অভিন্ন বাংলার পূর্ববঙ্গ ও বর্তমান বাংলাদেশের রাজনৈতিক কি কি পরিবর্তন ঘটেছে
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো অভিন্ন বাংলার পূর্ববঙ্গ ও বর্তমান বাংলাদেশের রাজনৈতিক কি কি পরিবর্তন ঘটেছে জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের অভিন্ন বাংলার পূর্ববঙ্গ ও বর্তমান বাংলাদেশের রাজনৈতিক কি কি পরিবর্তন ঘটেছে ।
অভিন্ন বাংলার পূর্ববঙ্গ ও বর্তমান বাংলাদেশের রাজনৈতিক কি কি পরিবর্তন ঘটেছে |
অভিন্ন বাংলার পূর্ববঙ্গ ও বর্তমান বাংলাদেশের রাজনৈতিক কি কি পরিবর্তন ঘটেছে
উত্তর : ভূমিকা : অভিন্ন বাংলা গঠন করার পর তার কেন্দ্রীয় রাজধানী করা হয় পশ্চিম পাকিস্তানে অথচ অর্ধেকের বেশি মানুষ বসবাস করতো পূর্ব বাংলায়। পূর্ব বাংলার মানুষকে তারা চেয়েছিল রাজনীতি ও শাসনতান্ত্রিক কার্যাবলি হতে দূরে রাখতে । যার কারণে সরকারি যত গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা সবই গড়ে তোলেন শাসকশ্রেণি পশ্চিম পাকিস্তানে। এমনকি পূর্ব বাংলার জনগণ যাতে রাজনীতিতে প্রবেশ করতে না পারে এজন্য তারা বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করেছিল। তারা পূর্ব বাংলার কৃষক শ্রেণিকে দারিদ্র্যের করাল গ্রাসে ডুবিয়ে রাখার চেষ্টা করে। আর সেই পরিপ্রেক্ষিতে তৎকালীন রাজনীতি ও বর্তমান রাজনীতির প্রেক্ষাপট বা পার্থক্য আলোচনা করা হলো :
→ রাজনৈতিক পরিবর্তন : তৎকালীন পূর্ববঙ্গ বর্তমান বাংলার যেসব রাজনৈতিক কার্যাবলি ও দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন ঘটেছে নিম্নে সে সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-
১. নেতৃত্বের পরিবর্তন : তৎকালীন বাংলার ক্ষমতা ছিল পুরুষকেন্দ্রিক। নারীদের অংশগ্রহণের সুযোগ ছিল নিতান্তই কম । এমনকি তখন নারীরা কেন্দ্রীয় শাসনতান্ত্রিক কোনো পদে যেতে পারতো না। তাদেরকে কতকগুলো সংরক্ষিত আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সুযোগ দেওয়া হতো কিন্তু স্বাধীনতা পরবর্তী বর্তমান বাংলাদেশে এর একটি বিরাট পরিবর্তন এসেছে। বাংলাদেশে শাসনতান্ত্রিক কার্যাবলিতে এখন মেয়েরা স্বাধীনভাবে অংশগ্রহণ করতে পারে। সরাসরি জনগণের ভোটে এরা নির্বাচিতও হয়। তাছাড়া পরিবারে যেকোনো সিদ্ধান্তে তাদের মতামত দেওয়ার একটা অধিকার আছে। বর্তমান বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বিরোধীদলীয় নেত্রী এমনকি স্পিকারও মহিলা ।
২. রাজনৈতিক সচেতনতা বৃদ্ধি : তৎকালীন পূর্ব বাংলার জনগণ ছিল রাজনীতি বিষয়ে উদাসীন। তারা বুঝত না কিভাবে তারা তাদের অধিকার আদায় করবে কিন্তু স্বাধীনতা যুদ্ধের মাধ্যমে পরবর্তীতে তারা তাদের অধিকার বিষয়ে সতর্ক হয়। ধীরে ধীরে তারা রাজনীতি বিষয়ে সচেতন হয়। তারা জনগণের চাওয়া পাওয়ার দিকে দৃষ্টি রাখে। তারা এখন দেশকে নিয়ে ভাবে দেশের জনগণের কথা চিন্তা করে। রাজনীতিতে তাদের বলিষ্ঠ ভূমিকা এখন দেশকে অনেক উচ্চতায় নিয়ে এসেছে।
৩. রাজনৈতিক ধারা সক্রিয় : তৎকালীন অভিন্ন বাংলার রাজনীতিতে ভিন্ন মত খুব কমই সহ্য করা হতো। তবে তখন রাজনীতিতে কতকগুলো ধারা কাজ করতো। তবে স্বাধীনতা পরবর্তী বর্তমান বাংলাদেশের রাজনীতিতে তিনটি বিষয় ফুটে উঠেছে যেগুলো বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্র সৃষ্টি হবার পর ধারাগুলো আরো সক্রিয় হয়ে ওঠে। এ ধারাগুলো হলো সমাজতান্ত্রিক ধারা, একটি কর্মতান্ত্রিক ধারা এবং অন্যটি পাশ্চাত্য পুঁজিবাদী ধারা। এগুলো বাংলার রাজনীতিতে পরিবর্তনের নীতিতে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করে ।
৪. স্বাধীন বিচার বিভাগ : অভিন্ন বাংলার বিচারব্যবস্থার স্বাধীনতা বলতে কিছুই ছিল না। তারা রাজনৈতিকভাবে বিচার করতো। বর্তমান বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থাকে প্রশাসনিক বিভাগ হতে আংশিক পৃথক করা হয়। যার ফলে মানুষ আদালতে ন্যায়বিচার পায়। বিচারবিভাগ করা হয়েছে বিকেন্দ্রীকরণ। যদিও কয়েক বছর আগে উপজেলা আদালত প্রতিষ্ঠা করা হয়। এমনকি প্রশাসনিক ইউনিটগুলোকে গ্রাম পর্যায়ে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ফলে মানুষ এমনকি নিতান্ত গ্রামগঞ্জের মানুষও আইনের সহযোগিতাসহ বিভিন্ন অধিকার ভোগ করতে পারছে।
৫. রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠা : পূর্বে মানুষ রাজনৈতিক অধিকার ভোগ করতে পারতো না। সব অধিকার ভোগ করতো পশ্চিম পাকিস্তানিরা। রাজনৈতিক উচ্চপদে বাঙালিদের অবস্থান ছিল না বললেই চলে। স্বরাষ্ট্র, পররাষ্ট্রসহ অন্যান্য অধিদপ্তর গুলোতে ছিল পশ্চিম পাকিস্তানিদের প্রভাব। বর্তমানে মানুষ অনেক রাজনৈতিক অধিকার ভোগ করছে। জাতীয় সংসদের সদস্য হওয়া ছাড়াও সরকারি অন্যান্য ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হচ্ছে। বস্তুত এটাও গণতান্ত্রিক নীতিমালারই একটি উল্লেখযোগ্য দিক ।
৬. বহুদলীয় রাজনীতি : অভিন্ন বাংলার সময় শাসকগোষ্ঠী চেয়েছিল বহুদলীয় রাজনীতির মুখ বন্ধ করতে। তারা চেয়েছিল পাকিস্তানের রাজনীতিতে অন্য কোনো দল আগমন না করুক কিন্তু বর্তমান বাংলার এ ধারার রাজনৈতিক পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। দেশে বর্তমান বহুদলীয় রাজনৈতিক ব্যবস্থা চালু রয়েছে। প্রত্যেকে তাদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড স্বাধীনভাবে পালন করছে। বস্তুত এটা গণতান্ত্রিক নীতিরই প্রতিফলন কোনো ক্ষমতাশীল দল এখন চাইলেই কোনো কিছু করতে পারে না কারণ অন্যান্য দলের এবং জনগণের কাছে জবাবদিহি করতে হয় বলে ।
৭. যুব সম্প্রদায় রাজনীতিতে আগমন : তৎকালীন অভিন্ন বাংলার তুলনায় এখন যুব সম্প্রদায় রাজনীতিতে অনেক বেশি সক্রিয়। পাক আমলে যারা গণতন্ত্রের কথা বলে মেম্বার, চেয়ারম্যানে অংশগ্রহণ করতো তাদের অধিকাংশ ছিল গ্রামের ধনী ব্যক্তি । এমনি বাংলাদেশের স্বাধীনতার যুদ্ধে যুবক শ্রেণি প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ করে। দেশ স্বাধীনের পর তাদের একটি অংশ গ্রামীণ এবং ইউনিয়ন পরিষদের রাজনীতিতে অংশ নিতে থাকে। বর্তমানে অনেক শিক্ষিত যুবক শ্রেণি ইউনিয়ন এবং উপজেলা পর্যায়ে রাজনীতি করছে।
৮. গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার বিকাশ : অভিন্ন বাংলার শাসনামলে যখন সামরিক শাসন জারি হয় তখনও তারা বুঝতে পেরেছিলেন যে এদেশের গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখতে হবে। যে কারণে তারা বার বার নির্বাচন দিয়েছেন। এমনকি তারা প্রায় জনগণের সমর্থন লাভের চেষ্টা করেছেন। যদিও তারা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া চালু রাখতে পারেনি বিধায় ধ্বংস অনিবার্য হয়েছিল। বর্তমান বাংলার শাসক শ্রেণি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার তাদের শাসনকার্য পরিচালনা দিকে বেশি মনোযোগী। এমনকি এলিট শ্রেণির শাসকবৃন্দ তাদের শাসনব্যবস্থায় গণতান্ত্রিক আদর্শকে সমুন্নত রাখতে অভিপ্রায় ব্যক্ত করছে।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, তৎকালীন পূর্ব বাংলা এবং বর্তমান বাংলাদেশে এর রাজনৈতিক ক্রিয়াকলাপের বিস্তার পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। তৎকালীন শাসক শ্রেণি চেয়েছিলেন। জনগণের মতামত ছাড়া নিজেদের ইচ্ছামতো দেশ পরিচালনা করতো। তারা চেয়েছিল জনগণের অধিকার হরণ করতে কিন্তু বাঙালি জানে কিভাবে তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হয়। তৎকালীন রাজনীতির তুলনায় বর্তমান গণতান্ত্রিক ধারার অনেক | বিকাশ ঘটেছে। বর্তমান শাসক গোষ্ঠী জনগণের অধিকার সম্পর্কে সচেতন হয়েছে। তারা চেষ্টা করে কিভাবে জনগণ তার ন্যায্য অধিকার ভোগ করতে পারবে তা প্রতিষ্ঠা করতে।
আর্টিকেলের শেষকথাঃ অভিন্ন বাংলার পূর্ববঙ্গ ও বর্তমান বাংলাদেশের রাজনৈতিক কি কি পরিবর্তন ঘটেছে
আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম অভিন্ন বাংলার পূর্ববঙ্গ ও বর্তমান বাংলাদেশের রাজনৈতিক কি কি পরিবর্তন ঘটেছে টি। যদি তোমাদের আজকের এই পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো।