আব্বাসীয় যুগে সভ্যতা ও সংস্কৃতির বিকাশ সম্পর্কে যা জান লেখ
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো আব্বাসীয় যুগে সভ্যতা ও সংস্কৃতির বিকাশ সম্পর্কে যা জান লেখ জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের আব্বাসীয় যুগে জ্ঞানবিজ্ঞানের অগ্রগতি সংক্ষেপে লেখ।
আব্বাসীয় যুগে সভ্যতা ও সংস্কৃতির বিকাশ সম্পর্কে যা জান লেখ |
আব্বাসীয় যুগে সভ্যতা ও সংস্কৃতির বিকাশ সম্পর্কে যা জান লেখ
- অথবা, আব্বাসীয় যুগে জ্ঞানবিজ্ঞানের অগ্রগতি সংক্ষেপে লেখ।
- অথবা, আব্বাসীয়দের জ্ঞানবিজ্ঞানের বিভিন্ন দিক পর্যালোচনা কর।
- অথবা, “আব্বাসীয় শাসনামল ছিল মুসলিম সভ্যতার স্বর্ণযুগ।” আলোচনা কর ।
উত্তর : ভূমিকা : আব্বাসীয়দের দীর্ঘ শাসনামলে মুসলমানগণ শিক্ষা, সংস্কৃতি এবং জ্ঞানবিজ্ঞানের বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রাখতে সক্ষম হন। আব্বাসীয় যুগ ছিল জ্ঞানবিজ্ঞানের যুগ।
আব্বাসীয় খলিফাগণ রাজ্য জয়ের পরিবর্তে জ্ঞানবিজ্ঞানের অনুশীলন এবং উৎকর্ষ সাধনে অধিকতর মনোযোগী ছিলেন। তাই ঐতিহাসিকগণ এ যুগকে "Golden Age of Islamik civilization" বলে অভিহিত করেন ।
→ জ্ঞানবিজ্ঞানে আব্বাসীয়দের অবদান : আব্বাসীয় যুগে বিভিন্ন ক্ষেত্রে যে জ্ঞানবিজ্ঞানের অগ্রগতি সাধিত হয় তা নিম্নে আলোচনা করা হলো :
১. শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা : আব্বাসীয় খলিফাগণ তাদের প্রজাদের মধ্যে জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য সাম্রাজ্যের সর্বত্র স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও মক্তব প্রতিষ্ঠা করেন। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল বাগদাদ কলেজ, মুস্তানসিরিয়া কলেজ, নিজামিয়া বিশ্ববিদ্যালয় ইত্যাদি ।
২. বায়তুল হিকমা প্রতিষ্ঠা : খলিফা মামুন কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত বায়তুল হিকমা মধ্যযুগের অদ্বিতীয় গবেষণাগার হিসাবে খ্যাত। ৮৩০ খ্রিস্টাব্দে বাগদাদে নির্মিত এই জগদ্বিখ্যাত গবেষণাগারটিতে তিনটি পৃথক বিভাগ ছিল গ্রন্থাকার, শিক্ষায়তন এবং অনুবাদ ব্যুরু। হুনাইন ইবনে ইসহাক বায়তুল হিকমার মহাপরিচালক ছিলেন ।
৩. অনুবাদ কার্যক্রম : আব্বাসীয় আমলে অনুবাদ বিভাগ ইসলামি সংস্কৃতি ও সভ্যতা বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। আব্বাসীয় খলিফাদের উদার পৃষ্ঠপোষকতা ও প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে অনুবাদ বিভাগের কার্যক্রম পরিচালনা হতো।
বিশেষ করে আব্বাসীয় খলিফা আল মনসুর, হারুন-অর-রশীদ এবং আল মামুনের পৃষ্ঠপোষকতায় অসংখ্য গ্রিক, সিরিয়া, পারসিকসহ প্রভৃতি ভাষায় রচিত মহামূল্যবান গ্রন্থাবলি আরবি ভাষায় অনুবাদ করা হয় ।
৪. ভূগোলশাস্ত্র : ভূগোলশাস্ত্র ব্যাপক উন্নতি সাধিত হয় আব্বাসীয় শাসনামলে। খলিফা আল মামুনের রাজত্বকালে আল খাওয়ারেজমী “সূরাত আল আরদ” নামে পৃথিবীর একটি মানচিত্র অঙ্কন করেন।
আব্বাসীয় যুগে কিতাব আল বুলদান, আল আলাক, আল নাফিসাহ প্রভৃতি ভূগোল শাস্ত্রের বিখ্যাত গ্রন্থ। এ যুগের প্রখ্যাত ভূগোলবিদ হচ্ছেন ইবনে বতুতা, আল ইদ্রিসী, আল ইয়াকুত প্রমুখ ।
৫. চিকিৎসাশাস্ত্র : খলিফা মামুনের পৃষ্ঠপোষকতায় উহান্না কর্তৃক প্রণীত দাখাল-উল-আইন গ্রন্থটি চিকিৎসা শাস্ত্রের প্রথম আরবি গ্রন্থ। পরবর্তী সময় খলিফা মুতাওয়াকিলের সময় আত- তাবারি রচিত “ফেরদৌস আল হিকমা” চিকিৎসাশাস্ত্রের একটি মূল্যবান গ্রন্থ।
খলিফা আত তাই ও শাদী বিল্লাহর সময় আল- রাবী ‘আল হাভী' নামক বিখ্যাত চিকিৎসা শাস্ত্র প্রণয়ন করেন। আব্বাসীয় আমলে ইবনে সিনা সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ চিকিৎসক হিসাবে বিশ্বখ্যাতি অর্জন করেন। তার রচিত ‘কানুন ফি তিব্বকে’ চিকিৎসাশাস্ত্রের বাইবেল বলা হয়।
৬. ইতিহাস : আব্বাসীয় যুগে ইতিহাস চর্চায় ব্যাপক উন্নতি লাভ করে। আল আত তাবারী ইতিহাসের ঘটনাবলি সন অনুসারে লিপিবদ্ধ করে ইতিহাস শাস্ত্রে বিশেষ অবদান রাখেন।
তার বিখ্যাত গ্রন্থ ‘তারিখে রসুল ওয়া মূলক' ৩ হাজার পৃষ্ঠা সংবলিত একটি অমর ইতিহাস গ্রন্থ। এ ছাড়াও ঐ সময়ে আরো দুজন ইতিহাসবিদ হলেন ইবনে ইসহাক এবং আল ওয়াকেদী।
৭. দর্শনশাস্ত্র : আব্বাসীয় আমলে দর্শনশাস্ত্রের প্রভুত অগ্রগতি সাধিত হয়। এ যুগের দার্শনিকদের মধ্যে আল কিন্দি, | আল ফারাবি, আল গাজালি ও ইবনে সিনা ছিলেন অন্যতম। মামুনের সময় প্রখ্যাত দার্শনিক আল কিন্দি বাগদাদে গবেষণারত ছিলেন।
তিনি এরিস্টটল ও প্লেটোর মধ্যে সমন্বয় সাধনের চেষ্টা করেন। তার সংকলিত গ্রন্থের সংখ্যা ছিল ২৬৫টি। এছাড়াও দর্শনশাস্ত্রের উপর লিখিত আল ফারাবির 'রিসালাত ফুসুলুল হিকমা' অত্যন্ত প্রসিদ্ধ একটি গ্রন্থ ছিল।
৮. গণিতশাস্ত্র : আব্বাসীয় খলিফা আল মনসুর নিজে একজন গণিত বিশারদ ছিলেন। আব্বাসীয় আমলের বিখ্যাত গণিতজ্ঞ ছিলেন মুহাম্মদ বিন মুসা আল খাওয়ারজমী।
তিনি খলিফা মামুনের পৃষ্ঠাপোষকতায় 'হিযাবুল যবর ওয়াল মুকাবালাহ' নামক বীজগণিতের বিখ্যাত গ্রন্থ রচনা করেন। খাওয়ারিজমিই সর্বপ্রথম পৃথিবীকে শূন্যের ব্যবহার শিক্ষা দেন।
৯. জ্যোতির্বিদ্যা : জ্যোতির্বিদ্যায় আব্বাসীয় উৎকর্যের মূলে ছিল মানমন্দির প্রতিষ্ঠা। এ সময় বিজ্ঞানী আবুল হাসান দূরবীক্ষণ এবং আল ফারাজী দিকদর্শন, সূর্যঘড়ি, কোন পরিমাপক যন্ত্র আবিষ্কার করে বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টি করে।
খলিফা মনসুরের - আমলে 'নাওবাখত ও মাসবালাহ' নামক প্রখ্যাত জ্যোতির্বিদ বাগদাদ নগরীর নক্সা অঙ্কন করেন। এছাড়াও আল বেরুনী, খাওয়ারেজমী, আল বাতানীর নাম উল্লেখযোগ্য।
১০. রসায়নশাস্ত্র : আব্বাসীয় যুগে মুসলমান মনীষীগণ রসায়ন শাস্ত্রে প্রভূত অবদান রাখেন। জাবির ইবনে হাইয়ান ছিলেন এসময়ের সর্বশ্রেষ্ঠ রসায়নবিদ।
তিনি রসায়ন শাস্ত্রের উপর বাইশ খানা গ্রন্থ রচনা করেন। এছাড়াও আল-রাবীত সে সময়ের অন্যতম রসায়নবিদ ছিলেন।
১১. ধর্মতত্ত্ব ও আইনশাস্ত্র : আব্বাসীয় খলিফা আল মামুনের শাসনামলে ধর্মতত্ত্ব, হাদিসশাস্ত্র, আইনশাস্ত্র ও ভাষাতত্ত্ব প্রভৃতি বিষয়ে অবিরাম চর্চা চলতে থাকে। খলিফা নিজেও কুরআনে হাফেজ ছিলেন।
১২. স্থাপত্য শিল্প : খলিফা মনসুরের নির্মিত বাগদাদ নগরী, বাব-উল-সহাব, কাসর-উল-খুলদ, রুসাফা প্রভৃতি রাজ প্রাসাদ, মুতাসিমের বুলকাওয়ারা প্রাসাদ, মুকতাদিরের দার আল-সাজরাহ প্রভৃতি আব্বাসীয় খলিফাদের অনুদানের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।
১৩. সাহিত্যে ও সংস্কৃতি : আব্বাসীয় যুগে মুসলমানগণের সাহিত্যে ও সংস্কৃতিতে আবুল ফারাজ, আবু নওয়াস, উতবি অবস্মরণীয় নাম। ফেরদৌসি, ওমর খৈয়াম, শেখ সাদী পারসিক কবি ও সাহিত্যিকদের মধ্যে ছিলেন অন্যতম।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, আব্বাসীয় যুগেই মূলত জ্ঞানবিজ্ঞানে মুসলিম সভ্যতা পূর্ণরূপে বিকাশ লাভ করে। এ যুগে মুসলিম মনীষীগণ জ্ঞানবিজ্ঞানের সকল শাখায় বিচরণ করেন। ফলে মুসলিম সভ্যতার বহু দান ইউরোপীয়রা গ্রহণ করে নিজেদেরকে আরো উজ্জ্বল করে।
আর্টিকেলের শেষকথাঃ আব্বাসীয়দের জ্ঞানবিজ্ঞানের বিভিন্ন দিক পর্যালোচনা কর
আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম আব্বাসীয় শাসনামল ছিল মুসলিম সভ্যতার স্বর্ণযুগ ” আলোচনা কর। যদি তোমাদের আজকের এই পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো।