লাহোর প্রস্তাবের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় কি ছিল
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো লাহোর প্রস্তাবের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় কি ছিল জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের লাহোর প্রস্তাবের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় কি ছিল ।
লাহোর প্রস্তাবের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় কি ছিল |
লাহোর প্রস্তাবের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় কি ছিল
- ১৯৪০ সালের লাহোর প্রস্তাবের প্রেক্ষাপট/পটভূমি বর্ণনা কর। এই প্রস্তাবের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় বিশ্লেষণ কর।
- অথবা, ১৯৪০ সালের লাহোর প্রস্তাবের প্রেক্ষাপট কি ছিল? এই প্রস্তাবের মূল প্রতিপাদ্য বিষয়গুলো আলোচনা কর।
- অথবা, লাহোর প্রস্তাবের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় কি ছিল?
- অথবা, লাহোর প্রস্তাবের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় কি ছিল? এ প্রস্তাবের তাৎপর্য বিশ্লেষণ কর।
উত্তর : ভূমিকা : লাহোর প্রস্তাব ব্রিটিশ ভারতের মুসলমানদের রাজনৈতিক ইতিহাসে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। কেননা এ ঐতিহাসিক প্রস্তাব গ্রহণের পর মুসলমানদের রাজনৈতিক চিন্তাধারায় যে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসে তার সার্থক পরিণতি পাকিস্তান রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা এবং পরে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের অভ্যুদয়।
লাহোর প্রস্তাবের প্রেক্ষাপট : লক্ষ্ণৌ চুক্তি এবং পরবর্তীতে খিলাফত ও অসহযোগ আন্দোলন ভারতের হিন্দু- | মুসলমানদের মধ্যে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির সেতুবন্ধন রচনা করে। তবে আইনসভায় মুসলমানদের জন্য আসন সংরক্ষণ ও স্বতন্ত্র নির্বাচন অধিকার প্রশ্নে হিন্দু-মুসলমান বিরোধ পুনরায় মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। বিশ শতকের তৃতীয় দশকে সমস্যা অত্যন্ত জটিল আকার ধারণ করে। এ শাসনতান্ত্রিক সমস্যা সমাধানে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে কয়েকটি উদ্যোগ ব্যর্থ হয়। অবশেষে ব্রিটিশ সরকার ১৯৩৫ সালে ভারত শাসন আইন প্রণয়ন করে। এ আইন ভারতীয়দের সন্তুষ্ট করতে পারেনি। প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন কার্যকর করার জন্য ১৯৩৭ সালে যে প্রাদেশিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় তাতে প্রায় সব রাজনৈতিক দল অংশ নেয়। প্রাদেশিক নির্বাচনে অধিকাংশ প্রদেশে কংগ্রেস সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম প্রদেশসমূহেও মুসলিম লীগ পরাজিত হয়। এমতাবস্থায় মুসলিম লীগ কংগ্রেসের সাথে কোয়ালিশন সরকার গঠনের প্রস্তাব করলে কংগ্রেস তা প্রত্যাখ্যান করে। এমনকি মুসলিম লীগের সাথে কোনোরূপ আলাপ-আলোচনা ছাড়াই কংগ্রেস মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ প্রদেশসমূহে মন্ত্রিসভা গঠন করে। কংগ্রেস শাসিত প্রদেশসমূহে মুসলিম বিদ্বেষী কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয়। ‘বন্দেমাতরম' কে জাতীয় সংগীত হিসেবে প্রবর্তনের চেষ্টা, স্কুলসমূহের পাঠ্যসূচিতে হিন্দু ধর্ম-দর্শন সাহিত্যকে বাধ্যতামূলককরণ, আজান নিষিদ্ধকরণ, নামাজের সময় মসজিদের সামনে নিয়ে বাধ্যযন্ত্রসহ মিছিল এবং সরকারি ভবনসমূহে কংগ্রেসের পতাকা উত্তোলন ইত্যাদি মুসলিম অনুভূতিকে আহত করে। তদুপরি কংগ্রেস সভাপতি জওহরলাল নেহেরু কর্তৃক ভারতে কেবল দুটি শক্তির- ব্রিটিশ সরকার এবং কংগ্রেসের অস্তিত্বসংক্রান্ত ঘোষণা মুসলমানদের দারুণভাবে বিক্ষুব্ধ করে। জিন্নাহ নেহেরুর (যিনি এক সময় হিন্দু-মুসলিম মিলনের প্রবক্তা ছিলেন) বক্তব্যের প্রতিবাদে তাঁর বিখ্যাত 'দ্বি-জাতিতত্ত্ব' ঘোষণা করে। দ্বি-জাতিতত্ত্ব মতে, ভারতে হিন্দু-মুসলিম দুটি আলাদা, জাতি। তাদের ধর্ম, দর্শন, ইতিহাস-ঐতিহ্য সম্পূর্ণ আলাদা। সুতরাং সাম্প্রদায়িক জটিলতা নিরসনে স্বতন্ত্র রাষ্ট্র গঠন অপরিহার্য।
অবশ্য মুসলমানদের স্বতন্ত্র রাষ্ট্র গঠনের দাবি প্রথম উত্থাপন করেন আল্লামা ইকবাল ১৯৩০ সালে। ১৯৩৩ সালে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঞ্জাবি ছাত্র চৌধুরী রহমত আলী ভারতের উত্তর- পশ্চিমাঞ্চলে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম অধ্যুষিত এলাকা নিয়ে 'প্যা স্তান' নামক পৃথক রাষ্ট্র গঠনের প্রস্তাব করেন। ১৯৩৯ সালে জিন্নাহ পুনরায় মুসলমানদের স্বতন্ত্র রাষ্ট্র গঠনের প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেন। এরই ফলশ্রুতিতে শেরে বাংলা এ. কে. ফজলুল হক ১৯৪০ সালের ২৩ মার্চ লাহোরে 'লাহোর প্রস্তাব' উপস্থাপন করেন ।
→ লাহোর প্রস্তাব : ব্রিটিশ ভারতের ইতিহাসে লাহোর প্রস্তাব একটি ঐতিহাসিক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। ১৯৪০ সালের ২৩ মার্চ মুসলিম লীগের লাহোর অধিবেশনে ভারতের উত্তর-পশ্চিম ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চলসমূহে একাধিক স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার একটি প্রস্তাব গৃহীত হয় । এটি লাহোর প্রস্তাব নামে পরিচিত । মুসলিম লীগের সভাপতি মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত অধিবেশনে লাহোর প্রস্তাব উত্থাপন করেন তৎকালীন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী এ. কে. ফজলুল হক । তিনি জিন্নাহর দ্বিজাতি তত্ত্বের উপর ভিত্তি করে ঐতিহাসিক লাহোর প্রস্তাব পেশ করেন ।
১৯৪০ সালের লাহোর প্রস্তাবের উপর ভিত্তি করেই ভারতের রাজনৈতিক ও সাংবিধানিক আন্দোলন এক নতুন খাতে অগ্রসর হয়। লাহোর প্রস্তাবের ভিত্তিতে ভারত বিভক্তির দাবিই মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে অগ্নিস্ফুলিঙ্গ ছড়িয়ে দিয়েছিল। এ ভারতের ভবিষ্যৎ সংবিধানের ব্যাপারে মুসলিমদের চিন্তাধারায় এক বৈপ্লবিক পরিবর্তনের সূচনা করেছিল। ১৯৪০ সালের লাহোর প্রস্তাবের ফলশ্রুতিতে ১৯৪৭ সালে ভারত বিভক্তির মাধ্যমে পাকিস্তানের
সৃষ্টি হলেও তা বাঙালি জাতি প্রশ্নের রাষ্ট্রীয় সমাধান দিতে ব্যর্থ হয়। ১৯৪০ সালের লাহোর প্রস্তাবের ফলশ্রুতিতে ১৯৪৭ সালে ভারত বিভক্তি হতে পাকিস্তান রাষ্ট্রের জন্ম হওয়ার পর পাকিস্তানে নানা আন্দোলন তীব্র থেকে তীব্রতর হয়ে উঠে এবং এক পর্যায়ে পাকিস্তান ভেঙে বর্তমান বাংলাদেশের জন্ম হয়।
- লাহোর প্রস্তাবের মূল প্রতিপাদ্য বিষয়াদি : প্রথম প্রস্তাবে বলা হয়, “নিখিল ভারত মুসলিম লীগের এ অধিবেশনের সুনিশ্চিত অভিমত এই যে, কোনো সাংবিধানিক পরিকল্পনা এদেশে কার্যকর করা যাবে না বা মুসলমানদের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না, যদি তা নিম্নরূপ মূলনীতির উপর পরিকল্পিত না হয় ।
(ক) ভৌগোলিক অবস্থান অনুযায়ী সন্নিহিত স্থানসমূহকে অঞ্চল হিসেবে চিহ্নিত করতে হবে।
(খ) এসব অঞ্চলকে প্রয়োজনমতো সীমা পরিবর্তন করে এমনভাবে গঠন করতে হবে যাতে ভারতবর্ষের উত্তর, পশ্চিম ও পূর্বাঞ্চলের যেসব স্থানে মুসলমানগণ সংখ্যাগরিষ্ঠ সে অঞ্চলসমূহে স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা যায়।
(গ) স্বাধীন রাষ্ট্রসমূহের অঙ্গরাজ্যগুলো হবে স্বায়ত্তশাসিত ও সার্বভৌম । দ্বিতীয় প্রস্তাবে বলা হয়, “এসব অঞ্চলের সংখ্যালঘুদের ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক, শাসনতান্ত্রিক এবং অন্যান্য অধিকার ও স্বার্থ-সংরক্ষণের জন্য তাদের সাথে পরামর্শ করে যথোপযুক্ত কার্যকরী ও বাধ্যতামূলক রক্ষাকবচের ব্যবস্থা শাসনতন্ত্রে করতে হবে। ভারতবর্ষে মুসলমানগণ যেসব স্থানে সংখ্যালঘু সেসব স্থানে তাদেরও অন্যান্য সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক, শাসনতান্ত্রিক এবং অন্যান্য অধিকার ও স্বার্থসংরক্ষণের জন্য তাদের সাথে পরামর্শ করে যথোপযুক্ত কার্যকরী ও বাধ্যতামূলক রক্ষাকবচের ব্যবস্থা শাসনতন্ত্র করতে হবে।”
উপসংহার : পরিশেষে বলতে পারি যে, লাহোর প্রস্তাবে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার ইঙ্গিত ছিল। আর এ স্বপ্ন ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত বাংলাদেশ সত্যে পরিণত হয়।
আর্টিকেলের শেষকথাঃ লাহোর প্রস্তাবের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় কি ছিল
আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম লাহোর প্রস্তাবের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় কি ছিল । যদি তোমাদের আজকের এই পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো।