১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের গুরুত্ব ও তাৎপর্য ব্যাখ্যা কর
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের গুরুত্ব ও তাৎপর্য ব্যাখ্যা কর জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের তাৎপর্য ব্যাখ্যা কর ।
১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের গুরুত্ব ও তাৎপর্য ব্যাখ্যা কর |
১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের গুরুত্ব ও তাৎপর্য ব্যাখ্যা কর
- ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের গুরুত্ব বর্ণনা কর।
- অথবা, স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ভাষা আন্দোলনের গুরুত্ব আলোচনা কর।
- অথবা, ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের গুরুত্ব ও তাৎপর্য আলোচনা কর ।
- অথবা, ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের তাৎপর্য ব্যাখ্যা কর ।
- অথবা, ভাষা আন্দোলনের গুরুত্ব/তাৎপর্য ব্যাখ্যা কর।
- অথবা, বাংলাদেশের অভ্যুদয়ে ভাষা আন্দোলনের গুরুত্ব/ভূমিকা/অবদান ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : ভূমিকা : ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে আমাদের বাঙালি সংস্কৃতি টিকে আছে। এ আন্দোলনের মাধ্যমে আমাদের বাঙালি জাতিসত্তা বিদ্যমান রয়েছে। পশ্চিমা শাসকগোষ্ঠী পূর্ব বাংলার ভাষা ও সংস্কৃতিকে সমূলে ধ্বংস করার গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। তাই ১৯৪৭ সালে শুরু হওয়া ভাষা আন্দোলন ১৯৫২ সালে চূড়ান্ত পরিণতি লাভ করে।
নিচে ভাষা আন্দোলনের গুরুত্ব ও তাৎপর্য বর্ণনা করা হলো :
১. বাঙালি জাতীয়তাবোধ সৃষ্টি : মনের ভাব প্রকাশের মাধ্যম হচ্ছে ভাষা। পূর্ব পাকিস্তানের সেই মাতৃভাষার উপর আঘাত হানে পশ্চিম পাকিস্তানিরা। ভাষার উপর আঘাতের প্রতিক্রিয়ায় পূর্ব বাংলায় আন্দোলনের জোয়ার উঠে। এ আন্দোলন পূর্ব বাংলার মানুষের মধ্যে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে বাঙালি জাতীয়তাবোধের সৃষ্টি করে। সকলে মিলে এ জাতিসত্তার মধ্যে পরিচিত হয়ে উঠে ।
২. বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা : পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী চেয়েছিল উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রচলন করতে । এতে পূর্ব বাংলার সকল অফিস, আদালত, শিক্ষা পদ্ধতি উর্দুতে চালু হতো। তাহলে বাংলা ভাষা একদিন নিশ্চিহ্ন হয়ে যেত। বাঙালিদের প্রবল আন্দোলনের মুখে এ হীন চক্রান্ত ব্যর্থ হয়। বাংলা রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা লাভ করে। ১৯৫৬ সালের সংবিধানে পাকিস্তান সরকার বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতি দেয়।
৩. রাজনৈতিক বিবর্তন : বাংলাদেশের রাজনৈতিক বিবর্তনে ভাষা আন্দোলনের গুরুত্ব অপরিসীম। বাঙালিরা স্বাধিকারের ব্যাপারে সচেতন ছিল না। ভাষা আন্দোলকে কেন্দ্র করে বাঙালিদের মধ্যে রাজনৈতিক সচেতনতা জাগ্রত হয়। বাংলাদেশের রাজনৈতিক বিবর্তনে ভাষা আন্দোলন ছিল প্রথম পদক্ষেপ।
৪) যুক্তফ্রন্টের জয়লাভ : ভাষা আন্দোলন দমন করার নামে পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী বাঙালিদের উপর যে অত্যাচার চালায় তা রাজনৈতিক কর্মসূচির অন্তর্ভুক্ত করে ১৯৫৪ সালের | সাধারণ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় যুক্তফ্রন্ট মুসলিম লীগের ভরাডুবি ঘটিয়ে জয়লাভ করতে সক্ষম হয়। যুক্তফ্রন্টের জয়লাভ দ্বারা মুসলিম লীগের পতন ঘটে এবং পূর্ব বাংলার বাঙালিরা স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটায় ।
৫. ষড়যন্ত্র প্রতিরোধ : পাকিস্তান সৃষ্টির পর থেকেই পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী বাঙালিদের শাসন ও শোষণ করার ষড়যন্ত্র করছিল। ভাষাকে কেন্দ্র করে যে ষড়যন্ত্রের জাল তারা বুনেছিল তা প্রতিরোধ করতে সক্ষম হওয়ায় পরবর্তীকালে তাদের অন্যান্য ষড়যন্ত্র প্রতিহত করা বাঙালিদের পক্ষে সম্ভব হয়।
৬. সাম্প্রদায়িকতার অবসান : দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে পাকিস্তান গঠিত হওয়ার পর পূর্ব বাংলায় সাম্প্রদায়িকতা সৃষ্টি হয়। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন বাঙালিদের মধ্য থেকে সাম্প্রদায়িকতার দূর করে সকল ধর্ম-বর্ণের মধ্যে একটা প্রীতির বন্ধন সৃষ্টি করে ।
৭. শহিদ মিনার স্থাপন ও শহিদ দিবস পালন : ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে যারা শহিদ হন তাদের স্মরণে বাংলার শহর-বন্দর ও গ্রাম-গঞ্জে অসংখ্য শহিদ মিনার স্থাপন করা হয়। UNESCO ১৯৯৯ সালে, ১৯৫২ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারি যারা বাংলা ভাষার জন্য শহিদ হয়েছেন তাদের স্মরণে ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করে, যা একমাত্র ভাষা আন্দোলনেরই প্রতিফলন। এ দিনটিকে বাঙালি জাতি সম্মানের সাথে পালন করে এবং শহিদ মিনারে ফুল দিয়ে শহিদদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে ।
৮. জাতীয় চেতনার উন্মেষ : বাঙালি জাতি ভাষা আন্দোলনের পর বুঝতে পারে পশ্চিম পাকিস্তানিরা ধর্মের নামে পূর্ব বাংলা শোষণ করছে। ৫২ এর ভাষা আন্দোলনের পর প্রতিটি নির্বাচনে পূর্ব বাংলার প্রার্থিগণের নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জিত হয়েছে। পূর্ব বাংলার মানুষের মধ্যে জাতীয় ঐক্যের প্রভাব পরিলক্ষিত হতে থাকে। তাই মানুষের মধ্যে জাতীয় চেতনা উন্মেষ হয় ।
৯] দাবি আদায়ে শিক্ষা : ১৯৫২ এর ভাষা আন্দোলনের মতো এতো দুর্বার আন্দোলন এর আগে কখনো হয়নি। শান্তি পূর্ণভাবে কীভাবে দাবি আদায় করা যায় তা এ আন্দোলনের মাধ্যমে বাঙালিরা শিখে নেয়। এ আন্দোলনের সাফল্যের ফলে ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা আন্দোলনে বাঙালিরা শ্রেণি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষ ঝাঁপিয়ে পড়ে। ফলে পৃথিবীর মানচিত্রে বাংলাদেশ নামে একটি দেশের অভ্যুদয় ঘটে।
১০) মধ্যবিত্ত বাঙালিদের রাজনীতিতে প্রবেশ : ১৯৫২ সালের পূর্বে ভারতবর্ষে উচ্চবিত্ত ও জমিদার শ্রেণি রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করতো। কিন্তু ভাষা আন্দোলনে মধ্যবিত্ত বাঙালিরা সক্রিয় অংশগ্রহণ করে। পাকিস্তান সৃষ্টির পর উচ্চবিত্ত পরিবারের সদস্যরা ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়। এতে মধ্যবিত্তদের সাথে তাদের স্বার্থের দ্বন্দ্ব প্রকট আকার ধারণ করে। ভাষা আন্দোলনে তাই মধ্যবিত্তদের সক্রিয় অংশগ্রহণ লক্ষ করা যায়। এরপর থেকে পূর্ব বাংলায় মধ্যবিত্তদের রাজনীতিতে শক্ত অবস্থান তৈরি হয় ।
১১. ছাত্রদের গুরুত্ব বৃদ্ধি : ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে ছাত্ররা অসামান্য অবদান রাখে। পৃথিবীর ইতিহাসে দেখা যায় সকল আন্দোলনই ছাত্রদের অক্লান্ত চেষ্টায় সাফল্যমণ্ডিত হয়। ভাষা আন্দোলনের পর থেকেই ছাত্রনেতাদের গুরুত্ব বৃদ্ধি পেতে থাকে। এরপর গঠিত হয় ছাত্রলীগ। ছাত্র নেতারাই পরবর্তীতে বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে সাড়া দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে বিজয় ছিনিয়ে আনে ।
১২. সংগ্রামী মনোভাব সৃষ্টি : ভাষা আন্দোলনের সময় থেকেই বাংলার রাজপথ রক্তে রঞ্জিত হয়। এরপর থেকেই এদেশের মানুষ প্রতিবাদী হয়ে উঠে। পাকিস্তানি শাসক চক্রের শোষণের সোচ্চার হয়ে উঠে পূর্ব বাংলার কোটি জনতা। পরবর্তীতে এ সংগ্রামী মনোভাব বাংলাদেশকে স্বাধীনতা এনে- দিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ।
১৩. একুশের চেতনা : বাংলাদেশের মানুষ একুশে ফেব্রুয়ারির আত্মত্যাগ থেকে যে চেতনা লাভ করেছে তা জাতির সকল আন্দোলনে প্রেরণা হিসেবে কাজ করছে। সমগ্র জাতির একতার বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছে একুশের ঘটনাকে কেন্দ্র করে। ঐক্যবদ্ধ জাতি দেশপ্রেমের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়েছে তার চেতনা থেকে। বাংলাদেশের জনগণের স্বজাত্যবোধের স্ফুরণের উৎস ২১। ২১ হচ্ছে দেশ ও জাতির নতুন ইতিহাসের জন্মদাতা।
১৪. বীর মুক্তিযোদ্ধা সৃষ্টি : ভাষা আন্দোলনকারীরাই মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে বাংলাদেশকে এনে দিয়েছে স্বাধীনতার লাল সূর্য। এক্ষেত্রে ভাষা আন্দোলনকারীদের সাথে ছাত্র, যুবসমাজ, কৃষক-শ্রমিকসহ দেশের সর্বস্তরের জনসাধারণের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহযোগিতার মাধ্যমে বাংলাদেশ পাকিস্তানি হানাদান বাহিনীদের সাথে যুদ্ধ করে স্বাধীনতা অর্জন করে। এরাই পরবর্তীতে বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সম্মানিত হয় ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, পূর্ব বাংলার জাতীয় ভাষা আন্দোলনের গুরুত্ব অপরিসীম। এ আন্দোলনের মাধ্যমে বাঙালি হৃদয়ে সংগ্রামী চেতনার বীজ বপিত হয়। ক্রমে তা গজিয়ে শাখা-প্রশাখার সৃষ্টি হয়ে চূড়ান্ত পরিণতি লাভ করে ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধে ।
আর্টিকেলের শেষকথাঃ ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের গুরুত্ব ও তাৎপর্য ব্যাখ্যা কর
আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের গুরুত্ব ও তাৎপর্য ব্যাখ্যা কর । যদি তোমাদের আজকের এই পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো।