আব্বাসীয় যুগে মুসলমানদের ইতিহাসে অবদান আলোচনা কর
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো আব্বাসীয় যুগে মুসলমানদের ইতিহাসে অবদান আলোচনা কর জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের আব্বাসীয় যুগে মুসলমানদের ইতিহাসে অবদান আলোচনা কর।
আব্বাসীয় যুগে মুসলমানদের ইতিহাসে অবদান আলোচনা কর |
আব্বাসীয় যুগে মুসলমানদের ইতিহাসে অবদান আলোচনা কর
উত্তর : ভূমিকা : আব্বাসীয় শাসনামল ছিল ইসলামের ইতিহাসে সভ্যতা ও সংস্কৃতির একটি নবযুগ। এই যুগকে ঐতিহাসিকগণ Golden Age বা স্বর্ণযুগ নামে অভিহিত করেছেন। এ যুগের প্রখ্যাত প্রামাণ্য ঐতিহাসিকদের মধ্যে আল- বালাজুরী ছিলেন অন্যতম।
তাঁর রচিত ইতিহাস গ্রন্থ হলো ফুতুহুল বুলদান, তাবারী আকবর আর রসূল ওয়ালমূলক ইবনুল আমিরের আল কামিল, সামদরি সরুজুজ জাহাব সর্বাধিক মূল্যবান গ্রন্থ । এছাড়াও ঐতিহাসিক আলবেরুনী, তাবারী বহুদেশ ভ্রমণ করে ইতিহাস গ্রন্থ রচনা করে গেছেন ।
আব্বাসীয় যুগে মুসলমানদের ইতিহাসে অবদান : ঐতিহাসিকদের মতানুযায়ী জানা যায় যে, খোলাফায়ে রাশেদিনের যুগ এবং উমাইয়াদের যুগে ইতিহাস চর্চার ক্ষেত্রে তেমন একটা খুব বেশি উন্নয়ন পরিলক্ষিত হয়নি। পরবর্তীতে ইতিহাস চর্চার শুরু হয় আব্বাসীয় যুগে।
এই আমলে মুসলমানগণ ইতিহাস চর্চায় ব্যাপক অবদান রাখতে শুরু করেছিল। নিম্নে আব্বাসীয় যুগের ইতিহাসবিদদের দৃষ্টিতে মুসলমানদের ইতিহাসে অবদান আলোচনা করা হলো :
হিশাম আল-কালবি : ঐতিহাসিক হিশাম ইবনে কালবী মুসলিম ইতিহাসবিদদের মধ্যে অন্যতম। তিনি প্রাচীন ইতিহাস ও ঐতিহ্য নিয়ে ১১৯টি গ্রন্থ রচনা করেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ হলো “কিতাব আল আসশাম" এটি প্রকাশিত হয় মিশরে।
মুহাম্মদ ইবনে ইসহাক : মুসলিম ইতিহাসবিদদের মধ্যে অন্যতম হলেন মুহাম্মদ ইবনে ইসহাক। তিনি মদিনায় জন্মগ্রহণ করেছেন। তাঁর অন্যতম উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ হলো “সিরাত রসুলুল্লাহ” যা মহানবি (সা.)-এর জীবনী নিয়ে রচনা করা হয় এবং এই গ্রন্থটি মহানবি (সা.)-এর জীবনী সংক্রান্ত একটি নির্ভরযোগ্য গ্রন্থ হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে। তিনি ৭৬৭ খ্রিস্টাব্দে বাগদাদে ইন্তেকাল করেন।
আলী-বিন-মুহাম্মদ বিন-আব্দুল্লাহ মাদানী : মুসলমান ইতিহাসবিদদের মধ্যে অন্যতম একজন গুরুত্বপূর্ণ ইতিহাসবিদ হলেন- আলী-বিন-মুহাম্মদ বিন আব্দুল্লাহ মাদানী। তিনি ৭৮৭ খ্রিস্টাব্দে বসরায় জন্মগ্রহণ করেন।
তার রচনাকৃত গ্রন্থের সংখ্যা ২৩০টি। তাঁর রচনার বিষয়বস্তু ছিল মহানবি (সা.) এর জীবনী কুরাইশদের কাহিনি, খোলাফায়ে রাশেদিনের ইতিহাসসহ তৎকালীন মক্কা মদিনায় বিভিন্ন ইতিহাস ।
মুহাম্মদ বিন ওমর আল ওয়াকেদি : মুসলমান ইতিহাসবিদদের মধ্যে এক ধরনের লেখক ছিল মাগাজী লেখক। মুহাম্মদ বিন ওমর আল ওয়াকেদি ছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম একজন। তিনি প্রাক ইসলামি যুগের যুদ্ধের বিজয় কাহিনি নিয়ে ইতিহাস রচনা করেন।
তার উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ হলো- “ফুতুহুল মিশর ওয়া আখরা” । এই | গ্রন্থে তিনি মুয়াবিয়া (রা.)-এর সেনাপতি ওকাবা বিন নাফি কর্তৃক মিশর বিজয়ের ঘটনাবলি লিপিবদ্ধ করেছেন। তাঁর এই গ্রন্থকে কেন্দ্র করে মিশরীয় লেখক আব্দুল হাকিম মিশর ও স্পেনের বিজয় কাহিনিসমৃদ্ধ ইতিহাস রচনা করেছেন।
ইবনে হিশাম : মুসলিম ইতিহাসবিদদের মধ্যে অন্যতম আরেকজন ইতিহাসবিদ হলেন- ইবনে হিশাম । তার পুরো নাম | মুহাম্মদ ইবনে ইসহাক ইবনে ইয়াসার। ইবনে হিশাম হলো তার উপাধি। এই নামেই তিনি প্রসিদ্ধ।
তিনি ৮৫ হিজরিতে মদিনায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি মহানবি (সা.) এর জীবনী রচনা করেন সিরাত রসুলুল্লাহ নামক গ্রন্থ। এটি মহানবি (সা.) এর জীবনীনির্ভর গ্রন্থ হিসেবে পাঠকদের নিকট সমাদৃত।
ইবনে সাদ : ইবনে সাদ ছিলেন মুহাম্মদ বিন ওমর আল- ওয়াকেদির সেক্রেটারি এবং মাগাজী লেখকদের একজন। তিনি মহানবি (সা.) ও সাহাবাদের জীবনীসংক্রান্ত গ্রন্থ রচনা করেন।
আল-বালাজুরী : আল-বালাজুরী ছিলেন হিজরি তৃতীয় শতকের একজন শ্রেষ্ঠ ঐতিহাসিক। তিনি মুসলমানদের রাজ্যবিজয় সম্পর্কে ‘ফুতুহু আল-বুলদান' নামক গ্রন্থ রচনা করেন। এছাড়াও তিনি রচনা করেন 'আনসার উল আশরাফ'।
যাতে উল্লেখ করা হয়েছে মুসলমানদের বিজিত অঞ্চলসমূহের কাহিনি। তার গ্রন্থসমূহে ঐতিহাসিক দলিল ও সন তারিখ নির্ভুল ছিল।
আত-তাবারী : পুরো নাম আবু জাফর মুহাম্মদ ইবনে জারির। তার পদবি ছিল আত-তাবারী। এই নামেই খ্যাতি লাভ করেন। তিনি ছিলেন একজন মুহাদ্দিস। তিনি তিন হাজার পৃষ্ঠার তাফসীর রচনা করে ছিলেন। সেই তাফসীরের নাম হলো “জামি আল বয়ান ফি তাফসীর আল কুরআন”
এই গ্রন্থটি মিশর থেকে ৩০ খণ্ডে প্রকাশিত হয়। তাঁর অন্যতম রচনা গ্রন্থ হলো “তারিখঅর রসূল ওয়াল মুলুক” এই গ্রন্থে তিনি পৃথিবীর সূচনা থেকে ৯১৫ সাল পর্যন্ত সময়ে ধারাবাহিক ইতিহাস রচনা করেছেন যা রচনা করতে তার সময় লাগে প্রায় চল্লিশ বছর ।
আবুল হাসান আলী আল মাসুদী : মুসলমান ইতিহাসবিদদের অন্যতম ব্যক্তি হলেন আবুল হাসান আলী আল মাসুদী। তাকে ঐতিহাসিকগণ প্রাচ্যের হেরোডোটাস নামে অভিহিত করেন। তিনি সর্বপ্রথম ইতিহাস রচনায় বর্ষ ও অধ্যায়ভিত্তিক পদ্ধতির অনুসরণ করেন। তার অন্যতম গ্রন্থ হলো মুরুজ উজ জাহাব।
এই গ্রন্থে তিনি ইসলামি ইতিহাসের পাশাপাশি ভারতবর্ষ, পারস্য ও রোমানদের ইতিহাস রচনা করেন। তার ‘আত তানবীজ ওয়াল আশরাফ' নামক গ্রন্থে ইতিহাস দর্শনের বিষদ ব্যাখ্যা তুলে ধরেন। এছাড়াও তিনি ৭৫০ জন সাহাবীদের জীবন ও কর্মপদ্ধতি নিয়ে ‘উসদ-আল গাবাহ' নামক গ্রন্থ রচনা করেছেন।
আবু হানিফা (রহ.) : আবু হানিফা (রহ.) ছিলেন তৃতীয় শতকের একজন অন্যতম ঐতিহাসিক। তার গ্রন্থ হলো আল- আখবার উত তিওয়াল'। এতে তিনি আব্বাসীয় খলিফা মুতাসিম পর্যন্ত যাবতীয় ঘটনাবলি তুলে ধরেন।
এছাড়া তিনি পবিত্র আল কুরআনের উপর ১৩ খণ্ডের একটি গ্রন্থ রচনা করেন। তবে তিনি দর্শন, গণিত, ভূগোল সম্পর্কেও গ্রন্থ রচনা করেছিল ।
ইবনে কোতায়বা : আব্বাসীয় যুগে যেসব ইতিহাসবিদ শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করেছেন । তাদের মধ্যে ইবনে কোতায়বা উল্লেখযোগ্য ছিলেন। ইবনে কোতায়বা ছিলেন একজন ঐতিহাসিক ও ভূগোলবিদ। তার “কিতাব উল মা-আরিফ' গ্রন্থ খবরের ভান্ডার নামে পরিচিত।
ইবনে খালদুন : ইবনে খালদুন ১৩৩২ খ্রিস্টাব্দে উত্তর আফ্রিকার তিউনিশিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন একাধারে ঐতিহাসিক, অর্থনীতিবিদ ও সমাজবিজ্ঞানী।
‘মুকাদ্দমা' হলো তার অন্যতম একটি আলোচনাসমৃদ্ধ গ্রন্থ। এই গ্রন্থে ছিল অমূল্য তথ্য ও দার্শনিক আলোচনার রত্নভান্ডার ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, আব্বাসীয় যুগে মুসলমান ঐতিহাসিকগণ ইতিহাস চর্চার ক্ষেত্রে ব্যাপক অবদান রাখেন। এই সময়ে পবিত্র কুরআন তাফসীর মহানবি (সা.) সাহাবাদের জীবন, মুসলমানদের রাজ্য বিজয় ইত্যাদি বিষয়াদি সংক্রান্ত বহু গ্রন্থ রচিত হয়। সর্বোপরি আব্বাসীয় আমলে মুসলিম ইতিহাস চর্চায় ব্যাপক অগ্রগতি সাধিত হয়।
আর্টিকেলের শেষকথাঃ ইতিহাস শাস্ত্রে মুসলমানদের অবদান আলোচনা কর
আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম ইতিহাস শাস্ত্রে মুসলমানদের অবদান আলোচনা কর । যদি তোমাদের আজকের এই পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো।