রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প রচনা
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প রচনা জেনে নিবো। তোমরা যদি রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প রচনা টি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প রচনা টি।
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প রচনা |
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প রচনা
ভূমিকা: আধুনিক বিজ্ঞানের আবিষ্কার বিদ্যুৎ মানবসভ্যতার ইতিহাসে এক কালজয়ী অধ্যায়ের সূচনা করেছে। আমাদের ব্যক্তিজীবনের কাজকর্ম, বিনোদন, আরাম-আয়েশ সবকিছুই সম্ভব হয়েছে একমাত্র বিদ্যুতের কারণে। কিন্তু বিদ্যুতের অভাবে আমাদের জীবন নিষ্প্রাণ, নিষ্ফল ও অর্থহীন হয়ে পড়ে। মোটকথা, আধুনিক জীবনের সবক্ষেত্রে বিদ্যুৎশক্তিই হলো সাফল্যের চাবিকাঠি ।
পরমাণু বিদ্যুৎ কী: পরমাণু বিদ্যুৎ প্লান্ট স্থাপনের মাধ্যমে পরমাণু বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়। এ প্রক্রিয়ায় প্রক্রিয়াজাত ইউরেনিয়াম অথবা থোরিয়াম-এর নিউক্লিয়াস ভেঙে দুটি ক্ষুদ্রতম অংশে বিভক্ত হয়ে শক্তি সৃষ্টি করে এবং দুটি অথবা তিনটি নিউট্রন নির্গত করে। এ ফিউশান পদ্ধতির মাধ্যমে চেইন রিঅ্যাকশন সৃষ্টি করা যায়। ফলে এই শক্তি এক বিরাট তাপের সৃষ্টি করে, যাকে পরবর্তী সময়ে বিদ্যুতে পরিণত করা যায়। এ বিদ্যুৎকেই পরমাণু বিদ্যুৎ বলা হয়। এর শক্তি এত বেশি যে এক কিলোগ্রাম ইউরেনিয়ামে যে শক্তি তা দুই হাজার ৫০০ টন কয়লা পোড়ালে যে শক্তি হবে তার সমান। এ পদ্ধতি অত্যন্ত কঠিন, জটিল ও বিপজ্জনক। এর জন্য দরকার দক্ষ পরমাণু বিজ্ঞানী। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ অবশ্য এর ব্যতিক্রম ঘটিয়ে নিউক্লিয়ার বোমা তৈরি করা হয়েছিল। তার পরপরই ১৯৫০-এর দিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট আইসেন হাওয়ার 'Atom For Peace' অর্থাৎ শান্তির জন্য অ্যাটম কর্মসূচি হাতে নেন। ফলে গড়ে ওঠে ‘আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা'। এর তত্ত্বাবধানে পরবর্তী সময়ে পরমাণু শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহার হয় পরমাণু বিদ্যুৎ উৎপাদন ।
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প ও ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট: বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভের পর ১৯৭২ সালেই বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন কায় আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থার সদস্য হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে। এর করে পর থেকে পরমাণু শক্তি সংস্থা বহুভাবে বহুমাত্রিক সাহায্য করে যাচ্ছে বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনকে। পরমাণু শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহারে আমেরিকা, ফ্রান্স, জাপান, কোরিয়া, চীন, তুরস্ক এবং অন্যান্য দেশের সঙ্গে বাংলাদেশ দ্বিপক্ষীয় চুক্তি করেছে। পরমাণু বিদ্যুতের প্রয়োজনীয়তা শুধু যে আজকের প্রতিপাদ্য, তা নয়—স্বাধীনতা পূর্ব বাংলাদেশে এর প্রয়োজনীয়তার কথা আমাদের দেশের পরমাণু বিজ্ঞানীরা বলেছেন। এমনকি পাকিস্তান পরমাণু শক্তি কমিশন যখন ১৯৬১ সালে পারমাণবিক বিদ্যুতের বিষয় মাথায় আনে, তখন থেকেই বিষয়টি প্রাধান্য পায়। পাকিস্তানে পারমাণবিক বিদ্যুতের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য ইন্টারনিউক্লিয়ার কোম্পানি এবং গিরস O অ্যান্ড হিল ইন করপোরেটড অব আমেরিকা কাজে লাগানো হয়েছিল । তারা তাদের রিপোর্ট তদানীন্তন পাকিস্তান পরমাণু শক্তি কমিশনের কাছে জমা দেন । তাতে বলা হয় পূর্ব পাকিস্তানে পদ্মা নদীর তীরে হার্ডিঞ্জ ব্রিজের পাশে পাবনার রূপপুরে কারিগরি ও অর্থনৈতিক দিক থেকে প্রকল্প গ্রহণ বাস্তবসম্মত। কিন্তু পাকিস্তান সরকার ঔপনিবেশিক মনোভাবের কারণে চেয়েছিল এটা করাচিতে স্থাপিত হোক। স্বাধীন বাংলাদেশে ১৯৭৩ সালে প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রথম সুপারিশ করে ওয়াকিং সুপ। ১৯৮৪-৮৫ সালে ফ্রেন্স পাওয়ার রিঅ্যাক্টর এবং জাপানি টারবো জেনারেটর স্থাপন প্রক্রিয়া শুরু করে। আশির দশকের প্রথমার্ধে পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প জাতীয় চাহিদা হিসেবে দেখা যায়। এরপর আবার রাশিয়ার সাহায্যে প্রস্তাব বিবেচনায় আনা হয়। কিন্তু চেরনোবিল পারমাণবিক দুর্ঘটনার পর সব ভেস্তে যায়। এ দেশে সোচ্চার হলেন পারমাণবিক বিদ্যুৎবিরোধী কিছু বুদ্ধিজীবী এবং বিজ্ঞানী।
বাংলাদেশ ও রাশিয়া পরমাণু চুক্তি স্বাক্ষর: বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নকে কাঙ্ক্ষিত স্তরে নিয়ে যাওয়ার জন্য সরকার পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন ও এর যথোপযুক্ত ব্যবহারে বিশেষ নজর দিচ্ছে। বর্তমানে দেশের মোট জনসংখ্যার মাত্র ৮০ শতাংশ বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় রয়েছে। দেশে বর্তমানে মাথাপিছু বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিমাণ ৩২১ কিলোওয়াট ঘণ্টা, যা বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক কম। এ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর অনেকগুলো বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র বাণিজ্যিকভাবে চালু করেছে। পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকার রাশিয়ার সাথে ২০০৯ সালে ১৩ মে একটি প্রাথমিক চুক্তি স্বাক্ষর করে। যাতে বলা হয় ১ হাজার মেগাওয়াটের পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করতে হবে। এতে আনুমানিক ব্যয় ধরা হয় ১৫০ কোটি মার্কিন ডলার। ২০০৯ সালের ২১ মে মস্কোয় বাংলাদেশ ও রাশিয়া পরমাণু জ্বালানির শান্তিপূর্ণ ব্যবহারের ক্ষেত্রে সহযোগিতা কাঠামো চুক্তি স্বাক্ষর করা হয় ।
পরমাণু জ্বালানির সম্ভাবনা: পরমাণু জ্বালানি সম্পর্কে বলা হয় এ জ্বালানির মাধ্যমে কার্বন নির্গমন হয় কম, যা পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করে না। ভারতে কয়লা পোড়ানোর ফলে সেখানে কার্বন নির্গমন এক বছরে ২৭৯ দশমিক ৬১ ও বাংলাদেশে ৮ দশমিক ৮ মিলিয়ন মেট্রিক টন। পরমাণু বিদ্যুৎ প্রকল্পের সবচেয়ে বড়ো সুবিধা হলো কম খরচে বিদ্যুৎ উৎপাদন। আর এই বিদ্যুৎ উৎপাদনের ফলে আলোকিত হবে বাংলাদেশ । এই বিদ্যুৎ পৌঁছে যাবে গ্রাম থেকে গ্রামে ।
পারমাণবিক জ্বালানির অসুবিধা: পারমাণবিক চুল্লির যেমন সুবিধা রয়েছে তেমনি রয়েছে অসুবিধাও। একটি পারমাণবিক শক্তির চুল্লি স্থাপনের পূর্বে অঞ্চলের পরিবেশ, ভূকম্পন প্রবণতা, হাইড্রোলজি, আবহাওয়াবিদ্যা, জনসংখ্যা এবং শিলু পরিবহন ও সামরিক স্থাপনাসমূহ নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করতে হবে। এ ছাড়া অগ্নিকাণ্ড, বিস্ফোরণ, বিকিরণ ও দুর্ঘটনার কারণে মহাবিপর্যয় ঘটতে পারে। পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের রক্ষণাবেক্ষণে আন্তর্জাতিক মানের নিউক্লিয়ার বিশেষজ্ঞ প্রয়োজন। পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের দুর্ঘটনার ফলে ক্যান্সারজনিত রোগের সংক্রমণ ভয়াবহ আকার ধারণ করে। যেসব স্থানে এ ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে, সেসব স্থানে জন্ম নেয়া সকল শিশুই শারীরিক প্রতিবন্ধকতার শিকার হয় । জমির উর্বরতা চিরদিনের জন্য বিনিষ্ট হয়। পারমাণবিক চুল্লিতে রাসায়নিক বিক্রিয়ার পর সৃষ্ট হয় তেজস্ক্রিয় বর্জ্য যা জীবজগৎ ও পরিবেশের জন্য মারাত্মক বিপজ্জনক । যতই নিরাপত্তার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক না কেন তার পরেও প্রাকৃতিক বিপর্যয় ও কারিগরি ত্রুটির কারণে দুর্ঘটনার আশঙ্কা কমবেশি থেকে যায়। পারমাণবিক শক্তির প্রধান উৎস ইউরেনিয়াম। বৈজ্ঞানিকদের ধারণা, আগামী ৪০ থেকে ৬০ বছর পর আর ইউরেনিয়াম পাওয়া যাবে না। পারমাণবিক চুল্লি নির্মাণ খুবই ব্যয়বহুল ব্যাপার ।
পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদন ও চাহিদা: বিশ্বের মোট উৎপাদিত বিদ্যুতের ১৬% আসে পারমাণবিক কেন্দ্র থেকে। বিশ্বের ৩১টি দেশের ৪৪০টি পারমাণবিক চুল্লিতে এই বিদ্যুৎ উৎপাদিত হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের একারই রয়েছে ১০৪টি রিয়েক্টর যেখানে উৎপাদন হার তাদের ২০% বিদ্যুৎ। ফ্রান্সে ৫৯টি রিয়েক্টর দেশের মোট উৎপাদনের ৭৮% বিদ্যুৎ উৎপাদন করে। বর্তমানে যেসব দেশে আরও রিয়েক্টর নির্মাণাধীন রয়েছে, তার মধ্যে শীর্ষে রয়েছে চীন ও ভারত। ভারতে বর্তমানে ২০টি পরমাণু চুল্লি রয়েছে, যার একটি বাদে সবকটি চালু রয়েছে। বর্তমানে ভারতের মাত্র ৩ শতাংশ চাহিদা মোট পরমাণু বিদ্যুতে, বেলজিয়ামের ৫৮টি বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ পাচ্ছে ৫৮% শতাংশ। চীন এ খাত থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে ৯ হাজার মেগাওয়াট। পাকিস্তান ৪২৫ মেগাওয়াট। ২০২০ সালের মধ্যে পাকিস্তান সাত হাজার, ভারত ২০ হাজার এবং চীন ৪০ হাজার মেগাওয়াটের পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করবে।
উপসংহার: বাংলাদেশ ক্রমশই উন্নতি করছে এবং প্রায়শই বিদ্যুৎ উৎপাদনে নতুন রেকর্ড করছে। পরমাণু বিদ্যুৎ উৎপাদন দ্রুত হলে নিজেদের চাহিদা পূরণ করে বিদ্যুৎ রপ্তানিকারক দেশের সাথেও বাংলাদেশ নিজেদের যুক্ত করতে সক্ষম হবে। এর জন্য যা প্রয়োজন তা হলো পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের সফল বাস্তবায়নে সকলের ঐকান্তিক সহযোগিতা ।
আর্টিকেলের শেষকথাঃ রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প রচনা
আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প রচনা টি। যদি তোমাদের আজকের এই রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প রচনা টি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো।