আব্বাসীয় আমলে তাহির ইবনে হুসাইনের কৃতিত্ব মূল্যায়ন কর
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো আব্বাসীয় আমলে প্রথম আঞ্চলিক রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে তাহির ইবনে হুসাইনের কৃতিত্ব মূল্যায়ন কর জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের আব্বাসীয় আমলে প্রথম আঞ্চলিক রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে তাহির ইবনে হুসাইনের কৃতিত্ব মূল্যায়ন কর ।
আব্বাসীয় আমলে প্রথম আঞ্চলিক রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে তাহির ইবনে হুসাইনের কৃতিত্ব মূল্যায়ন কর |
আব্বাসীয় আমলে প্রথম আঞ্চলিক রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে তাহির ইবনে হুসাইনের কৃতিত্ব মূল্যায়ন কর
উত্তর : ভূমিকা : আব্বাসীয় খিলাফতের পূর্বাঞ্চলে যে সকল : ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাজবংশ প্রতিষ্ঠা লাভ করে তার মধ্যে প্রথম আঞ্চলিক রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা হচ্ছে তাহির ইবনে হুসাইন। তার নাম অনুসারে এই রাজবংশের নামকরণ করা হয়।
তাহিরি রাজবংশ কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত রাজবংশ ছিল স্বশাসিত। তাঁর এই রাজবংশে আব্বাসীয় খলিফাদের কোন প্রকার হস্তক্ষেপ ছিল না, শাসন কার্যে তিনি নিজ নামে খুৎবা পাঠ করেন ।
→ তাহিরের পরিচয় : তাহিরি রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা হলেন তাহির প্রকৃত নাম তাহির ইবন আল হুসাইন। তিনি ৭৭৫-৭৭৬ খ্রিস্টাব্দে ইরানের হিরাত প্রদেশের বুলানজ শহরে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।
তাঁর পিতা ছিলেন আব্বাসীয় খলিফার অধীনে একজন সরকারি কর্মচারী। তাঁর পূর্বপুরুষেরা ছিল আব্বাসীয় খলিফাদের গভর্নর। সুতরাং জন্মগতভাবে তিনি ছিলেন অভিজাত পরিবারের সদস্য।
তাঁর সম্পর্কে P. K. Hitti বলেন, “The first to estabish a quasi Independent state east of Baghdad was the once trusted general of AL-Mamun Tahir Ibn-All-2 Husayn of Khurasan' [History of the Arabs -P-46]
→ তাহিরের কৃতিত্ব : আব্বাসীয় আমলে প্রথম আঞ্চলিক রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে তাহির ইবন আল হুসাইনের কৃতিত্ব নিম্নে তুলে ধরা হলো :
১. প্রথম রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা : খলিফা মামুনের রাজত্বকালে তাহির ইবন আল হুসাইন খোরাসানে খারিজী বিদ্রোহ দমন করে সমগ্র পারস্যের অঞ্চলে স্বীয় প্রাধান্য প্রতিষ্ঠা করেন। ৮২০ খ্রিস্টাব্দে পূর্বাঞ্চলীয় শাসনকর্তা নিযুক্ত হয়ে মার্ভ হুইতে স্বাধীনভাবে রাজত্ব করতে থাকেন।
খুত্বা হতে খলিফাদের নাম বাতিল করে নিজ নামে খুৎবা পাঠ করেন। নিশাপুর ছিল তাহিরি রাজবংশের রাজধানী। তাঁর নামানুসারে এই রাজবংশের নামকরণ করা হয় তাহিরি রাজবংশ। তাহির নিজ নামে খুৎবা পাঠ করলেও খলিফা আল মামুনের প্রতি অনুগত ছিলেন।
তাঁর রাজ্য প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে Earthold, Turkistan Down to the Mongolin invasion বইয়ে বলা হয়, “৮২০ খ্রিস্টাব্দে দিকে তাহিরই সর্বপ্রথম আব্বাসীয়দের নিকট থেকে স্বাধীনতা লাভ করে একক এবং স্বায়ত্ত্বশাসিত রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেছিল ।”
২. ক্ষমতা লাভ : তাহির আমিন ও মামুনের গৃহযুদ্ধে মামুনের সেনাপতি হয়ে আমিনের সেনাপতি ঈসাকে পরাজিত করলে এবং বাগদাদ অবরোধ করে আমিনকে হত্যা করলে তার প্রতিদান হিসেবে তাহিরকে খোরাসানের সেনাপতি নিয়োগ করা হয় ।
৩. উপাধি গ্রহণ : আব্বাসীয় দুই খলিফা আল মামুন ও - আমিনের গৃহযুদ্ধে মামুনের সেনাপতি তাহির জয়লাভ করলে মামুন তাকে “যু-আল-ইয়ামিনাইন” অর্থাৎ ‘সব্যসাচী' উপাধি প্রদান করেন। কারণ এক চক্ষু বিশিষ্ট তাহির দুই হাত দ্বারা সমানভাবে তরবারি চালাতে পারদর্শিতা অর্জন করেছিলেন।
৪. বিজয়াভিযান: তাহির আব্বাসীয় খিলাফতের গভর্নর ও | সেনাপতি পদে নিয়োগ লাভ করে তিনি বিভিন্ন অভিযান প্রেরণ করেন এবং তিনি সব অভিযানে সাফল্য লাভ করেন ।
৫. গৃহযুদ্ধে জয়লাভ : আব্বাসীয় খলিফার ক্ষমতা গ্রহণ নিয়ে ৮১২ খ্রিস্টাব্দে খলিফা আল মামুন ও খলিফা আল আমিনের মধ্যে দ্বন্দ্ব হয় । সেই দ্বন্দ্বে সেনাপতি তাহির বিজয়লাভ করেন ।
৬. কাযবীন বিজয় : আমিন এবং তাঁর সেনাপতিকে পরাজিত করে তাহির কাযবীন বিজয় করেন।
৭. হুলওয়ান বিজয় : তাহির কাযবীন বিজয় করে হুলওয়ানের দিকে নজর দেন এবং তিনি খুব অল্প সময়ের মধ্যে হুলওয়ান বিজয় করেন।
৮. আহওয়াজ ও সুস বিজয় : তাহির হুলওয়ান বিজয় করে নিজেই আহওয়ায় ও মূস বিজয়ের জন্য বেরিয়ে পড়েন এবং আহওয়ায় ও সুস বিজয় লাভ করেন।
৯. বাগদাদ আক্রমণ : তাহিরের বিজয় লাভের ফলে খলিফা আল- আমিনের ক্ষমতা খর্ব হতে থাকে। তাই তাহির বাগদাদ আক্রমণের পরিকল্পনা করেন এবং বাগদাদে আক্রমণ করে তিনি আমিনকে হত্যা করেন। যার ফলে তিনি ৮১৩ খ্রিস্টাব্দে বাগদাদ দখল করেন।
১০. খোরাসানের শাসনভার গ্রহণ : আব্বাসীয় খলিফা আমিনকে পরাজিত করলে খলিফা মামুন তাহাকে খোরাসানের শাসনকর্তা হিসেবে নিযুক্ত করেন। কারণ যেহেতু তাহির মার্ভের শাসনকর্তা আমিনকে পরাজিত করেন সেহেতু যেকোনো সময় খলিফার নিজের জন্য সে হুমকি হতে পারে।
১১. ইরানিদের স্বার্থানুকূলের শাসন প্রতিষ্ঠা : অপর দিকে পারস্যে ইরানিদের সংস্কৃতির পতন ঘটতে থাকলে খলিফা ইরানিদের স্বার্থ রক্ষার জন্য তাহিরি বংশ প্রতিষ্ঠা করেন।
১২. খুত্বায় নাম সংযোজন : খলিফা মামুন যখন তাহিরকে খোরাসানের শাসনকর্তা নিযুক্ত করেন তখন তাহির নিজ নামে একটি রাজবংশ প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি এই রাজবংশের নামকরণ করেন তাহিরি রাজবংশ। এর রাজধানী নির্মাণ করেন নিশাপুরে (৮২০ খ্রি.) | তিনি শাসন ভার গ্রহণ করে নিজ নামে খুৎবা পাঠ করেন ।
১৩. আব্বাসীয় খলিফাদের সাথে সম্পর্ক : আব্বাসীয় খলিফা আল মামুনের সাথে তাহিরের সুসম্পর্ক ছিল কারণ তাহির নিজ নামে খুৎবা পাঠ ও স্বায়ত্তশাসিত রাজবংশ করলেও মামুন কোন প্রকার হস্তক্ষেপ করেনি। তিনি কেন্দ্রে সৈন্য ও রাজস্ব দিয়ে সাহায্য করেন যেমন : ৪৪,৮৪,৬০০ দিরহাম, ১৩,০০০ ঘোড়া, ২০০০ দাস ও ২০০০ ভেড়া বাৎসরিক কর হিসেবে দিতো।
১৪. মৃত্যু : তিনি এই রাজবংশ প্রতিষ্ঠার দুই বছর পর মৃত্যুবরণ করেন। তার এই প্রতিষ্ঠিত রাজবংশ ৫২ বছর পর্যন্ত স্থায়। ছিল।
মূল্যায়ন : তাহির কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত এই রাজবংশ ছিল আব্বাসীয় আমলে প্রথম আঞ্চলিক রাজবংশ। তাহিরি বংশের শাসকগণ খলিফা হিসেবে নিজেদের দাবি করেনি।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, আব্বাসীয় আমলে পূর্বাঞ্চলে যে সকল রাজবংশ প্রতিষ্ঠা লাভ করে তার মধ্যে অন্যতম ছিল তাহিরি রাজবংশ। কারণ এই রাজবংশ স্বাধীনও ছিল না আবার পরাধীনও ছিল না। তারা ইরানীদের প্রভাব বৃদ্ধির জন্য এই রাজবংশ প্রতিষ্ঠা করেন।
আর্টিকেলের শেষকথাঃ আব্বাসীয় আমলে প্রথম আঞ্চলিক রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে তাহির ইবনে হুসাইনের কৃতিত্ব মূল্যায়ন কর
আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম আব্বাসীয় আমলে প্রথম আঞ্চলিক রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে তাহির ইবনে হুসাইনের কৃতিত্ব মূল্যায়ন কর। যদি তোমাদের আজকের এই পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো।