খলিফা হিশামের চরিত্র ও কৃতিত্ব মূল্যায়ন কর
আসসালামু আলাইকুম প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে বিষয় হলো খলিফা হিশামের চরিত্র ও কৃতিত্ব মূল্যায়ন কর জেনে নিবো। তোমরা যদি পড়াটি ভালো ভাবে নিজের মনের মধ্যে গুছিয়ে নিতে চাও তাহলে অবশ্যই তোমাকে মনযোগ সহকারে পড়তে হবে। চলো শিক্ষার্থী বন্ধুরা আমরা জেনে নেই আজকের খলিফা হিশামের চরিত্র ও কৃতিত্ব মূল্যায়ন কর।
খলিফা হিশামের চরিত্র ও কৃতিত্ব মূল্যায়ন কর |
খলিফা হিশামের চরিত্র ও কৃতিত্ব মূল্যায়ন কর
- অথবা, হিশামের চরিত্র এবং কৃতিত্ব আলোচনা কর
- অথবা, হিশামের চারিত্রিক গুণাবলী আলোচনা কর এবং তার কৃতিত্বের পরিচয় দাও
উত্তর : ভূমিকা : মৃত্যুর পূর্বে আব্দুল মালিক তার চার পুত্রকে পরপর সিংহাসনের উত্তরাধিকারী মনোনীত করেন। এই চারজন হলেন- প্রথম ওয়ালিদ, সুলায়মান, দ্বিতীয় ইয়াজিদ ও হিশাম । ৭২০ | সালে দ্বিতীয় ওমরের মৃত্যু হলে মনোনয়ন ধারা অনুযায়ী ইয়াজিদ | উমাইয়া সাম্রাজ্যের সিংহাসনে বসেন এবং ৭২৪ সালে দ্বিতীয় ইয়াজিদের মৃত্যুর পর তার ভ্রাতা হিশাম সিংহাসনে আরোহণ করেন। সিংহাসনে আরোহণ করেই তিনি চরম রাজনৈতিক সংকটের | সম্মুখীন হন। তার শাসনামলে গোত্রকলহ থেকে শুরু করে অভ্যন্তরীণ | বিশৃঙ্খলা যেমন বেড়ে গিয়েছিল, ঠিক তেমনি বহিঃশত্রুদের | উৎপাতে উমাইয়া সাম্রাজ্যে প্রকম্পন সৃষ্টি হয়েছিল।
→ হিশামের চরিত্র ও কৃতিত্ব : উমাইয়া খলিফা হিশাম উমাইয়া সাম্রাজ্যের চরম সংকটকালে অধিষ্ঠিত হন। নিম্নে তার চরিত্র ও কৃতিত্ব আলোচনা করা হলো :
১. বীরত্ব ও সামরিক কৃতিত্ব : খলিফা হিশাম একজন বীরপুরুষ ছিলেন। তার তেজস্বীতা ও অসীম সাহসিকতা সর্বজনবিদিত ছিল। তিনি প্রকৃতপক্ষেই উমাইয়া খিলাফতের তৃতীয় ও সর্বশেষ শাসক ছিলেন। উমাইয়া খিলাফতের রাজনৈতিক গগন যখন মেঘাচ্ছন্ন তখন এই তেজদীপ্ত নেতা খানিকটা হলেও সেই মেঘের অপসারণ ঘটাতে সক্ষম হয়েছিলেন। যদিও তা চূড়ান্ত রূপ লাভ করেনি তথাপি তা অবজ্ঞাভরে স্মরণ করার কোনো অবকাশ আছে বলে বিশিষ্ট ঐতিহাসিকগণ মনে করেন না।
২. রাজোচিত জ্ঞানের অধিকারী : খলিফা হিশাম ছিলেন একজন সুযোগ্য উমাইয়া খলিফা। সাম্রাজ্য পরিচালনার ক্ষেত্রে তিনি তার বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিয়েছিলেন। মূলত উমাইয়া সাম্রাজ্যের পতনলগ্নে তিনি উমাইয়াদের শাসনভার গ্রহণ করেছিলেন। সেসময় তিনি তার স্বীয় কূটনৈতিক জ্ঞান, দক্ষতা ও ক্ষমতা বলে আংশিক হলেও সমস্যাকে কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয়েছিলেন।
৩. আফ্রিকা ও স্পেনে আধিপত্য স্থাপন : খলিফা হিশাম সাম্রাজ্য পরিচালনার ক্ষেত্রে দূরদর্শিতার পরিচয় দিয়েছিলেন। সুদূর আফ্রিকা এবং স্পেনে তিনি তার স্বীয় আধিপত্য স্থাপনের কৃতিত্ব অর্জন করেছিলেন। অর্থাৎ উমাইয়া খলিফা ওয়ালিদের শাসনামলে উমাইয়া সাম্রাজ্যের বিস্তারের যে দ্বার উন্মোচন হয়েছিল খলিফা হিশাম তা এগিয়ে নেওয়ার প্রয়াস চালান ।
৪. সার্ডিনিয়া, সিরাকুজ, সুদান ও সিসিলি বিজয় : উমাইয়া খলিফা হিশাম অত্যন্ত উচ্চাভিলাষী শাসকরূপে নিজের আত্মপ্রকাশ ঘটিয়েছিলেন। ৭৩৩-৩৪ খ্রিস্টাব্দে সুদান এবং পরবৎসর তিনি সার্ডিনিয়াকে বিজয় করার সক্ষমতা অর্জন করেছিলেন। তিনি এতেই ক্ষান্ত হননি বরং সিসিলির দিকে মনোনিবেশ করেন। ৭৩৯-৪০ সালে সিসিলি তার দ্বারা আক্রান্ত হয় এবং ভীষণ এক যুদ্ধের মাধ্যমে তিনি সিসিলি বিজয় করেন। অতঃপর তিনি সিরাকুজ অধিকার করেন।
৫. প্রশাসনিক শৃঙ্খলা রক্ষা : মূলত রাজনৈতিক চরম অরাজকতার সময় খলিফা হিশামের অভিষেক ঘটে। তথাপি সিংহাসনে বসেই তিনি প্রশাসনিক শৃঙ্খলার দিকে মনোনিবেশ করেন। তিনি অনুধাবন করেন যে, একটি সাম্রাজ্যকে টিকিয়ে রাখতে এর প্রশাসনিক ভিত্তিকে সুদৃঢ় করার বিকল্প নেই। আর তাই তিনি বিভিন্ন প্রশাসনিক পদের রদ বদল ঘটান ।
৬. বহিঃশত্রুর আক্রমণ প্রতিহত : খলিফা হিশামের সবচেয়ে বড় কৃতিত্ব হচ্ছে বহিঃশত্রুর আক্রমণ প্রতিহত করা। তার শাসনামলে বহিঃশত্রুরা মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে এবং অভ্যন্তরীণ বিশৃঙ্খলার সুযোগে বিভিন্ন সীমান্তে আঘাত হানতে থাকে। প্রথমদিকে তা দৃঢ়হস্তে প্রতিরোধ করেন। যেমন : তিনি রোমানদের আক্রমণ প্রতিহত করার জন্য এশিয়া মাইনরে মুয়াবিয়া ও সুলায়মান নামক দুই পুত্রকে প্রেরণ করেন।
৭. দয়ালু ও প্রজাবৎসল শাসক : খলিফা হিশাম ছিলেন একজন প্রজাহিতৈষি। শাসক তিনি সবসময় প্রজাদের সুখের কথা চিন্তা করতেন। জনগণের কল্যাণার্থে তিনি অসংখ্য রাস্তাঘাট, সেতু ইত্যাদি নির্মাণ করেন। তিনি অত্যন্ত দয়াবান শাসক ছিলেন। প্রজাদের দুঃখ-কষ্টের কথা অত্যন্ত মনোযোগ দিয়ে শ্রবণ করতেন এবং তা নিরাময় এবং সমস্যা সমাধানে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতেন ।
৮. খারিজি বিদ্রোহ দমন : খলিফা হিশামের শাসনামলে খারিজিরা মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছিল। সোফরিয়া নামক একটি গোঁড়া সম্প্রদায় উমাইয়া বিরোধী আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটায়। তাদের বিদ্রোহের ফলে সাম্রাজ্যের অভ্যন্তরে বিশৃঙ্খলার উদ্ভব ঘটে। খলিফা অত্যন্ত কঠোরহস্তে খারিজিদের সেই বিদ্রোহ দমন করতে সক্ষম হন ।
৯. বার্বারদের বিদ্রোহ দমন : খারিজিদের পাশাপাশি বার্বাররাও আফ্রিকায় বিদ্রোহী হয়ে ওঠে এবং তারা খারিজিদের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করে উমাইয়া বিরোধী আন্দোলকে বেগবান করে তোলে। যার ফলে সমগ্র উমাইয়া খিলাফতে ফাটলের সূচনা হয়। তারা তাঞ্জিয়ারের শাসনকর্তাকে নিহত করে এবং কায়রোয়ান দখল করে। অবশেষে খলিফা হিশাম হানজালা বিন সাফওয়ানকে বিদ্রোহ দমনে প্রেরণ করেন এবং হানজালা তাদের বিদ্রোহ দমন করেন ।
১০. ব্যবসা-বাণিজ্যের উন্নতি : খলিফা হিশামের শাসনামলে রাজকোষে ঘাটতি দেখা দিলে তিনি ব্যবসা-বাণিজ্যের উন্নয়নের প্রয়োজনের কথা চিন্তা করেন এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের উন্নয়নের প্রয়োজনের কথা চিন্তা করেন এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের উন্নয়নের লক্ষ্যে নানাবিধ পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। শিল্প ও কৃষির উন্নয়নের জন্য তিনি কর কমিয়ে দেন।
১১. জনহিতকর কার্যাবলি : খলিফা সর্বদাই জনসাধরণের কল্যাণের কথা ভাবতেন। আর তাই জনগণের সুবিধার্থে তিনি নানাবিধ কার্যক্রম সম্পাদন করেন। তিনি অসংখ্য খাল, হাসপাতাল, সেতু, রাস্তাঘাট ও কূপ খনন দ্বারা জনসাধারণের দুঃখ দুর্দশা দূরীভূত করার চেষ্টা করেন। বায়তুল মাল থেকে তিনি অক্ষম ও দুর্বল লোকদের নির্দিষ্ট হারে ভাতা প্রদান করতেন। তিনি সুখী, শান্তিপূর্ণ এবং কল্যাণমুখী রাষ্ট্র কায়েমের চেষ্টা করেন। যা তৎকালীন শাসনামলে বিরল।
১২. শিল্পকলার পৃষ্ঠপোষক : খলিফা হিশাম শিল্পকলার ব্যাপক পৃষ্ঠপোষক করেছিলেন। তিনিই একমাত্র উমাইয়া খলিফা যিনি শিল্পকলার দিকে মনোনিবেশ করেছিলেন। চারু ও কারু শিল্পের উৎকর্ষ সাধনে তার অবদান ছিল অপরিসীম। তিনি অসংখ্য মসজিদ মাদ্রাসা, প্রমোদাগার, দুর্গ ইত্যাদি নির্মাণ করে | তার শিল্প মনোবৃত্তির পরিচয় প্রদান করেছিলেন। তিনি স্থাপত্য শিল্পের এক গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়ের সূচনা করেন ৷
১৩. চারিত্রিক দুর্বলতা : প্রজাবৎসল নৃপতি হিসেবে তিনি খ্যাতি অর্জন করলেও সংকীর্ণমনা, সন্দেহপ্রবণ লোভী ও ষড়যন্ত্রকারী হিসেবে তার চরিত্র কলুষিত হয়েছে। তিনিই একমাত্র উমাইয়া খলিফা যিনি গুপ্তচর বৃত্তি প্রথার সূচনা ঘটান। তিনি সহজেই মিথ্যা সংবাদের দ্বারা প্ররোচিত হয়ে সন্দেহবশত রাষ্ট্রের শ্রেষ্ঠ সেবকদের প্রায়ই হত্যা করতেন।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায় যে, খলিফা হিশামের ঝটিকাপূর্ণ জীবনের বিচিত্র অভিজ্ঞতা তার চরিত্রকে প্রভাবিত করেছে। সাময়িক সময়ের জন্য হলেও তিনি তুর্কি, খারিজি, বার্বার, রোমান এবং আব্বাসীয়দের ষড়যন্ত্রকে ধুলিসাৎ করেছিলেন। আর সেজন্যই তিনি সর্বশেষ ও শ্রেষ্ঠ উমাইয়া খলিফা হিসেবে বহুল আলোচিত। তার রাজনৈতিক দূরদর্শিতা, অসীম কর্মদক্ষতা, ধৈর্য্য, জ্ঞান ও বিচক্ষণতা দ্বারা শাসনক্ষেত্রে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তনের মাধ্যমে খিলাফতে শান্তি ও সমৃদ্ধি প্রতিষ্ঠা করে হিশাম শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করেছেন।
আর্টিকেলের শেষকথাঃ হিশামের চরিত্র এবং কৃতিত্ব আলোচনা কর
আমরা এতক্ষন জেনে নিলাম হিশামের চারিত্রিক গুণাবলী আলোচনা কর এবং তার কৃতিত্বের পরিচয় দাও। যদি তোমাদের আজকের এই পড়াটিটি ভালো লাগে তাহলে ফেসবুক বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করে দিতে পারো। আর এই রকম নিত্য নতুন পোস্ট পেতে আমাদের আরকে রায়হান ওয়েবসাইটের সাথে থাকো।