আব্বাসীয় বংশের পতনের অভ্যন্তরীণ কারণসমূহ পর্যালোচনা কর
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো আব্বাসীয় বংশের পতনের অভ্যন্তরীণ কারণসমূহ পর্যালোচনা কর জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের আব্বাসীয় বংশ পতনের অভ্যন্তরীণ কারণগুলো কি ছিল? তা আলোচনা কর ।
আব্বাসীয় বংশের পতনের অভ্যন্তরীণ কারণসমূহ পর্যালোচনা কর |
আব্বাসীয় বংশের পতনের অভ্যন্তরীণ কারণসমূহ পর্যালোচনা কর
- অথবা, আব্বাসীয় বংশ পতনের অভ্যন্তরীণ কারণগুলো কি ছিল? তা আলোচনা কর।
- অথবা, আব্বাসীয় বংশ পতনের অভ্যন্তরীণ কারণসমূহের বিবরণ দাও ।
- অথবা, আব্বাসীয় খিলাফত অবসানের অভ্যন্তরীণ কারণসমূহ বর্ণনা কর।
উত্তর : ভূমিকা : উত্থান, বিকাশ ও পতন এই প্রাকৃতিক নিয়ম ব্যক্তি ও জাতীয় জীবনে সমানভাবে প্রযোজ্য। আব্বাসীয় খিলাফতের ক্ষেত্রেও তাই হয়েছিল। আবুল আব্বাস আস-সাফফাহ ৭৫০ খ্রিস্টাব্দে আব্বাসীয় বংশ প্রতিষ্ঠা করেন।
অতঃপর খলিফা হারুন, আল-মনসুর, আল মামুন শাসনব্যবস্থা সুদৃঢ়করণের সাথে সাথে কৃষ্টি ও সভ্যতার ব্যাপক উন্নতি সাধন করেছিলেন। কিন্তু পরবর্তীকালে অযোগ্যে খলিফাগণ শাসন ক্ষমতা উজিরদের হাতে ন্যস্ত করে বিলাসব্যসনে থাকতেন।
উজির ও মন্ত্রীদের স্বার্থপরতা এবং অদক্ষতার কারণে রাজ্যের অভ্যন্তরে বিভিন্ন রাজবংশের উত্থান, ধর্মীয় সম্প্রদায়ে উৎপত্তি। তুর্কিদের প্রাধান্য ও জাতিগত প্রভেদ প্রভৃতি বৃদ্ধি পেতে থাকে। ফলে রাজ্যের অভ্যন্তরে এক বিশৃঙ্খলা পরিস্থিতির এবং গৃহযুদ্ধের সূচনা হয়।
অতঃপর ১২৫৮ খ্রিস্টাব্দে আব্বাসীয় বংশের পতন ঘটে। চিন্তা না করে বিলাসব্যসনে নিমজ্জিত ছিল। ফলে তাদের অযোগ্যতার সুযোগ গ্রহণ করে স্বার্থান্বেষী উজির ও আমিরগণ। ফলে সাম্রাজ্যে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়।। যা আব্বাসীয় বংশকে পতনের দিকে ধাবিত করে।
→ আব্বাসীয় বংশ পতনের অভ্যন্তরীণ : আব্বাসীয় বংশ পতনের জন্য কতগুলো অভ্যন্তরীণ কারণ দায়ী। নিম্নে আব্বাসীয় বংশ পতনের অভ্যন্তরীণ কারণগুলো আলোচনা করা হলো :
১. খলিফাদের অযোগ্যতা ও দুর্বলতা : আব্বাসীয় খলিফাদের দুর্বলতা, অযোগ্যতা ও অকর্মণ্যতার কারণে আব্বাসীয় বংশের পতন ঘটে। আব্বাসীয় বংশে সর্বমোট ৩৭ জন খলিফা ছিলেন। তাদের মধ্যে আবুল আব্বাস আস সাফফাহ, হারুন-অর-রশিদ, আল মামুন ও আল-মনসুর ছিল যোগ্য ও সুদক্ষ শাসক।
বাকি সবাই ছিলেন অদক্ষ ও অযোগ্য। তারা রাজ্যের মঙ্গলের কথা রাজ্য পরিচালনায় তারা অদক্ষ ছিলেন। ফলে রাজ্যের স্থিতিশীলতা বিনষ্ট হয় । যা আব্বাসীয় বংশ পতনের জন্য দায়ী ।
২. মন্ত্রীদের অদক্ষতা : আব্বাসীয় খলিফাগণ তাদের শাসন পরিচালনার দায়িত্ব অদক্ষ মন্ত্রীদের হাতে ন্যস্ত করেন। মন্ত্রীদের হাতে দায়িত্ব প্রদান করে খলিফাগণ ভোগবিলাসে মত্ত হন। এমনকি, কোনো কোনো খলিফার সময় রাজ্য পরিচালনার সম্পূর্ণ ক্ষমতা মন্ত্রীর হাতে চলে যায়।
৩. উত্তরাধিকার নীতির অভাব : আব্বাসীয় বংশের পতনের অন্যতম প্রধান কারণ ছিল সুষ্ঠু উত্তরাধিকার নীতির অভাব। উত্তরাধিকার নীতির ক্ষেত্রে তাদের কোনো সুনির্দিষ্ট আইন ছিল না।
উত্তরাধিকার নীতির অভাবে রাজকুমারদের মধ্যে বিরোধ দেখা দেয় এবং ক্ষমতার দ্বন্দ্বে সংঘর্ষে লিপ্ত হতো। যেমন- খিলাফতকে কেন্দ্র করে আল মামুন ও আল আমিনের মধ্যে যে দ্বন্দ্ব সংঘটিত হয়েছিল তা আব্বাসীয় বংশ পতনের জন্য দায়ী।
৪. খলিফাদের বিলাসব্যসন : আব্বাসীয় খলিফাদের বিলাসব্যসন আব্বাসীয় বংশ পতনের জন্য দায়ী। খলিফাগণ অযোগ্য মন্ত্রীদের হাতে শাসন পরিচালনার দায়িত্ব অর্পণ করে বিলাসব্যসনে নিমগ্ন থাকতেন। এছাড়া মদ পান এবং ক্রীতদাস, বন্দিদের সাথে অবাধ মেলামেশার ফলে তাদের রক্তের বিশুদ্ধতা নষ্ট হয়ে যায় ।
৫. ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাজবংশের উত্থান : সাম্রাজ্যের বিভিন্ন অংশে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাজবংশের উত্থান আব্বাসীয় খিলাফত অবসানের অন্যতম প্রধান কারণ। খলিফাদের অদক্ষতার কারণে সাম্রাজ্যে বিদ্রোহীদের তৎপরতা বৃদ্ধি পেয়েছিল ।
দুর্বল ও অযোগ্য খলিফাদের শাসনব্যবস্থার সুযোগ গ্রহণ করে এসব রাজ বংশের উত্থান ঘটেছিল। যেমন- ইদ্রিস বংশ, সাসানীয় বংশ, বুওয়াহী বংশ, সেলজুক বংশ এবং ফাতেমীয় বংশ প্রভৃতি বংশের উত্থান ঘটেছিল। এ রাজবংশগুলো ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র স্বাধীন ও অর্ধস্বাধীন রাজ্য গড়ে তুলেছিল।
৬. সাম্রাজ্যের বিশালতা : তৎকালীন সময়ে আব্বাসীয় সাম্রাজ্য পূর্ব ও পশ্চিম দিকে ব্যাপক বিস্তার লাভ করেছিল। আটলান্টিক মহাসাগর থেকে সিন্ধু নদ এবং কাস্পিয়ান নদ থেকে নীলনদ পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। এই বিশালতার জন্য রাজধানী বাগদাদ থেকে সকল অঞ্চলে সুষ্ঠুভাবে শাসন করা সম্ভব হয়নি।
এছাড়া কোথাও কোনো বিদ্রোহী রাজবংশ গড়ে উঠলে তার সংবাদ পাওয়া যেত না সহজেই। এ কারণে সঠিক সময়ে খলিফাগণ অঞ্চলে অভিযান প্রেরণ করতে পারতো না। ফলে বিভিন্ন অঞ্চলে বিশৃঙ্খলা ও অস্থিতিশীলতা বিরাজমান ছিল ।
৭. তুর্কিদের প্রাধান্য : আব্বাসীয় খলিফাগণ সামরিক বিভাগে তুর্কি সৈন্য নিয়োগ করেছিলেন। কারণ খলিফাদের আরব চরিত্রের প্রতি শ্রদ্ধা ছিল না। ফলে তারা তুর্কিদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল আস্থাশীল হয়ে সেনাবাহিনী গঠন করেন।
যেমন : খলিফা আল-মুস্তাসিম তুর্কি সেনাবাহিনী গঠন করে তাদের হাতে পূর্ণ ক্ষমতা প্রদান করে ভুল করেন। পরবর্তীকালে তুর্কিদের প্রাধান্য ও ঔদ্ধত্য রাজশক্তির তথা আব্বাসীয় খিলাফতের ঐক্যবদ্ধতার পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল।
৮. জাতিগত বিভেদ : আব্বাসীয় সাম্রাজ্যে বিভিন্ন জাতির বসবাস ছিল। আব্বাসীয় খলিফাগণ তাদেরকে একত্রে করে একটি সংঘবদ্ধ জাতি গড়ে তুলতে পারেনি। ফলে আব্বাসীয় যুগে আরব, অনারব, মুসলিম ও অমুসলিমদের মধ্যে দলগত শত্রুতা মারাত্মক রূপ ধারণ করে।
অতি প্রাচীনকাল থেকেই পারসিক মুসলমানগণ আরবদের কর্তৃত্ব স্বীকার করেনি। আবার আরবগণ সবসময় অনারবদের বিরোধিতা করতো। এ সমস্ত কারণে সাম্রাজ্যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছিল যা আব্বাসীয় বংশ পতনের জন্য দায়ী।
৯. ধর্মীয় সম্প্রদায়ের উত্থান : আব্বাসীয় বংশ পতনের অভ্যন্তরীণ কারণগুলোর মধ্যে ধর্মীয় সম্প্রদায়ের উত্থান বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এ সময় সাম্রাজ্যে বিভিন্ন ধর্মীয় সম্প্রদায়ের উদ্ভব ঘটেছিল।
এদের মধ্যে শিয়া, সুন্নি, মুতাজিলা, কারামাতীয়ান, ইসমাইলী ও এসাসিন প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। তাদের ভিন্ন ভিন্ন মতবাদ সাম্রাজ্যে ধর্মীয় ও রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করেছিল ।
১০. সামরিক বিভাগের প্রতি অবহেলা : আব্বাসীয় খলিফাগণ রাজ্য বিস্তারের চেয়ে জ্ঞানবিজ্ঞান, কৃষ্টি ও সভ্যতায় বেশি মনোযোগী হয়ে উঠেছিলেন। সামরিক বিভাগের উপর তাদের কোনো নজর ছিল না। সামরিক বিভাগের প্রতি তারা ছিলেন উদাসীন।
এই উদাসীনতার কারণে সৈন্যগণ তাদের | শৌর্য-বীর্য হারিয়ে ফেলে ফলে সাম্রাজ্যে বহিঃশত্রু কর্তৃক আক্রান্ত হয়। তাছাড়া সৈন্যদল অভ্যন্তরীণ কোন্দল প্রতিহত করতে পারেনি, ফলে আব্বাসীয় সাম্রাজ্যের পতন অনিবার্য হয় ।
১১. অর্থনৈতিক বিপর্যয় : আব্বাসীয় বংশ পতনের অপর | উল্লেখযোগ্য কারণ অর্থনৈতিক বিপর্যয়। খলিফাগণ বিলাস-ব্যসনে মত্ত হয়ে প্রচুর অর্থ ব্যয় করে। এ জন্য খলিফাগণ প্রজাদের উপর নিত্যনূতন করভার চাপিয়ে দেয়।
এ অতিরিক্ত করভারে জর্জরিত প্রজাসাধারণ অনেক ক্ষেত্রে কৃষিকাজ ছেড়ে দেয়। এ দিকে খলিফাদের অত্যাচারে শিল্প ও ব্যবসা-বাণিজ্যের ব্যাপক ক্ষতি হয় । অধিকন্তু, দুর্ভিক্ষ ও মহামারিতে জনসাধারণের অবস্থা শোচনীয় হয়ে পড়েছিল। এই অর্থনৈতিক বিপর্যয় সাম্রাজ্য পতনের জন্য দায়ী।
১২. সামন্ত প্রথা : আব্বাসীয় খলিফাগণ দূরবর্তী অঞ্চলসমূহ শাসনব্যবস্থা পরিচালনার জন্য সামন্ত প্রধান নিয়োগ দিয়েছিলেন। কিন্তু পরবর্তীকালে সামন্ত প্রধানগণ কেন্দ্রীয় শাসনের বিরোধিতা করেছিল। সামন্ত প্রথা সৃষ্টি আব্বাসীয় বংশ পতনের অন্যতম কারণ ছিল ।
১৩. প্রাদেশিক সরকারের পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন : আব্বাসীয় খলিফাগণ সামরিক ও রাজস্ব বিভাগে প্রাদেশিক সরকারকে পূর্ণ স্বাধীনতা দেন। ফলে প্রাদেশিক সরকারগণ প্রচুর অর্থ ও ক্ষমতা সঞ্চয় করে কেন্দ্রীয় সরকারের বিরোধিতা করেছিল।
১৪. আমির ওমরাহদের ঔদ্ধত্য : খলিফাগণ সামরিক বিভাগ ও রাজ্যের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিভাগে আমির ওমরাহদের নিয়োগ প্রদান করেছিলেন। এ সময় আমির ওমরাহগণ পূর্ণ ক্ষমতা সঞ্চয় করে আল মুত্তাকী এবং আল-মুসতাকফীকে নৃশংসভাবে হত্যা করেন।
তারা ঔদ্ধত্যের চরম সীমায় আরোহণ করেছিল আল-রাজীবের রাজত্বকালে। এমনকি তারা খুতবায় খলিফার নামের সাথে নিজের নাম পাঠের ব্যবস্থা করেন।
উপসংহার : উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, আব্বাসীয় বংশ পতনের জন্য উল্লিখিত অভ্যন্তরীণ কারণগুলো বিশেষভাবে দায়ী। জাতীয় চরিত্রে নানাবিধ অনাচার ও ব্যভিচার অনুপ্রবেশ করলে জাতি আর টিকে থাকতে পারে না।
আব্বাসীয় শাসকদেরও চরম নৈতিক অধঃপতন ঘটেছিল যার ফলে তাদের পতন অনিবার্য হয়ে পড়েছিল। তাই বলা যায়, শিক্ষার আধার, জ্ঞান চর্চার মধ্যমনি, সভ্যতার ক্ষেত্র, জগতের চক্ষু ও কেন্দ্রভূমি বাগদাদ আব্বাসীয় খলিফাদের নানাবিধ দুর্বলতার কারণে চিরতরে বিনাশ হলো।
আর্টিকেলের শেষকথাঃ আব্বাসীয় বংশ পতনের অভ্যন্তরীণ কারণসমূহের বিবরণ দাও
আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম আব্বাসীয় বংশ পতনের অভ্যন্তরীণ কারণসমূহের বিবরণ দাও । যদি তোমাদের আজকের এই পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো।