১৯৭২ সালের সংবিধানের মৌলিক অধিকার সমূহ আলোচনা কর
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো ১৯৭২ সালের সংবিধানের মৌলিক অধিকার সমূহ আলোচনা কর জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের ১৯৭২ সালের সংবিধানের মৌলিক অধিকার সমূহ আলোচনা কর ।
১৯৭২ সালের সংবিধানের মৌলিক অধিকার সমূহ আলোচনা কর |
১৯৭২ সালের সংবিধানের মৌলিক অধিকার সমূহ আলোচনা কর
- ১৯৭২ সালের সংবিধানে প্রদত্ত মৌলিক অধিকারসমূহ আলোচনা কর ।
- অথবা, ১৯৭২ সালের সংবিধানে কী ধরনের মৌলিক অধিকারের বিধান রাখা হয়েছিল তা বিশ্লেষণ কর?
- অথবা, বাংলাদেশ সংবিধানের বর্ণিত মৌলিক অধিকারসমূহ উল্লেখ কর।
উত্তর : ভূমিকা : মৌলিক অধিকার মানবসত্তার বিকাশের সাথে সম্পর্কিত। মৌলিক অধিকার বলতে এ কতকগুলো অপরিহার্য সুযোগ-সুবিধাকে বুঝায়, যেগুলোর সুষ্ঠু ব্যবহারের মাধ্যমে ব্যক্তি তার স্বীয় বিকাশের পথ খুঁজে পায় এবং সেই সাথে মানবজীবনকে পরিপূর্ণভাবে উপলব্ধি করতে পারে।
সংবিধান সংশোধন কিংবা দেশে জরুরি অবস্থা জারি করা ছাড়া মৌলিক অধিকার ক্ষুণ্ণ করা যায় না। মৌলিক অধিকারের পিছনে সমাজ বা রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্বের নিশ্চয়তা থাকে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সংবিধানে মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে।
অন্যান্য দেশের মতো, ১৯৭২ সালের সংবিধানে বাংলাদেশেও মৌলিক নিশ্চয়তা প্রদান করা হয়েছে। বাংলাদেশ সংবিধানের তৃতীয় ভাগের ২৭ নং অনুচ্ছেদ থেকে ৪৭ নং অনুচ্ছেদ পর্যন্ত মৌলিক .অধিকার লিপিবদ্ধ করা হয়েছে।
→ ১৯৭২ সালের সংবিধানে প্রদত্ত মৌলিক অধিকারসমূহ বঙ্গবন্ধুর শাসনামলে ১৯৭২ সালে যে সংবিধান প্রণয়ন করা হয় সেখানে জনগণের মৌলিক অধিকারের নিশ্চয়তা প্রদান করা হয়। মূল সংবিধানে উল্লিখিত মৌলিক অধিকার নিম্নরূপ :
১. আইনের দৃষ্টিতে সমতা : বাংলাদেশ সংবিধান মতে, সকল নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান এবং আইনের সমান আশ্রয় লাভের অধিকারী।
অর্থাৎ এর অর্থ দাঁড়ায় সকল ব্যক্তিই আইন দ্বারা সমানভাবে নিয়ন্ত্রিত হবে, কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়।
সমপর্যায়ভুক্ত সকল ব্যক্তির প্রতি আইন সমান আচরণ করবে এবং সকলকে সমানভাবে রক্ষা করবে। তবে ব্যক্তির কার্য ও দায়িত্বের ভিন্নতা থাকতে এবং বিভিন্ন শ্রেণির কর্তব্য ও অধিকার বিভিন্ন হতে পারে ।
২. বৈষম্যহীনতা : সংবিধানে ২৮নং অনুচ্ছেদে বলা হয়, ধর্ম, বর্ণ, গোষ্ঠী, নারী-পুরুষভেদে বা জন্মস্থানের কারণে কোনো নাগরিকের প্রতি রাষ্ট্র বৈষম্য প্রদর্শন করবে না।
জনগণের কোনো বিনোদন বা বিশ্রামের স্থানে প্রবেশের কিংবা কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তির বিষয়ে কোনো নাগরিককে কোনোরূপ অক্ষমতা, বাধ্যবাধকতা, বাধা বা শর্তের অধীন করা যাবে না।
তবে রাষ্ট্র নারী, শিশু বা অনগ্রসর অংশের অগ্রগতির জন্য বিশেষ বিধান প্রণয়ন করতে পারবে। রাষ্ট্র ও গণজীবনের সর্বস্তরে নারী ও পুরুষ সমান অধিকার লাভ করবে।
৩. জীবন ও ব্যক্তি স্বাধীনতার অধিকার : মূল সংবিধানে বলা হয়, বাংলাদেশে অবস্থানরত সকল ব্যক্তি কেবল আইনানুসারে নিয়ন্ত্রিত হবে এবং আইন অনুযায়ী ব্যতীত কারও জীবন, স্বাধীনতা, সুনাম বা সম্পত্তির ক্ষতিসাধন করবে না।
আবার আইনানুগ ব্যবস্থা ব্যতীত জীবন ও ব্যক্তি স্বাধীনতা হতে কোনো ব্যক্তিকে বঞ্চিত করা যাবে না। ৩১ ও ৩২ এ দুই অনুচ্ছেদে আইনের প্রাধান্য স্বীকার করা হয়েছে।
আইনের অনুমোদন ব্যতীত শাসন কর্তৃপক্ষ স্বেচ্ছাচারমূলকভাবে কারও জীবন, সম্পত্তি বা স্বাধীনতার ওপর হস্তক্ষেপ করতে পারবে না।
৪. গ্রেফতার ও আটক সম্পর্কে রক্ষাকবচ : মূল সংবিধানের ৩৩ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়, কোনো গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিকে গ্রেফতারের পর উপযুক্ত কারণ দর্শানো ব্যতীত বিনা বিচারে আটক রাখা যাবে না।
কোনো ব্যক্তিকে তার মনোনীত আইনজীবীর সাথে পরামর্শ ও তার দ্বারা আত্মপক্ষ সমর্থনের অধিকার হতে বঞ্চিত করা যাবে না।
গ্রেফতারকৃত ও প্রহরায় | আটক প্রত্যেক ব্যক্তিকে গ্রেফতারের চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে আদালতে হাজির করতে হবে এবং আদালতের আদেশ ব্যতীত উক্ত সময়ের অধিককাল আটক রাখা যাবে না। তবে কোনো- বিদেশি শত্রুর পক্ষে উপরিউক্ত কোনো কিছুই প্রযোজ্য হবে না।
৫. বাকস্বাধীনতা : মূল সংবিধানে প্রদত্ত মৌলিক অধিকারের মধ্যে বাকস্বাধীনতা অন্যতম। এখানে বলা হয়, সকলের চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতা থাকবে।
বাকস্বাধীনতা ও ভাব প্রকাশের স্বাধীনতা এবং সংবাদপত্রের স্বাধীনতাও স্বীকার করা হয়েছে। কিন্তু রাষ্ট্রের নিরাপত্তা, বিদেশি রাষ্ট্রের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক, জনশৃঙ্খলা, শালীনতা বা নৈতিকতার স্বার্থে কিংবা আদালত অবমাননা, মানহানি বা অপরাধ সংঘটনে প্ররোচনা সম্পর্কে রাষ্ট্র আইনের দ্বারা যুক্তিসঙ্গত বাধানিষেধ আরোপ করতে পারবে।
৬. সমাবেশ ও সংগঠনের স্বাধীনতা : সংবিধানে মৌলিক অধিকার হিসেবে সমাবেশ ও সংগঠনের স্বাধীনতাকে স্বীকার করে নেওয়া হয়।
বলা হয়, জনশৃঙ্খলা যা জনস্বাস্থ্যের স্বার্থে আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তিসঙ্গত বাধানিষেধ সাপেক্ষে সমিতি বা সংগঠন করার অধিকার প্রত্যেক নাগরিকের থাকবে।
তবে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সাধনের নিমিত্তে সম্প্রদায়িক ভিত্তিতে কোনো সংগঠন করা যাবে না। এছাড়া জনশৃঙ্খলা যা জনস্বাস্থ্যের স্বার্থে শান্তিপূর্ণভাবে ও নিরস্ত্র অবস্থায় সমবেত হবার এবং জনসভা ও শোভাযাত্রায় যোগদান করার অধিকার প্রত্যেক নাগরিকের থাকবে।
৭. ধর্মীয় স্বাধীনতা : ১৯৭২ সালে প্রণীত সংবিধানে মৌলিক অধিকার হিসেবে ধর্মীয় স্বাধীনতাকে স্বীকার করে নেওয়া হয়।
বলা হয়, আইন-শৃঙ্খলা ও নৈতিকতা সাপেক্ষে প্রত্যেক নাগরিকের যেকোনো ধর্ম অবলম্বন, পালন বা প্রচারের অধিকার রয়েছে এবং প্রত্যেক ধর্মীয় সম্প্রদায়ের নিজস্ব ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান স্থাপন, রক্ষা ও ব্যবস্থাপনার অধিকার রয়েছে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যোগদানকারী কোনো ছাত্রকে নিজস্ব ধর্ম ব্যতীত অন্য কোনো ধর্মীয় শিক্ষা গ্রহণ বা ধর্মীয় অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের জন্য বাধ্য করা যাবে না।
৮. চলাফেরার স্বাধীনতা : ১৯৭২ সালে প্রণীত মৌলিক অধিকারসমূহের মধ্যে চলাফেরার স্বাধীনতা উল্লেখযোগ্য। বলা হয়, সকল নাগরিক বাংলাদেশের সর্বত্র অবাধে চলাফেরা করতে পারবে।
নাগরিকরা যেকোনো স্থানে বসবাস করতে পারবে এবং বাংলাদেশ ত্যাগ ও এদেশের পুনঃপ্রবেশ করতে পারবে। অবশ্য এক্ষেত্রে কিছুটা ব্যতিক্রমও আছে কারণ সরকার ইচ্ছা করলে জনস্বার্থে চলাফেরার স্বাধীনতার ওপর যুক্তিসঙ্গত বাধানিষেধ আরোপ করতে পারবে।
৯. চাকরির সমান সুযোগ ও বৃত্তির অধিকার : প্রজাতন্ত্রে কর্মে নিয়োগ বা পদ লাভের ক্ষেত্রে সকল নাগরিকের জন্য সুযোগের সমতা থাকবে।
ধর্ম, বর্ণ, গোষ্ঠী, নারী-পুরুষ বা জন্মস্থানের কারণে নাগরিকদের প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োগের সুযোগের সমতার ক্ষেত্রে বৈষম্য প্রদর্শন করা যাবে না।
আরও বলা হয় যোগ্যতাসম্পন্ন প্রত্যেক নাগিরক আইনের দ্বারা আরোপিত বাধানিষেধ সাপেক্ষে যেকোনো আইনসঙ্গত পেশা বা বৃত্তি গ্রহণ করতে এবং যেকোনো আইনসংগত কারবার বা ব্যবসায় পরিচালনা করতে পারবে।
১০. সম্পত্তির অধিকার : আইনের দ্বারা আরোপিত বাধানিষেধ সাপেক্ষে প্রত্যেক নাগরিক সম্পত্তি অর্জন, ধারণ, হস্তান্তর ও অন্যভাবে বিধিব্যবস্থা করতে পারবে।
আইনের নির্দেশ ব্যতীত কোনো নাগরিককে সম্পত্তির অধিকার থেকে বঞ্চিত রাখা যাবে না। অর্থাৎ প্রত্যেক নাগরিক সম্পত্তি অর্জন ও ধারণ করার ক্ষেত্রে সমান সুযোগ লাভের অধিকারী বলে মৌলিক অধিকারে উল্লেখ করা হয় ।
১১. সাংবিধানিক প্রতিকারের অধিকার : সংবিধানে প্রদত্ত অধিকারসমূহের পরিপন্থি কার্যাবলির প্রতিকারের বিধান সংবিধানে দেওয়া হয়েছে।
কোনো নাগরিকের মৌলিক অধিকার ক্ষুণ্ণ হলে তিনি সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে অথবা ক্ষমতাপ্রাপ্ত যেকোনো আদালতে মামলা দায়ের করতে পারবেন।
এছাড়া রাষ্ট্র মৌলিক অধিকারের সাথে অসামঞ্জস্য কোনো কোনো আইন প্রণয়ন করবে না। এরূপ আইনের অসামঞ্জস্য অংশ বাতিল বলে গণ্য হবে। মৌলিক অধিকারের সাথে অসামঞ্জস্য কোনো আইনকে আদালত প্রয়োগ করবে না ।
১২. বিচার ও দ্বন্দ্ব সম্পর্কে বিধান ১৯৭২ এর সংবিধানে বলা হয়েছে, যে সময়ে কোনো কার্য সংঘটিত হয়েছে সেই সময়ে প্রচলিত আইনের বিধান লঙ্ঘন করা না হলে ঐ কার্যের জন্য কাউকে দোষী সাব্যস্ত করা যাবে না।
একই অপরাধের জন্য কোন ব্যক্তিকে একাধিক বার অভিযুক্ত করা যাবে না। ফৌজদারি অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত প্রত্যেক ব্যক্তি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ আদালতে দ্রুত ও প্রকাশ্য বিচার লাভের অধিকারী।
কোনো অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত কোনো ব্যক্তিকে নিজের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিতে বাধ্য করা যাবে না। কোনো ব্যক্তিকে যন্ত্রণা দেওয়া যাবে না বা নিষ্ঠুর বা অমানুষিক দণ্ড দেওয়া যাবে না ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, সংবিধানে নাগরিকদের মৌলিক অধিকার লিপিবদ্ধ থাকার গুরুত্ব অপরিসীম। মৌলিক অধিকার ব্যক্তি স্বাধীনতা রক্ষাকবচ।
এর দ্বারা রাষ্ট্রের আচরণ নিয়ন্ত্রিত হয়। বাংলাদেশের ১৯৭২ সালের সংবিধানে উল্লিখিত মৌলিক অধিকারগুলো মূলত সামাজিক ও রাজনৈতিক।
সোভিয়েত ইউনিয়নের মতো আমাদের সংবিধানে অর্থনৈতিক অধিকারের গুরুত্ব ও নিশ্চয়তা দেওয়া হয়নি। আবার মার্কিন সংবিধানে উল্লিখিত মৌলিক অধিকারের মতো আমাদের সংবিধানে উল্লিখিত মৌলিক অধিকারগুলো সম্পূর্ণ অবাধ ও নিরঙ্কুশ নয়।
তথাপি ১৯৭২ সালের সংবিধানে যেসব মৌলিক অধিকারসমূহ সন্নিবেশিত করা হয়েছিল জনগণের নাগরিক স্বাধীনতা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছিল একথা বলা যায়।
আর্টিকেলের শেষকথাঃ ১৯৭২ সালের সংবিধানের মৌলিক অধিকার সমূহ আলোচনা কর
আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম ১৯৭২ সালের সংবিধানের মৌলিক অধিকার সমূহ আলোচনা কর । যদি তোমাদের আজকের এই পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো।