নাইসিফোরাসের সাথে খলিফা হারুন অর রশিদের সম্পর্ক আলোচনা কর
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো নাইসিফোরাসের সাথে খলিফা হারুন অর রশিদের সম্পর্ক আলোচনা কর জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের নাইসিফোরাসের সাথে খলিফা হারুন-অর-রশিদের সম্পর্ক আলোচনা কর।
নাইসিফোরাসের সাথে খলিফা হারুন অর রশিদের সম্পর্ক আলোচনা কর |
নাইসিফোরাসের সাথে খলিফা হারুন অর রশিদের সম্পর্ক আলোচনা কর
উত্তর : ভূমিকা : ৭৮৬ খ্রিস্টাব্দে মাত্র ২৫ বছর বয়সে হারুন- অর-রশীদ ভ্রাতা হাদীর মৃত্যুর পর বাগদাদের সিংহাসনে আরোহণ করেন। তিনি ৮০৯ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ২৩ বছর আব্বাসীয় সাম্রাজ্য পরিচালনা করেন। সিংহাসনে আরোহণ করে তিনি কতিপয় সফল বৈদেশিক নীতি গ্রহণ করেন। তার মধ্যে অন্যতম ছিল নাইসিফোরাসের সাথে সন্ধি চুক্তি।
→ নাইসিফোরাসের সাথে খলিফা হারুন-অর-রশিদের সম্পর্ক : নিম্নে নাইসিফোরাসের সাথে খলিফা হারুন-অর-রশিদের সম্পর্ক আলোচনা করা হলো-
১. নাইসিফোরাসের সিংহাসন দখল : ৮০২ খ্রিস্টাব্দে সরকারি কোষাধ্যক্ষ নাইসিফোরাস সম্রাজ্ঞী আইরিনকে সিংহাসনচ্যুত করে স্বয়ং সম্রাট হন। মুসলমানদের সাথে সম্রাজ্ঞী আইরিনের যে সন্ধি হয়েছিল, তা তিনি ভঙ্গ করেন ক্ষমতা লাভ করে স্কুলবুদ্ধিসম্পন্ন এবং অবিবেচক নাইসিফোরাস ঔদ্ধতা এবং বিশ্বাসঘাতকতার পরাকাষ্ঠা দেখিয়ে খলিফা হারুনের নিকট ৮০৩ খ্রিস্টাব্দে একটি অপমানজনক পত্র লিখেন। এ সম্পর্কে এস. এফ. মাহমুদ তাঁর 'A Short History of Islam' গ্রন্থে বলেন, তিনি শুধু সন্ধির অনুসন্ধান করেন নি বরং যে পরিমাণ অর্থ কর হিসেবে আইরিন হারুনকে দিয়েছিল তা বাইজান্টাইন কোষাগারে ফেরত চেয়ে হারুনের নিকট একটি চরমপত্র প্রেরণ করেছিলেন।
২. নাইসিফোরাসের ঔদ্ধত্যপূর্ণ চিঠি : সন্ধির শর্ত প্রত্যাখ্যান করে নাইসিফোরাস খলিফাকে লিখেন রোমান সম্রাট নাইসিফোরাসের নিকট হতে আরবদের নৃপতি হারুনের নিকট আমার পূর্ববর্তী সম্রাজ্ঞী আপনাকে অহেতুক প্রভূত মর্যাদা দান করে স্বীয় প্রতিপত্তি ক্ষুণ্ণ করেন এবং নারীসুলভ দুর্বলতা ও নির্বুদ্ধিতার জন্য আপনার নিকট স্বীয় ঐশ্বর্য দান করেন। সুতরাং আপনি পত্র পাঠমাত্র কালবিলম্ব না করে প্রেরিত অর্থের দ্বিগুণ অর্থ প্রত্যর্পণ করুন নতুবা তরবারিই আমার ও আপনার মধ্যে মীমাংসা করবে। নাইসিফোরাসের অপমানজনক ও ঔদ্ধত্যপূর্ণ চিঠি পাঠ করে খলিফা ক্ষোভে এতোই উত্তেজিত হয়ে উঠেন যে, তার মুখের দিকে তাকাতে কেউ সাহস করল না এবং ভয়ে সভাসদগণ স্থান ত্যাগ করলেন। বাইজান্টাইন সম্রাটের চিঠির জবাবে খলিফা প্রত্যুত্তর পাঠান। তিনি লিখেন, “বিশ্বাসীদের নেতা খলিফা হারুনের নিকট হতে রোমানদের কুকুর নাইসিফোরাসের নিকট যে পৌত্তলিক মায়ের সন্তান পত্রের উত্তর কর্ণে শুনতে হবে না; স্বচক্ষেই অবলোকন করতে পারবে” ।
৩. যুদ্ধাভিযান : রোমান সম্রাটের পত্রের প্রত্যুত্তর প্রেরণ করার সাথে সাথে খলিফা হারুন একটি বিশাল সৈন্যবাহিনী নিয়ে স্বয়ং বাইজান্টাইন সম্রাটকে সমুচিত শিক্ষ প্রদানের উদ্দেশ্যে কনস্টান্টিনোপলের দিকে অগ্রসর হন। কোনোরূপ বাধা-বিপত্তি সম্মুখীন না হয়ে তিনি হিরাক্লিয়াস ও টিরানা অধিকার করলেন। এভাবে নাইসিফোরাসকে পরাজিত করে তাকে শান্তি চুক্তি সম্পাদন এবং কর প্রদানে বাধ্য করেন।
৪. নাইসিফোরাসের বিশ্বাসঘাতকতা : খলিফা হারুন-অর-রশীদ নাইসিফোরাসকে যুদ্ধে পরাজিত করে তাকে শান্তিচুক্তিতে বাধ্য করেন । নাইসিফোরাস সন্ধি প্রার্থনা করলে খলিফা তার প্রার্থনা মঞ্জুর করেন। কিন্তু খলিফা রাক্কায় প্রত্যাবর্তন করলে নাইসিফোরাস চুক্তিভঙ্গ করে বিশ্বাসঘাতকতার পরিচয় দেন।
৫. নাইসিফোরাসের দ্বিতীয় পরাজয় : খলিফা রাক্কায় প্রত্যাবর্তন করলে নাইসিফোরাস পুনরায় চুক্তিভঙ্গ করে মুসলিম সাম্রাজ্য আক্রমণ করলে খলিফা হারুন তার বিরুদ্ধে দ্বিতীয়বার অভিযান পরিচালনা করে সমুচিত শিক্ষা দেন। এবারেও বাইজান্টাইন সম্রাট করদানে সম্মত হয়ে সন্ধি প্রস্তাব করলে মহান ও সুহৃদয় খলিফা তার প্রার্থনা মঞ্জুর করেন।
৬. নাইসিফোরাসের তৃতীয় পরাজয় : কপটতা ও ধূর্ততার প্রতীক নাইসিফোরাস খলিফার ট্রান্সঅক্সিয়ানায় বিদ্রোহ দমনে ব্যস্ত থাকার সুযোগে তৃতীয়বার সন্ধি ভঙ্গ করেন এবং মুসলিম সাম্রাজ্যের সীমান্তে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেন। এবার বিশ্বাসঘাতক নাইসিফোরাসকে সমুচিত শিক্ষা দেওয়ার অভিপ্রায়ে হারুন ১,৩৫,০০০ সৈন্যসহ বাইজান্টাইনদের বিরুদ্ধে তৃতীয়বারের মতো যুদ্ধাভিযান করেন, নাইসিফোরাস আবার শোচনীয়ভাবে পরাজিত হয়ে শান্তি প্রার্থনা করেন। খলিফা তাঁর সপরিণামদর্শী ক্ষমা দ্বারা তার প্রার্থনা মঞ্জুর করেন। হারুন এবার বর্ধিত হারে কর প্রদানে বাধ্য করেন। এ সম্পর্কে এস. এফ. মাহমুদ তাঁর 'A Short History of Islam' গ্রন্থে বলেন, “এশিয়া মাইনরের দুটি গুরুত্বপূর্ণ শহর আইকোনিয়াম ও ইফিসাস দখল করা হয় এবং নাইসিফোরাস উপযুক্ত শিক্ষা পেয়ে বর্ধিত হারে কর প্রদান ছাড়াও সম্রাট নাইসিফোরাস এবং রাজ পরিবারের প্রত্যক সদস্যের উপর কর প্রদানে বাধ্য হন।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, খলিফা হারুন অর রশিদের নিকট বারবার বাইজান্টাইনদের পরাজয় আব্বাসীয় খিলাফতের ইতিহাসে এক গৌরবময় অধ্যায়। নাইসিফোরাসের ধৃষ্টতা, কপটতা আর বিশ্বাসঘাতকতা করলেও খলিফা প্রতিবারই তাকে বলেন, “বাইজান্টাইন শাসনের অবসান ঘটলে এবং কনস্টান্টিনোপল মুসলমানগণ দখল করলে তা পৃথিবীর শান্তি ও সভ্যতার জন্য মঙ্গলজনক হতো।”.
আর্টিকেলের শেষকথাঃ নাইসিফোরাসের সাথে খলিফা হারুন অর রশিদের সম্পর্ক আলোচনা কর
আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম নাইসিফোরাসের সাথে খলিফা হারুন অর রশিদের সম্পর্ক আলোচনা কর। যদি তোমাদের আজকের এই পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো।