প্রাক ইসলামী আরবের সামাজিক ও রাজনৈতিক অবস্থার বিবরণ দাও
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো প্রাক ইসলামী আরবের সামাজিক ও রাজনৈতিক অবস্থা জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিপ্রাক নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের প্রাক ইসলামী আরবের সামাজিক ও রাজনৈতিক অবস্থা টি।
প্রাক ইসলামী আরবের সামাজিক ও রাজনৈতিক অবস্থা |
প্রাক ইসলামী আরবের সামাজিক ও রাজনৈতিক অবস্থা
উত্তর : ভূমিকা : প্রাক ইসলামি যুগে আরবের আর্থসামাজিক, অবস্থা রাজনৈতিক ও অন্যান্য অবস্থার চেয়ে করুণ, ভয়াবহ ও জগণ্য প্রকৃতির ছিল। কেননা তৎকালীন সমাজে কোন সুশৃঙ্খল শাসন কাঠামো ছিল না। কেন্দ্রীয় শাসনের অভাবে সাম্রাজ্যের সর্বত্র অরাজকতা বিরাজমান ছিল। মক্কায় বসবাসরত বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে ক্ষমতা লাভের জন্য দীর্ঘদিন ধরে দ্বন্দ্ব কলহ চলে আসছিল। ফলে আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক অবস্থা মোটেও ভালো ছিল না ৷
→ প্রাক ইসলামি যুগে আরবদের সামাজিক অবস্থা : জাহেলিয়া যুগে আরবদের সামাজিক অবস্থা অত্যন্ত হতাশাজনক ও অরাজকতাপূর্ণ ছিল । নিম্নে তৎকালীন আরবের সামাজিক অবস্থা আলোচনা করা হয়—
১. মদ্যপান : প্রাক ইসলামি যুগে আরবগণ অতিমাত্রায় মাদকাসক্ত ছিল। বিনোদনমূলক কাজকর্মের মধ্যে এটি ছিল অন্যতম। নেশাগ্রস্ত আরবরা নারী নিয়ে নীতিবহির্ভূত কাজে লিপ্ত হতো।
২. বংশভিত্তিক সমাজ : জাহেলিয়া যুগে বংশভিত্তিক ও গোত্রভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠিত ছিল। এ প্রসঙ্গে মাওলানা আকরাম খা | বলেছেন, “প্রাক-ইসলামিক যুগে সেখানে যে বংশগত ও গোত্রগতকৌলীন্য প্রথার প্রভাব অপ্রতিহতভাবে প্রতিষ্ঠিত ছিল সে সম্বন্ধে কোনো সন্দেহ নেই। এ বংশমর্যাদা নিয়ে বিভিন্ন গোত্রের লোকদের মধ্যে অহংকার, ঘৃণা ও হিংসা-বিদ্বেষ যথেষ্টরূপে বিদ্যমান ছিল।”
৩. নারীর অবস্থান : আরবে নারীর অবস্থা ছিল অত্যন্ত শোচনীয়। নারীকে তারা ভোগবিলাসের সামগ্রী মনে করতো। সমাজে নারীর কোন মর্যাদা ছিল না। একটি লোক যত ইচ্ছা বিবাহ করতো এবং ইচ্ছামত তালাক দিতে পারত। পিতার মৃত্যুর পর বিমাতাকে স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করার অধিকার ছিল। এমনকি পিতার সম্পত্তিতে নারীর কোন অধিকার ছিল না।
৪. জীবন্ত সমাধি : তৎকালীন আরব সমাজে কন্যা সন্তানের জন্ম অত্যন্ত অপমানকর ব্যাপার ছিল। কন্যা সন্তান জন্মগ্রহণ করলে তারা দুর্ভাগ্য বলে মনে করতো। অনেক পিতা অপমানের হাত থেকে রক্ষা পাবার জন্য, আবার অনেকে আহার্য দেবার ভয়ে কন্যা সন্তানকে জীবন্ত কবর দিত। তাদের এ গর্হিত কাজের কথা উল্লেখ করে মহান আল্লাহ বলেন, “দারিদ্র্যের ভয়ে তোমরা তোমাদের সন্তানদেরকে হত্যা কর না।”
৫. দাসদাসীর অবস্থা : আরবদের ক্রীতদাস প্রথার প্রচলন ছিল। পণ্য দ্রব্যের মত হাটে বাজারে দাসদাসী বিক্রয় করা হতো। এসকল ক্রীত দাস-দাসীদের সাথে প্রভুরা অমানুষিক আচরণ করতো। তাদের দুরবস্থা সম্বন্ধে আমীর আলী বলেন, “ভৃত্যই হোক আর ভূমিদাসই হোক তাদের ভাগ্যে ক্ষীণ আশা বা সূর্যরশ্মিও ইহজীবনে জুটত না।”
৬. বিবাহ প্রথা : প্রাক ইসলামি সমাজ ব্যবস্থায় সুষ্ঠু বিবাহ ব্যবস্থা ছিল না। পুরুষরা যেমন একাধিক স্ত্রী, উপপত্নী রাখতে পারতো, তেমনি নারীও একাধিক স্বামী রাখতে অথবা তালাক দিতে পারত। শুধু তাই নয় ভাই বোনে বিয়ে, বিমাতাকে বিয়ে করার কুপ্রথাও সমাজে প্রচলিত ছিল।
৭. ব্যভিচার : আইয়্যামে জাহেলিয়া যুগে আরব সমাজে। ব্যভিচার ছেয়ে গিয়েছিল। কোন কোন ক্ষেত্রে স্বামীরা তাদের স্ত্রীদের বীরপুত্র লাভের আশায় অন্যের সাথে অবৈধ কাজে লিপ্ত হওয়ার অনুমতি দিত।
৮. কুসীদ প্রথা : ইসলাম পূর্ব যুগে আরব সমাজে জঘন্য কুসীদ প্রথা বিদ্যমান ছিল। তারা এতো উচ্চহারে সুদের কারবার করতো যে, সুদ পরিশোধ করতে না পারলে সুদগ্রহীতার সর্বস্ব লুণ্ঠন করে তাকে পথের ভিখারি বানিয়ে ছাড়তো ।
→ ইসলামপূর্ব আরবের রাজনৈতিক অবস্থা : বিশ্বনবির আগমনের পূর্বলগ্নে আরবদের রাজনৈতিক অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয় এবং নৈরাশ্যজনক ছিল। শহরবাসী আরবগণ অপেক্ষা মরুবাসী আরবদের রাজনৈতিক অবস্থা ছিল শোচনীয় ও করুণ। আরবের রাজনৈতিক অবস্থা নিচে প্রদত্ত হলো-
১. গোত্রশাসন : প্রাক ইসলামি যুগে গোত্রীয় শাসনই ছিল আরবদের রাষ্ট্রীয় জীবন কাঠামো। প্রত্যেকটি গোত্রে একজন করে দলপতি থাকতেন। দলপতির উপাধি ছিল শেখ। শেখের নিকট গোত্রের সকলে আনুগত্য প্রকাশ করতো।
২. কেন্দ্রীয় শাসনের অভাব : প্রাক-ইসলামি যুগে আরবদের সরকার বা শাসন পদ্ধতি সম্পর্কে তেমন কোন ধারণা ছিল না। কারণ এসময় আরব কোন কেন্দ্রীয় শাসনব্যবস্থা ছিল না। সমাজের সর্বত্র জোর যার মুল্লুক তার এই নীতি প্রচলিত ছিল। রক্তের বদলে রক্ত চোখের বদলে চোখ, দাঁতের বদলে দাঁত নীতিতে তারা বিশ্বাসী ছিল।
৩. শেখ বা গোত্র প্রধান : ইসলাম পূর্ব যুগে গোত্র শাসিত সমাজব্যবস্থা প্রচলিত ছিল। প্রত্যেক গোত্র থেকে দলপতি নির্বাচিত হতো। গোত্র প্রধানকে শেখ বলা হতো। বয়স, বিচার বুদ্ধি, সাহস, পদমর্যদা, আর্থিক অবস্থা, শিক্ষাদীক্ষা ও অভিজ্ঞতা বিচার করে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে বিচার শেখ নির্বাচিত করা হতো। যুদ্ধ সন্ধি ব্যবসায়িক যোগাযোগ প্রভৃতি ক্ষেত্রে শেখের সিদ্ধান্তই প্রধান ছিল ।
৪. গোত্রীয় কলহ : প্রাক ইসলামি যুগে একই গোত্রভুক্ত লোকদের মাঝে পারস্পরিক সম্প্রীতি বজায় ছিল। কিন্তু বিভিন্ন গোত্রের মধ্যে সর্বদাই মারাত্মক শত্রুতা লেগে থাকতো। Blood for blood এ ছিল তাদের নিত্যদিনের স্লোগান। সামান্য কোনো অজুহাতেই গোত্রে গোত্রে ভয়াবহ যুদ্ধের সূচনা হতো ।
৫. আল মালা বা মন্ত্রনা সভা : প্রাক-ইসলামি যুগে আরবে মালা নামক একটি রাজনৈতিক সংগঠন বা মন্ত্রনা সভা ছিল। আল মালা মক্কার বিভিন্ন বিবাদমান গোত্রগুলোর মধ্যে ভারসাম্য রক্ষার চেষ্টা করতো। এর উদ্দেশ্য ছিল শান্তি ও শৃঙ্খলা বজায় রাখা গোত্রীয় ভারসাম্য রক্ষা করা এবং মৈত্রী সদ্ভাব প্রতিষ্ঠা করা। তবে এ পরিষদের কোনো নির্বাহী ক্ষমতা ছিল না। এটি কেবল পরামর্শ প্রদানের ক্ষমতা ছিল।
৬. কেন্দ্রীয় শক্তির অভাব : জাহেলিয়া যুগে পারস্য ও রোমান সাম্রাজ্যের অধীন উত্তরাঞ্চলের কতিপয় রাজ্য ব্যতীত সমগ্র আরবদেশ ছিল স্বাধীন। কিন্তু এ স্বাধীনতার উপর কোন কেন্দ্রীয় শক্তির নিয়ন্ত্রণ ও কর্তৃত্ব ছিল না।
৭. রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ : তৎকালীন সময়ে যুদ্ধই ছিল আরবদের জন্য নিত্যদিনের সঙ্গী। আরব গোত্রগুলো রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে দীর্ঘকাল ধরে লিপ্ত থাকতো। গোত্র যুদ্ধের প্রধান মন্ত্র ছিল খুনের পরিবর্তে খুন। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে খুন খেসারত বা দিয়াত প্রদান করলে যুদ্ধের অবসান হতো।
৮. কঠোর শাস্তির বিধান : জাহেলিয়া সমাজে অপরাধের জন্য শাস্তির ব্যবস্থা ছিল। জীবনের বদলে জীবন, অঙ্গের বদলে অঙ্গ ইত্যাদি আরবদের স্বীকৃত আইন ছিল। হত্যাকারী নিহত ব্যক্তির ওয়ারিশদের নিকট সমর্পণ করা হতো ।
৯. বহিঃশত্রুর আক্রমণ : তৎকালীন আরব ভূখণ্ডের উপর বিশ্বের রোমান ও পারস্য সাম্রাজ্যের রাজনৈতিক প্রভাব ছিল উল্লেখযোগ্য । এর ফলে উভয়ের মধ্যে প্রায়ই দ্বন্দ্ব সংঘর্ষ এবং যুদ্ধ লেগে থাকতো ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, প্রাক ইসলামি যুগে আরবের সামাজিক ও রাজনৈতিক অবস্থা নৈরাশ্যজনক ছিল। আর এই বিশৃঙ্খলাপূর্ণ ও অরাজকময় রাজনৈতিক অবস্থা থেকে আরববাসী মুক্তি পেয়েছিল হজরত মুহম্মদ (সা.)-এর আবির্ভাবের মধ্য দিয়ে। তিনি আরবের সর্বক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে সক্ষম হয়েছিলেন।
আর্টিকেলের শেষকথাঃ প্রাক ইসলামী আরবের সামাজিক ও রাজনৈতিক অবস্থার বিবরণ দাও
আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম প্রাক ইসলামী আরবের সামাজিক ও রাজনৈতিক অবস্থা টি। যদি তোমাদের আজকের এই পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো।