অখণ্ড স্বাধীন বাংলা রাষ্ট্র গঠনের উদ্যোগ সম্পর্কে সংক্ষেপে লেখ
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো অখণ্ড স্বাধীন বাংলা রাষ্ট্র গঠনের উদ্যোগ সম্পর্কে সংক্ষেপে লেখ জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের অখন্ড স্বাধীন বাংলা রাষ্ট্র গঠনের উদ্যোগ সম্পর্কে সংক্ষেপে লেখ ।
অখন্ড স্বাধীন বাংলা রাষ্ট্র গঠনের উদ্যোগ সম্পর্কে সংক্ষেপে লেখ |
অখণ্ড স্বাধীন বাংলা রাষ্ট্র গঠনের উদ্যোগ সম্পর্কে সংক্ষেপে লেখ
- অখণ্ড স্বাধীন বাংলা রাষ্ট্র গঠনের উদ্যোগ সম্পর্কে সংক্ষেপে লিখ।
- অথবা, অখণ্ড স্বাধীন বাংলা প্রতিষ্ঠার প্রয়াসে গৃহীত পদক্ষেপগুলো আলোচনা কর ।
- অথবা, অখণ্ড স্বাধীন বাংলা গঠনের পরিকল্পনা ব্যাখ্যা কর। এ পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়েছিল কেন ?
উত্তর : ভূমিকা : উপমহাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে অভিন্ন বাংলা গঠনের প্রয়াস একটি গুরুত্বপূর্ণ আলোচ্য বিষয়। ১৯৪৭ সালে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ‘স্বাধীন বাংলা' পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। তবে এ পরিকল্পনার বিষয়বস্তু ছিল বাংলায় একটি মন্ত্রিপরিষদ গঠন করা হবে যার প্রধানমন্ত্রী হবে মুসলমান হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর এ প্রস্তাবে তৎকালীন পার্লামেন্টের অনেকেই সাড়া দেয়। তারা বাংলার শাসন তান্ত্রিক কাঠামোও রচনা করেন । এ অখণ্ড বাংলার প্রস্তাবে মুসলিম লীগের একটি গ্রুপ বিরোধিতা শুরু করে। তারা লাহোর প্রস্তাবের দোহাই দিয়ে পত্রিকায় সোহরাওয়ার্দীর ও হাশিম গ্রুপের বিরুদ্ধে নানারকম অপপ্রচার শুরু করে । নিম্নে অখণ্ড বাংলা গঠনের প্রয়াসে নানারকম পদক্ষেপ ধারাবাহিকভাবে আলোচনা করা হলো :
→ অখণ্ড বাংলা গঠনের প্রয়াস : পাকিস্তান লাহোর প্রস্তাবের টি ভিত্তিতে হলেও বাংলার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা অনুযায়ী স্বাধীন অখণ্ড ন বাংলা প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। অখণ্ড বাংলা গঠনে যেসব মূলনীতিগুলো গ্রহণ করেছিলেন তা ধারাবাহিকভাবে আলোচনা করা হলো ।
১. পরিকল্পনা গ্রহণ : মাউন্ট ব্যাটেন তাঁর পরিকল্পনা প্রকাশের পূর্বে বাংলার বিষয়টি কংগ্রেস ও লীগ নেতৃত্বের নজরে আসে। বাংলার ভবিষ্যৎ প্রশ্নে আলোচনার জন্য তৎকালীন অবিভক্ত বাংলার = মুখ্যমন্ত্রী হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ১৯৪৭ সালের ২৭ এপ্রিল | | দিল্লিতে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর সঙ্গে আলোচনা করেন। উক্ত আলোচনায় জিন্নাহ কী অভিমত দিয়েছিলেন তা অজ্ঞাত থাকলেও ঐ আলোচনার কিছু দিন পরই দিল্লিতে অনুষ্ঠিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে সোহরাওয়ার্দী ‘স্বাধীন বাংলার’ পরিকল্পনা ঘোষণা করেন ।
২. মন্ত্রিসভার কাঠামো ঘোষণা : অখণ্ড বাংলা গঠনের পরিকল্পনায় বলা হয় যে বাংলার এক নতুন মন্ত্রিপরিষদ গঠন করা হবে যার প্রধানমন্ত্রী হবেন একজন মুসলমান। মন্ত্রিসভার অন্য সদস্যদের শতকরা পঞ্চাশভাগ মুসলমান ও পঞ্চাশভাগ অমুসলমান থাকবেন। এরপর প্রাপ্ত বয়স্কদের সরাসরি ভোটে পরিষদ নির্বাচিত হবে। বাংলাদেশ স্বাধীন সার্বভৌম থাকবে, না পাকিস্তানে যোগদান করবে, কি ভারতে যোগদান করবে, সে বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে নতুন গঠিত মন্ত্রিপরিষদ ।
৩. সাব কমিটি গঠন : তাৎক্ষণিকভাবে বাংলার হিন্দু-মুসলমান নেতৃবৃন্দ যুক্ত বাংলার সপক্ষে অভিমত ব্যক্ত করেন। বঙ্গভঙ্গ রোধ এবং স্বাধীন সার্বভৌম বাংলার গঠন কাঠামো কী ধরনের হবে সে প্রসঙ্গে হিন্দু-নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলাপ আলোচনার জন্য প্রাদেশিক মুসলিম লীগের কার্যকরী পরিষদের দেয়া ৩০ এপ্রিল ১৯৪৭ তারিখের সভায় মাওলানা আকরাম খাঁর সভাপতিত্বে একটি সাবকমিটি গঠন করা হয়। এ সাবকমিটির সদস্য ছিলেন হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর, হাবিবুল্লাহ বাহার, হামিদুল হক চৌধুরী, ইউসুফ আলী চৌধুরী, ফজলুর রহমান ও নূরুল আমীন ।
৪. গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি বর্গের সমর্থন : প্রাদেশিক মুসলিম লীগের উদ্যোগের প্রতি বঙ্গীয় প্রাদেশিক কংগ্রেসের প্রধান বাবু সুরেন্দ্রমোহন ঘোষ, কংগ্রেস পার্লামেন্টারি দলের বাবু কিরণ শঙ্কর রায় এবং ফরওয়ার্ডব্লক নেতা শরৎচন্দ্র বসু আশানুরূপ সাড়া দেন। ১৯৪৭ সালের ২৮ এপ্রিল থেকে ১২ মে পর্যন্ত বাংলার হিন্দু মুসলমান নেতৃবৃন্দ যুক্ত বাংলা প্রশ্নে বিভিন্ন বৈঠকে মিলিত হন। সে সময় গান্ধীজি কলিকাতায় অবস্থান করছিলেন। যুক্ত বাংলা বিষয় নিয়ে আলোচনার উদ্দেশ্যে পর্যায়ক্রমে শরৎ বাবু একাই, আব্দুল হাশিম, সোহরাওয়ার্দী ও ফজলুল রহমান এবং ১২ মে সোহরাওয়ার্দী, বগুড়ার মোহাম্মদ আলী এবং আবুল হাশিম গান্ধীজির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। ভারতীয় রাজনীতিতে গান্ধীজি তখন এক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। তাই বাঙালি জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী
নেতৃবর্গ তাঁর কাছে এসেছিলেন তার সমর্থন আদায়ের উদ্দেশ্যে। তবে তিনি স্বাধীন বাংলার বিষয়টি সুচতুরভাবে এড়িয়ে যান। তবে শরৎ বাবুকে একটি চিঠি লিখে আশ্বাস দেন যে কংগ্রেসের কার্যনির্বাহী কমিটিতে তাদের প্রস্তাব পৌঁছে দেবেন ।
৫. নীতিমালা ঘোষণা : গান্ধীজির পক্ষ থেকে সুস্পষ্ট কোনো আশ্বাস না পেয়ে শরৎচন্দ্র বসু ১৯৪৭ সালের ১২ মে একটি ৬ দফা নীতিমালা ঘোষণা করেন । নীতিমালার উল্লিখিত হয় যে- O বাংলা হবে একটি সমাজতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র ।
- সংবিধান প্রণয়নের পর বাংলার আইন পরিষদ গঠিত হবে প্রাপ্তবয়স্কদের ভোটে যৌথ নির্বাচনের মাধ্যমে ।
- এভাবে নির্বাচিত আইন পরিষদ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে যে অবশিষ্ট ভারতবর্ষের সঙ্গে বাংলার সম্পর্ক কী হবে।
- বর্তমান মুসলিম লীগ মন্ত্রিপরিষদ বিলুপ্ত করা হবে এবং একস্থান একটি সর্বদলীয়, মধ্যবর্তী মন্ত্রিপরিষদ গঠন করা হবে।
- বাংলার পাবলিক সার্ভিস বাঙালি দ্বারা গঠিত হবে এবং সেখানে হিন্দু-মুসলমানদের সমান প্রতিনিধিত্ব থাকবে।
- সংবিধান প্রণয়নের জন্য একটি অস্থায়ী গণপরিষদ গঠন করা হবে যার সদস্য সংখ্যা হবে ৬১ জন ।
৭. হিন্দু-মুসলিম সমন্বয়সাধন : অখণ্ড বাংলা গঠনের উদ্দেশ্যে ১৯৪৮ সালের ১২ থেকে ২০ মে পর্যন্ত সোহরাওয়ার্দী ও শরৎ চন্দ্র বসু প্রস্তাবসমূহ নিয়ে বাঙালি হিন্দু মুসলিম সম্মতি প্রতিষ্ঠার জন্য নেতাদের মধ্যে আলোচনা করেন। মুখ্যমন্ত্রী সোহরাওয়ার্দী মুসলিম লীগের প্রাদেশিক সেক্রেটারি আবুল হাশিম, বগুড়ার মোহাম্মদ আলী, ঢাকার ফজলুর রহমান (মন্ত্রী) বঙ্গীয় কংগ্রেস নেতা কিরণ শঙ্কর রায়, সত্যরঞ্জন বখশী ও ফরওয়ার্ডব্লক নেতা শরৎচন্দ্র বসু। নেতৃবৃন্দ ১৯৪৮ সালের ২০ মে শরৎচন্দ্র বসুর বাসায় এক সম্মেলনে বসে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলার শাসনতান্ত্রিক কাঠামোর খসড়া রচনা করেন। এই খসড়া চুক্তির শর্তসমূহ ছিল নিম্নরূপ-
(i) বাংলা হবে একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র। ভারতের অন্য অংশের সঙ্গে তার সম্পর্ক কী হবে তা এই স্বাধীন রাষ্ট্রই স্থির করবে ।
(ii) হিন্দু ও মুসলমান জনসংখ্যার অনুপাতে আসন সংখ্যা বণ্টন করে প্রাপ্তবয়স্কদের ভোটে যৌথ নির্বাচনের মাধ্যমে বাংলা আইন পরিষদ গঠিত হবে। জনসংখ্যার অনুপাতে হিন্দু ও তফসিলী সম্প্রদায়ের মধ্যে আসনসংখ্যা বণ্টন করা হবে, অথবা তারা যেভাবে মেনে নেন সেভাবে আসন সংখ্যা নির্ধারণ করতে হবে।
(iii) স্বাধীন বাংলার এরূপ পরিকল্পনা ব্রিটিশ সরকার মেনে নিলে বা বাংলা ভাগ করা হবে না এরূপ ঘোষণা দিলে, বাংলার বর্তমান মন্ত্রিসভা ভেঙে দেওয়া হবে এবং সে স্থানে একটি অন্ত বর্তীকালীন মন্ত্রিসভা গঠন করা হবে। এই মন্ত্রিসভার প্রধানমন্ত্রী হবে একজন মুসলমান এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রি হবেন একজন হিন্দু ।
(iv) নতুন সংবিধান অনুযায়ী আইন পরিষদ ও মন্ত্রিসভা গঠন না হওয়া পর্যন্ত পুলিশ ও সেনাবাহিনীসহ সকল চাকরি বাঙালিদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হবে এবং চাকরি সমানসংখ্যক বাঙালি হিন্দু ও মুসলমান নিয়োগ করা হবে।
(v) বাংলার ভবিষ্যৎ সংবিধান রচনার জন্য যে গণপরিষদ গঠিত হবে সেই গণপরিষদের মোট ৩০ জন সদস্য নির্বাচিত হবেন। তার মধ্যে ১৬ জন মুসলমান ও ১৪ জন হিন্দু সদস্য হবেন। বর্তমান আইনসভার হিন্দু ও মুসলমান সদস্যগণই উক্ত গণপরিষদের সদস্য নির্বাচন করবেন। গণপরিষদের সদস্য নির্বাচনকালে বর্তমান আইন সভার ইউরোপীয় সদস্যগণের কোনো ভোটাধিকার থাকবে না ।
— খসড়া চুক্তির প্রতিক্রিয়া : উপরিউক্ত নীতিমালা প্রণয়নের সাথে বাঙালি, কংগ্রেস এর বিরোধিতা করে। নিম্নে খসড়া আইন প্রণয়নের ফলে যে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছিল তা আলোচনা করা হলো :
১. বঙ্গীয় মুসলিম লীগের বিরোধিতা : এই খসড়া আইন প্রচারিত হবার পর বাঙালির মনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। বঙ্গীয় মুসলিম লীগের একটি গ্রুপ প্রকাশ্যে স্বাধীন অখণ্ড বাংলার প্রস্তাবের বিরোধিতা শুরু করে। এই গ্রুপের সদস্য ছিলেন মাওলানা আব্বাস খাঁ, নুরুল আমীন, হামিদুল হক চৌধুরী প্রমুখ। তারা ঘন ঘন দিল্লি যাতায়াত শুরু করেন। লাহোর প্রস্তাবের দোহাই দিয়ে। পত্রিকায় সোহরাওয়ার্দী ও হাশিম গ্রুপের বিরুদ্ধে নানারকম অপপ্রচার শুরু করা হয় ।
২. কংগ্রেসের নেতৃবৃন্দের প্রতিক্রিয়া : বঙ্গীয় প্রাদেশিক কংগ্রেস কমিটিও যুক্ত বাংলা প্রশ্নে বিপাকে পড়ে। বাংলার কংগ্রেসের নেতৃবৃন্দ সর্দার বল্লভ ভাই প্যাটেলের সঙ্গে আলোচনা করতে গেলে তিনি যুক্ত বাংলার বিরোধিতা করেন। তিনি যুক্তি দিয়ে বলেন যে যেহেতু বিভাগ পরিকল্পনার কলকাতাসহ পশ্চিম বাংলা ভারতের অন্তর্ভুক্ত হওয়া নিশ্চিত প্রায়। অতএব যুক্ত বাংলার খপ্পরে, পড়া হিন্দু নেতৃবর্গের উচিত হবে না। ফলে শেষ পর্যন্ত যুক্তবাংলা পরিকল্পনার প্রতি শরৎ বাবু এবং কিরণ শঙ্কর রায় ব্যতীত কোনো হিন্দু নেতার সমর্থন রইলো না। ‘অমৃত বাজার' পত্রিকা প্রকাশ্যে যুক্তবাংলার বিরোধিতা শুরু করে হিন্দু মহাসভা বাংলা বিভাগের দাবিতে আন্দোলন শুরু করে।
৩. মুসলিম লীগের দুমুখো নীতি : উপরে উল্লিখিত অবস্থায় মুসলিম লীগ আন্দোলন করে বাংলা বিভাগ রোধ করতে পারতো কিন্তু কেন্দ্রীয় লীগ হাইকমান্ড বাংলা প্রশ্নে এক নিশ্চুপ ভূমিকা পালন করতে থাকে। মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ বাংলার ভবিষ্যৎ বিষয়ে সোহরাওয়ার্দী হাশিম গ্রুপের পরিকল্পনার প্রতি মৌন সমর্থন দিলেও কেন্দ্রীয় লীগের একটি গ্রুপ বাংলা লীগের মাওলানা আকরাম নাজিমউদ্দিন গ্রুপকে স্বাধীন বাংলা পরিকল্পনা বানচাল করার প্ররোচনা দিতে থাকে ।
৪. বঙ্গভঙ্গ : মাউন্ট ব্যাটেন পরিকল্পনানুযায়ী বাংলার হিন্দু ও মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ জেলাসমূহের সংসদ সদস্যগণ ১৯৪৭ সালের ২০ জুন পৃথক পৃথক বৈঠকে বসেন। মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ জেলাসমূহের প্রতিনিধি বর্গ ১০৬৩৫ ভোটে অখণ্ড বাংলার প্রতি সমর্থন দেন। অপরপক্ষে হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ জেলাসমূহের প্রতিনিধিবর্গ বর্ধমানের মহারাজ্যের সভাপতিত্বে মিলিত হয়ে ৫৮ : ২১ ভোটে বাংলায় বিভক্তির পক্ষে মত ব্যক্ত করেন। ফলে বাংলা, পূর্ব বাংলা ও পশ্চিম বাংলা এই দুই অংশে বিভক্ত হয় পূর্ব বাংলার প্রতিনিধিবর্গ ১০৭ : ৩৪ ভোটে পাকিস্ত গানে যোগদানের পক্ষে এবং পশ্চিম বাংলার প্রতিনিধিবর্গ ৫৮ : ২১ ভোটে ভারতবর্ষে যোগদানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। পূর্ব বাংলার যে ৩৪ জন বাংলা বিভক্তির পক্ষে এবং পাকিস্তানে যোগদানের বিপক্ষে কিন্তু ভারতে যোগদানের পক্ষে ভোট দেন তারা সকলেই ছিলেন কংগ্রেস দলীয় সদস্য। তাদের মধ্যে কিরণ শঙ্কর অন্যতম অপর পক্ষে পশ্চিম বাংলার যে ২১ জন বাংলার বিভক্তির বিপক্ষে ভোট দেন তারা সকলেই ছিলেন মুসলিম লীগ দলীয় সদস্য। হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী এই দলভুক্ত ছিলেন তবে এ. কে. ফজলুল হক ভোটাভুটিতে অংশ নেননি।
৫. ঢাকায় পূর্ববঙ্গের রাজধানী স্থাপন : বঙ্গভঙ্গের ভোটাভোটি সম্পন্ন হওয়ার পর সোহরাওয়ার্দী মন্ত্রিসভা কলকাতা ত্যাগ না গঠ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। মন্ত্রিসভার সদস্য বগুড়ার মোহাম্মদ ১৯ আলী এক বিবৃতিতে দাবি করেন যে, কলকাতা পূর্ববঙ্গের অন্তর্ভুক্ত আ করতে হবে এবং কলকাতা থেকেই পূর্ববঙ্গ শাসন করা হবে তিনি সে দৃঢ় অভিমত ব্যক্ত করেন। তবে কলকাতা ত্যাগ করতে হলে তার সে বিনিময়ে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ প্রদান করতে হবে বলে তিনি দাবি করেন কিন্তু বাংলা মুসলিম লীগ তখন ক্ষমতা দখলের লড়াই চরমে নে উঠেছে। কলকাতা পূর্ব বাংলার অন্তর্ভুক্ত করা কিংবা কলকাতার প্র বিনিময়ে ক্ষতিপূরণ আদায়ের সংগ্রাম যখন গতিশীল হচ্ছিল ঠিক বা সেই সময় ২৭ জন প্রাদেশিক মুসলিম লীগের ওয়ার্কিং কমিটির এক জরুরি সভায় মাত্র ৬ জন সদস্যের উপস্থিতিতে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় যে ঢাকায় পূর্ব বঙ্গের রাজধানী স্থাপিত হবে।
এভাবেই বাংলা বিভক্তির ক্ষেত্রে প্রস্তুত হয়, ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ ১৮ জুলাই ১৯৪৭ ভারত স্বাধীন আইনে বাংলাকে দ্বিখণ্ডিত করে পশ্চিম বাংলাকে ভারতের অন্তর্ভুক্ত এবং পূর্ব বাংলাকে পাকিস্তানের অংশ বলে ঘোষণা করে । এভাবেই স্বাধীন বাংলার স্বপ্ন ধূলিসাৎ হয়।
সমালোচনা : অখণ্ড বাংলা প্রতিষ্ঠার যে উদ্যোগ তৎকালীন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী নিয়েছিলেন পূর্ববঙ্গের মুসলিম লীগ এর বিরোধিতা করে অখণ্ড বাংলার স্বপ্নকে ধূলিসাৎ করে দেন। কংগ্রেস ক্ষমতার মোহে বিভক্তির বিরোধিতা করেছিল।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, লাহোর প্রস্তাবের পর অখণ্ড বাংলা গঠনের যে উদ্যোগ গ্রহণ করে তা বাস্তবায়ন হলে কংগ্রেসের ক্ষমতা এবং মুসলিম লীগের ক্ষমতার সমাধি রচিত হতো। তাই কংগ্রেস ও মুসলিম লীগের হাইকমান্ড বাংলাকে কখনই সমর্থন করতে পারেনি। বাংলা বিভক্তি হলে পশ্চিম বাংলার ক্ষতি হত না, বরং সেখানে চিরকাল হিন্দুদের পক্ষে চিরকালই প্রাদেশিক সরকার গঠন করা সম্ভব কিন্তু ব্রিটিশরা বঙ্গভঙ্গ করে এটা চিরতরে ধূলিসাৎ করে দেন।
আর্টিকেলের শেষকথাঃ অখণ্ড স্বাধীন বাংলা রাষ্ট্র গঠনের উদ্যোগ সম্পর্কে সংক্ষেপে লেখ
আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম অখন্ড স্বাধীন বাংলা রাষ্ট্র গঠনের উদ্যোগ সম্পর্কে সংক্ষেপে লেখ টি। যদি তোমাদের আজকের এই পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো।