১৯৪৭ সালে ভারত পাকিস্তান রাষ্ট্রের উদ্ভবের প্রেক্ষাপট লিখ
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো ১৯৪৭ সালে ভারত পাকিস্তান রাষ্ট্রের উদ্ভবের প্রেক্ষাপট লিখ জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের ১৯৪৭ সালে ভারত পাকিস্তান রাষ্ট্রের উদ্ভবের প্রেক্ষাপট লিখ ।
১৯৪৭ সালে ভারত পাকিস্তান রাষ্ট্রের উদ্ভবের প্রেক্ষাপট লিখ |
১৯৪৭ সালে ভারত পাকিস্তান রাষ্ট্রের উদ্ভবের প্রেক্ষাপট লিখ
- অথবা, ১৯৪৭ সালের ভারত ও পাকিস্তান সৃষ্টির গুরুত্ব নিরূপণ কর
উত্তর : ব্রিটিশ ভারতের রাজনৈতিক ইতিহাসে যে কয়টি ঘটনা মোটামুটিভাবে আলোচিত হয়েছিল তার মধ্যে ১৯৪৭ সালের অখণ্ড স্বাধীন বাংলা রাষ্ট্র গঠনের উদ্যোগ অন্যতম । ঐতিহাসিক লাহোর প্রস্তাবের মাধ্যমে বাংলার জনগণ স্বাধীন সার্বভৌম বাংলা রাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখতে শুরু করে। যার ফলে দেখা যায় যে, বাঙালিরা মুসলিম লীগকে বাংলার যথাযোগ্য প্রতিনিধিত্বকারী দল হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। ১৯৪৫ সালের নির্বাচনে তা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়। কিন্তু ১৯৪৫ সালে মুসলিম লীগের দলীয় সম্মেলনে এক ঘৃণ্যতম ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে লাহোর প্রস্তাবকে সংশোধন করা হয়। ফলে বাংলার স্বাধীনতায় ভাটা পড়ে। কিন্তু তারপরেও বাংলার জনগণ ১৯৪৭ সালে অখণ্ড স্বাধীন বাংলা গঠনের জন্য উদ্যোগ নেন।
→ অখণ্ড স্বাধীন রাষ্ট্র গঠনের পটভূমি : বাঙালি নেতৃবৃন্দ চেয়েছিল হিন্দু মুসলমান সবাইকে নিয়ে এক অখণ্ড স্বাধীন বাংলা গঠন করতে। তাদের এই উদ্যোগের পটভূমি নিম্নে কয়েকটি ধাপে আলোচনা করা হলো :
১. এটলির ঘোষণা : একদিকে মুসলিম লীগের পাকিস্তান দাবি অন্যদিকে কংগ্রেসের অখণ্ড ভারত দাবি, অন্তর্বর্তী সরকারের অচলাবস্থা এবং হিন্দু ও মুসলমানদের সম্পর্কের অবনতির কারণে প্রশাসনিক ক্ষেত্রে প্রচণ্ড সমস্যার সৃষ্টি হয়। এতে করে ব্রিটেনের শ্রমিক দল ভারতে স্বাধীনতা প্রদানকেই সমস্যা সমাধানের একমাত্র উপায় বলে মনে করেন। এরূপ অবস্থায় ১৯৪৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী এটলি ঘোষণা দেন যে, তারা ১৯৪৮ সালের জুন মাসের মধ্যেই ভারতীয়দের হাতে শাসনক্ষমতা হস্তান্তর করবেন। যদি ১৯৪৮ সালের জুন মাসের মধ্যে সংবিধান পরিষদ সংবিধান প্রণয়নে ব্যর্থ হয়, তাহলে তারা যেকোনো রাজনৈতিক দলের হাতে ক্ষমতা অর্পণ করবেন।
২. মাউন্ট ব্যাটেনের ঘোষণা : ১৯৪৭ সালের মার্চ মাসে লর্ড মাউন্ট ব্যাটেন ভারতের বড় লাট নিযুক্ত হন। তিনি কংগ্রেস ও মুসলিম লীগের নেতাদের সাথে শাসনতান্ত্রিক সমস্যার সমাধান সম্পর্কে আলাপ আলোচনা শুরু করেন। তিনি সাম্প্রদায়িকতার - ভিত্তিতে ভারত বিভক্ত করে দুটি স্বাধীন রাষ্ট্র গঠনের কথা ঘোষণা করেন। অর্থাৎ স্বাধীন ভারত রাষ্ট্রের সাথে নতুন পাকিস্তান রাষ্ট্রের কথাও তিনি ঘোষণা করেন। কেননা তিনি অনুধাবন করতে পারেন যে ভারতের বিভক্তি ছাড়া সাম্প্রদায়িক সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়।
৩: কংগ্রেস নেতাদের মনোভাব : মাউন্ট ব্যাটেনের পরিকল্পনার সাথে কংগ্রেসের জাতীয়তাবাদী নেতারা অনেকেই একমত পোষণ করেন। কেননা তারাও অনুধাবন করতে পারেন যে, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা-হাঙ্গামা থেকে দেশকে রক্ষা করতে হলে ভারত বিভাগের বিকল্প নেই । তবে কংগ্রেসের নেতারা “দ্বি-জাতি নীতি” গ্রহণ করতে অসম্মত হন। তারা দাবি করেন যে, যে সকল অঞ্চলে মুসলিম লীগের প্রভাব বিদ্যমান কেবলমাত্র সে সকল অঞ্চল পাকিস্তানের সাথে যুক্ত হবে। আর যে সকল অঞ্চলে মুসলিম লীগের প্রভাবে দোদুল্যমান সেসব অঞ্চলে গণভোটের আয়োজন করতে হবে। তবে কংগ্রেস নেতাগণ মুসলিম লীগ ও পাকিস্তানকে জব্দ করার জন্য বাংলা ও পাঞ্জাব বিভক্ত করার জন্য এক নতুন প্রস্তাব দেন এবং বাংলা বিভক্ত করার জন্য ব্যাপক তোড়জোড় শুরু হয়।
৪. বাঙালি নেতাদের মনোভাব : বাংলাকে বিভক্ত করার জন্য যখন কংগ্রেস ব্যাপক প্রচারণা শুরু করেন ঠিক সে সময়ে বাঙালি নেতা হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও আবুল কাশেম ধর্মের ভিত্তিতে বাংলাকে বিভক্ত করার বিরোধিতা করেন। তারা হিন্দু ও মুসলমানদেরকে ঐকবদ্ধভাবে স্বাধীন সার্বভৌম অখণ্ড বাংলার দাবিকে বাস্তবায়ন করার জন্য উদাত্ত আহ্বান জানান। এসময় হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ঘোষণা দেন যে, “বাংলার হিন্দু ও মুসলমান জনগণ সমবেত প্রচেষ্টায় বাংলাকে একটি মহৎ দেশ ও বাঙালিদেরকে একটি গুরুত্বপূর্ণ মহান জাতি হিসেবে বিশ্বের দরবারে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম।” ১৯৪৭ সালের ২৭ এপ্রিল সোহরাওয়ার্দী দিল্লির এক সাংবাদিক সম্মেলনে স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলা রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব পেশ করেন। তার এ প্রস্ত াবে বাংলার অসম্প্রদায়িক কংগ্রেস নেতা শরৎচন্দ্র বসু, কিরণ সরকার রায়সহ অনেকে সম্মতি জানান। বাঙালি নেতাগণ মনে করেন যে বাংলার হিন্দু ও মুসলমান সম্প্রদায় নিজেদের ঐতিহ্য ও স্বকীয় বৈশিষ্ট্য ধরে রেখে একটি প্রগতিশীল ও সমৃদ্ধশালী, অখণ্ড বাংলা রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হবে তাদের পরিকল্পিত স্বাধীন বাংলার স্বপ্নকে সামনে রেখে বাংলার মুসলিম লীগ ও কংগ্রেস নেতাদের সমন্বয়ে স্বাধীন বাংলার ভবিষ্যৎ সংবিধান প্রণয়ন উদ্দেশ্যে একটি যৌথ কমিটি গঠন করা হয়।
আর্টিকেলের শেষকথাঃ ১৯৪৭ সালে ভারত পাকিস্তান রাষ্ট্রের উদ্ভবের প্রেক্ষাপট লিখ
আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম ১৯৪৭ সালে ভারত পাকিস্তান রাষ্ট্রের উদ্ভবের প্রেক্ষাপট লিখ টি। যদি তোমাদের আজকের এই পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো।