আব্বাসীয় সাম্রাজ্য ধ্বংসের বাহ্যিক কারণগুলো আলোচনা কর
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো আব্বাসীয় সাম্রাজ্য ধ্বংসের বাহ্যিক কারণগুলো আলোচনা কর জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের আব্বাসীয় সাম্রাজ্য ধ্বংসের বাহ্যিক কারণগুলো আলোচনা কর ।
আব্বাসীয় সাম্রাজ্য ধ্বংসের বাহ্যিক কারণগুলো আলোচনা কর |
আব্বাসীয় সাম্রাজ্য ধ্বংসের বাহ্যিক কারণগুলো আলোচনা কর
উত্তর : ভূমিকা : পৃথিবীর চির চরিত নিয়মে আজ যে জাতি উন্নতির শীর্ষে সমাসীন, আগামীকাল হয়ত তার অস্তিত্বও থাকবে না । ভাঙা গড়ার এ ইতিহাস চিরন্তন। তাই আস সাফফার প্রতিষ্ঠিত আব্বাসীয় সাম্রাজ্য ও একসময় গৌরবের শীর্ষে উপনীত হয়ে অবশেষে বিলুপ্ত। এ বিলুপ্তর পিছনে রয়েছে অসংখ্য বাহ্যিক কারণ ।
→ আব্বাসীয় বংশ পতনের বাহ্যিক কারণ : আব্বাসীয় বংশ পতনের পিছনে একাধিক বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ কারণ বিদ্যমান রয়েছে। নিম্নে বাহ্যিক কারণগুলো আলোচ্য হলো :
১. খলিফাদের অযোগ্যতা : আব্বাসীয় বংশ অধিকাংশ খলিফাদের অযোগ্যতাই এ বংশের পতনের অন্যতম প্রধান কারণ এ বংশের সর্বমোট ৩৭ জন খলিফার মধ্যে প্রথম কয়েকজন অত্যন্ত যোগ্য ও সুশাসক ছিলেন। কিন্তু মুতাসিমের পরবর্তী অধিকাংশ খলিফা অযোগ্য, অকর্মণ্য ও দুর্বল ছিলেন। তারা রাষ্ট্রের মঙ্গলের চিন্তা না করে ভোগবিলাসে মত্ত থাকতেন । ফলে এক সময় এ খিলাফত ব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে যায় ।
২. সাম্রাজ্যের বিলাসিতা : আব্বাসীয় খিলাফত আমলে পূর্ব ও পশ্চিম দিকেও সাম্রাজ্য বিস্তার লাভ করে। আব্বাসীয় সাম্রাজ্য আটলান্টিক মহাসাগর হতে নীলনদ এবং কাস্পিয়ান হতে নীলনদ পর্যন্ত বিস্তৃতি ছিল। মোঙ্গল সাম্রাজ্যের ন্যায় এতো বড় সাম্রাজ্য শাসন করা দুর্বল খলিফাদের পক্ষে সম্ভব ছিল না। ফলে কালক্রমে সাম্রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে বিচ্ছিন্নতাবাদী মনোভাব আত্মপ্রকাশ করে ।
৩. স্বাধীন রাজবংশের উদ্ভব : খলিফাদের অযোগ্যতাবশত সাম্রাজ্যের বিভিন্ন অংশে বহু ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র স্বাধীন ও অর্ধ-স্বাধীন রাজ্য গড়ে উঠে এই সকল ক্ষুদ্র রাজ্যের উত্থানে কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষ দুর্বল হয়ে পড়ে।
৪. সামরিক বাহিনীর প্রতি অবহেলা : আব্বাসীয় যুগের শেষদিকে সামরিক বিভাগের প্রতি তেমন গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। এ বিভাগের প্রতি শাসনগোষ্ঠীর অবজ্ঞা ও উদাসীনতার ফলে বহিঃশত্রুরা বাগদাদ আক্রমণে উৎসাহিত হয়ে উঠে।
৫. অর্থনৈতিক বিপর্যয় : অর্থনৈতিক সংকট আব্বাসীয় খেলাফতকে পতনের জন্য অনেকাংশ দায়ী। শাসক সম্প্রদায়ের ভোগবিলাসের জন্য প্রজাদের উপর অতিরিক্ত কর বসানোর ফলে তারা কৃষিকার্য ছেড়ে দিয়েছিল। তাদের অত্যাচারে দেশের শিল্প ও ব্যবসা-বাণিজ্যের যথেষ্ট ক্ষতি হয়। অধিকন্তু দুর্ভিক্ষ, মহামারিতে জনসাধারণের অবস্থা শোচনীয় হয়ে পড়েছিল। যা মোকাবিলা করা আব্বাসীয় খলিফাদের পক্ষে সম্ভব ছিল না।
৬. ধর্মীয় সম্প্রদায়ের উদ্ভব : আব্বাসীয় খেলাফতের চরম বিপর্যয়ের দিনেও মুসলমানগণ দলগত স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে ঐক্যবদ্ধ হতে পারেনি। এ যুগে শিয়া, সুন্নি, মুতাজিলা ইসমাঈলী প্রভৃতি বিভিন্ন সম্প্রদায়ের উদ্ভব এবং তাদের বিরোধমূলক মতবাদ আব্বাসীয় খিলাফতের স্থায়িত্বের পরিপন্থি ছিল।
৭. উত্তরাধিকার নীতির অভাব : খিলাফত লাভের ক্ষেত্রে কোনো সুনির্দিষ্ট উত্তরাধিকার নীতি ছিল না। ফলে একাধিক ব্যক্তি ক্ষমতা লাভের জন্য পারস্পরিক সংঘর্ষে লিপ্ত হতো। ফলে রাষ্ট্রের সংহতি ও স্থিতিশীলতা নষ্ট হয়। যা আব্বাসীয় খেলাফতকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে দেয়।
৮. ফাতেমীয়দের প্রতি অসদ্ব্যবহার : ফাতেমীয় বংশের নামে আব্বাসীয় খেলাফত প্রতিষ্ঠা হয়েছিল। কিন্তু খলিফাগণ ফাতেমীয়দের প্রতি সদ্ব্যবহার করেননি। ফলে দুর্বল খলিফাদের সময় নানা স্থানে ফাতেমীয়গণ বিদ্রোহ ঘোষণা করতো ।
৯. তুর্কি বাহিনীর দৌরাত্ম্য : মুতাসিম কর্তৃক গঠিত তুর্কি সৈন্যবাহিনী পরবর্তী আব্বাসীয় খলিফাদের শক্তিহীন ক্রীড়নকে পরিণত করে। এই তুর্কি সৈন্যরা খুব প্রতাপশালী হয়ে উঠে এবং কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষদের অমান্য করতে শুরু করে। ফলে আব্বাসীয় বংশের পতন হয় ।
১০. সামস্তপ্রথা : খলিফা হারুন কর্তৃক উত্তর আফ্রিকা ও খোরাসানে সামন্ত প্রথা সৃষ্টির ফলে পরবর্তীকালে আফ্রিকায় ইব্রাহিম আগলব ও খোরাসানে তাহির স্বাধীন রাজবংশের প্রতিষ্ঠা করে কেন্দ্রের আনুগত্য অস্বীকার করেন।
১১. বাইজান্টাইনদের আক্রমণ : বাইজান্টাইনগণ মুসলিম | সাম্রাজ্যে শক্তি ও সার্বভৌমত্ব খর্ব করার জন্য আব্বাসীয় সাম্রাজ্যে পুনঃপুন আক্রমণ করে, ফলে আব্বাসীয় খেলাফতের পতন ঘটে।
১২. নৈতিক অধঃপতন : ঐতিহাসিক আমির আলী বলেন, আল মনসুর হারুন ও মুহতোদি ব্যতীত আব্বাসীয় প্রায় সকল খলিফাই মদ্যপান করতো। উপপত্নি গ্রহণের প্রথা আব্বাসীয়রাই প্রবর্তন করে। অনাচার ও অশালীন কার্যকলাপে খলিফাদের রাজোচিত গুণাবলি ধ্বংসপ্রাপ্ত এবং তাদের পতন ত্বরান্বিত হয়।
১৩. প্রতিদ্বন্দ্বী খিলাফত : আব্বাসীয় খেলাফতকালে তাদের প্রতিদ্বন্দ্বীস্বরূপ মুসলিম বিশ্বে আরও দুটি খিলাফত প্রতিষ্ঠা লাভ করে। একটি মিশরে ফাতেমীয় নামে আরেকটি স্পেনে উমাইয়া নামে। এদের সাথে শত্রুতার কারণে আব্বাসীয় খেলাফতের পতন ঘটে ।
১৪. স্বৈরতান্ত্রিক শাসন : পতনের যুগে আব্বাসীয় খেলাফত অনেকাংশে স্বৈরশাসনের উপর প্রতিষ্ঠিত ছিল। এ সময় শাসকদের চারিত্রিক এবং ব্যক্তিগত জীবনে নানা স্বৈরতান্ত্রিক মনোভাব লক্ষ করা যায় । তাদের এ মনোভাব জনগণ মেনে নিতে পারেনি।
১৫. আমির-ওমরাদের ঔদ্ধত্য : তুর্কি সেনাধ্যক্ষদের স্থলে অপেক্ষাকৃত দুর্বল ও অযোগ্য খলিফাগণ একাধিক্রমে আমির ওমরা দ্বারা পরিচালিত হতে থাকেন। খলিফা আল মকতাদিরের রাজত্বে কমপক্ষে ১৫ জন উজিরের উত্থান-পতন হয়। হিট্টি বলেন, “আমির ওমরারা রাষ্ট্রের প্রকৃত শাসকরূপে প্রতিষ্ঠিত হন। ফলে আব্বাসীয়দের পতন ত্বরান্বিত হয়।"
১৬. শিয়া-সুন্নি দ্বন্দ্ব : আব্বাসীয় খিলাফতের পতনের মূলে শিয়া ও সুন্নি দ্বন্দ্বও অনেকাংশে দায়ী ছিল। বেশিরভাগ খলিফাই শিয়া বিদ্বেষী ছিলেন এবং শিয়াদের নির্যাতন করতেন। খলিফা মুতাসিমের শিয়া নির্যাতন এতই চরম আকার ধারণ করে যে, বাধ্য হয়ে শিয়া মন্ত্ৰী মুহাম্মদ বিন আলকামী দুর্ধর্ষ মোঙ্গল নেতা হালকু খানকে বাগদাদ আক্রমণের আমন্ত্রণ জানান ।
১৭. হালাকু খানের আ ক্রমণ : আব্বাসীয় বংশের পতনের প্রত্যক্ষ কার ছিল মোঙ্গল নেতা হালাকু খানের বাগদাদ আক্রমণ । ১২৫৮ খ্রিস্টাব্দে চেঙ্গিস খানের পৌত্র হালাকু খান তৎকালীন সভ্যতার কেন্দ্রভূমি বাগদাদ নগরী আক্রমণ করে। ক্ষমতাসীন মুসতালিম বাগদাদ নগরী রক্ষায় আপ্রাণ চেষ্টা করেও সপরিবারে নিহত হন। এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সঙ্গে গৌরবোজ্জ্বল আব্বাসীয় খেলাফতের অবসান ঘটে।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, আব্বাসীয় বংশ এক সময় ইতিহাসের পাতায় সম্মানের স্থান দখল করলেও কালক্রমে প্রশাসনিক দুর্বল এবং রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালনে অমনোযোগিতাই তাদের পতন ঘটায়।
আর্টিকেলের শেষকথাঃ আব্বাসীয় সাম্রাজ্য ধ্বংসের বাহ্যিক কারণগুলো আলোচনা কর
আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম আব্বাসীয় সাম্রাজ্য ধ্বংসের বাহ্যিক কারণগুলো আলোচনা কর। যদি তোমাদের আজকের এই পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো।