১৯৭২ সালের সংবিধানের বৈশিষ্ট্য আলোচনা কর
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো ১৯৭২ সালের সংবিধানের বৈশিষ্ট্য আলোচনা কর জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের ১৯৭২ সালের বাংলাদেশের সংবিধানের বৈশিষ্ট্য ।
১৯৭২ সালের সংবিধানের বৈশিষ্ট্য আলোচনা কর |
১৯৭২ সালের সংবিধানের বৈশিষ্ট্য আলোচনা কর
- বঙ্গবন্ধু কর্তৃক গৃহীত অস্থায়ী সংবিধানের বৈশিষ্ট্য সংক্ষেপে আলোচনা কর।
- অথবা, অস্থায়ী সংবিধানের বৈশিষ্ট্য সংক্ষেপে বর্ণনা কর।
উত্তর : ভূমিকা : বাংলাদেশের জন্য একটি সুষ্ঠু, সুন্দর ও সর্বজন গ্রহণযোগ্য সংবিধান প্রণয়নের লক্ষ্যে স্বাধীনতাত্তরকালে যেসব পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয় অস্থায়ী সংবিধান প্রণয়ন তার মধ্যে সর্বপ্রথম।
১৯৭২ সালের ১১ জানুয়ারি শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি হিসেবে অস্থায়ী সংবিধান আদেশ জারি করেন।
এ সংবিধান আদেশ জারির পটভূমিকায় বলা হয় যে, ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল মুজিবনগরে ঘোষিত স্বাধীনতা আদেশ ছিল গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের জন্য একটি অস্থায়ী ব্যবস্থা এবং যে অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে এ স্বাধীনতা আদেশ জারি করা হয়েছিল তার অবসান ঘটেছে।
তাছাড়াও এদেশের গণমানুষ সংসদীয় গণতন্ত্র ব্যবস্থা প্রবর্তনের ইচ্ছা পোষণ করেন। ফলে জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী রাষ্ট্রপতির স্বাধীনতা ঘোষণার প্রেক্ষিতে এ অস্থায়ী সংবিধান আদেশ জারি করেছেন । যা বেশ কিছু বৈশিষ্ট্যের সমন্বয়ে গড়ে উঠেছিল
→ অস্থায়ী সংবিধানের বৈশিষ্ট্য : ১৯৭২ সালে জারিকৃত অস্থায়ী সংবিধান আদেশ বলে যে অস্থায়ী সংবিধান প্রণীত হয়েছিল তা কিছু স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য ধারণ করেছিল। বাংলাদেশের অস্থায়ী সংবিধানের নিম্ন বর্ণিত বৈশিষ্ট্যসমূহ উল্লেখযোগ্য :
১. গণপরিষদের গঠন : ১৯৭০ সালের ৭ ডিসেম্বর হতে আরম্ভ করে ১৯৭১ সালের জানুয়ারি মাস পর্যন্ত বাংলাদেশ হতে জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদে নির্বাচিত সদস্যদের সমন্বয়ে (অযোগ্য ঘোষিত ব্যতীত) বাংলাদেশের গণপরিষদ বা সংবিধান পরিষদ গঠিত হবে।
বাংলাদেশের জন্য একটি সংবিধান তৈরি করাই হবে এ পরিষদের প্রধানতম কাজ। এ গণপরিষদে প্রধান হবেন প্রধানমন্ত্রী। একটি মন্ত্রিপরিষদ থাকবে এবং প্রধানমন্ত্রী মন্ত্রিপরিষদের প্রধান থাকবেন, রাষ্ট্রপতি হবেন নামে মাত্র ৷
২. নিয়মতান্ত্রিক রাষ্ট্রপতি : অস্থায়ী সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি হবেন একজন নিয়মতান্ত্রিক রাষ্ট্রপ্রধান। তিনি প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ অনুযায়ী তার সমুদয় দায়িত্ব পালন করবেন।
রাষ্ট্রপতি গণপরিষদে একজন সদস্যকে প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত করবেন, যিনি গণপরিষদে সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের আস্থাভাজন। তাছাড়া অন্য সকল মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শক্রমে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিযুক্ত হবেন।
৩. সংসদীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা : অস্থায়ী সংবিধানে বাংলাদেশের জন্য সংসদীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রবর্তনের উল্লেখ করা হয়।
সংসদীয় ব্যবস্থায় একটি মন্ত্রিপরিষদ থাকার কথা বলা হয় এবং প্রধানমন্ত্রী থাকেন মন্ত্রিপরিষদের প্রধান। প্রধানমন্ত্রী তার কাজের জন্য মন্ত্রিপরিষদের নিকট দায়ী থাকেন।
আর অন্যান্য মন্ত্রীরা দায়ী থাকেন প্রধানমন্ত্রীর নিকট। সংসদীয় ব্যবস্থায় রাষ্ট্রপতি থাকেন নিয়মতান্ত্রিক প্রকৃতির ।
৪. রাষ্ট্রপতি নিয়োগ : গণপরিষদ কর্তৃক সংবিধান রচনা করার পূর্বে রাষ্ট্রপতির পদ কোনো কারণে শূন্য হলে এবং উক্ত শূন্য পদে সংবিধান অনুসারে অন্য কোনো রাষ্ট্রপতি দায়িত্বভার গ্রহণ করার পূর্ব পর্যন্ত সময়ে মন্ত্রিপরিষদ বাংলাদেশের কোনো একজন নাগরিককে রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে নিয়োগ করবেন। অর্থাৎ অস্থায়ী সংবিধানে রাষ্ট্রপতি নিয়োগের ব্যাপারে সুস্পষ্ট বিধানের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছিল।
৫. হাইকোর্ট ব্যবস্থা : অস্থায়ী সংবিধানের আরেকটি বৈশিষ্ট্য ছিল হাইকোর্ট গঠনের জন্য নির্দিষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন করা ।
একজন প্রধান বিচারপতি ও অন্যান্য কয়েকজন বিচারপতির সমন্বয়ে বাংলাদেশের জন্য একটি হাইকোর্ট গঠন করা হবে বলে অস্থায়ী সংবিধানের উল্লেখ করা হয়।
হাইকোর্টের বিচারপতিদের সংখ্যা ও তাদের কার্যক্রম রাষ্ট্রপতি নির্ধারণ করবেন বলে উল্লেখ করা হয়।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অস্থায়ী সংবিধান আদেশ জারির মাধ্যমে যে ব্যবস্থা প্রবর্তন করেছিলেন তা স্বল্পসময়ের প্রেক্ষিতে গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য ধারণ করেছিল।
এ অস্থায়ী সংবিধানে বাংলাদেশের জন্য সংসদীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রবর্তনের সুযোগ সৃষ্টি করা হয়। এ সংবিধান বলে রাষ্ট্রপতিকে নামমাত্র প্রধান এবং প্রধানমন্ত্রী প্রকৃত প্রধান হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
এ সংবিধান অনুযায়ী গণপরিষদ গঠনের ব্যবস্থা করা হয়। ১৯৭২ সালে ৪ নভেম্বর তারিখে গণপরিষদে বাংলাদেশের নতুন সংবিধান গৃহীত হয়ে ১৬ ডিসেম্বর এটি কার্যকরী হলে অস্থায়ী সংবিধান আদেশ বাতিল হয় ।
আর্টিকেলের শেষকথাঃ 1972 সালের সংবিধানের বৈশিষ্ট্য আলোচনা কর
আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম 1972 সালের সংবিধানের বৈশিষ্ট্য আলোচনা কর । যদি তোমাদের আজকের এই পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো।