পুনর্গঠন : কেন্দ্রীয় সরকারের সামরিক বাহিনীর নিয়ে মুইজকে সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছিল। তাই তিনি দাইলামের দক্ষিণ পশ্চিম সমতল ভূমিতে শক্তিশালী একটি বাহিনী সংযোজন করে বুয়াইয়া বাহিনীকে শক্তিশালী বাহিনীতে রূপান্তর করেন ।
৮. ইকতা প্রথা চালু : ইসলামের ইতিহাসে প্রথম বুয়াইয়া শাসকগণই ইকতা প্রথার ব্যবস্থা করেন। সেনাবাহিনীর বেতনভাতা প্রান্তিক সুবিধাদি হিসেবে ভূমি মঞ্জুরি প্রদানর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় ।
শুধু তাই নয়, মুসা আনসারী বলেন, আন্তঃআঞ্চলিক বাণিজ্য সংস্কার করে ইকতাভুক্ত করা হয়। এটি ছিল এক অভিনব কীর্তি ।
৯. সমপরিমাণ বেতনভাতা : বুয়াইয়া আমলা, বাগদাদী সেনাবাহিনীর সকলকে পদানুপাতে সমপরিমাণ বেতনভাতা প্রদান করা হতো। ফলে অর্থনৈতিক সমস্যা দেখা দেয়। এ সমস্যার সমাধান করা হয় সাহসী পরিবার ও তাদের স্বজনদের সকল সম্পত্তি বুয়াইয়াদের অধিগ্রহণের মাধ্যমে ।
১০. ডাক বিভাগের প্রচলন : বুয়াইয়া শাসনামলে আব্বাসীয়দের ন্যায় শাসনকার্য পরিচালনার জন্য ডাক বিভাগের সংস্কার করা হয় এবং প্রতি ১২ মাইল পর পর ডাক চৌকি নির্মাণ করা হয় ।
১১. যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি : বুয়াইয়াদের শাসনামলে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির জন্য বাগদাদে একটি ব্রিজ নির্মাণ করা হয়। সেই বাগদাদের ব্রিজের নাম ছিল 'The Bridge of Bagdad.” শুধু বাগদাদেই নয়, তিনি রাজ্যের বিভিন্ন ব্রিজ, রাস্তা সংস্কার ইত্যাদি কাজে অবদান রেখেছিলেন।
১২. কুপ খনন : খলিফা আজাদ উদ দৌলার বাড়ির আশাপাশে গাছ, বাগান, ফুল ও ফলের বাগান ইত্যাদি পানি সেচের ব্যবস্থা করেন । এটাও তাদের প্রশাসনিক ব্যবস্থার অন্যতম দৃষ্টান্ত ।
১৩. নিরাপত্তাপ্রহরী নিযুক্তকরণ : বুয়াইয়া শাসকদের আমলের অন্যতম এক অভিনব কীর্তি হলো নিরাপত্তা জোরদার করা। কেননা সাম্রাজ্যের যেন কোনো অস্থির, বিশৃঙ্খলা অবস্থা না হয় এই জন্য পুরো সাম্রাজ্যেই নিরাপত্তা জোরদার করেন ।
১৪. আইন সমুন্নতকরণ : আব্বাসীয় শাসনামলের ন্যায় সর্বক্ষেত্রে আইনের সঠিক ব্যবহার করার রীতি বুয়াইয়া রাজবংশের সময় চালু হয়েছিল। কেননা বুয়াইয়া শাসক আজাদ- উদ-দৌলা আইনের প্রশাসক ছিলেন। শুধু তাই নয়, সার্থক অর্জন প্রণেতা ও প্রণয়নের জন্য জনপ্রিয়তা লাভ করেন।
উপসংহার : উপরিউক্ত আলোচনার মাধ্যম এটিই প্রতীয়মান হয় যে, আব্বাসীয়দের দুর্বলতার সুযোগে আল মুসতাকফীর শাসনামল বুয়াইয়ারা বাগদাদ আগমন করে একটি শক্তিশালী সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেছিল। সত্যিই তা কত চমক একটি ঘটনা ছিল ।
বাগদাদ শাসন করার জন্য খলিফাকে কারাগারে বন্ধ করা, খলিফার চোখ উপরানো এগুলো যেন তাদের কাছে সামান্য মূল্য কিছু ছিল বলে মনে করা হতো। অথচ আব্বাসীয়রা প্রথম বুয়াইয়াদের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। বুয়াইয়া শাসকগণের সত্যিই শাসন সংস্কার নীতি প্রশাসনিক ব্যবস্থা পরিচালনা করার যে উদ্যমী সাহস ছিল সত্যিই তা প্রশংসার যোগ্য।
আর্টিকেলের শেষকথাঃ আব্বাসীয় শাসনামলে বুয়াইয়া কিভাবে প্রশাসন পরিচালনা করতেন বর্ণনা কর
আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম আব্বাসীয় শাসনামলে বুয়াইয়া কিভাবে প্রশাসন পরিচালনা করতেন আলোচনা কর। যদি তোমাদের আজকের এই পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো।