রিদ্দা যুদ্ধের কারণ কি | রিদ্দা যুদ্ধের ঘটনা
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো রিদ্দা যুদ্ধের কারণ কি।রিদ্দা যুদ্ধের ঘটনা জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের রিদ্দা যুদ্ধের কারণ কি।রিদ্দা যুদ্ধের ঘটনা টি।
রিদ্দা যুদ্ধের কারণ কি।রিদ্দা যুদ্ধের ঘটনা |
রিদ্দা যুদ্ধের কারণ কি।রিদ্দা যুদ্ধের ঘটনা
উত্তর : ভূমিকা : খোলাফায়ে রাশেদীনের যুগে সংঘটিত রিদ্দা যুদ্ধ ইসলামের ইতিহাসে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর ওফাতের পর হেজাজ ব্যতীত প্রায় সমগ্র আরব দেশে ইসলাম ধর্ম এবং নব প্রতিষ্ঠিত মুসলিম রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে প্রচণ্ড বিদ্রোহ ও | বিক্ষোভ শুরু হয়। ইসলাম ধর্মের যোগসূত্র ছিন্ন করে ধর্মত্যাগী এ সমস্ত গোত্রের দলপতিগণ নিজেদেরকে নবি বলে দাবি করে। আর স্বধর্মত্যাগী ভণ্ডনবিদের বিরুদ্ধে ইসলামের সংঘবদ্ধ অভিযানকেই রিদ্দার যুদ্ধ বলা হয়।
রিদ্দা যুদ্ধের কারণ : নিম্নে রিদ্দা যুদ্ধের কারণ আলোচনা করা হলো-
১. ইসলাম প্রচারে বিঘ্ন : হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর জীবদ্দশায় আরব উপদ্বীপের মোট এক-তৃতীয়াংশ লোক ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত করতে পারেননি। কারণ সুষ্ঠু যোগাযোগ ব্যবস্থার অভাব, সময়ের স্বল্পতা ও সুনিয়ন্ত্রিতভাবে ধর্ম প্রচার ব্যবস্থার অভাবের ফলে সমগ্র আরবে ইসলাম বিস্তার করা সম্ভব হয়নি।
২. বিচার শক্তির অভাব : বিচার শক্তির অনুপস্থিতিতে আরবদের মন ও মস্তিত্ব বিকাশ লাভ করতে পারেনি। ফলে তারা অনেকেই বিনাবিচার ও বিনা চিন্তায় ইসলাম গ্রহণ করে এবং পরে তারা অস্থির খেয়ালিপনা দ্বারা পরিচালিত হয়ে ইসলামের বিরুদ্ধচারণ করে।
৩. ইসলামের প্লৈবিক পরিবর্তনের বিরোধিতা : হজরত মুহাম্মদ (সা.) প্রাক-ইসলামি যুগের ঘৃণ্য এবং কলুষিত প্রথাগুলো নিশ্ছিন্ন করে আরব ভূখণ্ডে সমাজ, ধর্ম, স্বজনপ্রীতি, অর্থনীতি ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রে এক আমূল এবং বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধন করেন। ইসলামের অজেয় শক্তি এবং রাসূলের অসামান্য ব্যক্তিত্বের নিকট উচ্ছৃঙ্খল এবং বন্ধনহীন উপজাতি ও বেদুঈনগণ শির নত করতে বাধ্য হয়। কিন্তু রাসূলের মৃত্যুর পর আরব ভূখণ্ডের বিভিন্ন স্থানে তারা ইসলামের বিধানের বিরুদ্ধাচরণ করে।
৪. কেন্দ্রীয় শাসনের মতানৈক্য : আরব বেদুঈনরা ছিল। গোত্রীয় শাসনে অভ্যস্ত। তারা জন্মের পর থেকেই গোত্রভিত্তিক শাসনব্যবস্থা দেখে আসছিল। তাই তারা কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে থাকতে চাইল না। আর এজন্যই ভণ্ড নবিদের এবং অমুসলিমরা কেন্দ্রীয় সরকারের বিরোধিতা করতে লাগল ।
৫. মদিনার প্রাধান্যে ঈর্ষা : বন্ধনহীন আরব জাতি ইসলামের আবির্ভাবে কেন্দ্রীয় শাসনের আওতায় একটি সুসংবদ্ধ এবং সুশৃঙ্খল জাতিতে পরিণত হয়। মদিনা ছিল ইসলামের প্রাণকেন্দ্র। কিন্তু আরব গোত্রসমূহ কেন্দ্রীয় শাসনের অধীনে থেকে মদিনার প্রাধান্য এবং কর্তৃত্বকে মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানায়।
৬. নৈতিক অনুশাসনের বিরুদ্ধাচরণ : ইসলামের নৈতিক শাসন এবং রুচিসম্মত ও মার্জিত জীবনযাত্রায় অনুশাসনমুক্ত স্বাধীনচেতা আরববাসীরা অভ্যস্ত ছিল না। চিরদিনই তারা ছিল দুরন্ত ও বাধা-বন্ধনহীন। ইসলামের বিধি ব্যবস্থা এবং নৈতিক শৃঙ্খলাকে তারা ব্যক্তি স্বাধীনতার অন্তরায় মনে করতো।
৭. যাকাত প্রদানে অস্বীকৃতি : রিদ্দা যুদ্ধের অন্যতম প্রধান কারণ | ছিল বিভিন্ন আরব গোত্রের ইসলামি অনুশাসন মোতাবেক সম্পদের শতকরা আড়াই ভাগ দরিদ্র জনসাধারণকে যাকাত প্রদান। স্বাধীনতা প্রিয় আরব গোত্রের লোকেরা বাধ্যতামূলকভাবে যাকাত | প্রদান করাকে তাদের ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্য এবং স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ বলে মনে করতো। ইতোপূর্বে কোন সরকারকে তারা যাকাত প্রদান করেনি এবং এতে অভ্যস্তও ছিল না।
৮. অমুসলমান সম্প্রদামের বিরুদ্ধাচরণ : ভণ্ডনবী স্বার্থান্বেষী আরব গোত্রপতি, ধর্মভ্রষ্ট বেদুঈন ছাড়াও রিদ্দা যুদ্ধে উসকানি দিয়েছিল খ্রিস্টান প্রভৃতি মুসলমান বিদ্বেষী ধর্ম সম্প্রদায়সমূহ । ইহুদি এবং খ্রিস্টান সম্প্রদায় ইসলামের প্রতি শত্রুতাভাবাপন্ন ছিল। এবং ধর্ম ও রাষ্ট্র হিসেবে তারা সর্বদা এর বিরুদ্ধাচরণ করতো। তাদের উস্কানিমূলক এবং স্বার্থান্বেষী কার্যকলাপে ইসলাম বিরোধী আন্দোলন একটি সঙ্কটজনক পরিস্থিতি সৃষ্টি করে ।
→ রিদ্দা যুদ্ধের ঘটনা : যেসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে রিদ্দা যুদ্ধ সংঘটিত হয় সেগুলো আলোচনা করা হলো-
১. আসাদ আনসিকে দমন : গোত্রপতি ও বিত্তশালী আসওয়াদ আনসি ইয়েমেনে রাসূলের জীবদ্দশায় দশম হিজরীতে নবুয়্যত দাবি করে ইসলামের বিরুদ্ধে প্রথম প্রকাশ্যে বিদ্রোহ ঘোষণা করে। ইয়েমেন থেকে মুসলিম প্রতিনিধিকে বিতাড়িত করে সে নাজরান এবং ইয়েমেনের রাজধানী সানা দখল করে। রাসূলের ওফাতের পর দু'একদিনের মধ্যেই সাধনার শাসনকর্তার হত্যার প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য ফিরোজ দায়লামী নামক তাঁর একজন আত্মীয় আসাদ আনসিকে হত্যা করেন।
২. মুসায়লামাকে দমন : ভণ্ডনবিদের মধ্যে সর্বাপেক্ষা প্রভাবশালী এবং ক্ষমতাশালী ছিল মুসায়লামা। তিনি মধ্য আরবের ইয়ামামার বানু হানিফা গোত্রে জন্মগ্রহণ করেন। স্বলিখিত বাণীকে ঐশীবাণী বলে প্রচার করে যে নবুয়্যাত দাবি করে এবং নবি করীম (সা.)-কে লিখিত পত্রে জানায় যে, ধর্মপ্রচার এবং আরব ভূমিতে শাসনকার্য নির্বাহের জন্য সে রাসূলের সমতুল্য। হজরত আবু বকর (রা.) খলিফা নির্বাচিত হওয়ার পর সে ইসলামের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ পরিচালনা করলে তাকে হত্যা করা হয় ।
৩. স্বধর্ম ত্যাগীদের আন্দোলন দমন : হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর ওফাতের পর স্বধর্মত্যাগীদের আন্দোলন ছিল নব প্রতিষ্ঠিত মদিনা প্রজাতন্ত্র এবং ইসলাম ধর্মের প্রতি একটি বিরাট হুমকিস্বরূপ। আর এই আন্দোলন হজরত আবু বকর (রা.)-এর বলিষ্ঠ পদক্ষেপে দমন করা হয়।
৪. তোলায়হা ও সাজাহকে দমন : উত্তর আরবের বানু আসাদ গোত্রের দলপতি তোলায়হা এবং মধ্য আরবের বানু ইয়ারবু গোত্রের সাজাহ নাম্নী নামক এক নাছারা মহিলা নিজেকে নবি বলে দাবি করে। তারা বেদুঈন সম্প্রদায়ের লোকদের সাথে ষড়যন্ত্র করে এবং স্বার্থসিদ্ধির জন্য খ্রিস্টান উপজাতিদের | | সাহায্যে মদিনার ইসলামি রাষ্ট্রের ধ্বংসের পরিকল্পনা করলে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করা হয়।
৫. হাযরামাউত দখল: হাযরামাউত দখলের সাথে সাথে রিদ্দা যুদ্ধের অবসান ঘটে। ইসলামের অনুশাসনকে অবজ্ঞা করে যে সমস্ত আরব গোত্র যাকাত প্রদান থেকে বিরত ছিল তাদের সমুচিত শিক্ষাদানের জন্য খলিফা হজরত আলী, তালহা ও যুবাইরকে প্রেরণ করেন । এভাবে হজরত আবু বকর (রা.)-এর রাজনৈতিক দূরদর্শিতা এবং প্রজ্ঞার ফলে ইসলাম ধর্ম ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা পায় ।
→ রিদ্দা যুদ্ধের ফলাফল : ইসলামের ইতিহাসে রিদ্দার যুদ্ধের ফলাফল ছিল খুবই সুদূরপ্রসারী এবং গুরুত্বপূর্ণ। রিদ্দার যুদ্ধের ফলাফল নিম্নে আলোচনা করা হলো-
১. বহির্বিশ্বে ইসলাম প্রচারের সুযোগ : রিদ্দার যুদ্ধে মুসলমানদের জয়লাভের পর ইসলাম ধর্ম প্রচারে কোনো বাধা রইল না। ফলে মুসলমানরা শুধু দেশের অভ্যন্তরেই নয়, বহির্বিশ্বেও ইসলাম প্রচারের সুযোগ পায়। অভ্যন্তরীণ বিশৃঙ্খলা বজায় থাকলে মুসলমানরা কখনই ইসলামের প্রভুত্ব বিস্তারে সফলতা লাভ করতে পারতেন না ৷ এ জন্য হিট্টি বলেন, “বিশ্ব জয়ের পূর্বে আরবরা প্রথমে নিজেদেরকে জয় করতে হয়েছিল “Arabia had to conquer itself before it could conquer the world" History of the Arabs.
২. ইসলামি রাষ্ট্রের বুনিয়াদ মজবুত হয় : রিদ্দা যুদ্ধের বিজয়ের ফলে সমগ্র আরবে বিশৃঙ্খলা ও বিদ্রোহের অবসান হয় ৷ এ যুদ্ধে মুসলমানরা জয়লাভ করতে না পারলে ইসলামের অস্তিত্ব বিপন্ন হতো। মহানবি (সা.)-এর ইন্তেকালের এক বছরের মধ্যে হজরত আবু বকর (রা.) সকল বিশৃঙ্খলাকারী ও বিদ্রোহকারীদের দমন করে আরবের বুকে ইসলামকে সুদৃঢ় করেন।
৩. আত্মবিশ্বাস সৃষ্টি : রিদ্দার যুদ্ধে বিজয়ের ফলে মুসলমানদের আত্মবিশ্বাস সুদৃঢ় হয়। তারা ঐক্য ও শক্তিমত্তায় আরও উজ্জীবিত হয়ে উঠে এবং সকল প্রকার মানসিক দুর্বলতা দূরীভূত হয় । মুসলমানদের মধ্যে নতুন আত্মবিশ্বাস সৃষ্টি হয়।
৪. পৌত্তলিকতা বিলুপ্ত : রিদ্দার যুদ্ধে জয়লাভের ফলে পৌত্তলিকতার উপর ইসলামের জয় সুনিশ্চিত হয়। গোত্রীয় দ্বন্দ্বের অবসান হয়। গোত্রকেন্দ্রিক অরাজকতা ও রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম শেষবারের মতো আরবের বুক থেকে দূরীভূত হয়। পৌত্তলিকতার উপর আরব জাতীয়তাবাদ চূড়ান্ত সাফল্য লাভ করে ।
৫. অর্থনৈতিক ফলাফল : এ যুদ্ধে যাকাত অস্বীকারকারীদের কঠোরহস্তে দমন করায় মদিনা রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক ভিত্তি সুদৃঢ় হয়। যাকাত সঠিকভাবে আদায় হওয়ার ফলে রাষ্ট্রীয় বায়তুলমালের আয় বৃদ্ধি পায় এবং উন্নয়ন কর্মকাণ্ড গতি লাভ করে ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, ইসলামের ইতিহাসে রিদ্দা যুদ্ধের গুরুত্ব অপরিসীম। কেননা রিদ্দা যুদ্ধে জয়লাভের ফলে ইসলাম ধর্ম ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা পায় । খলিফা হজরত আবু বকর (রা.) আরবে স্বধর্মত্যাগীদের আন্দোলন দমনে যে কৃতিত্বের পরিচয় দেন তা প্রশংসার যোগ্য। তিনি যদি সে সময় স্বধর্ম ত্যাগীদের আন্দোলন দমন করতে না পারতেন তাহলে ইসলাম বিলুপ্তি হওয়ার আশঙ্কা ছিল।
আর্টিকেলের শেষকথাঃ রিদ্দা যুদ্ধের কারণ কি।রিদ্দা যুদ্ধের ঘটনা
আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম রিদ্দা যুদ্ধের কারণ কি।রিদ্দা যুদ্ধের ঘটনা টি। যদি তোমাদের আজকের এই পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো।