স্বাধীনতা অর্জনে ১৯৭০ সালের নির্বাচনে প্রভাব রেখেছিল
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো স্বাধীনতা অর্জনে ১৯৭০ সালের নির্বাচনে প্রভাব রেখেছিল জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের স্বাধীনতা অর্জনে ১৯৭০ সালের নির্বাচনে প্রভাব রেখেছিল ।
স্বাধীনতা অর্জনে ১৯৭০ সালের নির্বাচনে প্রভাব রেখেছিল |
স্বাধীনতা অর্জনে ১৯৭০ সালের নির্বাচনে প্রভাব রেখেছিল
- অথবা, স্বাধীনতা অর্জনে ১৯৭০ সালের নির্বাচনের গুরুত্ব আলোচনা কর ।
উত্তর : ভূমিকা : ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর এক সাগর রক্তের বিনিময়ে বাঙালি জাতি যে স্বাধীনতা অর্জন করে তার প্রথম সূত্রপাত ঘটে ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে।
এ নির্বাচনে পাকিস্তান পিপলস্ পার্টির পরাজয় এবং আওয়ামী লীগের বিজয় নিশ্চিত করে বাংলাদেশ স্বাধীনতার বীজ রোপন করা হয়। মূলত ১৯৭০ সালের নির্বাচনের উত্তরসূরি হিসেবে আজকের স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের আবির্ভাব ঘটে ।
→ ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে ৭০ এর নির্বাচনের প্রভাব : ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনের প্রভাব আলোচনা করতে গেলে প্রথমেই আসে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের কথা।
কেননা, ৭০ সালের নির্বাচনের প্রত্যক্ষ প্রভাব '৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ। নিম্নে ধারবাহিকভাবে' স্বাধীনতা অর্জনে ৭০ এর নির্বাচনের প্রভাব আলোচনা করা হলো :
১. বাঙালির জাগরণ : ১৯৭০ সালের নির্বাচনের প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়ে বাঙালিদের জাগরণের ক্ষেত্রে। বিশেষ করে '৭০ এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সরকারের বিপুল বিজয়ে পূর্ব পাকিস্ত ানের বাঙালি জনগোষ্ঠীর উদ্দীপনা ও উৎসাহ দ্বিগুণ বেড়ে যায় এবং তারা বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য একতাবদ্ধ হওয়ার প্রেরণা লাভ করে। সুতরাং বাঙালিদের জাগরণের ক্ষেত্রে ১৯৭০ সালের নির্বাচন ছিল মূল চালিকাশক্তি (Controlling force)।
২. শেখ মুজিবের নেতৃত্ব : নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা হওয়ার সাথে সাথে শেখ মুজিব জনগণের প্রতি তাঁর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেছেন, 'আমাদের জনগণ এক ঐতিহাসিক রায় দিয়েছে।' আওয়ামী লীগের বিজয় ছিল পূর্ব বাংলার মানুষের বিজয়। এ বিজয়ের ফলে শেখ মুজিব জাতির কাণ্ডারি হিসেবে একটা প্লাটফর্ম রচনা করেন। এতে করে বাঙালি জনগণ তার সাহসী নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হতে থাকে ।
৩. দুঃশাসনের অবসান : প্রকৃতপক্ষে, আওয়ামী লীগের অভূতপূর্ব বিজয় পাকিস্তানে সুদীর্ঘ ২৫ বছরে পশ্চিমা শাসকগোষ্ঠীর শাসন ও অর্থনৈতিক শোষণের হাত থেকে বাঙালি জাতির স্বাধিকার ও মুক্তি লাভেরই বহিঃপ্রকাশ মাত্র।
৪. স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠা : বাঙালি জাতির ইতিহাসে ১৯৭০ সালের নির্বাচনই সর্বপ্রথম স্বাধীন, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন। এ নির্বাচনের মাধ্যমে বাঙালিরা সর্বপ্রথম আত্মপ্রতিষ্ঠার ও স্বশাসনের সুযোগ লাভ করে ।
৫. ছয় দফা কর্মসূচির বাস্তবায়ন : ১৯৭০ সালের নির্বাচনের আওয়ামী লীগ সরকারের নির্বাচনি ইস্তেহারে ৬ দফা কর্মসূচিকে প্রাধান্য দেয়া হয়, যার মৌলিক লক্ষ্য ছিল স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠা ও স্বাধীন রাষ্ট্র গঠন করা।
আর বাংলার আপামর জনসাধারণ আওয়ামী লীগ সরকারের এ স্বপ্ন বাস্তবায়নের পক্ষে রায় দেয়। ফলে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের গতি ত্বরান্বিত হয়।
৬. গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার আবির্ভাব : ১৯৭১ সালের দিকে আওয়ামী লীগই ছিল জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতীক। দেশের এই সর্বপ্রথম সাধারণ নির্বাচনে জনগণ নিঃশব্দ ব্যালট বিপ্লবের মাধ্যমে স্বাধিকারের স্বপক্ষে রায় দেয়। তাদের দাবির মূল লক্ষ্য ছিল দেশে গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা, বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে যার সফল বাস্তবায়ন ঘটে।
৭. সংবিধান রচনা : আওয়ামী লীগের নির্বাচনি কর্মসূচির উপর ভিত্তি করেই পাকিস্তানে নতুন সংবিধান প্রণয়ন করা হয়। সরকার গঠনের পর মুজিবের দলীয় কর্মসূচির ভিত্তিতে সংবিধান রচনা করা হবে বলে লীগের দলীয় কর্মসূচিতে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় এবং সিদ্ধান্তের কার্যকর রূপ প্রতিফলিত হয়।
১৯৭১ সালের স্বাধীনতা সংগ্রামে । সে সংগ্রামের মূল লক্ষ্য ছিল স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্রের জন্য একটি উপযুক্ত সংবিধান রচনা করা। ১৯৭২ সালে ১৬ ডিসেম্বর থেকে বাংলাদেশের প্রথম সংবিধান কার্যকর করা হয়।1
৮. রাজনৈতিক ঐক্য গঠন : সত্তরের সাধারণ নির্বাচন বাঙালিদের ঐক্য জোরদার করে। স্বাধিকারের দাবিতে বাঙালিরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে উঠে এবং তারা আত্মবিশ্বাসে বলীয়ান হয়ে উঠে।
ফলে বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামে এ রাজনৈতিক ঐক্য প্রেরণার ও শক্তির উৎস হিসেবে কাজ করে। আর এ রাজনৈতিক ঐক্য থেকেই স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ রাষ্ট্রের আগমনী বার্তা ধ্বনিত হয় ।
৯. পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর পরাজয় : প্রকৃতপক্ষে, এ নির্বাচনের মাধ্যমেই বাঙালিরা জাতীয়তাবাদী চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে পাক-শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায় এবং সর্বশক্তি নিয়ে রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মাধ্যমে দেশকে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর শৃঙ্খল থেকে মুক্ত করে ।
১০. পাকিস্তান রাষ্ট্রের ভাঙন : ১৯৭০ সালের নির্বাচনে পাকিস্তান পিপলস্ পার্টির পরাজয় পাকিস্তান রাষ্ট্রের ভাঙন নিশ্চিত করে। এ নির্বাচনের পর ইয়াহিয়া সরকার কোনো সদিচ্ছা ব্যক্ত করেনি।
শেখ মুজিব আলোচনায় বসার প্রস্তাব দিলেও ইয়াহিয়া খান সে প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন । ফলশ্রুতিতে পাকিস্তান রাষ্ট্রের ভরাডুবি হয় ।
১১. মুক্তিযুদ্ধের মূল প্রেরণা শক্তি : ১৯৭০ সালের নির্বাচন পূর্ব বাংলার আপামর জনগণের মাঝে।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে মূল প্রেরণাশক্তি হিসেবে কাজ করেছে তারা স্বাধিকার চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং নিজেদের জীবন উৎসর্গ করতে একটুও দ্বিধাবোধ করেনি। মূলত '৭০ নির্বাচনই তাদের এ প্রেরণা জোগায় ।
১১. বাংলাদেশের উত্থান ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনের ফল পরিসমাপ্তি ঘটে বাংলাদেশ রাষ্ট্র উত্থানের মাধ্যমে।
আওয়ামী লীগের পতাকাতলে তথা অন্যান্য রাজনৈতিক দলের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ এবং আপামর জনতার ঐক্যবদ্ধ সংগ্রামে স্বাধীন বাংলাদেশের আবির্ভাব ঘটে। অবশেষে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর ৩০ লক্ষ শহিদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত হয় বাংলাদেশের স্বাধীনতা ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে বাঙালি জনগণের জাতীয়তাবোধ চেতনার পক্ষে রায় প্রতিফলিত হয়।
১৯৭০ সালের নির্বাচনের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করা। আর এ কারণেই বলা হয় ‘বাংলাদেশের জন্ম হতো না যদি '৭০ এর নির্বাচন অনুষ্ঠিত না হতো।'
'৭০ এর নির্বাচন বাংলার জনগণের মাঝে মুক্তিযুদ্ধের মূল প্রেরণাদায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করেছে একথা নিঃসন্দেহে বলা যায় ।
আর্টিকেলের শেষকথাঃ স্বাধীনতা অর্জনে ১৯৭০ সালের নির্বাচনে প্রভাব রেখেছিল
আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম স্বাধীনতা অর্জনে ১৯৭০ সালের নির্বাচনে প্রভাব রেখেছিল । যদি তোমাদের আজকের এই পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো।