শরণার্থী কাকে বলে | শরণার্থী বলতে কী বোঝায় ব্যাখ্যা কর
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো শরণার্থী কাকে বলে | শরণার্থী বলতে কী বোঝায় ব্যাখ্যা কর জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের শরণার্থী বলতে কী বুঝ | শরণার্থী বলতে কি বুঝায় ।
শরণার্থী কাকে বলে শরণার্থী বলতে কী বোঝায় ব্যাখ্যা কর |
শরণার্থী কাকে বলে | শরণার্থী বলতে কী বোঝায় ব্যাখ্যা কর
উত্তর : ভূমিকা : বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সামগ্রিক কর্মকাণ্ডের একটি বড় অধ্যায় ছিল শরণার্থী ইস্যু। মুক্তিযুদ্ধের সময় জীবন বাঁচানোর তাগিদে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ ভারতে আশ্রয় নেয়।
শরণার্থীরা এদেশের মুক্তিযুদ্ধের গতিপ্রকৃতি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ করেছে। ভারতসহ বিশ্বের ছোট-বড় বিভিন্ন রাষ্ট্রে, জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংগঠন কোনো না কোনোভাবে জড়িয়ে পড়ায় শরণার্থী ইস্যুটি রূপান্তরিত হয়।
→ শরণার্থীর পরিচয় : সাধারণভাবে যারা নিজেদের নিরাপত্তার জন্য নিজ দেশ ছেড়ে অন্য দেশে গিয়ে বসবাস করতে বাধ্য হয় তাদের শরণার্থী বলা হয়।
বিপজ্জনক রাজনৈতিক, ধর্মীয় বা সামরিক সংঘাতজনিত পরিস্থিতিতে ভীত হয়ে স্বীয় ভূমি বা দেশ ত্যাগ করে অন্য জায়গায় বা দেশে নিরাপত্তার জন্য আশ্রয়প্রার্থী জনগণই শরণার্থী হিসেবে পরিচিত।
কোনো নির্দিষ্ট জাতি বা রাজনৈতিক গোষ্ঠীর বিপক্ষে সাম্প্রদায়িক বিভেদ নীতি তাদের স্বাভাবিক জীবনযাপনে এবং স্বাধীনভাবে চলাফেরার ক্ষেত্রে হুমকি সৃষ্টি করে। অনেক ক্ষেত্রে আশ্রয়ের নিশ্চয়তা ছাড়াই তাদেরকে দেশত্যাগ করতে হয় এবং নতুন জায়গায় সামর্থ্যানুযায়ী নিজ নিজ জীবন পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করতে হয়।
Encyclopedia Britannica-য় উল্লিখিত জাতিসংঘ শরণার্থী বিষয়ক হাইমিশনার অফিস (UNHCR)-এর ১৯৫১ সালের সংবিধি অনুযায়ী “জাতিগত, ধর্মীয় বা বিশেষ রাজনৈতিক মতাদর্শ ইত্যাদি কারণে যখন কোনো জনগোষ্ঠীর উপর আক্রমণ চালানো হয়, হত্যা করা হয় তখন আক্রান্ত জনগোষ্ঠী নিজ জন্মভূমিতে আর নিজেদের নিরাপদ বোধ করে না।
তারা সীমান্ত অতিক্রম করে অন্যান্য রাষ্ট্রে আশ্রয় গ্রহণ করে থাকে এবং বাস্তবে জীবন-ঝুঁকির কারণে তারা নিজ দেশে ফিরে আসতেও কোনোভাবে সম্মত হয় না। এদেরকে শরণার্থী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।” সে হিসেবে ১৯৭১ সালে ভারতে আশ্রয় নেওয়া বাঙালি জনগোষ্ঠীকে শরণার্থী বলা হয়।
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ ও শরণার্থী : ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ অপারেশন সার্চলাইটের আওতায় পাকিস্তানি আওতায় পাকিস্তানি সেনাবাহিনী প্রাথমিকভাবে ঢাকা শহর ও গুরুত্বপূর্ণ জেলা শহরে আক্রমণ চালালে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ও তাদের স্থানীয় দোসরদের হাত থেকে জীবন ও সম্ভ্রম বাঁচানোর জন্য ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষে সর্বস্তরের বাঙালি ২৬ মার্চ থেকে প্রথমে গ্রামে এবং তারপর সীমান্ত পেরিয়ে প্রতিবেশী ভারতে আশ্রয় গ্রহণ করে । আর এরাই শরণার্থী নামে অভিহিত ।
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে শরণার্থীর সংখ্যা : এক তথ্য থেকে জানা যায়, ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ও তাদের স্থানীয় দোসরদের নৃশংসতার হাত থেকে বাঁচার জন্য প্রায় এক কোটি লোক বাংলাদেশ থেকে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে আশ্রয় নেয় এবং এরাই শরণার্থী নামে পরিচিত।
শরণার্থীদের প্রাথমিক চাপ পড়ে সীমান্ত-সংলগ্ন পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা, আসাম ও মেঘালয় রাজ্যে। তবে সর্বাধিক শরণার্থী। আশ্রয় নেয় পশ্চিমবঙ্গ ও ত্রিপুরায়।
'বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের দলিলপত্র-৮ম খণ্ডে দেখা যায়, পশ্চিবঙ্গে ২৭,০৭,৯৪৭ জন, ত্রিপুরায় ৩,৮১,৩৭৩ জন, আসামে ৮১,৮০০ জন ও মেঘালয়ে ১,৮৬,০৫ জন শরণার্থী আশ্রয় নেয়।
এছাড়া ‘আনন্দবাজার' পত্রিকায় প্রকাশিত এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ১৯৭১ সালের জুন মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত শরণার্থীর সংখ্যা হচ্ছে ৪০,৬২,৪৭৮ এবং এর মধ্যে ১৫,৫৯,১৪৪ জন গাছতলায় আশ্রয় নেয়। এসব শরণার্থীর অনেকেই রোগশোকে, আবার অনেকে খাদ্যের অভাবে মৃত্যুবরণ করে ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, প্রায় এক কোটি শরণার্থী ভারতে যে কেবল আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে উদ্বেগজনক অবস্থা সৃষ্টি করেছে তা নয়, বরং জাতীয় উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করেছে।
তবে প্রবাসী বাঙালি, জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা যদি শরণার্থীদের সাহায্যে এগিয়ে না আসত তবে ভারতের পক্ষে এককভাবে এ ভার বহন করা সম্ভব হতো না এবং মৃতের সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পেত ।
আর্টিকেলের শেষকথাঃ শরণার্থী বলতে কী বুঝ | শরণার্থী বলতে কি বুঝায়
আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম শরণার্থী কাকে বলে | শরণার্থী বলতে কী বোঝায় ব্যাখ্যা কর । যদি তোমাদের আজকের এই পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো।