সিফফিনের যুদ্ধের ইতিহাস। সিফফিনের যুদ্ধের কারণ ও ফলাফল
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো সিফফিনের যুদ্ধের ইতিহাস জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের সিফফিনের যুদ্ধের তাৎপর্য টি।
সিফফিনের যুদ্ধের ইতিহাস। সিফফিনের যুদ্ধের কারণ ও ফলাফল |
সিফফিনের যুদ্ধের ইতিহাস। সিফফিনের যুদ্ধের কারণ ও ফলাফল
উত্তর : ভূমিকা : চতুর্থ খলিফা হজরত আলী (রা.)-এর খেলাফতকালে তিনটি গৃহযুদ্ধ সংঘটিত হয়। এর মধ্যে সবচাইতে উল্লেখযোগ্য যুদ্ধ ছিল সিফফিনের যুদ্ধ। এ যুদ্ধ ইসলামের ইতিহাসে হজরত আলী (রা.) ও মুয়াবিয়ার মধ্যে সংঘটিত একটি গৃহযুদ্ধ। নিম্নে এ যুদ্ধ সম্পর্কে বর্ণনা করা হলো-
১. খলিফার অদূরদর্শিতা : খলিফা হজরত আলী (রা.) শাসনভার গ্রহণ করেই রাজ্যের শান্তি প্রতিষ্ঠা করে প্রথমে তিনি কুফা, বসরা ও সিরিয়া হতে উমাইয়া শাসনকর্তাদেরকে পদচ্যুত করে একটি অদূরদর্শিতার পরিচয় দেন। যার ফলে, আমির মুয়াবিয়া হজরত আলী (রা.)-এর বিরোধিতা করেন।
২. হজরত ওসমান হত্যার প্রতিশোধ না নেওয়া : হজরত আলী (রা.) হজরত ওসমান (রা.)-এর হত্যার প্রতিশোধ না নেওয়ার কারণে দেশব্যাপী বিদ্রোহে ছড়িয়ে পড়ে। ফলে মুয়াবিয়া এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে খলিফার বিরুদ্ধে বিদ্রোহী হয়ে ওঠে। | তিনি হজরত ওসমান (রা.)-এর রক্তমাখা জামা ও তাঁর স্ত্রীর কাটা আঙ্গুল প্রকাশ্যে দেখিয়ে জনগণকে আরো বিদ্রোহী করে তোলে ।
৩. হজরত আয়েশা (রা.)-এর বিরোধিতা : ওসমান হত্যার | বিচার না করায় হজরত আয়েশা (রা.) বিদ্রোহীদের সাথে যোগ দান করেন এবং ওসমান হত্যার প্রতিশোধের দাবিতে আন্দোলন গড়ে তোলেন । যার ফলে একটি গৃহযুদ্ধের সূচনা ঘটে 1
৪.তালহা ও যুবায়েরের বিরোধিতা : হজরত আলী (রা.) ও মুয়াবিয়ার মধ্যকার সংঘর্ষের অন্যতম আরো একটি কারণ হলো তালহা। ও যুবায়েরের বিরোধিতা। তারা যথাক্রমে কুফা ও বসরার শাসনকর্তার। পদ দাবি করে আলীর কাছে প্রস্তাব করে। কিন্তু হজরত আলী (রা.) তাদের প্রস্তাব নাকচ করেন। ফলে তারাও বিদ্রোহী হয়ে ওঠে।
→ সিফফিনের যুদ্ধের ঘটনা : ৬৫৭ খ্রিস্টাব্দের জুলাই মাসে হজরত আলী (রা.) ৫০ হাজার সৈন্যসহ সিরিয়া অভিমুখে রওয়ানা হন। এই সংবাদ শ্রবণ করে মুয়াবিয়া ৬০ হাজার সৈন্যসহ ইউফ্রেটিস নদীর পশ্চিম তীরে সিফফিন নামক স্থানে উপস্থিত হলেন। যুদ্ধক্ষেত্রে উপস্থিত হয়েও মুসলমানদের অনর্থক রক্তপাত এড়াবার জন্য হজরত আলী (রা.) মুয়াবিয়ার কাছে শান্তি প্রস্তাব নিয়ে একজন দূতকে পাঠান এবং ইসলামের স্বার্থেই তার বশ্যতা স্বীকার করার জন্য মুয়াবিয়াকে আহ্বান করেন। কিন্তু মুয়াবিয়া তা প্রত্যাখ্যান করেন। অতপর হজরত আলী (রা.) মুয়াবিয়াকে মল্লযুদ্ধে আহ্বান করেন। মুয়াবিয়া এতেও রাজি হলেন না। অবশেষে ৬৫৭ খ্রিস্টাব্দের ২৬ জুলাই যুদ্ধ শুরু হলো। যুদ্ধের দ্বিতীয় দিন মুয়াবিয়া হতাশ হয়ে পড়েন এবং সেনাপতি আমর বিন আস এর কূটকৌশলে বর্ণার মাথায় কুরআনের পাতা ঝুলিয়ে দিয়ে চিৎকার করেন, “এখানে আল্লাহর কিতাব, ইহা | আমাদের বিরোধ মিটিয়ে দেবে।” আমরের এ কূটকৌশল বুঝতে পেরেও খলিফা অনিচ্ছা সত্ত্বেও যুদ্ধ বন্ধ করতে রাজি হন। এভাবে আলী (রা.) একটি চূড়ান্ত বিজয় লাভে ব্যর্থ হলেন ।
অতপরঃ শান্তি আলোচনার জন্য দুমাতুল জান্দাল নামক স্থানে হজরত আলী (রা.)-এর পক্ষে আবু মুসা ও মুয়াবিয়ার পক্ষে আমর বিন আল আস তাদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী হজরত। আলী (রা.) এবং মুয়াবিয়াকে বাদ দিয়ে তৃতীয় কোন ব্যক্তিকে খলিফা নির্বাচনে প্রস্তাব ঠিক করলেন। কথা অনুযায়ী আবু মুসা সকল বিশ্বাসে আলীর পদচ্যুতি ঘোষণা করা মাত্র আমর মেনে নিলেন এবং মুয়াবিয়ার পদচ্যুতির পরিবর্তে তাকে আলীর স্থলাভিষিক্ত করার কথা ঘোষণা করেন।
→ সিফফিনের যুদ্ধের ফলাফল : নিম্নে সিফফিনের যুদ্ধের ফলাফল আলোচনা করা হলো :
১. মুসলমানদের ঐক্য বিনষ্ট : হজরত আলী (রা.) ও মুয়াবিয়ার মধ্যে সংঘর্ষের ফলে মুসলমানেদের মধ্যে দীর্ঘ দিনের ঐক্য ও সংহতি বিনষ্ট হয় এবং মুসলমানদের মধ্যে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন ছিন্ন হয়ে যায়। ফলে তারা বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে পড়ে।
২. হাশেমী ও উমাইয়া দ্বন্দ্ব : রাসূল (সা.)-এর জীবদ্দশায় হাশেমী ও উমাইয়াদের মধ্যে যে মধুর সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল তা সিফফিনের যুদ্ধের ফলে বিনষ্ট হয়ে যায়। এছাড়া তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব আরো প্রকট আকার ধারণ করে।
৩. খেলাফতের মর্যাদা ক্ষুণ্ণ : সিফফিনের যুদ্ধের ফলে খেলাফতের মর্যাদা একেবারেই ক্ষুণ্ণ হয়ে যায়। এই যুদ্ধের সন্ধি মোতাবেক হজরত আলী (রা.) মুয়াবিয়াকে সাম্রাজ্যের একটি অংশ ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়। ফলে খিলাফত ও খলিফার শ্রদ্ধা ও আনুগত্য থেকে খলিফা হজরত আলী (রা.) দূরে সরে আসে।
৪. বায়তুল মালের মর্যাদাহানি : হজরত আলী (রা.) ও মুয়াবিয়ার মধ্যে সংঘটিত যুদ্ধের ফলে মুয়াবিয়ার পরবর্তীতে খিলাফতের দায়িত্ব পালন করে। অর্থাৎ আলীর মৃত্যুর পর তিনি খিলাফতের দায়িত্ব গ্রহণ করে বায়তুল মালের অর্থ নিজ কাজে ব্যয় করতে থাকে । তাই বায়তুল মালের মর্যাদাহানি ঘটে
৫. কারবালার হত্যাকাণ্ড : হজরত আলী ও মুয়াবিয়ার মধ্যে সংঘটিত সিফফিনের যুদ্ধের ফলে পরবর্তীতে উমাইয়া শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয় এবং উমাইয়া শাসকগণের হাতে হজরত আলীর উত্তরাধিকারীরা শোচনীয়ভাবে পরাজয়বরণ করে। যা ইতিহাসে কারবালার হত্যাকাণ্ড নামে পরিচিত।
৬. রাজতন্ত্রের সূচনা : এতোদিন মুসলিম জাহানে গণতন্ত্রের বিকাশ ছিল। কিন্তু সিফফিনের যুদ্ধের ফলে হজরত আলী পরাজিত হয় এবং তাঁর মৃত্যুর পর মুয়াবিয়া খলিফার পদ গ্রহণ করে রাজতন্ত্র চালু করে।
৭. খারিজিদের উদ্ভব : হজরত আলী (রা.) ও মুয়াবিয়ার মধ্যে সংঘটিত সিফফিনের যুদ্ধের ফলে খারিজিদের উদ্ভব হয় এবং তারা হজরত আলী (রা.)-এর বিরোধিতা করে বিদ্রোহঘোষণা করে। সিফফিনের যুদ্ধে দুমাতুল জান্দালের চুক্তির বিরোধিতা করে যারা হজরত আলীর দল ত্যাগ করে তারাই ইতিহাসে খারিজি নামে পরিচিত।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, হজরত আলী (রা.) মুয়াবিয়ার মধ্যে সংঘটিত সিফফিনের যুদ্ধ ইতিহাসের একটি মোড় পরিবর্তনকারী ঘটনা। এই যুদ্ধের ফলে খিলাফত ও খলিফার উভয়ের মর্যাদা নষ্ট হয়ে যায়। এর ফলে হাশেমী শাসনের অবসানের পর উমাইয়া শাসন প্রতিষ্ঠা লাভ করে।
আর্টিকেলের শেষকথাঃ সিফফিনের যুদ্ধের তাৎপর্য
আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম সিফফিনের যুদ্ধের ইতিহাস টি। যদি তোমাদের আজকের এই পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো।
আসসালামু আলাইকুম। R K Rayhan সাহেবের শিক্ষাগত যোগ্যতা এবং পেশা সম্পর্কে জানতে চাই।