ওমর বিন আব্দুল আজিজজের শাসননীতি ও বৈশিষ্ট্য আলোচনা কর
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো ওমর বিন আব্দুল আজিজজের শাসননীতি ও বৈশিষ্ট্য আলোচনা কর জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের ওমর বিন আব্দুল আজিজজের শাসননীতি ও বৈশিষ্ট্য আলোচনা কর।
ওমর বিন আব্দুল আজিজজের শাসননীতি ও বৈশিষ্ট্য আলোচনা কর |
ওমর বিন আব্দুল আজিজজের শাসননীতি ও বৈশিষ্ট্য আলোচনা কর
উত্তর : ভূমিকা : উমাইয়া বংশের মধ্যে ব্যতিক্রমধর্মী এক শ্রেষ্ঠ ও মহান শাসক ছিলেন খলিফা ওমর বিন আব্দুল আজিজ বা দ্বিতীয় উমর। মুয়াবিয়া হতে শুরু করে সুলায়মান পর্যন্ত উমাইয়া খলিফাদের রাজত্বকালের অন্যতম বৈশিষ্ট্য ছিল দেশজুড়ে ক্ষমতা সংঘর্ষ বিশ্বাসঘাতকতা, ষড়যন্ত্র ও নিষ্ঠুরতা। এমন সময় সরল, অনাড়ম্বর, ধর্মানুরাগী, কর্তব্যপরায়ণ ও প্রজাবৎসল খলিফা হিসেবে দ্বিতীয় উমরের সিংহাসনে আরোহণ এক ভিন্ন অধ্যায়ের সূচনা করে। তিনি খোলাফায়ে রাশেদিনের আদর্শ ও ইসলামি মূল্যবোধে বিশ্বাসী ছিলেন এজন্য William Muir বলেন, Though devoid of stirring events, there is Much that is Attractive in the reign of Umar II. it is a relief amidst Bloodshed, intrigue and treachery"
→ সিংহাসনারোহণ : খলিফা সুলাইমানের মনোনয়নক্রমে তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর চাচাত ভাই ওমর বিন আব্দুল আজিজ ৯৯ হিজরীর সফর মাসে (৭১৭ খ্রি.) খিলাফত লাভ করেন। তিনি ছিলেন খলিফা আব্দুল মালিকের ভ্রাতা এবং এক সময় মিশরের শাসনকর্তা আব্দুল আজিজের পুত্র। তার মাতা ছিলেন খলিফা ওমরের দৌহিত্রী। এজন্য তিনি দ্বিতীয় ওমর নামেও পরিচিত। তিনি দলগত, ব্যক্তিগত বা গোষ্ঠীগত সকল প্রকার স্বার্থের ঊর্ধ্বে ছিলেন এবং সাম্রাজ্য, ধর্ম ও প্রজাসাধারণের মঙ্গলের জন্য যা প্রয়োজন মনে করতেন, তাই করতেন। এজন্য তাঁকে “আল খলিফাতুস সালিহ” তাঁর ন্যায়নীতি, ধর্মপরায়ণতার ফলে সুন্নি মুসলমানগণ তাঁকে পঞ্চম রাশিদুন নামে অভিহিত করেন।
→ উমর বিন আব্দুল আজিজের শাসননীতি ও বৈশিষ্ট্য : খলিফা দ্বিতীয় ওমর সর্বজনীন মানবতাবোধে উদ্বুদ্ধ হয়ে নিরপেক্ষ শাসননীতি প্রণয়ন করেন এবং সাম্রাজ্যে সুখশান্তি ও নিরাপত্তা বিধানের জন্য পূর্ববর্তী উমাইয়া খলিফাদের সাম্রাজ্যবাদী, স্বৈরাচারী ও স্বার্থান্বেষী নীতি বর্জন করেন। নিম্নে তার শাসননীতি ও এর বৈশিষ্ট্যগুলি আলোচনা করা হলো :
১. নিরপেক্ষ ও প্রজাবৎসল নীতি : জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে প্রজাপালন এবং মানবতার সেবাই ছিল দ্বিতীয় ওমরের রাজ্য শাসনের মূলমন্ত্র। ভারতের ইতিহাসের ফিরোজ শাহের মত নতুনভাবে রাজ্য বিজয় অপেক্ষা বিজিত রাজ্যের জনসাধারণের সর্বপ্রকার কল্যাণ সাধনকেই তিনি প্রকৃত রাজধর্ম বলে জ্ঞান করতেন। খলিফা অত্যাচারী ও অনুপযুক্ত শাসনকর্তাদের বরখাস্ত করে তাদের জায়গায় ন্যায়পরায়ণ ও বিশ্বস্ত লোকদের নিযুক্ত করেন। খোরাসানের শাসনকর্তা ইয়াজীদ বিন মুহালিব একবার সরকারি অর্থের সন্তোষজনক হিসাব না দিতে পারায় কারারুদ্ধ হন। স্পেনের শাসনকর্তা আল হুরও এই কারণে পদচ্যুত হয়েছিলেন। শাসনকর্তাগণকে প্রজাবৎসল ও পক্ষপাতশূন্য করার জন্য কড়া নির্দেশ প্রদান করেন।
২. অনাড়ম্বর ও আদর্শ খলিফা : কথিত আছে যে, খলিফা হবার পূর্বে তিনি ৫০,০০০ টাকা মূল্যের বিষয় সম্পত্তির মালিক ছিলেন। কিন্তু খলিফা হবার পরেই তিনি তাঁর সমস্ত সম্পত্তি জনগণের জন্য সমর্পণ করেন। নিজের ব্যয়ের জন্য শুধু ২০০ টাকা মূল্যের সম্পত্তি রাখেন। তিনি তাঁর বংশের উমাইয়াগণকে প্রয়োজনের অতিরিক্ত সম্পত্তি রাষ্ট্রের জন্য, ছেড়ে দিতে নির্দেশ দেন। স্ত্রী বিবি ফাতিমাও কড়া নির্দেশে তার পিতা ও ভ্রাতাগণের নিকট হতে প্রাপ্ত মনিমুক্তাখচিত অলঙ্কারাদি বায়তুলমালে জমা দেন। তিনি অত্যন্ত অনাড়ম্বর ও সাদাসিধা জীবনযাপন করতেন এবং জনসাধারণের কল্যাণ সাধনকেই স্বীয় জীবনের চরম লক্ষ্য বলে মনে করতেন।”
৩. হাশেমী নীতি : খলিফা দ্বিতীয় ওমর হাশেমীদের প্রতি সহানুভূতিশীল ছিলেন। পূর্বে উমাইয়া রীতি ছিল শুক্রবারের নামাজে খুতবা পাঠের সময় আলী (রা) ও তাঁর বংশধরদের প্রতি লান্নত বা অভিসম্পাদ দেওয়া তিনি তা রহিত করেন। মদীনার উত্তর-পূর্ব দিকে অবস্থিত মুহাম্মদ (সা.) ফিদক নামক যে বাগানটি মারওয়ান আত্মসাৎ করেছিল খলিফা তা ফিরিয়ে দেন। খলিফা আব্দুল মালিক মক্কায় অবস্থিত তালহার যে সমস্ত সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করেছিল তা ফিরিয়ে দেন। তাছাড়া তিনি হাশেমীদের সুযোগ সুবিধাও প্রদান করেন।
৪. খারিজি নীতি : খলিফা দ্বিতীয়-ওমর উমাইয়া বংশের চরম শত্রু খারিজিদের প্রতিও সহানুভূতিশীল ছিলেন। তিনি কুদার গভর্নর আব্দুল হামিদকে উপদেশ দিয়ে লেখেন- “যদি খারিজিগণ দেশে গোলযোগ বা রক্তপাত না করে তাহলে তাদেরকে আক্রমণ করিও না।” তার উদার নীতির ফলে তাঁর খিলাফতকালে আরব ওআফ্রিকার খারিজিগণ কোন প্রকার বিদ্রোহ করেনি। এমনকি তারা আসিমের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল পাঠিয়ে খলিফার আনুগত্য স্বীকার করে। উমাইয়া বংশের একমাত্র দ্বিতীয় ওমরকেই খারিজিগণ খলিফাবলে স্বীকৃতি জ্ঞাপন করেছিলেন।
৫. অমুসলিম নীতি : সংখ্যালঘু অমুসলিমদের প্রতিও দ্বিতীয় ওমর উদারনীতি গ্রহণ করেছিলেন। যোগ্য মুসলিম কর্মচারীর অভাব দেখা দিলে অমুসলিমদেরকেও তিনি রাজকার্যে নিয়োগ করতেন। পূর্ববর্তী খলিফাদের আমলে যে সমস্ত গির্জা ও ধর্মমন্দির মসজিদে পরিণত হয়েছিল, তিনি সেগুলো খ্রিষ্টান ও ইহুদিদেরকে | ফিরিয়ে দেন। আইলা, সাইপ্রাস ও নাজরানের খ্রিষ্টানদের বার্ষিক দেয় করও তিনি কমিয়ে দেন। মহানবির আমল হতে নাজরানের | খ্রিষ্টানগণ বার্ষিক ২,০০০ বস্ত্রখন্ড কর হিসেবে দিতো। কিন্তু | ইতোমধ্যে ধর্মান্তর, মৃত্যু ও বাস্তুত্যাগের ফলে তাদেরকে কর প্রদানে মহা অসুবিধায় পড়তে হয়। ফলে এটি খলিফার কাছে অভিযোগ করা হলে তিনি বার্ষিক কর ২,০০০ বস্ত্রখন্ডের পরিবর্তে ২০০ বস্ত্রখণ্ড করে মহত্বের পরিচয় দেন।
৬. মাওয়ালী নীতি : খলিফা ওমর সকল শ্রেণির শুভেচ্ছার উপরেই তাঁর সাম্রাজ্যের ভিত্তি সুপ্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছিলেন। এই আদর্শে প্রণোদিত হয়ে তিনি আরব ও অনারব মুসলিমদের অর্থাৎ মাওয়ালীদের মধ্যে বিদ্যমান বৈষম্য দূরীকরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। মাওয়ালীগণ ইসলামের খেদমতে আরবীয় মুসলমানদের ন্যায় যুদ্ধ এবং রাষ্ট্রীয় অন্যান্য কাজে অংশগ্রহণ করে সমাজে ও রাষ্ট্রে কোথাও | ন্যায্য অধিকার লাভ করতে পারত না। তিনি মাওয়ালীগণকে ভাতা দানের ব্যবস্থা করেন এবং তাদের খারাজ করভারও লাঘব করেন। | আব্দুল মালিক কর্তৃক তাদের উপর ধার্যকৃত জিজিয়া কর প্রদান হতেও খলিফা তাদেরকে অব্যাহতি দেন।
৭. যুদ্ধরত সেনাদের সন্তান-সন্তুতিদের বৃত্তির ব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তন : খোলাফায়ে রাশেদীনের সময়ে যুদ্ধরত সেনাদের সন্তান-সন্ততিদিগকে বায়তুল মাল হতে যে যে বিশেষ বৃত্তি দানের ব্যবস্থা ছিল তা প্রথম মুয়াবিয়া এবং আব্দুল মালিক বন্ধ করে দিয়েছিলেন। কিন্তু মহামতি দ্বিতীয় ওমর আবার এই ব্যবস্থারও পুনঃপ্রবর্তন করেন। এরূপ সমাজে রাষ্ট্রে সভা সমিতিতে এবং অন্য সকল ক্ষেত্রেই আরব মুসলমানদেরকে আরবীয় মুসলমানদের সমান অধিকার প্রদান করা হয়।
৮. ইসলাম প্রচার : রাষ্ট্র সম্প্রসারণ অপেক্ষা ইসলাম প্রচারের দিকে খলিফা ওমর বিশেষভাবে মনোযোগী ছিলেন। তাঁর নীতি ছিল, যে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করবে সে জিজিয়া কর” দেওয়া হতে রেহাই পাবে এবং অন্যান্য মুসলমানদের সম পর্যায়ভুক্ত হয়ে সকল প্রকার সুযোগ-সুবিধা ভোগের অধিকারী হবে। তাঁর এই নীতির ফলে অল্পদিনের মধ্যেই খোরাসানে এবং | মধ্য এশিয়ার বোখরা, সমরখন্দ, খাওয়ারিজম, নিশাপুর প্রভৃতি জায়গায় ইসলামের ব্যাপক প্রসার ঘটে।
৯. অমুসলমান কর্তৃক মুসলমানদের জমি ক্রয় নিষিদ্ধ : এতোদিন পর্যন্ত মুসলমানগণ খারাজের • অংশের পরিবর্তে উহার অংশ রাজস্ব প্রদান করতো। ফলে রাষ্ট্র অর্ধেক রাজস্ব হতে বঞ্চিত হতো। তাই প্রথমত তিনি মদীনার ওলামাদের সাথে একমত হয়ে ঘোষণা করেন যে, ১০০ হিজরীর (৭১৮-১৯) পরে অমুসলমানগণ মুসলমানদের নিকট খারাজ ভূমি বিক্রয় করতে পারবে না। এই নীতির ফলে রাজস্বের দিক দিয়ে ক্ষতির অপেক্ষা অনেকটা দূরীভূত হলো ।
১০. বৈদেশিক নীতি : মহামতি খলিফা দ্বিতীয় ওমর রাজ্যবিস্তারের নীতি বর্জন করে খিলাফতে শান্তি স্থাপনের বেশি পক্ষপাতি ছিলেন। তাই তিনি পূর্ববর্তী খলিফা কর্তৃক প্রেরিত সকল সীমান্ত অভিযান বন্ধ করেন এবং সেনাপতি ম্যাসলামাকে কনসট্যান্টিনোপল অবরোধ উঠিয়ে নিয়ে দেশে ফিরে আসতে নির্দেশ প্রদান করেন।
১১. স্পেনের সু-শাসনের জন্য আস-সামকে নিয়োগ : স্পেনে শাস্তি ও শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠাকল্পে খলিফা ওমর মালিকের পুত্র আস-সামকে স্পেনের গভর্নর নিযুক্ত করে প্রেরণ করেন। তিনি সেখানে ভূমি জরিপ, আমদশুমারি, সেতু, রাজপথ নির্মাণ এবং পয়ঃপ্রণালী খনন প্রভৃতি বহু জনহিতকর কার্য সম্পন্ন করেন। তিনি সারাগোসায় একটি মসজিদও নির্মাণ করেন। দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠা করার পর তিনি বিদ্রোহী খ্রিষ্টানদের আক্রমণ প্রতিহত করার উদ্দেশ্যে এক বিরাট বাহিনী নিয়ে পিরেনীজ পর্বত অতিক্রম করে ফ্রান্সের দক্ষিণাংশ দখল করেন। এরপর তিনি তুলসে পৌঁছালে তথাকার ডিউক উনেন ক্লানকিনের রাজা চার্লস মারাটলের সাহায্যে মুসলমানদের সাথে তুমুল যুদ্ধ হয়।
১২. হাদিসের খেদমত : খলিফা দ্বিতীয় ওমরের সবচেয়ে বড় অবদান ইলমে হাদিসের সংকলন। রাসুলের আমলে হাদিস লেখার প্রচলন না থাকায় এবং শতাব্দীকাল পরে হাদিসের হাফিজগণ ইন্তেকাল করতে থাকলে হাদিস বিলুপ্তির আশঙ্কায় তিনি হাদিস সংকলনের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন। তিনি গোটা সাম্রাজ্যের প্রশাসক বিশিষ্ট আলেমদের উদ্দেশ্যে এ-মর্মে ফরমান জারি করেন যে, রাসুল (সা.)-এর হাদিসসমূহের প্রতি নজর দিন এবং এটি সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করুন, কেননা আমি হাদিস বিলুপ্তির আশঙ্কা করছি।”
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, খলিফা দ্বিতীয় ওমর অন্যান্য উমাইয়া খলিফাগণ হতে সম্পূর্ণ ভিন্ন ছিলেন। তিনি খোলাফায়ে রাশেদীনের আদর্শ ও নীতি অনুসরণ করে চলতেন। তবে তার উদারনীতি গ্রহণের ফলে উমাইয়া বংশ পতনের দিকে ধাবিত হয় বলে ঐতিহাসিকগণ মনে করেন। ঐতিহাসিক পি.কে. হিটি বলেন- Though Inspired by the best of Intentions, Umor's policy was not successful. it divminished the reveneues to the stat and increased two member of clients in the cities.
আর্টিকেলের শেষকথাঃ ওমর বিন আব্দুল আজিজজের শাসননীতি ও বৈশিষ্ট্য আলোচনা কর
আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম ওমর বিন আব্দুল আজিজজের শাসননীতি ও বৈশিষ্ট্য আলোচনা কর। যদি তোমাদের আজকের এই পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো।