খলিফা প্রথম ওয়ালিদের কৃতিত্ব আলোচনা কর
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো খলিফা প্রথম ওয়ালিদের কৃতিত্ব আলোচনা কর জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের খলিফা প্রথম ওয়ালিদের কৃতিত্ব আলোচনা কর ।
খলিফা প্রথম ওয়ালিদের কৃতিত্ব আলোচনা কর |
খলিফা প্রথম ওয়ালিদের কৃতিত্ব আলোচনা কর
- অথবা, উমাইয়া খলিফা প্রথম ওয়ালিদের কৃতিত্ব মুল্যায়ন কর
- অথবা, খলিফা প্রথম ওয়ালিদের কৃতিত্ব ব্যাখ্যা কর
উত্তর : ভূমিকা : আব্দুল মালিকের মৃত্যুর পর ৭০৫ সালে তার সুযোগ্য পুত্র আল ওয়ালিদ ক্ষমতা লাভ করেন। ইসলামের ইতিহাসে আল ওয়ালিদের রাজত্বকাল একটি গৌরবময় অধ্যায়। তিনি ছিলেন যোগ্য পিতার যোগ্য সন্তান। তার কূটনৈতিক দক্ষতা, প্রজ্ঞা ও মেধার দ্বারা তার ক্ষমতা কেবল সুদৃঢ় ও সুসংহতই হয়নি এ সময় বহু অঞ্চলও বিজিত হয় ।
→ আল ওয়ালিদের কৃতিত্ব : আল ওয়ালিদ একজন বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী ছিলেন। তিনি যেমন একজন রাজ্য বিজেতা তেমনি একজন যোগ্য শাসক । নিম্নে তার কৃতিত্ব আলোচনা করা হলো :
১. শান্তি প্রতিষ্ঠা : প্রথম ওয়ালিদ ছিলেন মুসলিম জাহানের শ্রেষ্ঠ খলিফাদের মধ্যে অন্যতম। তিনি নিঃসন্দেহে তার পিতার যোগ্য সন্তান ছিলেন। কূটনৈতিক দক্ষতা ও মৌলিকতার দাবিদার পিতা আব্দুল মালিকের সমকক্ষ না হলেও সাম্রাজ্যে শান্তি-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করে এবং সম্প্রসারণ করে তিনি তার পিতার কৃতিত্বকেও অতিক্রম করেছিলেন।
২. শ্রেষ্ঠ বিজেতা : আল ওয়ালিদের শাসনব্যবস্থা দেশ- বিদেশে গৌরব অর্জন করেছিল। ওয়ালিদ শিয়া ও খারিজি বিদ্রোহ দমন করেন এবং তার শাসনগোষ্ঠী কলহ দূর হয়। এ সময় বহু অঞ্চল, জয় করা হয় এবং বোখারা সমরকন্দ সিন্ধু আফ্রিকা ও স্পেন মুসলিম আধিপত্যে আসে।
৩. মধ্য এশিয়া বিজয় : খলিফা ওয়ালিদ সিংহাসনে আরোহণের পর মধ্য এশিয়া জয়ের লক্ষ্যে তাঁর পূর্বাঞ্চলের গভর্নর হাজ্জাজ বিন ইউসুফকে নির্দেশ দেন। হাজ্জাজ বিন ইউসুফ খোরাসানের শাসনকর্তা কুতায়বার নেতৃত্বে ৫৪,০০০ সৈন্যসহ প্রেরণ করেন। কুতায়বা প্রথমে বলখ ও পরে তুখারিস্তান বিজয় করেন ।
৪. খাওয়ারিজম ও সমরখন্দ দখল : কুতায়বা ৭১০ খ্রিস্টাব্দে খাওয়ারিজম শাহের আমন্ত্রণে অক্সাস নদী পার হয়ে খাওয়ারিজমে | গমন করেন এবং সেখানে শাহের সাথে মুসলমানদের একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। অতঃপর সমরখন্দের রাজা ভীত হয়ে কুতাইবার | সাথে সন্ধি করেন। ফলে ৭১২ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে খাওয়ারিজম ও সমরখন্দ মুসলমানদের অধিকৃত হয়।
৫. সিন্ধু বিজয় : মধ্য এশিয়া জয়ের পর খলিফা আল ওয়ালিদের নেতৃত্বে হাজ্জাজ বিন ইউসুফ সিন্ধু জয়ের পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। ইসলামের প্রচার, বিপুল সম্পদ প্রাপ্তির আকাঙ্খা, সর্বোপরি বিদ্রোহী রাজা দাহিরকে দমন করার জন্য হাজ্জাজ বিন ইউসুফ সিন্ধু অভিযান করেন। হাজ্জাজ তাঁর জামাতা ও সেনাপতি মুহাম্মদ বিন কাসিমের নেতৃত্বে ৭১২ খ্রিস্টাব্দে সিন্ধু জয় করতে সক্ষম হন।
৬. উত্তর আফ্রিকা বিজয় : হাসান বিন নোমানের পদচ্যুতির পর ৭০৭ খ্রিস্টাব্দে খালিফা আল ওয়ালিদ মুসা-বিন নুসাইরকে উত্তর আফ্রিকার শাসনকর্তা নিযুক্ত করেন। তিনি পুত্রদের সহায়তায় প্রথমে বিদ্রোহী বার্বারদের দমন করেন। অতঃপর আটলান্টিকের তীর পর্যন্ত অগ্রসর হয়ে এক বিশাল এলাকায় মুসলিম আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করেন।
৭. স্পেন বিজয় : খলিফা ওয়ালিদের সময় স্পেন বিজয় ছিল একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। নানা কারণের পরিপ্রেক্ষিতে খলিফা ওয়ালিদ স্পেনের রাজা রডারিককে পরাজিত করার জন্য সেনাপতি মুসা-বিন-নুসাইর তারিক বিন জিয়াদকে ৭১১ খ্রিস্টাব্দে ৭ হাজার সৈন্য ও রণতরীর বিশাল বাহিনী স্পেনে প্রেরণ করেন। এরপর মুসা ও ৭১২ খ্রিস্টাব্দে স্পেনে গমন করেন। উভয়ের প্রচেষ্টায় সম্মিলিত বাহিনী ৭১২-১৪ খ্রিস্টাব্দের মধ্যেই প্রায় সমগ্র অঞ্চল মুসলিম শাসনে নিয়ে আসেন ৷
৮. নৌবাহিনীর শ্রেষ্ঠত্ব : ওয়ালিদের রাজত্বকালে ভূমধ্যসাগরে নৌবাহিনীর প্রাধান্য লক্ষ্য করা যায়। এটা মেজকা ও অন্যান্য দ্বীপ অধিকার করতে এবং স্পেন ও ফ্রান্সে অগ্রসর হতে সাহায্য করে। তার আমলে নৌবাহিনী সুগঠিত হয়। তিনি একে পাঁচভাগেবিভক্ত করেন। যথা : (ক) সিরীয় বাহিনী; (খ) তিউনিসীয় বাহিনী; (গ) আলেকজান্দ্রীয় বাহিনী; (ঘ) ব্যাবিলনীয় বাহিনী ও (ঙ) নীলনদের মুখে প্রতিষ্ঠিত বাহিনী।
৯. শিল্প সাহিত্যের পৃষ্ঠপোষকতা : খলিফা ওয়ালিদ সাহিত্য ও শিল্পকলার পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। তার শাসনকালে সংস্কৃতি ও কলার উন্নতি সাধিত হয়। ওয়ালিদ জ্ঞান বিজ্ঞান ও শিক্ষা সংস্কৃতির অনুরাগী ছিলেন। তার উৎসাহে মক্কা মদীনা কুফা ও বসরায় কুরআন হাদিস চর্চার কেন্দ্রে পরিণত হয়। খ্যাতনামা সঙ্গীত ইবনে মুবায়েজ এ মাবফ তার দরবার অলংকৃত করেছিল।
১০. স্থাপত্য শিল্প : মুঘল সম্রাট শাহজাহানের ন্যায় ওয়ালিদ একজন নির্মাতা ছিলেন। তিনি দামেস্কে কেন্দ্রীয় মসজিদ, মদীনায় মহানবির মসজিদ এবং জেরুজালেমে আকসা মসজিদ পুনরায় নির্মাণ করেন। সিরিয়ার দামেস্কে মসজিদটি তার স্থাপত্য শিল্পপ্রীতির অমর নিদর্শন। ৮ম শতাব্দীর প্রথম দিকে এ মসজিদটি নির্মাণ করেন এবং এটি উমাইয়া মসজিদ নামে পরিচিত। কালের পরিবর্তন সত্ত্বেও এ মসজিদটি মুসলমানদের নিকট চতুর্থ আশ্চর্য বলে পরিচিত ওয়ালিদ “কুসাইর আমরা” নামে একটি প্রমোদ প্রাসাদও নির্মাণ করেন।
১১. অন্যতম খলিফা : শান্তি শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা সাম্রাজ্যে প্রতিষ্ঠা শিক্ষা সংস্কৃতির বিকাশ শিল্পকলা ও স্থাপত্যের চরম উৎকর্ষতার জন্য ওয়ালিদের রাজত্বকাল বিশেষভাবে স্মরণীয় এই রাজত্বকালকে মূর ও গীবন উমাইয়াদের স্বর্ণ যুগ বলে আখ্যায়িত করেছেন। এই প্রসঙ্গে মূর বলেছেন, “Looking at it from first to last we shall not find in the annals of the caliphate more glorious reign than that of walid."
১২. রাজকীয় গুণাবলি : খলিফা ওয়ালিদ ছিলেন যোগ্য পিতার সুযোগ্য সন্তান। একদিকে তিনি যেমন পিতার ন্যায় দীর্ঘকাল গৌরবর্ণের অধিকারী ছিলেন তেমন অন্যদিকে তিনি শরীরের ন্যায় মনের দিক দিয়েও ছিলেন উঁচু মাপের, তবে তিনি পিতার নিকট থেকে কূটনৈতিক দক্ষতা ও নিষ্ঠুরতা লাভ করেননি। তিনি উদারতা, রুচি ও শান্তিপ্রিয়তার দিক দিয়ে পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করেছিলেন। তিনি বিজেতা, দক্ষ শাসক ও শান্তিপূর্ণভাবে রাজ্য পরিচালনায় যে উদাহরণ সৃষ্টি করে রেখে গেছেন তা ছিল উমাইয়া বংশীয় কোনো শাসকের প্রথম নিদর্শন ।
১৩. সামরিক বিভাগের উন্নতি : পিতার নিকট থেকেই ওয়ালিদ একটি সুশৃঙ্খল সেনাবাহিনী পেয়েছিলেন। একে তিনি আরও বৃহৎ নিয়মিত ও সুগঠিত পূর্ণাঙ্গ সেনাবাহিনীতে উন্নীত করেন। এর ফলে বহিঃআক্রমণ থেকে তার সাম্রাজ্য নিরাপদ হয়েছিল।
১৪. শাসনকাল ও মৃত্যু : খলিফা আল ওয়ালিদ ৭১৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে মাত্র চল্লিশ বছর বয়সে মৃত্যুমুখে পতিত হন। তিনি উমাইয়া খিলাফতের মাত্র ১০ বছর অত্যন্ত সফলতা ও গৌরবের সাথে রাজ্য শাসন করে ইসলামের ইতিহাসে খ্যাতিমান মুসলিম শাসকদের তালিকায় নাম লিখিয়ে চির অমর হয়ে আছেন।
১৫. চরিত্র : প্রকৃতপক্ষে খলিফা আল ওয়ালিদ ছিলেন একজন উদারমনা মহানুভব শাসক ছিলেন। তিনি অনেক যোগ্যতা ও দক্ষতা দিয়ে একটি সর্বাঙ্গ সুন্দর সাম্রাজ্য গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছিলেন ।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, খলিফা আল-ওয়ালিদ ছিলেন উমাইয়া শাসকদের মধ্যে একজন শ্রেষ্ঠ শাসক। তিনি বহু রাজ্য জয় করে স্বীয় সাম্রাজ্য বৃদ্ধি করেন। তাঁর শাসনামলে ব্যবসায়ের যথেষ্ট উন্নতি হয়। তিনি নিজে বাজার পরিদর্শন করতেন। এ সময় পথিকদের সফর নিরাপদ ছিল। শান্তি শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা, সাম্রাজ্যের বিস্তৃতি, শিক্ষা-সংস্কৃতির বিকাশ, শিল্পকলা ও স্থাপত্যের চরম উৎকর্ষতার জন্য খলিফা ওয়ালিদের কৃতিত্ব অপরিসীম সাম্রাজ্যের সার্বিক উন্নতির পরিপ্রেক্ষিতে ঐতিহাসিক গীবন ও ম্যুর তার রাজত্বকালকে ‘উমাইয়া বংশের স্বর্ণযুগ' বলে উল্লেখ করেছেন।
আর্টিকেলের শেষকথাঃ উমাইয়া খলিফা প্রথম ওয়ালিদের কৃতিত্ব মুল্যায়ন কর
আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম খলিফা প্রথম ওয়ালিদের কৃতিত্ব ব্যাখ্যা কর। যদি তোমাদের আজকের এই পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো।