স্বাধীনতা দিবস রচনা ১০০, ২০০, ৫০০, ১০০০ শব্দ
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো স্বাধীনতা দিবস রচনা ১০০ শব্দ জেনে নিবো। তোমরা যদি বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস রচনা টি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের মহান স্বাধীনতা দিবস রচনা টি।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস রচনা |
বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস রচনা
ভূমিকা: স্বাধীনতা যেকোনো জাতির জন্য একটি গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়। স্বাধীনতা আমাদের সামনে স্বর্ণদুয়ার খুলে দেয়। যে দুয়ার দিয়ে প্রবেশ করে আমরা আমাদের যুগসঞ্চিত জঞ্জাল দূর করার পথ খুঁজে পেয়েছিলাম । স্বাধীনতা দিবস জাতীয় জীবনে একটি চেতনাদীপ্ত তারিখ, স্মরণীয় দিন । ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ রাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী অতর্কিতে হামলা চালায় নিরস্ত্র বাঙালির ওপর। তারা নির্বিচারে হত্যাযজ্ঞ চালায় পিলখানা, রাজারবাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। মধ্যরাতের পর হানাদার বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। গ্রেফতারের আগেই, অর্থাৎ ২৬শে মার্চের প্রথম প্রহরে তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। তাঁর স্বাক্ষরিত ঘোষণা বার্তাটি তৎকালীন ইপিআর-এর ট্রান্সমিটারের মাধ্যমে চট্টগ্রামে প্রেরণ করা হয়। এরপর চট্টগ্রামের 'স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র' থেকে ২৬ ও ২৭শে মার্চ বঙ্গবন্ধুর নামে প্রচারিত হয় স্বাধীনতার ঘোষণা। সারা বাংলায় ছড়িয়ে পড়ে স্বতঃস্ফূর্ত মুক্তির সংগ্রাম । অবশেষে ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর দীর্ঘ নয় মাস মুক্তিযুদ্ধের পর আমরা বিজয় অর্জন করেছিলাম
আমাদের স্বাধীনতা দিবস: ‘স্বাধীনতা দিবস' জাতি হিসেবে আমাদের আত্মমর্যাদার বর্ণিল স্মারক। ১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চ আমরা বিশ্বের বুকে আমাদের স্বাধীন সত্তার জানান দিয়েছিলাম, মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছিলাম । সে এক আশ্চর্য সময় এসেছিল আমাদের জাতীয় জীবনে। সৃষ্টি হয়েছিল নক্ষত্রপুঞ্জের মতো অসংখ্য অবিস্মরণীয় ঘটনা-কাহিনি। পুরো জাতি ঝাঁপিয়ে পড়েছিল স্বাধীনতার জন্য রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে। রক্তস্নাত দোঁআশ মাটি ভিত্তি করে নতুন ভাবে আবির্ভাব ঘটেছিল এ জাতির। যে যেভাবে পেরেছে সেভাবে অংশগ্রহণ করেছে মুক্তিসংগ্রামে। এক অবিস্মরণীয় সম্মিলনের ঐকতানে মিলিত হয়েছিল এ জাতি। স্বাধীনতা যুদ্ধের ঐকতানের সিম্ফনিতে মিলিত হয়েছিল সবাই। লাখো প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছিল এ স্বাধীনতা । | আমরা ভুলিনি – ভুলিনি সেই বীরগাথা, ভুলিনি শহিদদের মহান আত্মত্যাগ।
স্বাধীনতা সংগ্রামের পটভূমি: ১৯৪৭ সালে দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে বর্তমান বাংলাদেশ ব্রিটিশ-ভারত থেকে বিভক্ত হয়ে পাকিস্তান রাষ্ট্রের অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল। তখন এর নাম ছিল পূর্ব পাকিস্তান। পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের প্রত্যাশা ছিল সবধরনের শাসন-শোষণের অবসান ঘটবে। কিন্তু শোষণ ও বঞ্চনার অবসান হয়নি। পাকিস্তান রাষ্ট্রের শুরুতে পাকিস্তানি শাসকচক্র এ অঞ্চলে তাদের তাঁবেদারদের মাধ্যমে অত্যাচারের স্টিমরোলার চালিয়েছিল । শোষণ-নিপীড়ন-নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছিল এ দেশের মানুষ। তখন এ দেশের মানুষের সামনে উন্মোচিত হয়ে পড়েছিল পাকিস্তানি শাসকচক্রের মুখোশ। তখন থেকেই বাঙালির মনে স্বাধীনতার চেতনা সঞ্চারিত হতে থাকে।
আমাদের ভাষা-সাংস্কৃতিক-ভৌগোলিক অবস্থান সবকিছুই ছিল পাকিস্তান রাষ্ট্র গঠন-প্রক্রিয়ার বিপক্ষে। পাকিস্তান সৃষ্টির শুরুতেই আঘাত আসে আমাদের ভাষার ওপর। তৎকালীন শাসকচক্র উর্দুকে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা হিসেবে ঘোষণা করলে প্রতিবাদে বিক্ষোভে ফেটে পড়েছিল এ দেশের ছাত্র ও তরুণসমাজ । রাজপথে বুকের রক্ত ঢেলে দিয়ে এ দেশের মানুষ বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতি আদায় করে নিতে সক্ষম হয়েছিল। ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি আমাদের গরবিনী মাতৃভাষা বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে চূড়ান্ত বিজয়ের মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতীয়তাবাদের যে বীজ প্রোথিত করেছিলেন মৃত্যুঞ্জয়ী ভাষাশহিদেরা, তারই স্মারক আজকের স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। মহান ভাষা-আন্দোলনের মাধ্যমে সর্বোত্তম প্রাপ্তি বাঙালির - বাংলা ভাষাভাষী মানুষের স্বাধীন আবাসভূমি বাংলাদেশ।
স্বাধীনতা দিবস ও বিভিন্ন আন্দোলন; এই স্বাধীনতা একদিনে আসেনি। তার জন্য অনেক সংগ্রাম করতে হয়েছে। ১৯৬৬ সালের ৬ দফা আন্দোলন, এগারো দফা আন্দোলন, ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানে এ দেশের মানুষ ঝাঁপিয়ে পড়েছিল স্বাধিকারের প্রশ্নে। স্বৈরাচারী পাকিস্তানি শাসকচক্র বারবার চেষ্টা করেও এ দেশের মানুষকে দমন করতে পারেনি। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে এ দেশের মানুষ আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়েছিল, এ নির্বাচনে বাঙালি জাতীয় সংসদের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করেছিল । তারপরও গণতান্ত্রিক অধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়নি পাকিস্তানি শাসকচক্র। স্বৈরাচারী পাকিস্তানি শাসকচক্র ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে বাঙালির আশা- আকাঙ্ক্ষাকে ধূলিসাৎ করল। ক্ষমতায় যেতে পারল না এ দেশের মানুষ। প্রতিবাদে গর্জে উঠল তারা। পাকিস্তানি হায়েনারা এ দেশের ঘুমন্ত মানুষের ওপর নির্বিচারে হামলা চালাল ও নিরীহ, নিরস্ত্র মানুষের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ল । বাংলাদেশের মানুষও ঝাঁপিয়ে পড়ল মুক্তিযুদ্ধে।
স্বাধীনতা যুদ্ধের নয় মাস: স্বাধীনতা যুদ্ধের নয় মাসে এ দেশের মানুষ প্রাণ দিয়েছে, অত্যাচারিত হয়েছে, মা-বোনেরা সম্ভ্রম হারিয়েছে জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে গ্রামের পর গ্রাম। হানাদার পাকিস্তানিদের দোসর রাজাকার, আলবদর, আলশামস ও তথাকথিত শান্তিবাহিনীর সদস্য হিসেবে পশ্চিম পাকিস্তানিদের সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করেছে। মুক্তিপাগল এ দেশের মানুষ সম্মিলিত প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য মুক্তিবাহিনী গঠন করে। এ দেশের ছাত্র, কৃষক, শ্রমিক, ইপিআর, পুলিশ, সেনাবাহিনীর বাঙালি সদস্যরা মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে । ১৯৭১ সালের ১০ই এপ্রিল গঠিত হয় অস্থায়ী সরকার এবং ১৭ই এপ্রিল শপথ গ্রহণ করে। মুজিবনগরকে রাজধানী ঘোষণা করে সেখান থেকে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালিত হতে থাকে। মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সেনাপতি নিযুক্ত হন কর্নেল এমএজি ওসমানী। মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় মিত্রবাহিনী যুদ্ধ করে ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর কাছ থেকে বাংলাদেশের বিজয় ছিনিয়ে আনে।
উপসংহার: স্বাধীনতা মানুষের জন্মগত অধিকার। অনেক রক্ত, ত্যাগ- তিতিক্ষার বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে আমাদের স্বাধীনতা। এর জন্য ৩০ লাখ মানুষকে শহিদ হতে হয়েছে, ২ লাখ মা-বোনকে সম্ভ্রম হারাতে হয়েছে। আমরা এখন স্বাধীন দেশের স্বাধীন নাগরিক। এ স্বাধীনতাকে আমাদের যেকোনো মূল্যে অক্ষুণ্ণ রাখতে হবে। স্বাধীনতার চেতনায় দেশকে এগিয়ে নিতে হবে অর্থনৈতিক মুক্তির পথে। সুখী-সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ গড়তে পারলেই স্বাধীনতা যুদ্ধের শহিদদের স্বপ্ন পূরণ হবে ।
আর্টিকেলের শেষকথাঃ স্বাধীনতা দিবস রচনা ২০০ শব্দ
আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম ২৬ শে মার্চ কেন স্বাধীনতা দিবস রচনা টি। যদি তোমাদের আজকের এই স্বাধীনতা দিবস রচনা ৫০০ শব্দ টি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো।