আব্বাসীয় আন্দোলন মাওয়ালীদের ভূমিকা উল্লেখ কর
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো মাওয়ালি কারা। আব্বাসীয় আন্দোলন মাওয়ালীদের ভূমিকা উল্লেখ কর জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের মাওয়ালি কারা। আব্বাসীয় আন্দোলন মাওয়ালীদের ভূমিকা উল্লেখ কর ।
মাওয়ালি কারা। আব্বাসীয় আন্দোলন মাওয়ালীদের ভূমিকা উল্লেখ কর |
মাওয়ালি কারা। আব্বাসীয় আন্দোলন মাওয়ালীদের ভূমিকা উল্লেখ কর
উত্তর : ভূমিকা : হজরত মুহাম্মদ (সা.) ও খোলাফায়ে রাশেদীনের আমলে মাওয়ালিরা ইসলামের পূর্ণ সুযোগ-সুবিধা ভোগ করতো। কিন্তু ইসলামি খিলাফতের পতনের পর উমাইয়া বংশ প্রতিষ্ঠিত হলে তারা মাওয়ালিদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করে। উমাইয়ারা মাওয়ালিদের সাথে বৈষম্যমূলক আচরণ শুরু করলে মাওয়ালিরা বিদ্রোহী হয়ে ওঠে। যা পরবর্তীতে উমাইয়া বংশ পতনে সাহায্য করে।
মাওয়ালিসের পরিচয় : মাওয়ালি শব্দটি বহুবচন। একবচনে মাওলা। এর অর্থ অভিভাবক বা আশ্রিত ব্যক্তি। প্রাচীন | আরব সমাজে আশ্রিত জনগোষ্ঠীকে মাওয়ালি বলা হতো। কিন্তু পরবর্তীতে বিজিত অঞ্চলের নওমুসলিমরাও মাওয়ালির অন্তর্ভুক্ত হয়। মাওয়ালিরা প্রথমদিকে কোনো আরব গোত্রের সাথে একত্রিত হয়ে বসবাস করতো। কিন্তু পরবর্তীতে মাওয়ালিদের | সংখ্যা অত্যধিক বেড়ে গেলে গোত্রভিত্তিক প্রথার পরিবর্তে তারা | সাধারণ মাওয়ালির মর্যাদা লাভ করে। ইসলামের প্রথমদিকে মাওয়ালিদেরকে উঁচু মর্যাদা দেওয়া হতো। কিন্তু পরবর্তীতে ইসলামের সীমা আরব পেরিয়ে বহির্বিশ্বে প্রসার লাভ করে। ফলে আরবের বাইরে অনারব মুসলমানদের মাওয়ালি বলা হতো। এ সময় গোত্রীয় মাওয়ালির পরিবর্তে মাওয়ালি আল ইসলাম বা ইসলামের মাওয়ালি হিসেবে পরিচিত লাভ করে। ঐতিহাসিক শেখ লুৎফর রহমান তার “ইসলামি রাষ্ট্র ও সমাজ ” গ্রন্থে তিন প্রকার মাওয়ালির কথা বলেছেন। যথা-
১. ইসলামের প্রাথমিককালে আরবদের মধ্যে গোত্রীয় যুদ্ধ সংগঠিত হতো। এ গোত্রীয় যুদ্ধে পরাজিত গোত্রের বন্দিরা বিজিতদের অধীনে চলে আসে। তাদের মুক্তির শর্ত ছিল, তারা আরবের কোনো গোত্রের সাথে বসবাস করতে পারবে, কিন্তু | দেশে ফিরে যেতে পারবে না। সাধারণত যে যে গোত্রের অধীনে থাকতো তাকে সে গোত্রের মাওয়ালি বলা হতো।
২. অনেক সময় মুক্তিপ্রাপ্ত কোনো দাস তার মনিবের আশ্রয়ে থেকে যেত। তখন তাকে ঐ পরিবারের মাওয়ালি হিসেবে বিবেচনা করা হতো।
৩. কোনো আগন্তুক যদি আরবের কারো বাড়িতে আশ্রয় নিতো এবং উক্ত পরিবারে থেকে যেত। তবে তাকে ঐ পরিবারের মাওয়ালি হিসেবে গণ্য করা হতো। আর এ ধরনের মাওয়ালিকে ‘মাওয়ালি আদ্-দাখিল' বলা হতো।
→ আব্বাসীয় আন্দোলনের মাওয়ালীদের ভূমিকা : নিম্নে আব্বাসীয় আন্দোলনের মাওয়ালীদের ভূমিকা বর্ণনা করা হলো :
১. শউবিয়া আন্দোলন : উমাইয়াদের কাণ্ডজ্ঞানহীন আচরণে আহত হয়ে উন্নত কৃষ্টি ও সংস্কৃতিসম্পন্ন পারসিক মাওয়ালীগণ বর্বর ও অশিক্ষিত আরবদের ঠুনকো অভিজাত্যের মূলে কুঠারাঘাত করার জন্য সচেষ্ট হয়। মাওয়ালিদের একটি অংশ উমাইয়াদের ন্যায় সমর্যাদা দাবি করে। আবার সাহসী মাওয়ালিদের কেউ কেউ দাবি করেই বসতে যে, আরবগণ অনেক দিক দিয়েই তাদের চেয়ে উন্নত নয়। উমাইয়াদের সাথে মাওয়ালিদের সাথে এ মানসিক দ্বন্দ্বই ইতিহাসে শউবিয়া আন্দোলন নামে পরিচিত। এই আন্দোলনের ফলেই মাওয়ালিগণ উমাইয়া বিরোধী বৃহত্তর আন্দোলনের যোগ দেয়।
২. আব্বাসীয় আন্দোলনের মাওয়ালিদের যোগদান : আব্বাসীয়গণ উমাইয়া বিরোধী আন্দোলন শুরু করলে মাওয়ালিগণ সুযোগ বুঝে এদের সাথে যোগদান করেন। আব্বাসীয় আন্দোলনের মূল উদ্যোক্তা মুহম্মদ-বিন-আলী এ মর্মে প্রচারণা চালায় যে, তারা মহানবি তথা ফাতেমী বংশীয়দের দাবি প্রতিষ্ঠার জন্যই সংগ্রাম করছে এবং সেই সাথে তারা উমাইয়াদের জুলুমবাজ ও অত্যাচারী হিসেবে চিহ্নিত করলে উমাইয়াদের প্রতি আজন্ম বিরাগ ও বিদ্বেষী পারসিক মাওয়ালিগণ তাদের অকুণ্ঠ সমর্থন জানায় ।
৩. মাওয়ালি আবু মুসলিমের উত্থান : আব্বাসীয় আন্দোলনের উদ্যোক্তা মুহম্মদ-বিন-আলী ৭৪৪ সালে মৃত্যুর পূর্বে তদীয় জ্যেষ্ঠ পুত্র ইব্রাহিমকে নেতা নির্বাচিত করে যান এবং তাকে সাহায্য করার জন্য আবু মুসলিম খোরাসানি নামক একজন আরব বংশোদ্ভূত পারসিক মাওয়ালিকে নিযুক্ত করেন। অসাধারণ সাংগঠনিক দক্ষতাসম্পন্ন আবু মুসলিম ছিলেন ধৈর্যশীল, সংগ্রামী ও তীক্ষ্ণ বুদ্ধিসম্পন্ন। তিনি উমাইয়া বিরোধী আব্বাসীয় আন্দোলনের প্রাণ সঞ্চালক হিসেবে কাজ করেন।
৪. আবু মুসলিম বিপ্লবী প্রচারণা ও খোরাসান দখল: আব্বাসী আন্দোলনকে বিপ্লবে পরিণত করার সেরা কারিগর ছিলেন আবু মুসলিম। তিনি খোরাসানের অধিবাসী ছিলেন। আবু মুসলিমের বলিষ্ঠ নেতৃত্বের কারণে খোরাসানে আব্বাসীয় আন্দোলনের শক্তিশালী কেন্দ্রে পরিণত হয়। খোরাসানের উমাইয়া শাসনকর্তা নসর ইবনে সাইয়ার যখন খারিজি বিদ্রোহী দমনে ব্যস্ত ঠিক সেই সময় ৭৪৭ সালে আবু মুসলিম নিজেকে আল হাশিম বলে ঘোষণা করেন এবং আব্বাসয়দের কালো পতাকা উত্তোলন করে খোরাসান ও ফারগনা দখল করে।
৫. ইমাম ইব্রাহিম গ্রেফতার ও হত্যাকাণ্ড : খোরাসান এর পতনের পর উমাইয়া খলিফা ইব্রাহিমকে বন্দি করার আদেশ দেন। কিন্তু তার গ্রেফতারের পরও আবু মুসলিমের কার্যকলাপ বন্ধ হলো না। উমাইয়া বিরোধী ইব্রাহিমকে বন্দি ও পরে হত্যা করা হয় ।
৬. আবু মুসলিমের ইরাক দখল : ইমাম ইব্রাহিম হত্যার পর আবু মুসলিম তার সেনাপতি কাহতাবা ও খালিদ বিন বার্মাককে প্রাচীন রাই শহরের অভিমুখে প্রেরণ করেন। উমাইয়া শাসক ইয়াজিদ আবু মুসলিমের কাছে পরাজিত হলে তিনি ইরাক দখল করেন।
৭. নিহওয়ান্দ ও মেসোপটেমিয়া অধিকার : আবু মুসলিমের সেনাপতি আবু আয়ান মাওয়ানের পুত্র আব্দুল্লাহকে পরাজিত করে পারস্যের নিহওয়ান্দ ও মেসোপটেমিয়া অধিকার করেন।
৮. জাবের যুদ্ধ এবং উমাইয়াদের পতন : আবু মুসলিমের সেনাপতি আবু আয়ুন দ্বিতীয় মাওয়ানের পুত্র আব্দুল্লাহকে পরাজিত করেন। এর প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য তিনি ৭৫০ খ্রিস্টাব্দে ১ লক্ষ ২০ হাজার সৈন্য নিয়ে জাব নদীর দিকে অগ্রসর হন। এরপর উভয়ের মধ্যে যুদ্ধ সংঘটিত হয়। এ যুদ্ধে দ্বিতীয় মাওয়ান পরাজয় বরণ করেন।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, উন্নত, সভ্য, শিক্ষিত ও নানা বিদ্যায় পারদর্শী মাওয়ালি বিশেষ করে পারসিক মাওয়ালিদের প্রতিভাকে নিজেদের ভাগ্যোন্নয়নের কাজে না লাগিয়ে বরং তাদের অসম্মান ও হয় করে উমাইয়াগণ নিজেদের সর্বনাশ ডেকে এনেছিলেন। পক্ষান্তরে আব্বাসীয়রা মাওয়ালিদের প্রতিভার মূল্যায়ন করে নিজেদের ভাগ্য গড়ে নিয়েছিলেন।
আর্টিকেলের শেষকথাঃ মাওয়ালি কারা। আব্বাসীয় আন্দোলন মাওয়ালীদের ভূমিকা উল্লেখ কর
আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম মাওয়ালি কারা। আব্বাসীয় আন্দোলন মাওয়ালীদের ভূমিকা উল্লেখ কর। যদি তোমাদের আজকের এই পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো।