আব্বাসীয় আমলে প্রাদেশিক শাসনব্যবস্থা আলোচনা কর
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো আব্বাসীয় আমলে প্রাদেশিক শাসনব্যবস্থা আলোচনা কর জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের আব্বাসীয় আমলে প্রাদেশিক শাসনব্যবস্থা আলোচনা কর ।
আব্বাসীয় আমলে প্রাদেশিক শাসনব্যবস্থা আলোচনা কর |
আব্বাসীয় আমলে প্রাদেশিক শাসনব্যবস্থা আলোচনা কর
উত্তর : ভূমিকা : মুসলিম প্রশাসনব্যবস্থার আমলে কেন্দ্রীয় প্রশাসনব্যবস্থার মতো প্রাদেশিক প্রশাসনব্যবস্থাও ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রাষ্ট্রের বিশাল পরিধির কারণে এবং সুষ্ঠু শাসনব্যবস্থা পরিচালনার লক্ষ্যে পূর্ববর্তী আমলের মতো এ আমলেও সাম্রাজ্যকে অনেকগুলো প্রদেশে বিভক্ত করেন।
আবার অনেক সময় প্রশাসনিক সুবিধার্থে কয়েকটি ক্ষুদ্র প্রদেশকে একত্রিত করে একটি বিরাট প্রদেশে পরিণত করা হতো। অতএব বলা যায়, আব্বাসীয় যুগে প্রাদেশিক প্রশাসনব্যবস্থার প্রভূত উন্নতি হয়েছিল।
→ প্রাদেশিক প্রশাসনিক কাঠামো : আব্বাসীয় শাসনামলে প্রাদেশিক শাসনব্যবস্থার কেন্দ্রীয় শাসনব্যবস্থার অবিকল প্রতিচ্ছবি ছিল। কেন্দ্রীয় শাসনব্যবস্থায় যে সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ ছিল প্রাদেশিক শাসনব্যবস্থায়ও সেগুলো প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। প্রাদেশিক শাসনব্যবস্থার সর্বময় অধিকারী ছিল আমির বা ওয়ালি ।
→ আমির : আব্বাসীয় আমলে প্রাদেশিক শাসনের শীর্ষে ছিল আমির। আমির খলিফা বা উজিরের পরামর্শক্রমে প্রদেশের শাসনকার্য পরিচালনা করতেন। প্রশাসনিক ক্ষেত্রে অযোগ্যতা, ক্ষমতার অপব্যবহার, কর্তব্যে অবহেলা, অসদুপায়ে ধন-সম্পদ অর্জন ইত্যাদি কারণে খলিফা তাকে পদচ্যুত করতে পারেন। আমিরের ক্ষমতা পর্যালোচনা করে তাদের তিন ভাগে ভাগ করা যায় ।
১. অসীম ক্ষমতাসম্পন্ন আর্মির : যেসব আমির খলিফার প্রিয়ভাজন ছিলেন তারাই অসীম ক্ষমতা ভোগ করতে পারতেন । খলিফা কোনো কোনো আমির কে অসীম ক্ষমতা দান করতেন।
২. সসীম ক্ষমতাসম্পন্ন আমির : এ সমস্ত আমিরগণ নিজ নিজ প্রদেশে কেবলমাত্র খলিফার আদেশ-নির্দেশ কার্যকর করতেন। তাদের কোনো নির্ণীত নির্ধারণী ক্ষমতা ছিল না।
৩. বলপূর্বক ক্ষমতা দখলকারী আমির : দূরবর্তী প্রদেশে কোনো কোনো আমির সুযোগ পেলেই খলিফার ক্ষমতা উপেক্ষা করে বংশানুক্রমিক শাসন প্রতিষ্ঠা করতেন। তারা নামে মাত্র খলিফার আনুগত্য স্বীকার করতো। এরাই জবর দখলকারী বলে পরিচিত ।
→ প্রাদেশিক দপ্তরসমূহ : আব্বাসীয় আমলে আমিরের একার পক্ষে শাসনকার্য পরিচালনা করা সম্ভব ছিল না বলেই কেন্দ্রীয় সরকারের অনুরূপ কতকগুলো বিভাগ প্রদেশেও সৃষ্টি | করা হয় । দপ্তরগুলো নিম্নরূপ-
১. দেওয়ানুল খারাজ : প্রাদেশিক সরকারের রাজস্বধায়, আদায় এবং রাজস্ব আয়-ব্যয়ের হিসাব সংরক্ষণ এবং প্রাদেশিক সরকারের যাবতীয় ব্যয় নির্বাহী দেওয়ান আল-খারাজের অন্তর্ভুক্ত ছিল। প্রাদেশিক সরকারের যাবতীয় ব্যয় নির্বাহ যথা- সেনাবাহিনীর বেতন-ভাতা প্রদান এবং জনকল্যাণ ও উন্নয়নমূলক কাজের জন্যও এ বিভাগ থেকেই ব্যয় নির্বাহ করা হতো।
২. দেওয়ান আল-বারিদ : আব্বাসীয় আমলে প্রাদেশিক রাজধানীতে প্রাদেশিক ডাক বিভাগ চালু ছিল। প্রদেশে এ বিভাগের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাবলি এমনকি আমিরের আচার-আচরণ সম্পর্কেও কেন্দ্রীয় সরকারকে অবহিত করা হতো। ডাক প্রেরণের সুবিধার্থে প্রতিদিন ডাকঘরের সাথেই ঘোড়া, গাধা, উট বা খচ্চর রাখা হতো।
৩. দেওয়ান আল-জুনুদ : প্রাদেশিক সরকারের সৈন্য নিয়োগ- প্রশিক্ষণ, তাদের বেতন-ভাতা প্রদান ইত্যাদি দায়িত্ব প্রাদেশিক দেওয়ান আল জুনুদের ওপর ন্যস্ত ছিল। প্রাদেশিক সামরিক বিভাগের রীতি নীতি কেন্দ্রীয় সামরিক বিভাগের অনুরূপ ছিল। কিন্তু সামরিক ব্যাপারে কোনো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণের অধিকার প্রাদেশিক দেওয়ান আল জুনুদের ছিল না ।
৪. দেওয়ান আল-রাসায়েল : প্রশাসনিক সুবিধা ও ব্যয়সংকোচনের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের দেওয়ান আল-রাসায়েল ও দেওয়ান আল-ফাতাম বিভাগ একত্রিত করে প্রাদেশিক সরকারের দেওয়ান আল-রাসায়েল গঠিত হয়। প্রাদেশিক সরকারের আদেশ লেখা হতো এবং যাবতীয় চিঠিপত্র এ বিভাগে লেখা হতো এবং এগুলো কেন্দ্রীয় সরকার বা সংশ্লিষ্ট দপ্তরসমূহে সিলমোহরকৃত অবস্থায় প্রেরিত হতো।
৫. দেওয়ান আল-জিসাম : এটা ছিল হিসাব নিরীক্ষণ বিভাগ। এ বিভাগ প্রদেশের হিসাব নিরীক্ষণের কাজ করতো খলিফা হাদী প্রশাসনিক দফতরের ক্ষমতা বৃদ্ধি ও দুর্নীতি দমনের লক্ষে এ বিভাগ সৃষ্টি করেন। প্রাদেশিক সরকারের বিভিন্ন বিভাগের আর্থিক লেনদেন সংক্রান্ত হিসাব-নিকাশ এ বিভাগ নিরীক্ষণ করতো।
৬. দেওয়ান আল-কাজা : প্রাদেশিক কাজী প্রদেশের বিচারব্যবস্থা পরিচালনা করতেন। প্রাদেশিক কাজি খলিফা বা কেন্দ্রের প্রধান বিচারপতি কর্তৃক নিযুক্ত হতো। শহর কাজিগণ প্রাদেশিক কাজির অধীনে বিচার কার্য পরিচালনা করতেন। তাছাড়া এতিম ও নাবালকের সম্পত্তি রক্ষণাবেক্ষণ, ওয়াকফ সম্পত্তি তত্ত্বাবধান উইল বাস্তবায়ন অভিভাবকহীন মেয়েদের বিবাহ প্রদান ইত্যাদি কাজীদের অন্তর্ভূক্ত ছিল। আমির নিজে বা প্রতিনিধি মজলিস আদালতের সভাপতিত্ব করতেন।
৭. দেওয়ান আল গুতা : নিজ নিজ প্রদেশের বিদ্রোহ অভ্যন্তরীণ বিশৃঙ্খলা, চুরি-ডাকাতি, রাহাজানি ইত্যাদি অপরাধমূলক তৎপরতা বন্ধ করা এবং নাগরিক জীবনের নিরাপত্তা বিধানের লক্ষ্যে দেওয়ান আল-শুরত বিভাগ চালু করেন। এ বিভাগের প্রধান সাহিব উল মুরতা খলিফা বা আমির কর্তৃক নিযুক্ত হতেন। প্রতিটি শহরেও পুলিশ বিভাগ ছিল।
৮. দেওয়ান আল দায়ী : এটা ব্যক্তিগত সম্পত্তি রক্ষণাবেক্ষণ বিভাগ। এ বিভাগ খলিফার ব্যক্তিগত সম্পত্তি রক্ষণাবেক্ষণ ও হিসাব নিকাশ রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পালন করতেন। মূলত খলিফার সম্পত্তির রাজস্ব আদায়, রাজস্বের হিসাব রক্ষণাবেক্ষণ এ বিভাগের ওপর ন্যস্ত ছিল।
৯. দেওয়ান আল-হিসবাহ : এটি পুলিশ বিভাগের মতোই একটি আইন-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠাকারী বিভাগ। ধর্ম, নৈতিকতা বিরোধী কার্যকলাপ দমন করে নাগরিক জীবনে আইন-শৃঙ্খলার উন্নতি সাধন ছিল এ বিভাগের কাজ। মদ, জুয়া, অবৈধ মেলামেশা, অশালীনতা দ্বীন ও ঈমানের পরিপন্থি কার্যকলাপ, ব্যবসা-বাণিজ্য, শঠতা, প্রতারণা ইত্যাদি এ বিভাগ কঠোরহস্তে দমন করতো ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, আব্বাসীয় খলিফাগণ ছিলেন তৎকালীন যুগের শ্রেষ্ঠ শাসক। আব্বাসীয় প্রাদেশিক শাসনব্যবস্থা তাদের সাম্রাজ্যে এনেছিল শান্তির সুবাতাস। যার সুফল ভোগ করেছিল প্রজাসাধারণ। প্রাদেশিক শাসনব্যবস্থা আসনে প্রদেশের শাসকগণের জনসাধারণের ভাবের আদান-প্রদান ঘটে ফলে প্রজাদের সুবিধা-অসুবিধা শাসকগণ সহজেই বুঝতে পারত ।
আর্টিকেলের শেষকথাঃ আব্বাসীয় আমলে প্রাদেশিক শাসনব্যবস্থা আলোচনা কর
আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম আব্বাসীয় আমলে প্রাদেশিক শাসনব্যবস্থা আলোচনা কর। যদি তোমাদের আজকের এই পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো।