শিক্ষা ও সামাজিক ক্ষেত্রে পূর্ব পাকিস্তানের বৈষম্য সমূহ লিখ
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো শিক্ষা ও সামাজিক ক্ষেত্রে পূর্ব পাকিস্তানের বৈষম্য সমূহ লিখ জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের শিক্ষা ও সামাজিক ক্ষেত্রে পূর্ব পাকিস্তানের বৈষম্য সমূহ লিখ ।
শিক্ষা ও সামাজিক ক্ষেত্রে পূর্ব পাকিস্তানের বৈষম্য সমূহ লিখ |
শিক্ষা ও সামাজিক ক্ষেত্রে পূর্ব পাকিস্তানের বৈষম্য সমূহ লিখ
- শিক্ষা ও সামাজিক ক্ষেত্রে পূর্ব পাকিস্তানের বৈষম্যসমূহ লিখ
- শিক্ষা ও সামাজিক ক্ষেত্রে বৈষম্য কেমন ছিল?
উত্তর : ভূমিকা : ভারত উপমহাদেশে ব্রিটিশ শাসনের পরিসমাপ্তির পর বর্তমান বাংলাদেশ দ্বি-জাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে তথা কথিত স্বাধীনতার নামে পাকিস্তানের সাথে অন্তর্ভুক্ত হয়। পাকিস্তান আন্দোলনে পূর্ব পাকিস্তানের দান অপরিসীম। বস্তুত এই অঞ্চলের মানুষ অর্থনৈতিক সামাজিক ও রাজনৈতিক মুক্তির প্রত্যাশায় পাকিস্তান আন্দোলনে শামিল হয়েছিল। কিন্তু কিছু দিনের মধ্যেই আশা ভঙ্গ হয়। যে মুক্তির আশায় তারা সংগ্রামে অংশগ্রহণ করেছিল কিন্তু ঠিক তার উল্টোটা ঘটল। পশ্চিম পাকিস্ত ানি শাসকগোষ্ঠী পূর্ব বাংলার মানুষের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করতে শুরু করে। তারা বাঙালিদেরকে সর্বদিক দিয়ে বৈষম্যের মুখোমুখি করে। বিশেষ করে শিক্ষা ও সামাজিক বৈষম্য প্রকট হয়ে ওঠে। নিম্নে প্রশ্নালোকে আলোচনা উপস্থাপন করা হলো :
১. সামাজিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে বৈষম্য : পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকদের চক্রান্তে পূর্ব পাকিস্তানিরা সামাজিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে বিশাল বৈষম্যের স্বীকার হতো। রাস্তাঘাট স্কুল-কলেজ, অফিস আদালত, হাসপাতাল, ডাকঘর টেলিফোন, টেলিগ্রাফ বিদ্যুৎ প্রভৃতি সামাজিক প্রতিষ্ঠান ও উপকরণে বাঙালিদের সাথে বিরাট বৈষম্যের সূচনা করা হয় ।
২. সামাজিক সেবার বৈষম্য : পশ্চিমাদের সেবার লক্ষ্যে সমাজ কল্যাণমূলক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছিল পশ্চিম পাকিস্তানে। যুবসমাজের উন্নতির জন্য পূর্বপাকিস্তানে কোনো ব্যবস্থা গৃহীত হয়নি। ফলে সার্বিকভাবে পূর্ব পাকিস্তানের তুলনায় পশ্চিম পাকিস্তানিদের জীবন যাত্রার মান অনেক উন্নত ছিল। তৎকালীন পাকিস্তানের জনসংখ্যা হিসেবে সেবার মান দেখলেই বুঝা যায় পূর্ব পাকিস্তানের সাথে বৈষম্যমূলক সামাজিক আচরণ কেমন ছিল । পশ্চিম পাকিস্তানের জনসংখ্যা ছিল ৫ কোটি ৫০ লক্ষ আর পূর্ব পাকিস্তানে জনসংখ্যা ছিল ৭ কোটি ৫০ লক্ষ। পশ্চিম পাকিস্তানিদের জন্য ডাক্তারসংখ্যা ছিল ১২ হাজার ৪০০ জন আর পূর্ব পাকিস্তানের জনসংখ্যার জন্য ডাক্তার ছিল ৭ হাজার ৬০০ জন। পশ্চিম পাকিস্তানের রোগীর জন্য বেড ছিল ২৬০০০। আর পূর্ব পাকিস্তানের রোগীর জন্য বেড সংখ্যা ছিল ৬০০০। পশ্চিম পাকিস্তানের জন্য পল্লি স্বাস্থ্যকেন্দ্র ছিল ৩২৫টি আর পূর্ব পাকিস্তানের জন্য পল্লি স্বাস্থ্যকেন্দ্র ছিল ৮৮টি। তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানে শহর সমাজ উন্নয়ন কেন্দ্র ছিল ৮১টি আর পূর্ব পাকিস্তানের জন্য শহর সমাজ উন্নয়ন কেন্দ্র ছিল ৫২টি। আর এখান থেকে বুঝা যায় যে পূর্ব পাকিস্তানের জনসংখ্যা সেই সময় বেশি থাকার পরও সামাজিক সুবিধাগুলো তাদের থেকে অনেক কম করা হয় যা প্রকাশ্য সামাজিক বৈষম্যের নিদর্শন।
৩. কৃষি ক্ষেত্রে বৈষম্য : বাংলাদেশ কৃষিনির্ভর দেশ। | কৃষকদের ঋণ দেওয়া হয় সমবায় সমিতির মাধ্যমে এবং কৃষি ব্যাংকের মাধ্যমে। ১৯৪৭-১৯৪৮ সালে সমবায় সমিতির মাধ্যমে বাংলাদেশে বিশলক্ষ টাকা ঋণ দেয়া হয়েছিল। ১৯৫৭ সালে সে ঋণ কমিয়ে মাত্র দেড়লক্ষ টাকা নামিয়ে দেয়া হয়। ১৯৬০ সাল পর্যন্ত পশ্চিম পাকিস্তানে কৃষিতে ঋণ দেওয়া হয়েছে একুশ কোটি পঞ্চাশ লক্ষ টাকা কিন্তু বাংলাদেশকে দেওয়া হয় মাত্র এককোটি বত্রিশ লক্ষ টাকার কিছু বেশি মাত্র। এমনিভাবে বাংলাদেশের প্রধান আয়ের উৎস কৃষিতে বৈষম্য সৃষ্টি করা হয়।
৪. শিক্ষা ক্ষেত্রে বৈষম্য : অর্থনৈতিক বৈষম্যের অন্যদিক শিক্ষা ক্ষেত্রেও বাঙালিরা বৈষম্যের স্বীকার হয়। শিক্ষা জাতির মেধা, বুদ্ধি, ও মানসিকতা বিকাশের একমাত্র পন্থা। সেখানে সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা সরকারের প্রধান দায়িত্ব। কিন্তু তৎকালীন পাকিস্তান সরকার পূর্ব পাকিস্তানের জনগণকে এ | সুযোগ দিতে শুধু ব্যর্থই হননি অশিক্ষিত, মূর্খ করে রাখার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। এরই ধারাবাহিকতায় পাকিস্তান সরকারে | বিভিন্ন বৈষম্যমূলক নীতি বাস্তবায়ন করে। তাদের লক্ষ্য ছিল বাঙালিদের অশিক্ষিত করে রেখে তাদের ক্ষমতার মসনদকে পাকাপোক্ত করে রাখতে। আর অপরদিকে পশ্চিম পাকিস্তানিদের শিক্ষিত করে তোলার মাধ্যমে শাসক ও শোষক শ্রেণি গড়ে তোলা। তাদের ভয় ছিল বাঙালিরা শিক্ষিত হলে চাকরিসহ প্রশাসনের সর্বক্ষেত্রে এবং দেশ শাসনে অংশীদারিত্ব দাবি করবে। এজন্য পূর্ব পাকিস্তানের নিরক্ষতা দূরীকরণের লক্ষ্যে তেমন কোনো গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গৃহীত হয়নি। উপরন্তু এ অঞ্চলের শিক্ষার প্রসারতার গতিকে রুদ্ধ করে রাখার লক্ষ্যে নানা ছল-চাতুরির আশ্রয় গ্রহণ করা হয় ।
৫. শিক্ষাক্ষেত্রে পূর্ব বাংলার প্রতি বৈষম্যের ধরন : পশ্চিম পাকিস্তানে শিক্ষার প্রসার ঘটানোর জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছিল। পাকিস্তান সরকার তার হীন উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার লক্ষ্যে এ বৈষম্য তৈরি করে। ১৯৫৫-৫৬ থেকে ১৯৬৬- ৬৭ সাল পর্যন্ত পশ্চিম পাকিস্তানে শিক্ষাখাতে ২০৮৪.৪ মিলিয়ন রুপি বরাদ্দ হলেও পূর্ব পাকিস্তানে হয়েছিল মাত্র ৭৯৭.৬ মিলিয়ন রুপি অর্থাৎ এক-তৃতীয়াংশ মাত্র। শিক্ষাখাতে বরাদ্দের ক্ষেত্রে এরূপ | বৈষম্যমূলক নীতি অনুসরণ করার ফলে পূর্ব পাকিস্তানে শিক্ষা প্রসারে গতি ছিল অত্যন্ত শ্লথ। ফলে এখানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও শিক্ষিত লোকের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছিল তুলনামূলকভাবে অনেক কম ।
৬. বৈজ্ঞানিক গবেষণার ক্ষেত্রে বৈষম্য : বৈজ্ঞানিক গবেষণার ক্ষেত্রেও পূর্ব পাকিস্তানকে উৎসাহ দেওয়ার জন্য সরকার প্রকৃতপক্ষে কিছুই করেননি। এক্ষেত্রে সরকারি বরাদ্দকৃত অর্থের পরিমাণ দেখলেই বিষয়টি আমরা স্পষ্ট বুঝতে পারব। ১৯৫৪ সাল থেকে ১৯৬৪ সাল পর্যন্ত বৈজ্ঞানিক গবেষণার ক্ষেত্রে পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে বরাদ্দকৃত অর্থের ব্যয় ছিল যথাক্রমে ২০% ও ৮০%। এ ধরনের বৈষম্যের জন্য পূর্ব পাকিস্তানে গবেষণার ক্ষেত্রে তেমন উন্নতি হয়নি, যেমন পশ্চিম পাকিস্তানে হয়েছিল। পাকিস্তানের ১৬টি গবেষণা কেন্দ্রের ১৩টিই ছিল পশ্চিম পাকিস্তানে আবার ১৯৬৩ সাল থেকে ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত শিক্ষা দপ্তর কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত সর্বমোট ৩৫টি বৃত্তির মধ্যে পশ্চিম পাকিস্তানি ছাত্রদের ৩০টি বৃত্তি দেওয়া হয়েছিল এবং বাকি ৫টি পেয়েছিল বাঙালি ছাত্ররা।
৭. উচ্চ শিক্ষার অগ্রগতি রুদ্ধ : উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে বৈষম্যমূলক নীতির কারণে পূর্বাঞ্চলের ক্রমবর্ধমান অনগ্রসরতার চিত্র সমভাবে হতাশা সূচক। ১৯৪৭-৪৮ সালের পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ছিল পূর্ব পাকিস্তানে একটি এবং পশ্চিম পাকিস্তানে ২টি। ১৯৬১-৬২ সালে দু'অঞ্চলের বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা দাঁড়ায় যথাক্রমে পূর্ব পাকিস্তানে ৪টি এবং পশ্চিম পাকিস্তানে ৬টি। অথচ শিক্ষার্থীর ক্ষেত্রে দেখা যায়। ১৯৪৭-৪৮ সালে পূর্ব বাংলায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংখ্যা ছিল ১৬২০ জন এবং পশ্চিম পাকিস্তানে মাত্র ৫৪৬ জন। কিন্তু ১৯৬২-৬৩ সালে ছাত্রসংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে পাকিস্তানে ৯৪৬৪ জন পূর্ব বাংলার ছাত্র সংখ্যা বৃদ্ধি পেলেও পশ্চিম পাকিস্তানে ছাত্র সংখ্যা বৃদ্ধি হার ছিল তুলনামূলকভাবে অনেক কম।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, ১৯৪৭-৪৮ সাল থেকে পূর্ব পাকিস্তানে যে সামাজিক বৈষম্যের গতি চলতে থাকে এতে পূর্ব পাকিস্তান সার্বিক দিক দিয়ে অধপতনের দিকে চলে যায়। তারা ক্ষমতার লালসা সামলাতে না পেরে সারাজীবন বাঙালিদের দূরে সরিয়ে রাখার নীতি গ্রহণ করে। তারা মনে করতো বাঙালিদের ক্ষুধা, দরিদ্র, মূর্খ ও অশিক্ষিত করে রাখতে পারলে পূর্ব পাকিস্তানিরা কখনোই পাকিস্তানের ক্ষমতায় আসতে পারবে না। আর তাদের আজীবন ক্ষমতা ভোগ করা সহজ হবে। কিন্তু স্বাধীনচেতা বাঙালি তাদের বিরুদ্ধে বৈষম্য সহ্য করেনি, বরং শক্ত হাতে প্রতিরোধ করার চেষ্টা করেন এবং পরবর্তীতে সফল হন।
আর্টিকেলের শেষকথাঃ শিক্ষা ও সামাজিক ক্ষেত্রে পূর্ব পাকিস্তানের বৈষম্য সমূহ লিখ
আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম শিক্ষা ও সামাজিক ক্ষেত্রে পূর্ব পাকিস্তানের বৈষম্য সমূহ লিখ । যদি তোমাদের আজকের এই পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো।