অভিন্ন বাংলার পরিপ্রেক্ষিতে তৎকালীন পূর্ববঙ্গের স্বকীয় সত্তার আলোচনা কর
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো অভিন্ন বাংলার পরিপ্রেক্ষিতে তৎকালীন পূর্ববঙ্গের স্বকীয় সত্তার আলোচনা কর জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের অবিভক্ত বাংলার প্রেক্ষিতে তৎকালীন পূর্ববঙ্গের স্বকীয় সত্তার পরিচয় দাও ।
অভিন্ন বাংলার পরিপ্রেক্ষিতে তৎকালীন পূর্ববঙ্গের স্বকীয় সত্তার আলোচনা কর |
অভিন্ন বাংলার পরিপ্রেক্ষিতে তৎকালীন পূর্ববঙ্গের স্বকীয় সত্তার আলোচনা কর
অথবা, অবিভক্ত বাংলার প্রেক্ষিতে তৎকালীন পূর্ববঙ্গের স্বকীয় সত্তার পরিচয় দাও ৷
অথবা, অখণ্ড বাংলার প্রেক্ষিতে তৎকালীন পূর্ববঙ্গের স্বকীয় সত্তার পরিচয় দাও ।
উত্তর : ভূমিকা : ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট মধ্যরাতে পাকিস্তানের জন্ম হয় এবং ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত বাংলা প্রদেশকে দ্বিখণ্ডিত করা হয়। এ দ্বিখণ্ডিত প্রদেশের পূর্বাংশ। ‘পূর্ব পাকিস্তান' নামে পরিচিত হয়। পূর্ব পাকিস্তানের সর্বত্র মুসলমানেরা আজানের ধ্বনি দিয়ে এ নতুন জাতি ও রাষ্ট্রের জন্মকে স্বাগত জানিয়েছিল। চল্লিশের দশকের একজন তরুণ মুসলিম জাতীয়তাবাদী রাজনীতিবিদ তাঁর দিনলিপিতে উল্লেখ করেছেন যে, ঢাকা শহরের সকল মুসলমান অধ্যুষিত এলাকার অধিবাসীরা সারা দিনরাত স্বাধীনতা দিবস উদযাপনের জন্য তোরণ নির্মাণ এবং সাজসজ্জা প্রভৃতির প্রস্তুতিতে ব্যস্ত ছিল সরকারি ও বেসরকারি ভবনসমূহ আলোকসজ্জিত করা হয়েছিল এবং জ্বালানো হয়েছিল আতশবাজি। জনগণের আনন্দোল্লাসে মুখরিত ছিল পথঘাট এবং তাদের কেউ কেউ ট্রাকে কেউ বা হাতিতে চড়ে আনন্দ মিছিলে যোগ দিয়েছিল। স্টেটস্ম্যান পত্রিকার ভাষ্য অনুযায়ী, এ দিনের উল্লেখযোগ্য ঘটনার মধ্যে ছিল হিন্দু-মুসলমানদের একটি সম্মিলিত মিছিল, যা ভিক্টোরিয়া পার্কে এসে জামায়েত হয়েছিল সেখানে প্রধান প্রধান দলের নেতৃবৃন্দ ভাষণ দিয়েছিলেন।
অভিন্ন বাংলার পরিপ্রেক্ষিতে তৎকালীন পূর্ববঙ্গের স্বকীয় সত্তা : ব্রিটিশ শাসনামলে অর্থাৎ তৎকালীন অভিন্ন বাংলায় পূর্ববঙ্গের অবস্থা কেমন ছিল তা নিচে বর্ণনা করা হলো :
১. বর্ণ প্রথার অনুপস্থিতি : ভারতের অন্যত্র অস্পৃশ্যদের প্রতি যে ঘৃণা আছে, বাংলায় তা কোনো দিনই ছিল না। বাংলায় | ছোঁয়াছুয়ির ব্যবধান ছিল বটে কিন্তু অন্তরের গভীর থেকে যে ঘৃণা তফসিলিদের প্রতি ভারতের অন্যত্র আছে, যা বাংলায় নেই। যে কারণে বাংলায় অসবর্ণ বিবাহ অতি সহজেই হতে পারে ।
২. শিক্ষার অনুপস্থিতি : ব্রিটিশ বিদ্বেষের ফলে (বাংলার) মুসলমানরা ইংরেজি শিক্ষা গ্রহণ করেননি বলে যে কথা প্রচলিত আছে, যা সত্য নয়। কারণ তাঁরা আরবি ফারসিতেও শিক্ষিত ছিলেন না। যে অশিক্ষিত ছিল, সে আরবি ফারসিতেও অশিক্ষিত ছিল। কারণ নিম্নবর্ণের স্পৃশ্য-অস্পৃশ্য বৌদ্ধ-হিন্দু-মুসলিম বংশধর বলে শিক্ষার Tradition বাঙালি মুসলমানের ছিল না।
৩. অবহেলা ও ঘৃণার পাত্র : আর্যরা পূর্ববঙ্গকে ঘৃণা করেছে, পাল ও সেনেরা একে পছন্দ করেনি, মোগল সুবেদাররা এখানকার প্রাচুর্য দেখেছে বটে কিন্তু একে নরকের বেশি ভাবতে পারেনি। শ্রী চৈতন্যদেব (১৪৮৫-১৯৩৩ খ্রি) প্রেমের বাণী নিয়ে এসেছিলেন, নিজ সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে তিনি ঐক্য চাইলেন। জন্মসূত্রে পূর্ববঙ্গের সঙ্গে তাঁর একটা যোগ ছিল । শ্রী চৈতন্যদেবের পিতামহ উপেন্দ্র মিশ্রের আদি নিবাস ছিল সিলেটে।
৪. আদিম গৌত্রিক বিশ্বাস : আদিম গৌত্রিক বিশ্বাসের ফলেই জৈন ধর্ম এখানে টেকেনি। বৌদ্ধধর্ম হয়েছিল তান্ত্রিকতায় ও অন্য স্থানিক আদি ও আদিম বিশ্বাস-সংস্কার-ধারণার প্রভাব বিকৃত। ব্রাহ্মণ্য মত পেয়েছিল রূপান্তর এবং তা আজো পঞ্চোপাসক (বহু দেবতার পূজক) হিন্দু সমাজে রয়েছে স্থিত। এমনকি ইসলাম ও স্থানীয় অলীক-অলৌকিক- লৌকিক বিশ্বাসে- সংস্কারে-ধারণায় ও আচরণে হয়েছিল আচ্ছন্ন ।
৫. বস্তুবাদী জাতি : আবার এও সত্য যে বাঙালিরা মুখে = আদর্শবাদী ও বৈরাগ্যধর্মী কিন্তু প্রবৃত্তিতে তারা একান্তভাবে অধ্যাত্মবাদীর ভাষায় বস্তুবাদী, গণভাষায় জীবনবাদী, নীতিবিদের ভাষায় ভোগবাদী। হিন্দুরা গয়া-গঙ্গা-গুরু-গরুর পূজক। কাবা- আবে জমজম-পীর-দরগাহর ভক্ত মুসলমান। আবার সবারই তুক-তাক, ঝাড়-ফুঁক, বাণ-উচ্চাটন, তাবিজ-কবচ, মন্ত্র-মাদুলী, পাথুরে কিংবা ধাতব আংটি, মন্ত্রপুত ধুলি-পানি-তাগাই পুঁজি- পাথেয়, তাদের সম্বল ও নির্ভর তাদের আশাপূর্তিরও সংকট- সমস্যা-বিপদ মুক্তির জন্যে ।
৬. অর্থ সম্পদের প্রাচুর্য : ব্রিটিশ শুধু অর্থ আদায় ও স্বদেশে প্রেরণ করতেই উৎসাহী ছিল। কিন্তু সদর দফতরও দালান করেনি কখনো। ফলে ব্রিটিশ ভারতে যত দালান ছিল সাতচল্লিশ বছরে কেবল বৃহত্তর ঢাকা শহরেই তার চেয়ে বেশি ইটের ঘর হয়েছে। তিন হাজার বছরের দরিদ্ররা আজ অর্থ-সম্পদের, ব্যবসায়-বাণিজ্যের শাসনক্ষমতার মালিক ও নিয়ন্তা হয়েছে। এতো অর্থসম্পদ ইতোপূর্বে এ শ্রেণির লোকেরা কখনো কল্পনাও করতে পারেনি লক্ষ টাকার উপরে স্বপ্ন দেখাও সম্ভব হয়নি চাটাইয়ে ঘুমিয়ে।
৭. নতুন সমাজ কাঠামো তৈরি : নবাবি আমলে দেশে একটি নব্য অভিজাত শ্রেণি গড়ে উঠেছিল। এ শ্রেণির সদস্য ছিল উচ্চবর্ণের হিন্দুরা। নবাবি আমলের আমলাতন্ত্রে, ভূমি নিয়ন্ত্রণে এবং ব্যবসা-বাণিজ্যে মুসলমান। বিশেষ করে স্থানীয় মুসলমানের অংশ ছিল নামে মাত্র। ইংরেজ রাজত্ব প্রতিষ্ঠার ফলে নতুন রাষ্ট্র কাঠামোর নবাবি আভিজাত্যের অস্তিত্ব অসঙ্গতিপূর্ণ হয়ে পড়ে। অতএব ঔপনিবেশিক রাষ্ট্র ব্যবস্থাধীনে নবাবি আভিজাত্যের পতন ঘটে। এর অবশ্যম্ভাবী প্রভাব পড়ে দেশের শিক্ষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে। ফলে গড়ে উঠে নতুন সমাজব্যবস্থা
৮. দরিদ্র বস্তি : ১৯৪৭ সালে যখন বাংলাকে বিভক্ত করা হলো এবং কলকাতা ছাড়া পূর্ববঙ্গকে মনে হয়েছিল এক বিশাল জনসংখ্যা অধ্যুষিত এক বৃহৎ দরিদ বস্তি। এ বিভাজন সংঘটিত হলো বিশৃঙ্খলা ও রক্তপাতের মধ্য দিয়ে। বিভাজন নাটকের একজন মূল নায়কও বিভাজনকে বর্ণনা করেছিলেন “ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ প্রশাসনিক অপারেশন” হিসেবে। পাকিস্তানের জন্মলগ্ন থেকে তার ভাবমূর্তি ছিল অস্বচ্ছ এবং অনিশ্চিত, সেই সাথে বিচ্ছিন্ন রাষ্ট্রের অভিমুখী।
৯. জনসংখ্যার বন্টন : ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট কলমের এক আঁচড়ের মাধ্যমে সৃষ্ট দেশটির অবস্থার দ্রুত অবনতি ঘটে যখন নানা সমস্যা “বিস্ময়কর গতিতে ভিড় করতে থাকে” এ ভূখণ্ডে, যেখানকার জনসংখ্যা ৪ কোটি ২০ লক্ষ, যাদের মধ্যে ২,৯৪,৮১,০০৯ জন মুসলমান, ১,১৭,৩৬,০২৯ জন হিন্দু, ৫৬,৮৮২ জন খ্রিস্টান এবং ১,১৭৯ জন শিখ। ঐ সময়ে মাইল প্রতি জনসংখ্যার ঘনত্ব ছিল ৭৭৫ জন, যা ছিল বিশ্বে সর্বোচ্চ ঘনবসতি। কেবল ৫০০ মাইল পাকা রাস্তা এবং অসংখ্য আঁকাবাঁকা নদ-নদী ও খাল এ ভূখণ্ডের ব্যবসা-বাণিজ্যের পথ তৈরি করেছিল।
১০. শিল্পকারখানা : পূর্ব বাংলা উত্তরাধিকারসূত্রে লাভ করেছিল ভারতের ৪০০ সুতাকলের মধ্যে মাত্র ১০টি, ১০৬টি পাটকলের একটিও না, লোহা ও ইস্পাত কারখানা, কাগজ কল, রাসায়নিক শিল্প, কয়লা খনি কিংবা পানি বিদ্যুৎ প্রকল্প একটিও না। কেবল ছিল ৪৯টি অস্থায়ী (ঋতুভিত্তিক) পাটের গাঁইট বাঁধার কারখানা (সমগ্র দেশের এতদসংক্রান্ত কর্মকাণ্ডের ২০ শতাংশ মাত্র), ৫৮টি ক্ষুদ্র চাউলকল, ৩টি চিনির কল ও ১টি সিমেন্ট ফ্যাক্টরি।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, কংগ্রেস ও মুসলিম লীগের জন্ম বাংলায় কিন্তু বাঙালির হীনম্মন্যতা এবং কিছুটা উদারতার জন্যে দুটোই হলো হাতছাড়া। এগুলোর নেতৃত্ব ও সাফল্যের কৃতিত্ব পেল অবাঙালিরা। অথচ পাকিস্তান এল বাঙালির আন্দোলনে স্বাধীনতা এবং এলো ১৯৪২ সনের বাঙালির আগস্ট আন্দোলন প্রভৃতির প্রভাবে। ১৯৪৬ সালের কলকাতার দাঙ্গা, তার প্রতিক্রিয়ায় বিহার-নোয়াখালীর হাঙ্গামাই স্বাধীনতা ও পাকিস্তান প্রাপ্তি ত্বরান্বিত করেছিল। আজকে যে সব অঞ্চল পাকিস্তানভুক্ত, সেদিন বাংলাদেশ ছাড়া আর কোথাও মুসলিম লীগ প্রভাব বিস্তার করতে পারেনি অথচ মুসলিম লীগের মাধ্যমে অর্জিত পাকিস্তানের মা-বাবা আজ সেসব অঞ্চলের লোকই। কেবল কি তাই? বাঙালির দেশপ্রেম ও রাষ্ট্রিক আনুগত্যেও সেসব মোড়ল-মুরুব্বীদের সন্দেহের অন্ত নেই। এর চেয়ে বড় বিড়ম্বনা কল্পনাতীত।
আর্টিকেলের শেষকথাঃ অবিভক্ত বাংলার প্রেক্ষিতে তৎকালীন পূর্ববঙ্গের স্বকীয় সত্তার পরিচয় দাও
আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম অবিভক্ত বাংলার প্রেক্ষিতে তৎকালীন পূর্ববঙ্গের স্বকীয় সত্তার পরিচয় দাও টি। যদি তোমাদের আজকের এই পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো।