সামরিক শাসনের বৈশিষ্ট্য আলোচনা কর | সামরিক শাসনের ৪ টি বৈশিষ্ট্য

আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো সামরিক শাসনের বৈশিষ্ট্য আলোচনা কর | সামরিক শাসনের ৪ টি বৈশিষ্ট্য জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের সামরিক শাসনের বৈশিষ্ট্য আলোচনা কর | সামরিক শাসনের ৪ টি বৈশিষ্ট্য ।

সামরিক শাসনের বৈশিষ্ট্য আলোচনা কর  সামরিক শাসনের ৪ টি বৈশিষ্ট্য
সামরিক শাসনের বৈশিষ্ট্য আলোচনা কর  সামরিক শাসনের ৪ টি বৈশিষ্ট্য

সামরিক শাসনের বৈশিষ্ট্য আলোচনা কর | সামরিক শাসনের ৪ টি বৈশিষ্ট্য

  • সামরিক শাসনের সংজ্ঞা দাও । সামরিক শাসনের বৈশিষ্ট্যসমূহ উল্লেখ কর।
  • অথবা, সামরিক শাসনের বৈশিষ্ট্যসমূহ বর্ণনা কর । 
  • অথবা, সামরিক শাসন কি? সামরিক শাসনের তিনটি বৈশিষ্ট্য লিখ ।

উত্তর : ভূমিকা : পৃথিবীর প্রতিটি দেশে সামরিক বাহিনী দেশের অন্যান্য সকল প্রতিষ্ঠানের চেয়ে একটি শক্তিশালী সুসংগঠিত ও নিয়মতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান। সামরিক বাহিনীর দক্ষতা ও প্রশিক্ষণ, যোগ্যতা, পেশাদারিত্ব অন্যান্য প্রতিষ্ঠান থেকে উৎকৃষ্ট এবং প্রতিরক্ষাসংক্রান্ত দায়িত্ব পালন করায় সামরিক বাহিনী নিজেদেরকে অন্যান্য গোষ্ঠী ও শ্রেণি থেকে আলাদা ভাবতে শেখায়। সামরিক বাহিনী তাদের দক্ষতা, যোগ্যতা ও পেশাদারিত্বের কারণেই তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর নানা দুর্বলতার সুযোগে রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করে। বিগত শতকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বিশ্ব রাজনীতির গতি- প্রকৃতির প্রেক্ষাপটে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে সামরিক বাহিনীর ক্ষমতা দখলের প্রবণতা বৃদ্ধি পায় ।

সামরিক শাসনের সংজ্ঞা : সাধারণত বেসামরিক কার্যাবলি যখন সামরিক লোক দ্বারা পরিচালিত হয়, তখন তাকে সামরিক শাসন বলে। অর্থাৎ রাজনৈতিক ব্যবস্থায় যখন বেসামরিক লোকের পরিবর্তে সামরিক লোক আসে তখনই ঐ অবস্থাকে সামরিক শাসন বলে ।

নিম্নে সামরিক শাসনের প্রামাণ্য সংজ্ঞা প্রদান করা হলো :

সামরিক শাসন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ফাইনার (Finner) বলেন, “সামরিক বাহিনী যখন তার নিজস্ব নীতি বাস্তবায়নের জন্য বেসামরিক সরকারকে হটিয়ে রাজনৈতিক ক্ষমতা দখল করে তাকেই সামরিক শাসন বলে।”

Prof. Nazrul Islam বলেন, “সামরিক শাসন কতকগুলো Technique এর সমন্বয়ে যার মাধ্যমে সামরিক বাহিনীর Policy প্রকাশ পায়। এ সামরিক শাসন অবৈধতার ভিত্তিতে গড়ে উঠে । সামরিক শাসনের ক্ষেত্রে গতানুগতিক সাংবিধানিক কাঠামো শাসনকার্যে কোনো সহায়তা প্রদান করে না।”

অধ্যাপক এলান আর বল (A. R. Ball) বলেন, “সামরিক শাসন বলতে সামরিক বাহিনীর প্রত্যক্ষ নিয়ন্ত্রণ থেকে শুরু করে পরোক্ষ নিয়ন্ত্রণ বা সোজাসুজি ক্ষমতা করায়ত্ত করাকে বোঝায়।” 

→ সামরিক শাসনের বৈশিষ্ট্য : দীর্ঘস্থায়ী সামরিক শাসনের বৈশিষ্ট্যসমূহ নিম্নে আলোচনা করা হলো :

১. রাজনৈতিক শূন্যতা : সামরিক বাহিনীর রাজনীতিতে হস্তক্ষেপের কারণে রাজনৈতিক নেতৃত্বের শূন্যতা দেখা দেয়। দেশের চলমান রাজনৈতিক কার্যাবলি তার গতিশীলতা হারায়। উন্নয়নশীল দেশের রাজনীতিতে সামরিক বাহিনী হস্তক্ষেপ করলে বিভিন্ন রাজনৈতক দলের নেতৃবৃন্দের উপর দমনপীড়ন চালিয়ে তাদের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে চায়। এরূপ দমনপীড়নের ফলে নেতৃবৃন্দ গা ঢাকা দিলে রাজনৈতিক শূন্যতার সৃষ্টি হয়।

২. গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান ধ্বংস : সামরিক সরকার ক্ষমতা দখলের পর দেশে গণতন্ত্র ধ্বংস হয়। গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির মৃত্যু ঘটে। অপরের মতকে এখানে সহ্য করা হয় না। গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের কোনো প্রকার চর্চা থাকে না। দেশে স্বৈরতন্ত্রের পথ সুগম হয়। জোর যার রাজ্য তার এ নীতির প্রতিফলন ঘটে। ফলে দেশের সমস্যা জটিল থেকে আরো জটিলতর হয়।

৩. সংবিধান বাতিল অথবা স্থগিত : সামরিক শাসন জারি হলেই সে দেশের সংবিধান বাতিল অথবা স্থগিত করা হয়। আইনসভা ভেঙে দেয়া হয় । সংবাদপত্রের স্বাধীনতা খর্ব করা হয় ।

৪. মৌলিক অধিকার খর্ব : সামরিক শাসন জনগণের মৌলিক অধিকার খর্ব করে থাকে। নাগরিকের চিন্তার স্বাধীনতা মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা, সমাবেশের স্বাধীনতা ইত্যাদি খর্ব করা হয়।

৪. মৌলিক অধিকার খর্ব : সামরিক শাসন জনগণের মৌলিক অধিকার খর্ব করে থাকে। নাগরিকের চিন্তার স্বাধীনতা, মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা, সমাবেশের স্বাধীনতা ইত্যাদি খর্ব করা হয়।

৫. শিক্ষা ও সংস্কৃতি ধ্বংস : শিক্ষিত ও সংস্কৃতিমনা ব্যক্তিরাই সর্বপ্রথম দুর্নীতি ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে থাকে । কাজেই সামরিক সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করে প্রথমে বিভিন্ন কায়দায় শিক্ষা ও সংস্কৃতিকে ধ্বংস করতে সচেষ্ট হয়। বাংলাদেশের এরশাদ শাসনামলে এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ। আইয়ুব খান ক্ষমতার ক্রমে শিক্ষা সংকোচন নীতি চালু করেন।

৬. সামরিক বেসামরিক আমলাতন্ত্রের দ্বন্দ্ব : সামরিক আমলাদের কাজ সামরিক কাজ দেখা এবং বেসামরিক আমলারা প্রশাসনিক কার্যাবলি সম্পাদন করে। কিন্তু যখন সামরিক ব্যক্তিরা প্রশাসনে হস্তক্ষেপ করে তখন স্বাভাবিকভাবে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়।

৭. বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ক্ষুণ্ণ : তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলো বিচার বিভাগ Supreme Power Exercise করে। সামরিক শাসনামলে বিভিন্ন সামরিক আদালতে বিচার অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ক্ষুণ্ণ করা হয়। এতে সাধারণ মানুষ ন্যায়বিচার হতে বঞ্চিত হয়।

৮. জাতীয় সংহতির সংকট : জাতীয় সংহতির সংকট নিরসণের জন্য অনেকে সেনাবাহিনীকে সমর্থন করে কিন্তু বাস্তবে সেনাবাহিনী দীর্ঘস্থায়ী সংকট নিরসণে ব্যর্থ হয়। বরং সেনাবাহিনীর বিভিন্ন স্তরের মধ্যে অসংহতির সৃষ্টি হয়, যার ফলে বিভিন্ন দেশে সংঘটিত হয় অভ্যুত্থান পাল্টা অভ্যুত্থান ।

৯. রাজনৈতিক ব্যবস্থা বিপর্যস্ত করে : গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক ব্যবস্থার সবচেয়ে বড় শত্রু হচ্ছে সামরিক শাসন । তৃতীয় বিশ্বের অধিকাংশ দেশেই রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলার অজুহাত দেখিয়ে সামরিক শাসন জারি করা হয়। সামরিক ব্যবস্থায় অবাধ রাজনীতির সুযোগ থাকে না ।

১০. রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধকরণ : সামরিক বাহিনী ক্ষমতা দখলের পর দেশে সব ধরনের রাজনৈতিক কার্যক্রম তথা সভা, সমাবেশ, মিছিল মিটিং নিষিদ্ধ করা হয়। এর ফলে দেশে নেতৃত্বের সংকট সৃষ্টি হয়। গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির চর্চা ব্যাহত হয় ও সরকারের অবৈধ কার্যক্রমের কোনো সমালোচনা হয় না। ফলে দেশে দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতিতে ডুবে যায় ও জনগণও রাজনৈতিক শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হয়।

১১. সামাজিক ও রাজনৈতিক সন্ত্রাস : সামরিক হস্তক্ষেপ স্বাভাবিকভাবেই রাজনৈতিক ও সামজিক সন্ত্রাসকে বাড়িয়ে দিতে পারে। কারণ অসাংবিধানিক উপায়ে শাসন পরিচালনার ক্ষেত্রে সমগ্র জাতি একই সাংবিধানিক ধারায় পরিচালিত হয় না। সামরিক বাহিনী শাসন ক্ষমতা দখল করে সর্বপ্রথম রাষ্ট্রের প্রতিনিধিত্বশীল আইনসভা প্রণীত আইনের সমষ্টি তথা সংবিধানকে বাতিল করে দিয়ে নিয়ামাবলি প্রণয়ন করে।

১২. বৈদেশিক শক্তির প্রভাব লক্ষণীয় : সামরিক শাসনের ফলে তৃতীয় বিশ্বের রাষ্ট্রগুলোতে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বৈদেশিক শক্তির প্রভাব লক্ষণীয়। ফলে দেশের সার্বভৌমত্ব ক্ষুণ্ণ হয়। সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্রসমূহ দ্বারা প্রভাবিত অনেক সরকারই নিজ দেশের উন্নয়নের প্রভুদের ইচ্ছা বাস্তাবায়নের ওপর বেশি গুরুত্বারোপ করে।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, সামরিক শাসক রাজনৈতিক প্রক্রিয়া শুধু পদদলিতই করে না, বরং রাজনৈতিক এলিটদের অকর্মণ্য ও নির্জীব করে রাখে। রাষ্ট্রীয় জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে নিজেদের আধিপত্য ও কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে সামরিক শাসকরা অন্য সকল শ্রেণির মেধা ও বুদ্ধিমত্তাকে উপেক্ষা করে। আর তাই সামরিক শাসনের প্রবণতাও দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে এবং জনগণও ঘৃণা করছে।

আর্টিকেলের শেষকথাঃ সামরিক শাসনের বৈশিষ্ট্য আলোচনা কর | সামরিক শাসনের ৪ টি বৈশিষ্ট্য

আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম সামরিক শাসনের বৈশিষ্ট্য আলোচনা কর | সামরিক শাসনের ৪ টি বৈশিষ্ট্য । যদি তোমাদের আজকের এই পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো।

Next Post Previous Post
1 Comments
  • Anonymous
    Anonymous 20 February

    R k rayhan you are a very interesting person

Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ