খোলাফায়ে রাশেদীনের নির্বাচন পদ্ধতি কেমন ছিল
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো খোলাফায়ে রাশেদীনের নির্বাচন পদ্ধতি জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের খোলাফায়ে রাশেদীনের নির্বাচন পদ্ধতি টি।
খোলাফায়ে রাশেদীনের নির্বাচন পদ্ধতি কেমন ছিল |
খোলাফায়ে রাশেদীনের নির্বাচন পদ্ধতি
উত্তর : ভূমিকা : বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) মৃত্যুর পূর্বে কোনো খলিফা নির্বাচন করে যাননি। তাই তার মৃত্যুর পর মুসলিম জাহানে খলিফার অভাব দেখা যায়। যেহেতু রাসূল (সা.) মৃত্যুর পূর্বে কোনো নির্বাচন পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়নি তাই রাসূলের পর কে হবেন মুসলিম বিশ্বের খলিফা এ নিয়ে এক চরম জটিলতা সৃষ্টি হয়েছিল । আর এই জটিল পরিস্থিতির অবসান ঘটিয়ে হজরত আবু বকর (রা.) ইসলামের প্রথম খলিফার দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
→ হজরত আবু বকর (রা.)-এর খলিফা নির্বাচন : রাসূল (সা.)-এর ওফাতের পর ইসলামের রক্ষক হিসেবে হজরত আবু বকর (রা.) দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ইসলাম ধর্মকে নিশ্চিত ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করে একটি সুষ্ঠু ভিত্তির উপর দাঁড় করে ছিলেন। তাই তাকে ইসলামের ইতিহাসে ইসলামের ত্রাণকর্তা বলা হয় । যাই হোক রাসূল (সা.)-এর মৃত্যুর পর খলিফা নির্বাচন নিয়ে যখন জটিল পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় ঠিক তখন আনসার ও মুহাজিরগণ এই জটিল সমস্যার সমাধানের জন্য আলোচনায় বসেন। বিভিন্ন আনসার ও মুহাজির ছাড়াও আলোচনা সভায় আরো বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের সমাগম ঘটে। সব মিলিয়ে চারটি দলের উত্থান ঘটে এবং প্রত্যেকটি দলের দাবি আলোচনা সভায় পেশ করেন। দাবিগুলো হলো-
১. আনসারদের দাবি : খলিফা নির্বাচনের জটিল পরিস্থিতি | সমাধানের জন্য যে আলোচনা সভার সৃষ্টি হয় যেখানে আনসারগণ দাবি করেন যে, তারা ইসলামের দুর্দিনে রাসূল (সা.) ও মুহাজিরদের সাহায্য করেছেন। তাই খলিফা নির্বাচন আনসারগণের মধ্যে থেকেই হোক
২. মুহাজিরদের দাবি : উক্ত আলোচনা সভায় মুহাজিরগণ দাবি উত্থাপন করেন যে, তারা সর্বপ্রথম ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিল এবং ইসলামের জন্য তারা ত্যাগ স্বীকার করেছেন। তাই ইসলামের প্রথম খলিফা মুহাজিরগণের মধ্য থেকেই হোক।
৩. কুরাইশদের দাবি : উক্ত আলোচনা সভায় মক্কার বিখ্যাত ও শক্তিশালী বংশ কুরাইশরা দাবি করেন যে, কুরাইশ বংশ হলো অভিজাত বংশ এবং রাসূল (সা.) কুরাইশ বংশেই জন্ম গ্রহণ করেছিলেন। সুতরাং কুরাইশ বংশ থেকেই প্রথম খলিফা নির্বাচিত হোক ।
৪. হজরত আলী (রা.)-এর সমর্থকদের দাবি : খলিফা নির্বাচন নিয়ে গঠিত আলোচনা সভায় হজরত আলী (রা.)-এর সমর্থকবৃন্দের দাবি ছিল যে, হজরত আলী (রা.) মুহাম্মদ (সা.)- এর চাচাত ভাই এবং মা ফাতেমার স্বামী। সুতরাং খলিফা নির্বাচন হজরত আলী (রা.) কে করা উচিত। যা হোক আলোচনা সভায় এক পর্যায়ে কোনো সিদ্ধান্ত না হয়ে বরং তর্ক-বিতর্ক বা বিতণ্ডার সৃষ্টি হয়। তখন হজরত ওমর (রা.) একটি জ্বালাময়ী বক্তব্য প্রদান করেন।
→ হজরত ওমরের বক্তব্য ও খলিফা ঘোষণা : আলোচনার এক পর্যায়ে বাগবিতণ্ডা যখন চরম অবস্থায় পৌঁছে যায় তখন হজরত ওমর (রা.) একটি জ্বালাময়ী বক্তব্য পেশ করে তিনি বলেন যে, “আরবগণ কুরাইশ বংশের কোন লোক ছাড়া অন্য কোন লোকে প্রাধান্য স্বীকার করবে না। সে কারণে কুরাইশ বংশের কোন সদস্যকে নেতা নির্বাচন করতে হবে। আমি জ্ঞানী ও অভিজ্ঞ বয়ঃবৃদ্ধ হজরত আবু বকর (রা.) কে নেতা হিসেবে ঘোষণা করছি।” হজরত ওমর (রা.) এই বক্তব্য পেশ করে। হজরত আবু বকর (রা.)-এর হাত চুম্বন করে বাইয়াত গ্রহণ করেন। তার পর পর্যায়ক্রমে আনসার, মুহাজির ও অন্যান্য গোত্রসমূহ আবু বকরের হাতে চুম্বন করে বাইয়াত গ্রহণ করেন। তবে হজরত আলী (রা.) দীর্ঘ ৬ মাস পর তাঁর হাতে বাইয়াত গ্রহণ করেন। আর এভাবেই হজরত আবু বকর (রা.) মুসলিম বিশ্বের প্রথম খলিফা নির্বাচিত হন এবং ইসলামকে নিশ্চিত ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করেন ।
উপসংহার : পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে, হজরত আবু বকর (রা.) সর্বপ্রথম ইসলামি রাষ্ট্রের খলিফা নির্বাচিত হন এবং ইসলাম ধর্মের সম্মুখে যেসব বাধা সৃষ্টি হয়েছিল তা তিনি মোকাবিলা করেন। তিনি ভণ্ডনবিদের দমন করে তাদেরকে যাকাতদানে বাধ্য করেন। তিনি ইসলাম ধর্মকে রক্ষা করে একটি শক্ত ভিত্তির উপর দাঁড় করান। আর তাই তাঁর পরবর্তী খলিফাগণ। সেই শক্ত ভিত্তির উপর দাঁড়িয়ে ইসলামি রাষ্ট্রেকে আরো সম্প্রসারণ | করতে পেরেছিলেন। যাই হোক হজরত আবু বকর (রা.)-এর | কর্মকাণ্ডের কারণে তাঁকে ইসলামের ত্রাণকর্তা বলা হয়ে থাকে ।
আর্টিকেলের শেষকথাঃ খোলাফায়ে রাশেদীনের নির্বাচন পদ্ধতি
আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম খোলাফায়ে রাশেদীনের নির্বাচন পদ্ধতি টি। যদি তোমাদের আজকের এই পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো।