অখন্ড স্বাধীন বাংলা গঠনের প্রচেষ্টা কেন ব্যর্থ হয়েছিল

আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো অখন্ড স্বাধীন বাংলা গঠনের প্রচেষ্টা কেন ব্যর্থ হয়েছিল জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের অখন্ড স্বাধীন বাংলা গঠনের প্রচেষ্টা কেন ব্যর্থ হয়েছিল ।

অখন্ড স্বাধীন বাংলা গঠনের প্রচেষ্টা কেন ব্যর্থ হয়েছিল
অখন্ড স্বাধীন বাংলা গঠনের প্রচেষ্টা কেন ব্যর্থ হয়েছিল

অখন্ড স্বাধীন বাংলা গঠনের প্রচেষ্টা কেন ব্যর্থ হয়েছিল

  • অখণ্ড বাংলা গঠনের প্রচেষ্টা কেন ব্যর্থ হয়েছিল? 
  • অথবা, অখণ্ড বাংলা প্রতিষ্ঠার প্রয়াস ব্যর্থ হয় কেন? ভারত শাসন আইনে ত্রুটি কীরূপ ছিল? 
  • অথবা, 'অখণ্ড স্বাধীন বাংলা' আন্দোলন কেন ব্যর্থ হয়েছিল? 
  • অথবা, ভারত শাসন আইনের দুর্বলতা আলোচনা কর ।

উত্তর : ভূমিকা : বাংলাকে বিভক্তিকরণের পেছনে যাদের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি ছিল তারা হলো কংগ্রেস। কারণ তারা প্রথম দিকে সমর্থন দিলেও শেষে নিজেদের স্বার্থে বিরোধিতা করে। অখণ্ড বাংলা প্রতিষ্ঠার প্রয়াসের ব্যর্থতার কারণ ছিল বহুবিধ। তাছাড়া হিন্দু মুসলিম ছিল আলাদা জাতি। যদিও তাদের মধ্যে সম্প্রীতি বিরাজ করছিল তারপরেও তারা একে অপরের থেকে বিভক্ত হওয়ার চেষ্টা করছিল। ফলে যে অখণ্ড বাংলা গঠনের প্রয়াস চালানো হয়েছিল তা ব্যর্থতায় পর্যবশিত হয় । অখণ্ড বাংলা বিভক্তির সাথে সাথে ভারত পাকিস্তান বিভক্ত হয় এ বিভক্তির কিছু আইনের ভুল ছিল। নিম্নে প্রশ্নানুসারে আলোচনা উপস্থাপন করা হলো।

অখণ্ড বাংলা প্রতিষ্ঠার প্রয়াস ব্যর্থতার কারণ : মুসলিম লীগ ও কংগ্রেসের বিরোধিতা বাংলার তৎকালীন নেতৃবৃন্দ যারা অখণ্ড বাংলা প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলেন আর তাদের এ পরিকল্পনা ব্যর্থ হওয়ার কারণগুলো নিম্নে আলোচনা করা হলো :

১. কংগ্রেসের বিরোধিতা : কংগ্রেস ও মুসলিম লীগের | সাধারণ নেতৃবৃন্দ অখণ্ড বাংলাকে সমর্থন দিলেও কংগ্রেস ও মুসলিম লীগের হাইকমাণ্ড অখণ্ড বাংলাকে কখনোই সমর্থন করেননি। সংগঠন দুটির বাংলা শাখায় যারা কেন্দ্রীয় হাইকমান্ডের অনুসারী ছিলেন তারা প্রথম দিকে অখণ্ড বাংলার দাবি সমর্থন করলেও শেষাবধি হাইকমান্ডের ভয়ে এর চরম বিরোধিতা করে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় যে, বাংলা মুসলিম লীগের অন্যতম নেতা মাওলানা আকরাম খাঁ এক পর্যায়ে হুঙ্কার ছেড়ে বলেছিলেন যে, কেবলমাত্র বাংলার মুসলমানদের লাশের উপর দিয়েই বাংলা ভাগ হতে পারে, অথচ তিনিই পরবর্তীতে এর চরম বিরোধিতা করেন।

২. হিন্দু বিরোধিতা : দীর্ঘ ১০ বছর ধরে হিন্দুদের বিরোধিতা | সত্ত্বেও বাংলার ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত ছিল মুসলমান সরকার। যার কারণে বাংলার অপর হিন্দু শ্রেণি হিংসা পরায়ণ হয়ে ওঠেন। আর সে সময় তাদের ভিতর একটি কঠিন ভীতি কাজ করে যে তারা কখনোই বাংলার রাজনৈতিক অঙ্গনে হস্তক্ষেপ করতে পারবে না। আর তারা ভাবে অখণ্ড বাংলা হলে মুসলমানদের একক ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে আর তারা এইরূপ ধারণা করেই অখণ্ড বাংলাকে সমর্থন দান হতে বিরত থাকে । কলকাতার সম্প্রদায়িক দাঙ্গা, হিন্দু ও মুসলমান সম্প্রদায়ের মধ্যে সন্দেহ, অবিশ্বাস ও দূরত্ব সৃষ্টি করে।-

৩. পৃথক কাঠামোগত কারণ : বাংলায় হিন্দু ও মুসলমান বসতি এমনভাবে গড়ে উঠেছিল যে পূর্ব বাংলার মুসলমানরা ছিল সংখ্যাগরিষ্ঠ এবং পশ্চিম বাংলায় হিন্দুরা ছিল সংখ্যাগরিষ্ঠ। তাই বাংলার মুসলমানরা মনে করেছিল যদি অখণ্ড বাংলা গঠন করা হয় তাহলে বাংলার রাজনীতিতে একচ্ছত্র আধিপত্য কায়েম করবে হিন্দুরা। আবার হিন্দুরা মনে করেছিল যদি বাংলার অখণ্ডতা বজায় থাকে তাহলে মুসলমানরা বাংলার রাজনীতিতে একচ্ছত্র আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করবে। তাই উভয় সম্প্রদায় চাচ্ছিল বাংলা বিভক্ত হবে। তাছাড়া স্বভাবতই যেন এটা প্রাকৃতিকভাবেই বিভক্ত হয়েছিল। বাংলার সকল কল কারখানা এবং কলকাতা শহর পশ্চিম বাংলার সীমানায় ছিল। স্বভাবতই পশ্চিম বাংলা বিভক্ত হলে পশ্চিম বাংলার ক্ষতি ছিল না, বরং সেখানে হিন্দুদের পক্ষে চিরকাল প্রাদেশিক সরকার গঠন সম্ভবপর। সুতরাং হিন্দুরা বাংলা বিভক্তির পক্ষে কথা বলেন। তাই বাংলার নেতারা বিশেষ করে পূর্ব বাংলার নেতা হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী উদ্যোগ গ্রহণ করলেও তা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়।

৪. সীমিত সময় : অখণ্ড বাংলা গঠনে যে পরিকল্পনা করা হয় তা ব্যর্থ হওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ ছিল সময়ের স্বল্পতা। অখণ্ড বাংলার বিষয় ছিল আলোচনা শুরু হয় ১৯৪৭ সালে। আবার ১৯৪৭ সালের এপ্রিলেই অখণ্ড বাংলার বিষয়টি উত্থাপিত হয়। আবার এর কিছু দিন পরই ঘটে দেশ বিভাজন। স্বাধীন ভারত ও পাকিস্তান বিভক্তি চূড়ান্ত হয়। সুতরাং তা বাস্তবায়নের জন্য এত কঠিন সময়ে দুই বা তিন মাস যথেষ্ট ছিল না। কারণ তৎকালীন ভারতের সবচেয়ে বড় দুটি রাজনৈতিক দল মুসলিম লীগ ও কংগ্রেসের মধ্যে সমঝোতার বিষয়টি ছিল। আর সে সময় তাদের মধ্যে বিরাট কলহ কাজ করছিল। আবার সিলেটের মতো বাংলা বিভক্তির প্রশ্নে গণভোট করা যেত কিন্তু সময়টা এতোই কঠিন ছিল যে সেটাও বাস্তবায়নের কোনো সময়ই হাতে ছিল না।

৫. উপযুক্ত নেতৃত্বের অভাব : সেই সময় বাংলায় তেমন কোনো বড় ধরনের রাজনৈতিক নেতৃত্ব গড়ে ওঠেনি । মুসলিম লীগ ও কংগ্রেসের মতো শক্তিশালী রাজনৈতিক দলের হাইকমান্ডে বাংলার উপযুক্ত প্রতিনিধিত্ব ছিল না। ফলে পশ্চিমা মুসলমান ও উত্তর ভারতের হিন্দু নেতৃত্ব তাদের নিজ নিজ স্বার্থে বাংলা বিভাগের বিষয়াদি বিবেচনা করেন। বৃহত্তর স্বাধীন বাংলা ভারতের হিন্দু পুঁজিপতি গোষ্ঠীর জন্য মাথাব্যথার কারণ ছিল। কলকাতা ছিল হিন্দু পুঁজিপতি গোষ্ঠীর নাভীকেন্দ্র। গোটা বাংলা ও সারা ভারতের পুঁজি সংগঠক হিসেবে ইঙ্গ-মার্কিন ও মাড়োয়ারী গোষ্ঠী বিরামহীন গতিতে কাজ করেছে তৎকালীন কলকাতা শহরকে কেন্দ্র করে । সুতরাং বাংলা স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করলে ইঙ্গ-মার্কিন ও মাড়োয়ারী পুঁজি বাঙালিদের হাতে যাবে এটা প্রায় নিশ্চিতভাবে অবাঙালি : দেশি বিদেশি পুঁজি সংগঠকেরা বুঝতে পারেন এবং সে কারণেই তারা বাংলাকে ভারতের দুই অংশকে পরাধীন ভূমিতে রূপান্তর করার ষড়যন্ত্র করে ।

৬. পূর্ব বাংলার প্রতি চক্রান্ত : অপরপক্ষে মুসলিম লীগের পশ্চিমা নেতৃবৃন্দ মুসলিম অধ্যুষিত পূর্ববাংলাকে উপনিবেশ হিসেবে শোষণ করার উদ্দেশ্যে ঐ এলাকার পাকিস্তানের অংশ হিসেবে চেয়েছিলেন। তাদের এই অসৎ উদ্দেশ্যকে সহযোগিতা করেন পূর্ববাংলার খাজা নাজিম উদ্দিন, নুরুল আমিন, মাওলানা আকরাম খাঁ প্রমুখ নেতৃবৃন্দ। এরা ভালো করেই জানতেন যে অবিভক্ত বাংলা হলে তাদের পক্ষে সোহরাওয়ার্দী গ্রুপকে ডিঙিয়ে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার অসম্ভব তাই তারা কেবলমাত্র ক্ষমতার লোভেই খণ্ডিত পূর্ব বাংলাকে স্বাগত জানান ।

→ ভারত স্বাধীনতা আইনের ত্রুটি : ভারত শাসন আইনে = কতকগুলো ত্রুটি পরিলক্ষিত হয়। নিম্নে তা দেওয়া হলো :

১. ব্রিটিশরা ভারতবর্ষকে কেবল দ্বি-খণ্ডিত করেই যায়নি, অনেক রাজনৈতিক বিষয় তারা অমিমাংসিত রেখে গেছে। ব্রিটিশ আমলে স্বায়ত্তশাসন ভোগ করেছে এমন দেশীয় রাজ্যসমূহ স্বাধীন হবে, না ভারত বা পাকিস্তান স্থানভুক্ত হবে সে বিষয়ে ভারতীয় স্বাধীনতা আইনে কোনো স্পষ্ট নির্দেশ না থাকার সুযোগে ভারত শক্তি বলে কিছু দেশীয় রাজ্য দখল করে নেয় এবং কিছু রাজ্যকে ভারতে যোগদান করতে বাধ্য করেন। যেমন কাশ্মীর একটি দেশীয় রাজ্য ছিল। কাশ্মীরের দখল নিয়ে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ১৯৪৮ এবং ১৯৬৫ সালে যুদ্ধ হয়।

২. ভারত বিভক্তির পর পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে সম্পদ বণ্টন বিষয়ে কোনো সুস্পষ্ট ধারণা ছিল না। পরবর্তীতে পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে তিক্ত সম্পর্কের সৃষ্টি হয়। অবশ্য এসব আইনে ত্রুটি সত্ত্বেও ভারত স্বাধীনতা আইনকে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে পাসকৃত আইনসমূহের মধ্যে একটি অন্যতম উত্তম আইন বলে গণ্য করা হয়। এই আইন ভারত ও পাকিস্তানের সাংবিধানিক আইনের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক ।

ভারতীয় স্বাধীনতা আইন বিলটি পাসের পরদিন দিল্লিস্থ অন্ত বর্তীকালীন সরকার দ্বিধা বিভক্ত হয়ে এক অংশ পাকিস্তানের এবং অপর অংশ ভারতের সরকারে পরিণত হয়। মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ পাকিস্তান ডোমিনিয়নের প্রথম গভর্নর জেনারেল নিযুক্ত হন। লর্ড মাউন্ট ব্যাটেন করাচিতে উপস্থিত হয়ে ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট নতুন রাষ্ট্র পাকিস্তানের উদ্বোধন ঘোষণা করেন ।

উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, অখণ্ড বাংলা গঠনের ব্যর্থ হওয়ার পেছনে যতগুলো কারণ ছিল এর মধ্যে অন্যতম হলো নেতাদের ক্ষমতার লোভ। সাম্প্রদায়িক মনোভাব এবং দলীয় সংকীর্ণতা। ব্রিটিশ সরকার ভেবেছিল, যদি বাংলাকে অভিন্ন রাখা হয় তাহলে তারা আর প্রভাব বিস্তার করতে পারবে না। ভারতীয় শক্তিশালী রাজনৈতিক দল কংগ্রেসের নেতৃবৃন্দ তাদের চিন্তা ছিল যদি তারা অভিন্ন বাংলাকে সমর্থন দেয় তাহলে বাংলার রাজনীতিতে তাদের অবস্থান হ্রাস পাবে। কেননা তারা হিন্দু প্রীতি রাজনীতিতে লিপ্ত ছিল। যার পরই বাংলাকে চিরদিন তারা পরাধীনতার মধ্যে রাখতে চেয়েছিল ভারত শাসন আইনের পর তারা পশ্চিম বাংলাকে ভারতের মধ্যে আবার পূর্ব বাংলাকে পাকিস্তানের মধ্যে দেন।

আর্টিকেলের শেষকথাঃ অখন্ড স্বাধীন বাংলা গঠনের প্রচেষ্টা কেন ব্যর্থ হয়েছিল

আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম অখন্ড স্বাধীন বাংলা গঠনের প্রচেষ্টা কেন ব্যর্থ হয়েছিল । যদি তোমাদের আজকের এই পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো।

Next Post Previous Post
1 Comments
  • Anonymous
    Anonymous 23 September

    Thanks a lot.

Add Comment
comment url
আরও পড়ুনঃ
আরও পড়ুনঃ