১৯৫৬ সালের কেন্দ্রীয় সংবিধান অনুযায়ী প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন কেমন ছিল
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো ১৯৫৬ সালের কেন্দ্রীয় সংবিধান অনুযায়ী প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন কেমন ছিল জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের ১৯৫৬ সালের কেন্দ্রীয় সংবিধান অনুযায়ী প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন কেমন ছিল ।
১৯৫৬ সালের কেন্দ্রীয় সংবিধান অনুযায়ী প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন কেমন ছিল |
১৯৫৬ সালের কেন্দ্রীয় সংবিধান অনুযায়ী প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন কেমন ছিল
উত্তর : ভূমিকা : পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সংবিধান অনুযায়ী প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন এর রূপরেখা তৈরি করা হয়। এ শাসনব্যবস্থার কতকগুলো নতুন আইন পাস করে এদের মধ্যে ফেডারেল তালিকা অন্যতম। এখানে কিছু দায়িত্ব প্রদেশের উপর ছেড়ে দেওয়া হয়। তবে সংবিধানটিতে তারপরও কিছু বৈষম্যমূলক নীতি ছিল। যৌথ তালিকা বিষয়ে কেন্দ্র ও প্রদেশ উভয়েই আইন প্রণয়ন করতে পারত। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকার প্রাদেশিক সরকারের উপর প্রভাব অক্ষুণ্ণ রাখতে তেমন স্বাধীন ছিল না।
১৯৫৬ সালের সংবিধানে প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন : প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন বলতে বুঝায় প্রদেশের আইন, শাসন ও অর্থসংক্রান্ত বিষয়ে কেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণ মুক্ত থেকে প্রাদেশিক সরকারের দায়িত্ব পালনের স্বাধীনতা। ১৯৩৫ সালের সংবিধানের অনুরূপ ১৯৫৬ সালের সংবিধানে প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন সন্নিবেশ করা হয়। ১৯৫৬ সালের সংবিধান অনুসারে পাকিস্তান ছিল যুক্তরাষ্ট্র। নিম্নে . প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন সম্পর্কে আলোচনা করা হলো:
১. ফেডারেল তালিকা : ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইনে ফেডারেল তালিকার যেখানে ৫৯টি আইটেম ছিল ১৯৫৬ সালের সংবিধানে তা কমিয়ে ৩০টি করা হয়।
প্রাদেশিক তালিকার ১৯৩৫ এর ৫৪টি আইটেমের জালাম ১৯৫৬ তে ৯৪টি করা হয় এবং সহ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয় ১৯টি আইটেম। যদিও মনে হয় প্রাদেশিক তালিকায় আইটেম সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে কিন্তু আইটেম পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে প্রদেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কেননা ফেডারেল তালিকায় যে ৩০টি আইটেম অন্তর্ভুক্ত করা হয় সেগুলো হচ্ছে কোনো দেশের মূল গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যেমন- ১৯৫৬ সালের সংবিধানে প্রতিরক্ষা, পররাষ্ট্র, যুদ্ধ, মুদ্রা, সামরিক বাহিনীর পূর্ত, কাব্য, প্রতিরক্ষা সম্পর্কিত শিল্প, পরমাণবিক শক্তি ও তার উৎপাদনের বিষয়গুলো ইত্যাদি ছিল ফেডারেল তালিকাভুক্ত। দেশের সিংহ ভাগ আর্থিক বরাদ্দ কেন্দ্রের হাতে চলে যায় ।
২. গুরুত্বপূর্ণ উৎস কেন্দ্রের হাতে : রাজস্বের বড় বড় উৎস যেমন— বহিঃশুল্ক, আবগারি শুল্ক, রপ্তানি শুল্ক, আয়ব্যয় কর, ক্রয়- বিক্রয় কর, নৌ ও বিমান বন্দর টারমিনাল কর, খনিজ তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাসের উপর নির্ধারিত কর ইত্যাদি কেন্দ্রের হাতে রাখা হয় ।
৩. প্রদেশের আয় : প্রদেশের হাতে যে রাজস্ব উৎস রাখা হয় তার তালিকা দীর্ঘ কিন্তু তা থেকে আয় সামান্য। আর এখানেও চতুরতার আশ্রয় নেওয়া হয়। যেমন- কৃষি ভূমি খাজনা, ক্রয় বিক্রয়ের স্ট্যাম্প ডিউটি ইত্যাদি প্রদেশের হাতে রাখা হয় । এই খাত প্রদেশকে দিয়ে পশ্চিম পাকিস্তানের আয় পশ্চিম পাকিস্তানে রাখার ব্যবস্থা করা হয়। দেশের ভিতর ও বাহির থেকে ঋণ সংগ্রহের ক্ষমতা কেবলমাত্র কেন্দ্রের হাতে রাখা হয়। এইভাবে বিচার বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ১৯৫৬ সালের সংবিধান আর্থিক ক্ষমতা বণ্টনে পূর্ব পাকিস্তানকে ক্ষতিগ্রস্ত হতে হয়। এক্ষেত্রে ১৯৫০ সালের নভেম্বর জাতীয় মহাসম্মেলনে গৃহীত শাসনতান্ত্রিক প্রস্তাব উপেক্ষিত হয় ।
৪. আইন প্রণয়ন : আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে প্রদেশের উপর কেন্দ্রের যৌথ তালিকা বিষয়েকেন্দ্র ও প্রদেশ উভয়েই আইন প্রণয়ন করতে পারতো। কিন্তু প্রাদেশিক আইন কেন্দ্রীয় আইনের পরিপন্থি হলে প্রাদেশিক আইন বাতিল বলে গণ্য হতো। কোনো কোনো বিষয়ে প্রাদেশিক আইন প্রেসিডেন্টের অনুমোদন না পেলে তা বৈধ বলে গণ্য হতো না।
৫. বহিঃআক্রমণ, বিশৃঙ্খলা দমন : যদি প্রদেশগুলোতে বহিঃআক্রমণ ও অভ্যন্তরীণ গোলযোগের সৃষ্টি হয় তাহলে তা করার দায়িত্ব পালন করবে কেন্দ্র। যদিও অভ্যন্তরীণ গোলযোগ মোকাবিলার দায়িত্ব প্রদেশের হওয়া উচিত ছিল কিন্তু কেন্দ্র এ সাংবিধানিক সুবিধা লাভ করায় যেকোনো সময় প্রদেশের প্রশাসনিক ব্যাপারে হস্তক্ষেপ এর সুযোগ পেত। উপরন্তু কোনো প্রদেশ সংবিধান মতো চলছে কিনা তাও পর্যবেক্ষণের দায়িত্ব ছিল কেন্দ্রের।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, ১৯৫৬ সালের সংবিধানে প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন নিশ্চিত করা হয়নি। যদিও সংবিধানে বিভিন্ন বিষয় সংযোজন করা হয়। কিন্তু কেন্দ্রের হস্তক্ষেপের ক্ষমতা থাকায় যেকোনো সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করার ক্ষমতাও কেন্দ্রে দেখাত। আর কেন্দ্রীয় শাসকবৃন্দ সবসময় পশ্চিম পাকিস্তানের স্বার্থ বিবেচনা করে শাসনকার্য পরিচালনা করতো। পূর্ব পাকিস্তানের স্বার্থ তাদের নিকট বরাবরই উপেক্ষিত হতো। পূর্ব পাকিস্তানের ন্যায়সঙ্গত অধিকারে প্রদানেও তারা নীরব থাকত।
আর্টিকেলের শেষকথাঃ ১৯৫৬ সালের কেন্দ্রীয় সংবিধান অনুযায়ী প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন কেমন ছিল
আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম ১৯৫৬ সালের কেন্দ্রীয় সংবিধান অনুযায়ী প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন কেমন ছিল । যদি তোমাদের আজকের এই পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো।