তৎকালীন পূর্ববঙ্গ ও বর্তমান বাংলাদেশের সামাজিক কি কি পরিবর্তন লক্ষ কর
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো তৎকালীন পূর্ববঙ্গ ও বর্তমান বাংলাদেশের সামাজিক কি কি পরিবর্তন লক্ষ কর জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের তৎকালীন পূর্ববঙ্গ ও বর্তমান বাংলাদেশের সামাজিক কি কি পরিবর্তন লক্ষ কর ।
তৎকালীন পূর্ববঙ্গ ও বর্তমান বাংলাদেশের সামাজিক কি কি পরিবর্তন লক্ষ কর |
অভিন্ন বাংলার পরিপ্রেক্ষিতে তৎকালীন পূর্ববঙ্গ ও বর্তমান বাংলাদেশের সামাজিক কি কি পরিবর্তন লক্ষ কর
উত্তর : ভূমিকা : ‘সমাজ পরিবর্তনশীল' এটি সমাজের একটি অসাধারণ বৈশিষ্ট্য। পরিবর্তন বলতে বুঝায়, কোনো সমাজের কাঠামোগত ও দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন বিস্তার। সাধারণ অর্থে, পরিবর্তন হলে সামাজিক, রাজনৈতিক ও শিক্ষাগত, ধৰ্মীয় ইত্যাদি অনুষ্ঠানের মধ্যে সংঘটিত রদ বদল হওয়া। মানুষের সামাজিক পরিবর্তনকে বিশদভাবে জানতে হলে দুটি বিশেষ ধারা সম্পর্কে অবগত হতে হবে। শহর সমাজের সাথে গ্রাম সমাজের পরিবর্তন ধারা। একটি সমাজ তখন পরিবর্তন ঘটে যখন তার অর্থনীত বিকাশিত হয়। জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধি পায়। নিম্নে সামাজিক পরিবর্তন তৎকালীন অভিন্ন বাংলার পরিপ্রেক্ষিতে সংক্ষিপ্তভাবে আলোচনা করা হলো-
১. শহরমুখী মানুষ : সামাজিক পরিবর্তনের অন্যতম প্রধান মাধ্যম হলো মানুষের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন। তৎকালীন পশ্চিম- পাকিস্তান পূর্ব বাংলাকে অর্থনৈতিকভাবে দমিয়ে রাখার চেষ্টায় লিপ্ত ছিল। ফলে দারিদ্র্যের তাড়নায় মানুষ নিজে স্বনির্ভর হয়ে বসবাস করতে পারেনি। ফলে তারা বৃহৎ পরিবারে তথা যৌথ পরিবারে বসবাস করতো কিন্তু বর্তমান বাংলার মানুষ স্বনির্ভর হওয়ায় মানুষ | শহরমুখী হচ্ছে এবং একক পরিবারের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে ।
২. বিবাহের ক্ষেত্রে পাত্র-পাত্রীর মতামত : তৎকালীন অভিন্ন বাংলার ছেলেমেয়ে অত্যধিক বৈষম্যের শিকার হতো। এমনকি তাদের বিবাহের সময় তাদের মতামত গ্রহণও জরুরি মনে করা হতো না কিন্তু বর্তমান বাংলায় এর পরিবর্তন ঘটেছে। বিবাহের | সময় পাত্র-পাত্রীর মতামত গ্রহণযোগ্য ।
৩. শহরমুখী মানুষের ভীড় : তৎকালীন অভিন্ন বাংলার পূর্ব- বাংলার প্রতি বৈষম্যমূলক নীতির ফলে তেমন কোনো শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠেনি বিধায় গ্রামাঞ্চলের মানুষ শহরমুখী হয়নি। তারা কৃষি কাজের উপর নির্ভর করে অতিষ্ঠ জীবনযাপন করতো। কিন্তু বর্তমান বাংলার স্বকীয় সত্তার বিকাশ ঘটেছে। স্বাধীনতার পর বাংলায় প্রচুর কলকারখানা গড়ে উঠায় গ্রামের মানুষ শহরমুখী হচ্ছে। ফলে মানুষের জীবনযাত্রার মানও অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে ।
৪. শহরে ক্রমশ শিক্ষা ও সংস্কৃতির প্রসার : তৎকালীন পূর্ব বাংলায় দারিদ্র্যের করাল গ্রাসের কারণে বাংলার জনগণ তেমন শিক্ষা প্রভাব বিস্তার করতে পারেনি। পশ্চিম পাকিস্তানে বৈষম্য মূলক নীতির ফলে তেমন কোনো মানসম্মত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও গড়ে উঠেনি। গুটি কয়েক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছিল যেগুলো ছিল। অনুন্নত কিন্তু বর্তমান বাংলায় অনেক মানসম্মত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠায় শিক্ষায় বাংলাদেশের প্রচুর অগ্রগতি হয়েছে। ফলে শহরে ক্রমশ শিক্ষা সংস্কৃতির বিকাশ ঘটছে।
৫. গ্রামাঞ্চলের পরিবর্তন : শহরের সমাজের পরিবর্তন প্রক্রিয়ার ফলে কিছুটা পরিবর্তন গ্রামে পরিলক্ষিত হচ্ছে। তৎকালীন সময়ে বাংলার কৃষক তাদের কৃষিপণ্যের সঠিক মূল্য পেত না। ফলে তাদের জীবনে নেমে আসে দুর্দশা কিন্তু বর্তমান বাংলার কৃষকরা তাদের ন্যায্য মূল্য পাচ্ছে যার কারণে গ্রামগঞ্জের সমাজেও পরিবর্তন সাধিত হচ্ছে।
৬. শহরের সংস্কৃতির অনুপ্রবেশ : তৎকালীন পূর্ব বাংলার পত্র পত্রিকার ব্যবহার কম থাকায় গ্রামে আধুনিকতার ছোঁয়া যায়নি কিন্তু বর্তমান টেলিভিশনে পত্র-পত্রিকার প্রচলন বেশি হওয়ার শহরের সংস্কৃতি গ্রাম অঞ্চলেও বিস্তার লাভ করেছে ।
৭. সামাজিক প্রতিষ্ঠান : বর্তমানে বিভিন্ন সরকারি, আধা সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে পুরুষ ও মহিলারা পাশাপাশি কাজ করছে কিন্তু তৎকালীন সমাজে নারীদের কোনো অধিকার ছিল না। এখন পারিবারিক আদালত স্থাপিত হওয়ার ফলে মহিলাদের অধিকার কিছুটা নিশ্চিত হয়েছে। এছাড়া তারা পারিবারিক পরিকল্পনা হতেও সচেতন হচ্ছে। বাল্যবিবাহের হার কমে গেলেও বিবাহবিচ্ছেদের হার ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
৮. সামাজিক শ্রেণি বিভেদ : অভিন্ন বাংলায় আর্থিক সুরক্ষার ব্যাংক বিমা প্রতিষ্ঠান না থাকায় তেমন কোনো সামাজিক স্তর দেখা দেয়নি, কিন্তু স্বাধীনতা পরবর্তী বর্তমান ব্যাংক বিমা অন্যান্য নানাবিধ সুযোগ-সুবিধার কারণে দিন দিন উচ্চবিত্তের সংখ্যা বাড়ছে। উচ্চ বিত্তের লোকগুলো সাধারণত শহরে বসবাস করে। তাদের সন্তানাদি দেশের বাইরে থেকে পড়ালেখা করে এবং বিভিন্ন প্রাতিষ্ঠানিক কাজকর্ম করে থাকে। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ অনেকটা উন্নতির শিখরে পৌঁছে। স্বাধীনতার পূর্বে যে | বৈষম্য দেখা দিয়েছিল সেগুলো লোপ পেয়ে এদেশে বিরাট পরিবর্তন সাধিত হয়েছে সমাজে উচ্চবিত্ত ছাড়া মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত লোকদের নিয়ে আলোচনা করা হলো :
৯. মধ্যবিত্ত : এ শ্রেণির লোকগুলো সাধারণত গ্রামে ও শহরে বাস করে। তবে এদের মধ্যে অধিকাংশ লোকই গ্রামে বসবাস করে। মধ্যবিত্ত শ্রেণির লোকগুলো তাদের ব্যবসা বাণিজ্যের প্রসার ঘটিয়ে সুষ্ঠুভাবে ব্যবসা-বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে এবং দিন দিন উন্নতি করছে। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশে মধ্যবিত্ত শ্রেণির সংখ্যা বাড়ছে এবং সমাজ কাঠামোর প্রভূত উন্নতি ঘটছে।
১০. নিম্নবিত্ত : তৎকালীন সময় পূর্ব বাংলার অধিকাংশ নাগরিকই ছিল নিম্নবিত্তের। নিম্নবিত্ত তাদের বলা হয়, যারা দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে। সাধারণত যাদের জমি নেই। বাংলাদেশে বর্তমান সময়ে এটা অনেক হ্রাস পেয়েছে। বাংলাদেশে সুষ্ঠু সমাজব্যবস্থার প্রসার ঘটেছে। সমাজ কাঠামোর পরিবর্তন একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া যা সমাজকে সুন্দর ও রুচিশীল করে। আর উপরিউক্ত উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত সমাজেরই সৃষ্টি প্রক্রিয়ার পরিবর্তনশীল প্রক্রিয়া।
উপসংহার : পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে, তৎকালীন অভিন্ন বাংলা আর আজ বাংলাদেশ দুটির মধ্যে রয়েছে বিস্তার তফাৎ। সেই সময় সমাজব্যবস্থায় মানুষ সব ছিল বৈষম্যময়। আর বর্তমান সময়ে জনগণ তাদের অধিকার ভোগ করছে। তৎকালীন সমাজ বিচারে বর্তমান মানুষের জীবনধারার শুধু উন্নতিই ঘটেনি মানুষ সমাজের উঁচু স্তরে পৌঁছে গেছে।
আর্টিকেলের শেষকথাঃ তৎকালীন পূর্ববঙ্গ ও বর্তমান বাংলাদেশের সামাজিক কি কি পরিবর্তন লক্ষ কর
আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম তৎকালীন পূর্ববঙ্গ ও বর্তমান বাংলাদেশের সামাজিক কি কি পরিবর্তন লক্ষ কর টি। যদি তোমাদের আজকের এই পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো।