ওয়ালিদ বিন আব্দুল মালিকের রাজ্যবিস্তারের বিবরণ দাও
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো প্রথম ওয়ালিদের রাজত্বকালে মুসলিম সাম্রাজ্য বিস্তৃতির সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের ওয়ালিদ বিন আব্দুল মালিকের রাজ্যবিস্তারের বিবরণ দাও ।
ওয়ালিদ বিন আব্দুল মালিকের রাজ্যবিস্তারের বিবরণ দাও |
ওয়ালিদ বিন আব্দুল মালিকের রাজ্যবিস্তারের বিবরণ দাও
- অথবা, প্রথম ওয়ালিদের রাজত্বকালে মুসলিম সাম্রাজ্য বিস্তৃতির সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও
- অথবা, খলিফা প্রথম ওয়ালিদ বিন আব্দুল মালিকের রাজ্যবিস্তারের বিবরণ দাও
- অথবা, আল ওয়ালিদের আমলে উমাইয়া সাম্রাজ্যের বিস্তৃতির একটি বিবরণ দাও
উত্তর : ভূমিকা : হজরত আলী (রা.)-এর মৃত্যুর পর ইসলামি সাম্রাজ্যে উমাইয়া বংশ ক্ষমতা লাভ করে। মুয়াবিয়া ছিলেন এই বংশের প্রতিষ্ঠাতা। এরই ধারাবাহিকতায় খলিফা আব্দুল মালিকের মৃত্যুর পর তার যোগ্য পুত্র আল ওয়ালিদ ক্ষমতা লাভ করেন। আল ওয়ালিদ ছিলেন যোগ্য পিতার যোগ্য সন্তান। তিনি সাম্রাজ্যের সর্বক্ষেত্রে তার পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করেছিলেন। এই প্রসঙ্গে এম এম ইমামুদ্দিন বলেন, "Al-walid followed the policy of his father in conquest as well as administration." ( A political history of muslim).
→ সিংহাসনারোহণ : পিতা আব্দুল মালিকের মৃত্যুর পর ৭০৫ খ্রিস্টাব্দে প্রথম ওয়ালিদ উমাইয়া সিংহাসনে আরোহণ করেন। সিংহাসনে আরোহণ করে মুসলিম সাম্রাজ্য সম্প্রসারণে একটি গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়ের সূচনা করেন। তাঁর খিলাফতকালে ইসলামি রাজত্ব এশিয়া, ইউরোপ ও আফ্রিকা মহাদেশব্যাপী বিস্তারলাভ করেছিল। তিনি একজন শ্রেষ্ঠ রাজ্য বিজেতা হিসেবে ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে আছেন।খলিফা
আল ওয়ালিদের রাজ্য বিস্তার : খলিফা আল ওয়ালিদ একজন সাম্রাজ্য বিস্তারকারী শাসক ছিলেন। তাঁর শাসনামলে তার পৃষ্ঠপোষকতায় হাজ্জাজ বিন ইউসুফ, কুতাইবা, মুহাম্মদ বিন কাশিম, তারেক বিন জিয়াদ এবং মুসার মতো | সমরকৌশলী জন্ম নিয়েছিল। শৌর্যবীর্য ও রণকুশলতার জন্য তাঁরা বিশ্ববিখ্যাত ছিল। খলিফা আল ওয়ালিদের সময়ে ইসলামি সাম্রাজ্যের বিস্তার সম্পর্কে নিম্নে আলোচনা করা হলো :
১. মধ্য এশিয়া বিজয় : খলিফা ওয়ালিদ সিংহাসনে আরোহণ করে অভ্যন্তরীণ গোলযোগ দমনের পর মধ্য এশিয়া জয়ের লক্ষ্যে তাঁর পূর্বাঞ্চলের গভর্নর হাজ্জাজ বিন ইউসুফকে নির্দেশ দেন। হাজ্জাজ বিন ইউসুফ খোরাসানের শাসনকর্তা কুতায়বার নেতৃত্বে ৫৪,০০০ সৈন্যসহ প্রেরণ করেন। কুতায়বা প্রথমে বলখ ও তুখারিস্তান বিজয় করেন।
২. খাওয়ারিজম ও সমরখন্দ দখল : কুতায়বা ৭১০ খ্রিস্টাব্দে খাওয়ারিজম শাহের আমন্ত্রণে অক্সাস নদী পার হয়ে খাওয়ারিজমে গমন করেন এবং সেখানে শাহের সাথে মুসলমানদের একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। অতঃপর সমরখন্দের রাজাও ভীত হয়ে কুতাইবার সাথে সন্ধি করেন। ফলে ৭১২ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে খাওয়ারিজম ও সমরখন্দ মুসলমানদের অধিকৃত হয়।
৩. শাশ ও কাশগড় বিজয় : কুতাইবা বিজিত রাজ্য হতে সৈন্য সংগ্রহ করে ৭১৫ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে খোজান্দা শাম এবং ফারগানার অন্যান্য শহর অধিকার করে কাশগড় ও চীন সীমান্ত পর্যন্ত স্বীয় অধিকারে আনেন।
৪. সিন্ধু বিজয় : মধ্য এশিয়া বিজয়ের পর খলিফা আল ওয়ালিদের নেতৃত্বে হাজ্জাজ বিন ইউসুফ সিন্ধু জয়ের পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। ইসলামের প্রচার বিপুল সম্পদ প্রাপ্তির আকাঙ্ক্ষা, সর্বোপরি বিদ্রোহী রাজা দাহিরকে দমন করার জন্য হাজ্জাজ বিন ইউসুফ সিন্ধু অভিযান করেন। প্রথমে ওবায়দুল্লাহ ওবুদাইলের নেতৃত্বে পরপর দুটি অভিযান ব্যর্থ হলে হাজ্জাজ স্বীয় জামাতা মুহাম্মদ বিন কাশিমকে সিন্ধু অভিযানে প্রেরণ করেন। মুহাম্মদ বিন কাশিম ৭১২ খ্রিস্টাব্দে রাজা দাহিরকে পরাজিত ও নিহত করে সিন্ধু মুসলিম সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত করেন।
৫. এশিয়া মাইনর বিজয় : ঐতিহাসিক আমীর আলী বলেন, “৭০৬ খ্রিস্টাব্দে খলিফা আল-ওয়ালিদ পুত্র আব্বাস ও ভ্রাতা মাসলামার নেতৃত্বে রোমান অধিকৃত এশিয়া মাইনরের বহু গুরুত্বপূর্ণ এলাকা দখল করেন।” এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল ক্যাপাডোসিয়া ও টায়ানা বিজয় ৷
৬. উত্তর আফ্রিকা বিজয় : হাসান বিন নোমানের পদচ্যুতির পর ৭০৭ খ্রিস্টাব্দে খলিফা আল ওয়ালিদ মুসা বিন নুসাইরকে উত্তর আফ্রিকার শাসনকর্তা নিযুক্ত করেন। তিনি পুত্রদের সহায়তায় প্রথমে বিদ্রোহী বার্বারদের দমন করেন। অতঃপর আটলান্টিকের তীর পর্যন্ত অগ্রসর হয়ে এক বিশাল এলাকায় মুসলিম আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত করেন।
৭. ভূমধ্যসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জ দখল : উত্তর আফ্রিকা বিজয়ের পর মুসা বিন নুসাইয়ের ভূমধ্যসাগরের গোলযোগ সৃষ্টিকারী রোমানদের বিরুদ্ধে এক নৌবহর প্রেরণ করেন। তিনি তাদের বিদ্রোহ দমন করে মেজকা, মিনকা, ইভিকা, জামাইকা প্রভৃতি দ্বীপ দখল করে সেগুলোকে মুসলিম সাম্রাজ্যভুক্ত করেন।
৮. স্পেন বিজয় : ওয়ালিদের সেনাপতি মুসা বিন নুসাইর আফ্রিকায় মুসলিম আধিপত্য সুপ্রতিষ্ঠিত করার পর ইউরোপের দক্ষিণ পশ্চিম অঞ্চল আইবেরিয়ান দ্বীপে দৃষ্টিনিবন্ধ করেন। সে সময়ে স্পেনের খ্রিস্টান শাসক রডারিকের কুশাসনে স্পেনবাসী অতিষ্ঠ হয়ে উত্তর আফ্রিকায় আশ্রয় নেয়। তারা নানাভাবে মুসলিম সেনাপতি মুসাকে স্পেনে আক্রমণের জন্য অনুপ্রাণিত করে। অন্যদিকে কাউন্ট জুলিয়ান রডারিককে শায়েস্তা করার জন্য মুসাকে আমন্ত্রণ জানায়। অবশেষে খলিফা ওয়ালিদের আদেশক্রমে মুসা ৭১১ খ্রিস্টাব্দে সেনাপতি তারিক বিন জিয়াদের নেতৃত্বে ৭ হাজার সৈন্য ও রণতরীর বিশাল বাহিনী স্পেনে প্রেরণ করেন। এরপর সেনাধ্যক্ষ মুসা ও ৭১২ খ্রিস্টাব্দে স্পেনে গমন করেন। মুসা ও তারিকের সম্মিলিত বাহিনী ৭১২-১৪ খ্রিস্টাব্দের মধ্যেই প্রায় সমগ্র অঞ্চল মুসলিম শাসনে নিয়ে আসেন।
৯. সারাগোসা, বার্সিলোনা ও অন্যান্য শহর দখল : স্পেন দখলের পর সেনাপতি মুসা বিন নুসাইয়ের সারাগোসা আক্রমণ করে তা বিজয় করেন। অতঃপর বার্সিলোনায় অভিযান প্রেরণ করে তা সহজে বিজয় করেন। অন্যদিকে তারিক বিন জিয়াদ সার্ডিনিয়া, কারমোনা ও গ্রানাডা আক্রমণ করেন এবং প্রাণপণ চেষ্টা করে তিনি তিনটি শহরে মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হন।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, খলিফা আল ওয়ালিদ নিঃসন্দেহে উমাইয়া শাসকদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ বিজেতা ও সুশাসক ছিলেন। তাঁর সময়ে মুসলিম সাম্রাজ্য আটলান্টিক মহাসাগর হতে পিরেনিজ পর্বতমালা এবং ভারতের সিন্ধু হতে চীনের কাশগড় পর্যন্ত বিস্তার লাভ করে। এজন্য তাকে মূল্যায়ন করতে গিয়ে ঐতিহাসিক উইলিয়াম ম্যুর বলেন, “এমনকি ওমরের শাসন আমল বাদ না দিলেও এমন কোনো আমল ছিল না যখন ইসলাম বিদেশে এতটা সম্প্রসারিত হয়েছিল।”
আর্টিকেলের শেষকথাঃ প্রথম ওয়ালিদের রাজত্বকালে মুসলিম সাম্রাজ্য বিস্তৃতির সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও
আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম আল ওয়ালিদের আমলে উমাইয়া সাম্রাজ্যের বিস্তৃতির একটি বিবরণ দাও । যদি তোমাদের আজকের এই পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো।