অখণ্ড বাংলা আন্দোলন কি
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো অখণ্ড বাংলা আন্দোলন কি জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের অখণ্ড বাংলা আন্দোলন কি ।
অখণ্ড বাংলা আন্দোলন কি |
অখণ্ড বাংলা আন্দোলন কি
অথবা, অখণ্ড বাংলা আন্দোলন বলতে কি বুঝ?
অথবা, অভিন্ন/অখণ্ড স্বাধীন বাংলা আন্দোলন সম্পর্কে কি জান
অথবা, অখণ্ড/অবিভক্ত স্বাধীন বাংলা আন্দোলন কি ?
উত্তর : ভূমিকা : ব্রিটিশদের প্রায় দুইশত বছরের শাসনে- শোষণের শেষপ্রান্তে যখন ভারত উপমহাদেশের বিভক্তি অনিবার্য তখন অবিভক্ত বাংলার সর্বশেষ মুখ্যমন্ত্রী হোসেন শহীদ সোহ্রাওয়ার্দী ২৭ এপ্রিল ১৯৪৭ সালে দিল্লিতে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে ‘স্বাধীন অখণ্ড বাংলা রাষ্ট্র' প্রতিষ্ঠার আনুষ্ঠানিক উদ্যোগ গ্রহণের কথা ঘোষণা করেন। এই উদ্যোগের সঙ্গে বঙ্গীয় প্রাদেশিক মুসলিম লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশিম, শরৎচন্দ্র বসু ও বঙ্গীয় প্রাদেশিক কংগ্রেসের সংসদীয় দলের নেতা কিরণ শংকর রায় প্রমুখ ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত ছিলেন। এ প্রচেষ্টা সফল হলে ১৯৪৭ সালেই ভারত ও পাকিস্তানের পাশাপাশি অখণ্ড বাংলা তৃতীয় স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আবির্ভূত হতো।
→ অখণ্ড স্বাধীন বাংলা আন্দোলন : দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে উপনিবেশসমূহে স্বাধীনতা লাভের আকাঙ্ক্ষা তীব্র হয়ে উঠে। ফলে নতুন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী এটলির বিখ্যাত ফেব্রুয়ারি ঘোষণা ভারত ও পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্র প্রস্তুত হয়। তখন পরিস্থিতিতে কাল বিলম্ব না করে হিন্দু সাম্প্রদায়িক সংগঠন 'হিন্দু মহাসভা' বাংলাকে বিভক্ত করে কলকাতাসহ হিন্দু প্রধান অংশ নিয়ে একটি আলাদা প্রদেশ গঠনের আন্দোলন শুরু করে এবং কংগ্রেস তা সমর্থন করে। বাংলাকে ভাগ করার আন্দোলনের সমর্থনে কলকাতাস্থ বাঙালি-অবাঙালি শিল্প ও বণিক সমিতিসমূহ সক্রিয়ভাবে এগিয়ে আসে। প্রভাবশালী দৈনিক হিন্দু পত্রিকাসমূহ এ আন্দোলনের সমর্থনে জনমত গঠনে ব্যাপক প্রচারাভিযানে লিপ্ত হয়। অন্যদিকে জিন্নাহর পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার আন্দোলনও তখন তুঙ্গে এমনি এক পরিস্থিতিতে ১৯৪৭ সালের ২৭ এপ্রিল দিল্লির সংবাদ সম্মেলনে ‘স্বাধীন অখণ্ড বাংলা রাষ্ট্র' প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ ঘোষণাকালে সোহ্রাওয়ার্দী একটি দীর্ঘ বক্তব্য পেশ করেন। তিনি তাঁর বক্তব্যে বাংলা বিভক্তির দাবির পেছনে দায়ী হিন্দু মন-মানসিকতা ও দৃষ্টিভঙ্গি, এ দাবির অযৌক্তিকতা, বাংলা বিভক্তির পরিণতি, বাংলার ঐক্যবদ্ধ থাকার অপরিহার্যতা, স্বাধীন অখণ্ড বাংলা রাষ্ট্রে হিন্দু-মুসলমান সম্পর্ক এবং এ রাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ ইত্যাদি বিষয়ে আলোকপাত করেন। হিন্দু মহাসভা ও কংগ্রেসের বাংলা বিভক্তির দাবিকে অদূরদর্শী ও ‘পরাজিতের মানসিকতা' বলে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি বলেন, “স্বাধীন বাংলা রাষ্ট্রে আমরা সবাই এক সঙ্গে বসে এমন একটি সরকার ব্যবস্থা প্রণয়ন করতে সক্ষম হবো, যা সকলের সন্তুষ্টি বিধান করতে পারে।” বাংলা বিভক্তি হিন্দুদের জন্য আত্মহত্যার সামিল হবে-এ অভিমত ব্যক্ত করে তিনি দৃঢ়ভাবে ঘোষণা করেন যে, ‘অর্থনৈতিক ঐক্য, পারস্পরিক নির্ভরশীলতা এবং একটি কার্যকর শক্তিশালী রাষ্ট্র গঠনের আবশ্যিকতা বিবেচনায় বাংলা সর্বদাই অবিভাজ্য। তিনি বলেন, “এটা বস্তুত একটি মহান দেশে পরিণত হবে। ভারত উপমহাদেশে যা হবে সবচেয়ে সমৃদ্ধ। এখানে জনগণ উন্নত জীবন ধারণের সুবিধা নিয়ে উন্নতির চরম শিখরে পৌছাতে সক্ষম হবে। কৃষি, শিল্প, বাণিজ্য ক্ষেত্রে সমৃদ্ধি অর্জন করে কালক্রমে এ দেশ বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী ও উন্নত রাষ্ট্রের মর্যাদা অর্জন করতে সক্ষম হবে। সোহ্রাওয়ার্দী আরও অভিমত ব্যক্ত করেন যে, -মুসলমানরা সম্মিলিতভাবে বাংলাকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে সক্ষম হলে, ভবিষ্যতে এ বাংলার সঙ্গে বিহার প্রদেশের মানভূম, সিংভূম, পূর্ণিয়া জেলা ও আসামের সংযুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ছিল সোহ্রাওয়ার্দীর অখণ্ড স্বাধীন বাংলা আন্দোলন ।
উপসংহার : উপরিউক্ত আলোচনা পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, ১৯৪৭ সালের উপমহাদেশের বিভক্তির শেষলগ্নে সোহ্রাওয়ার্দীসহ কতিপয় নেতার অখণ্ড স্বাধীন বাংলা রাষ্ট্র গঠনের উদ্যোগ নিঃসন্দেহে অত্যন্ত তৎপর্যপূর্ণ। এর প্রেক্ষাপট, পরিকল্পনা, বসু-সোহ্রাওয়ার্দী চুক্তি, এর বিরুদ্ধে তীব্র-বিরোধিতা ও বিভিন্ন কারণে স্বাধীন অখণ্ড | বাংলা রাষ্ট্র গঠন স্বপ্নই থেকে যায়। কেননা স্বাধীন অখণ্ড বাংলা রাষ্ট্রের ভাগ্য কার্যত বাংলা বাইরে সর্বভারতীয় পর্যায় নির্ধারিত হয়েছিল ।
আর্টিকেলের শেষকথাঃ অখণ্ড বাংলা আন্দোলন কি
আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম অখণ্ড বাংলা আন্দোলন কি টি। যদি তোমাদের আজকের এই পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো।